ময়েশ্চারাইজার, ত্বকের যত্নে অন্যতম একটি প্রোডাক্ট। স্কিন কেয়ারে ক্লেনজিং এর পরেই ময়েশ্চারাইজারের অবস্থান। ত্বকের বেসিক কেয়ার এবং সুন্দর কোমল ত্বক পেতে অবশ্যই সবাইকে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। বাজারে বিভিন্ন ধরনের ও বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ময়েশ্চারাইজার পাওয়া যায়। কখনো কি এমন হয়েছে যে আপনি নামিদামি ব্রান্ডের ও স্কিন টাইপের সাথে মিলিয়ে ময়েশ্চারাইজার কিনে ব্যবহার শুরু করার পরেও কেন যেনো ময়েশ্চারাইজার সঠিকভাবে কাজ করছে না? এর কারণ হতে পারে কিছু কমন ময়েশ্চারাইজার মিসটেকস। কোনো প্রোডাক্ট ত্বকে কার্যকারী ভূমিকা রাখার জন্য অবশ্যই সেই প্রোডাক্টটির সঠিকভাবে ব্যবহার প্রয়োজন। আসুন আজকের আলোচনায় জেনে নেই কী সেই কমন ময়েশ্চারাইজার মিসটেকস যা ব্যবহারের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে।
ময়েশ্চারাইজার আসলে কী?
ময়েশ্চারাইজার হলো এমন একধরনের প্রোডাক্ট যা ত্বকের আর্দ্রতা রক্ষা করে ও সুরক্ষার স্তর দৃঢ় করে। ত্বক করে মসৃণ ও কোমল এবং ত্বকের হাইড্রেশন লক করে। ময়েশ্চারাইজারের প্রধান উপাদানগুলোর মধ্যে পানি, অকলুসিভ, ইমোলিয়েন্ট, হিউমেকট্যান্ট উপাদান তালিকায় দেখা যায়। এছাড়াও থাকে বিভিন্ন ধরনের প্ল্যান্ট বেইজড ও ফ্লাওয়ার বেইজড অয়েল, অ্যাসেনশিয়াল অয়েল ইত্যাদি। ত্বকের ধরন অনুযায়ী এই উপাদানগুলোর পরিমাণও কম বেশি হয়ে থাকে। হিউমেকটেন্ট মূলত ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে, ইমোলিয়েন্ট ত্বক কোমল ও মসৃণ করে এবং অকলুসিভ ত্বকে ময়েশ্চারাইজেশন লক করে। ময়েশ্চারাইজার ত্বকের ওপরে একটি সুরক্ষার প্রলেপ সৃষ্টি করে এবং ত্বককে বাইরের ধুলোবালি ও ক্ষতিকর পদার্থ থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও ত্বকের এপিডার্মিস লেয়ার থেকে পানিশূন্যতা রোধ করে ও ন্যাচারাল অয়েল বজায় রাখে। কিছু কিছু মেডিকেটেড ময়েশ্চারাইজার ত্বকের ব্রণ, একনে, ইনফ্লামেশন কমাতে যথেষ্ট কার্যকর ভূমিকা পালন করে। বাজারে সব ধরনের ত্বকের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ময়েশ্চারাইজার পাওয়া যায়, এজন্যই ত্বকের ধরন বুঝে ময়েশ্চারাইজার নির্ধারণ করতে হবে।
কমন ময়েশ্চারাইজার মিসটেকস
অপরিষ্কার ত্বকে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা
অপরিষ্কার ত্বকে বিভিন্ন ধুলাবালি, ময়লা, ব্যাকটেরিয়া থাকে। এগুলো ত্বকের এপিডার্মিস লেয়ারের উপরে অবস্থান করে এবং পোরস বন্ধ করে ফেলে। অপরিষ্কার ত্বকে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে ময়েশ্চারাইজার এই ধুলোবালির লেয়ার অতিক্রম করে ত্বকে সঠিকভাবে পৌঁছাতে পারে না। ময়লা, ধুলো বালি, ব্যাকটেরিয়া ইত্যাদির সাথে ময়েশ্চারাইজারের অয়েল বেসড উপাদান যুক্ত হয়ে পোরসকে ক্লগড করে ফেলে যার কারণে একনের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। এছাড়াও অপরিষ্কার ত্বকে যে কোনো স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করলে তা ভালোভাবে কার্যকর হতে পারে না বরং ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। সুতরাং ত্বক ভালোভাবে পরিষ্কার করে তারপর ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
