চোখের দিকে তাকালেই নাকি একজন মানুষের অনেককিছু ধরে ফেলা যায়! কখনো এই চোখে লুকিয়ে থাকে মায়া কিংবা গভীর ভালোবাসা, আবার খারাপ সময়ে এই চোখই যেন জানান দেয় নিজের ক্রোধ কিংবা বিষন্নতার কথা। এতো অবেগ অনুভুতির প্রকাশস্থল চোখ দুটিই যদি ঢেকে থাকে মোটা কাঁচের ফ্রেমে? অনুভূতি, সৌন্দর্য সবকিছুই যেন হারিয়ে যায় নিমিষে। তাই ফ্রেমের বন্দীত্ব দূর করতে আর নিজের চোখকে আরো একটু আকর্ষণীয় করে তুলতে তরুণীদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে ভিন্ন রঙের লেন্স। গত কয়েকবছর ধরে ক্রমেই লেন্সের ব্যবহার জনপ্রিয় হয়ে উঠছে সৌন্দর্যসচেতন তরুণ তরুণীদের কাছে। সেইসাথে লেন্সেও এসেছে ভিন্নতা। লেন্স দিয়ে চোখ সাজাতে রঙের বিষয়টি প্রাধান্য পাচ্ছে অনেক ক্ষেত্রেই। বর্তমান সময়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে পরিবেশ এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থার সাথে মিলিয়ে ভিন্ন ভিন্ন রঙের লেন্সের ব্যবহার। যেমন ন্যাচারাল কালার একুয়া কিংবা হালকা নীল রঙের কন্ট্যাক্ট লেন্স চেহারায় উজ্জ্বল ভাব নিয়ে আসতে পারে। আবার কিছু্টা গাঢ় রঙের কিংবা স্বাভাবিক চোখের রঙের সাথে মিল রেখে লেন্সের ব্যবহার দিব্যি চলে যেতে পারে আপনার দৈনিন্দন চলাফেরার সাথে। আর নিজের চোখকে জমকালো সাজে দেখতে চাইলে বেছে নিতে পারেন ধুসর, হালকা বাদামি, হালকা বেগুনি, গাঢ় নীল রঙের মতো বাহারী রঙের লেন্স আর সহজেই হয়ে উঠতে পারেন অনন্যা। লেন্সের সঠিক ব্যবহার জেনে নেওয়া উচিত সবার আগে। কারণ চোখের মতো সংবেদনশীল বিষয়টি নিয়ে ফ্যাশনের পূর্বেই ভাবতে হবে সাবধানতার কথাটি। চিকিৎসকদের মতে, একেবারে চশমা ছেড়ে দিয়ে পুরোপুরি লেন্স ব্যবহার শুরু করা কখনোই উচিত নয়। এই কাজটি করতে হবে ধাপে ধাপে। যেহেতু রঙ একটি কেমিক্যাল, এজন্য অনেকের চোখে ঐ রঙের জন্য এলার্জি বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। যারা সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য রঙিন কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করতে চান, তাদের জন্য প্রথম কয়েকদিন একটু একটু করে পরে দেখতে পারেন কোন ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে কি না। কোনো সমস্যা না হলে তখন ঐ ব্র্যান্ডের কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করা যেতে পারে।
লেন্সের নেতিবাচক দিকসমূহঃ
পৃথিবীর সবকিছুতেই সব ভালোর সঙ্গে কিছু না কিছু নেতিবাচক বিষয় মিশেই থাকে। কন্টাক্ট লেন্সও তার ব্যতিক্রম কিছু নয়। সুন্দর একটি লেন্স যেমন আপনার ব্যাক্তিত্ব, সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিতে পারে, ঠিক তেমনি সঠিক ব্যবহার, সঠিক যত্ন না জানলে সেই লেন্সই চোখের ক্ষতির জন্য কাল হয়ে দাঁড়াতে পারে। চশমার ভার থেকে মুক্তি, নিজেকে আলাদাভাবে উপস্থাপন এবং সৌন্দর্যের অনুষঙ্গ এসব অনেক ভালো দিক রয়েছে লেন্সের। পানিতে চশমা ভিজে যাওয়া, চোখ ঝাপসা হয়ে যাওয়া-এসব সমস্যাও আর পোহাতে হয়না। আবার অপরিষ্কার লেন্স ব্যবহারে ধুলোবালি জমে চোখের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। এছাড়া একটানা অনেকক্ষণ লেন্স পরলে সেটিও চোখের ক্ষতির কারণ হতে পারে। এই কারণে চক্ষু বিশেষজ্ঞরা সাধারণত ১২ঘণ্টার বেশি লেন্স পরতে নিষেধ করে থাকেন। এছাড়া নির্দিষ্ট সময় পরপর লেন্স বদল না করলেও পুরোনো লেন্সে চোখে ইনফেকশন হয়ে যেতে পারে।
লেন্সের যত্নআত্তিঃ
লেন্স লাগানোর সময় যেন কোনোভাবেই নখের সঙ্গে স্পর্শ না হয়। আঙুলের অগ্রভাগে এটি ব্যবহার করুন। এবং বড় নখ হলে লেন্স লাগানোর সময় আর ভালোভাবে নজর দিন। লেন্স ব্যবহার করার পর এটি সলিউশন দিয়ে ভালো করে পরিষ্কার করে নিন। কোন লেন্স ব্যবহার করার পর অস্বস্তি হলে অবশ্যই ব্র্যান্ড পরিবর্তন করে নিন। লেন্স পরার আগে অবশ্যই হাত ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। ময়লা হাতে লেন্স পরলে তা থেকে মারাত্নক ইনফেকশন হয়ে যেতে পারে। লেন্স ব্যবহার করার সময় আপনার চোখ ঝাপসা হয়ে এলে অথবা চোখে খুব অস্বস্তিকর অনুভূতি হলে অথবা অন্য যেকোনো সমস্যা হলে চক্ষুবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। লেন্স ব্যবহারের পর লেন্স কনটেইনারে তরল বা সলিউশন দিয়ে ভিজিয়ে রাখতে হবে এবং সলিউশনের মেয়াদের দিকে নজর রাখতে হবে। চেষ্টা করুন যাতে চার থেকে ছয় ঘণ্টার বেশি লেন্স না পরতে হয়। লেন্স খোলার পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ভালোভাবে চোখ ধুয়ে নিন।
লিখেছেনঃ জান্নাতুল ইসলাম শিখা
ছবিঃ এইচডিওয়ালপেপারগার্লস.কম