হাত পরিষ্কার না করে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা
বাইরের ধুলো বালি, রোগ জীবাণু, ব্যাকটেরিয়া ইত্যাদির সংস্পর্শে এসে আমাদের হাতের ত্বক অপরিষ্কার ও নোংরা হয়। যদি অপরিষ্কার হাত দিয়ে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা হয় তবে হাতে থাকা ময়লা, রোগ জীবাণু, ব্যাক্টেরিয়া ইত্যাদি ময়েশ্চারাইজারের সাথে কন্টামিনেশন ঘটায়। এর ফলে ত্বকে দেখা দেয় ব্রেক আউট, ফাঙ্গাল একনে, ব্রণের মতো সমস্যা। তাই ময়েশ্চারাইজার সহ যেকোনো স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহারের আগে অবশ্যই হাত ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিন।
শুষ্ক ত্বকে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের আরেকটি কমন মিসটেক হল একদম শুষ্ক ত্বকে ময়েশ্চারাইজার অ্যাপ্লাই করা। হালকা ভেজা অথবা ড্যাম্প ত্বকে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে শুষ্ক ত্বকে ব্যবহারের চেয়ে এর গুনাগুন বেড়ে যায় বহু গুনে। এতে ময়েশ্চারাইজারে থাকা অক্লুসিভ ও ইমোলিয়েন্ট খুব সহজেই ত্বকের উপরে থাকা পানিকে লক করতে পারে এবং সহজে পেনিট্রেট করতে পারে ত্বকের লেয়ারে । এখানে ভেজা বা ড্যাম্প বলতে মূলত বুঝানো হচ্ছে মুখ ধোয়ার পরে ভালোভাবে মোছার পর যে হালকা ভেজা ভাব ত্বকে থাকে সে অবস্থাকে। সুতরাং সম্পূর্ণ শুষ্ক ত্বকে ব্যবহারের চেয়ে ময়েশ্চারাইজার হালকা ড্যাম্প ত্বকে ব্যবহারের চেষ্টা করুন।
তৈলাক্ত ত্বকে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার না করা
তৈলাক্ত স্কিন যাদের তারা একটি কমন ভুল করে থাকেন তা হলো ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার না করা বা স্কিন কেয়ার থেকে ময়েশ্চারাইজার টোটালি স্কিপ করা। একটি সাধারণ ভুল ধারণা বা ‘মিথ’ হচ্ছে যে তৈলাক্ত স্কিনে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের কোনো প্রয়োজন নেই, যেহেতু তাদের ত্বকে সবসময়েই এক্সট্রা তেল থাকে। মনে রাখতে হবে ত্বক অতিরিক্ত তেল উৎপাদন করে তার মানে এই নয় যে সেটি ত্বকের ময়েশ্চারাইজেশনে ভূমিকা রাখে। কম্বিনেশন টু অয়েলি স্কিনও ডিহাইড্রেটেড হয়ে পড়ে ময়েশ্চারাইজেশনের অভাবে। এতে ত্বকের ব্যারিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ধীরে ধীরে ত্বকে হাইড্রেশনের অভাব দেখা দেয়। অয়েলি স্কিনের জন্য বাজারে মানানসই অনেক ধরনের ময়েশ্চারাইজার আছে। মানানসই ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারে ত্বক শুধু যে হাইড্রেশন পাবে তাই নয় বরং ত্বকের তৈলাক্ত ভাব বেশ অনেকটাই কমে আসে এবং নিজে থেকে অয়েলি হওয়াও কমে যায়। সুতরাং ত্বকের ধরন যেমনই হোক না কেন কখনোই ময়েশ্চারাইজার স্কিপ করা যাবে না।
প্রয়োজনের তুলনায় কম বা বেশি ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা
অনেকে আছেন যারা ময়েশ্চারাইজার হয় অতিরিক্ত পরিমাণে ব্যবহার করে ফেলে অথবা খুবই কম পরিমাণে ব্যবহার করে ফেলে, দুটোই ত্বকের জন্য খারাপ। শুষ্ক ত্বকের যারা তারা অনেক সময়ই ত্বকের শুষ্কতা কাটানোর জন্য প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করে ফেলেন , এতে আসলে কোনো লাভ হয় না। তাই শুষ্ক ত্বক যাদের তারা একটি হাইড্রেটিং সিরাম ব্যবহার করতে পারেন। কারণ প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত পরিমাণে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারে ত্বক অতিরিক্ত তেলতেলে দেখায় এবং পোরস ক্লগড হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। ঠিক তেমনি প্রয়োজনের তুলনায় কম পরিমাণে ব্যবহারও ত্বকের নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়। ময়েশ্চারাইজারে থাকা গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলো অল্প পরিমাণে ব্যবহারের কারণে কার্যকর হতে পারে না, এছাড়াও ত্বকে হাইড্রেশনের ঘাটতি দেখা দেয়। সুতরাং ত্বকে ময়েশ্চারাইজারের সঠিক পরিমাণ ব্যবহার করা জরুরী। কপালে, নাকের উপরে, দুই গালে এবং চিবুকে অল্প পরিমাণে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে আংগুল দিয়ে ড্যাব ড্যাব করে ব্যবহার করুন।
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের সময় ত্বক খুব জোরে ঘষাঘষি করা
আমাদের শরীরের সব থেকে সেনসিটিভ পার্ট হচ্ছে আমাদের ফেইসের স্কিন। সাধারণত অতিরিক্ত ঘষাঘষি, খুব জোরে ম্যাসাজ করলে ত্বকের এপিডার্মিস লেয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলাফল ত্বকের উপরের লেয়ার সেনসিটিভ হয়ে পড়ে এবং ত্বকে বলিরেখা, ফাইন লাইনস ও নানা ধরনের দাগের সৃষ্টি হয়। এতে ত্বকের ব্যারিয়ার ড্যামেজ হয়। স্কিন কেয়ারের যে কোনো প্রোডাক্ট স্কিনে অ্যাপ্লাই করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট হালকা হাতে আঙ্গুলের সাহায্যে ড্যাব ড্যাব করে আলতো ম্যাসাজের মাধ্যমে ব্যবহার করা উচিত।
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের ক্ষেত্রে নেক এরিয়ায় না লাগানো
আমাদের ফেইসের পাশাপাশি আমাদের গলার স্কিন অথবা নেক এরিয়াও বেশ পাতলা, নরম ও সেনসিটিভ। মুখের পাশাপাশি তাই নেক এরিয়ার যত্ন নেওয়াও প্রয়োজন। সুতরাং যখনই ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন না কেন অথবা যে কোনো স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টের ক্ষেত্রে অবশ্যই নেক এরিয়া বাদ দেওয়া যাবে না।
আশা করি এই কমন ময়েশ্চারাইজার মিসটেকস এড়িয়ে চললেই আপনাদের ময়েশ্চারাইজার তার কার্যকারিতা ভালোভাবে দেখাতে শুরু করবে। ময়েশ্চারাইজারসহ যেকোনো স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট ইউজ করার ক্ষেত্রে চেষ্টা করুন অথেনটিক প্রোডাক্ট চুজ করার। অথেনটিক মেকআপ, স্কিনকেয়ার ও হেয়ারকেয়ার প্রোডাক্টসের জন্য আমি সবসময়ই সাজগোজ এর উপর ভরসা রাখি। আপনারাও ভিজিট করুন সাজগোজের ওয়েবসাইট, অ্যাপ বা ফিজিক্যাল স্টোরে। সাজগোজের বেশ কয়েকটি ফিজিক্যাল শপ রয়েছে। এ শপগুলো যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত সম্ভার, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, ইস্টার্ন মল্লিকা, ওয়ারীর র্যাংকিন স্ট্রিট, বসুন্ধরা সিটি, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে), মিরপুরের কিংশুক টাওয়ারে ও চট্টগ্রামের খুলশি টাউন সেন্টারে অবস্থিত। এই শপগুলোর পাশাপাশি চাইলে অনলাইনে শপ.সাজগোজ.কম থেকেও কিনতে পারেন আপনার দরকারি বা পছন্দের সব প্রোডাক্টস।
ছবিঃ সাজগোজ।