আমরা সকলেই চাই দীপ্তিময় ত্বকের অধিকারী হতে। আর তার জন্য চাই ত্বকের নিয়মিত যত্ন এবং পরিচর্যা। সাধারণত টিনএজ থেকেই আমাদের ত্বকে বিভিন্ন পরিবর্তন আসতে শুরু করে। তাই তখন থেকেই ত্বকের প্রয়োজনীয় যত্ন নেয়া শুরু করা উচিত। আর সেই যত্নটা নিতে হবে অবশ্যই ত্বকের ধরন বুঝে। কারণ সব প্রোডাক্ট সব ধরনের ত্বকের সাথে যায় না। আর সেই সম্পর্কে আপনাদের কিছু ধারনা দিতেই আজকের এই লেখা। তাহলে আসুন জেনে নেয়া যাক কোন ধরনের ত্বকে কোন প্রোডাক্ট ব্যবহার করবেন সে সম্পর্কে।
প্রসঙ্গত প্রোডাক্টগুলো সম্পর্কে আপনাদের জিজ্ঞাসা থাকতেই পারে। কোথা থেকে পাবেন? আদৌ আসল পণ্য নাকি নকল পণ্য কিনছেন? দাম কত? আপনার সুবিধার্থে সাজগোজ পুরো প্রক্রিয়াটি সহজতর করে তুলেছে SAPPHIRE ( সাফায়ার) এর মাধ্যমে। পণ্যটি সম্পর্কে জানতে এবং কিনতে, দেয়া লিঙ্কগুলোতে ক্লিক করুন।
১। তৈলাক্ত ত্বকঃ
যাদের ত্বক তৈলাক্ত তাদের মুখে সাধারণত একটা তেল চকচকে ভাব থাকে, বিশেষ করে টি- জোনে। তার মানে কপাল থেকে শুরু করে নাক বরাবর থুতনির দিকে তেলের পরিমাণ বেশি থাকে। ত্বকে বড় বড় লোমকূপ দেখা যায় এবং সিবাকাস নামক তেল উৎপন্ন করে এমন গ্ল্যান্ডের ওভার প্রোডাকশন এর কারণে ত্বক খুব ব্ল্যাক হেড এবং ব্রণপ্রবণ হয়ে থাকে। তাই তৈলাক্ত ত্বকের জন্য চাই বিশেষ যত্ন। দিনে ২-৩ বার ফেইস ওয়াশ দিয়ে মুখ ধুতে হবে এবং সপ্তাহে ২ বার স্ক্রাব দিয়ে মুখ এক্সফলিয়েট করতে হবে যাতে মৃত কোষ দূর হয়ে যায়। অনেকেরই একটা ভুল ধারনা রয়েছে যে তৈলাক্ত ত্বকে ময়েশ্চরাইজার ব্যবহার করা লাগে না। কথাটি ঠিক নয়। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য অয়েল-ফ্রি ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। আর সপ্তাহে কমপক্ষে ১ বার ফেইস প্যাক ব্যবহার করতে হবে।
ফেইস ওয়াশ –
-Himalaya Herbal Neem Face wash
-The Body Shop’s Tea Tree Face Wash
ময়েশ্চরাইজার-
-Lotus herbals alphamoist oil-free moisturizer
-Neutrogena oil-free moisturizer
– The Body Shop’s Mattifying Seaweed Moisturizer
ফেইস প্যাক-
– এক চা চামচ মুলতানি মাটি এবং গোলাপ জল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে মুখে লাগান। শুকালে ধুয়ে ফেলুন। এই মাস্কটি স্কিনের অয়েল নিয়ন্ত্রণে রাখে।
– পরিমাণ মত শশার রস, লেবুর রস এবং মধু মিশিয়ে মুখে লাগান। ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বকে উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনে এবং ত্বক মসৃণ করে।
২। শুষ্ক ত্বকঃ
শুষ্ক ত্বক সাধারণত নিষ্প্রাণ, পাতলা এবং রুক্ষ হয়ে থাকে। যখন অয়েল গ্ল্যান্ড পর্যাপ্ত পরিমাণে তেল উৎপন্ন করতে পারে না তখনই ত্বক শুষ্ক এবং ডিহাইড্রেটেড হয়ে যায়। শুষ্ক ত্বকের খারাপ একটি দিক হচ্ছে এই ত্বকে বার্ধক্যের লক্ষণ গুলো খুব তাড়াতাড়ি দেখা দেয়। তবে চিন্তার কোন কারণ নেই। সঠিক পরিচর্যা ও যত্নের মাধ্যমে শুষ্ক ত্বককে করে তুলতে পারেন মসৃণ এবং নমনীয়। সেজন্য প্রথমেই যেটা করতে হবে সেটা হলো ত্বক কে হাইড্রেটেড রাখার জন্য দিনে কম্পক্ষে ৮-১০ গ্লাস পানি খেতে হবে। পানি ত্বককে হাইড্রেটেড রাখার পাশাপাশি দেহ থেকে বিভিন্ন বজ্র্য পদার্থ বের করে দেয়। মুখ ভালো একটি ক্লিনজার/ফেইস ওয়াশ দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। শুষ্ক ত্বকের জন্য বিভিন্ন ফেইস ওয়াশ বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। দিনে ২ বার দিয়ে মুখ ধুতে হবে। সেটা হতে পারে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এবং সকালে ঘুম থেকে উঠার পর। তার পরের ধাপটি হলো ভালো একটি ময়েশ্চরাইজার ব্যবহার করা। এই ধাপটি হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ । কারণ শুষ্ক ত্বকের প্রাথমিক প্রয়োজনই হচ্ছে সঠিক ময়েশ্চারাইজেশন। আর কখন বা কতটুকু ব্যবহার করবেন সেটা আপনার ত্বকই বলে দেবে। যখনই ত্বক টাইট বা শুষ্ক অনুভূত হবে তখনি ময়েশ্চরাইজার ব্যবহার করুন। এছাড়া প্রত্যেকবার মুখ ধোওয়ার পরই ময়েশ্চরাইজার লাগান।
ফেইস ওয়াশ-
-The Body Shop’s Vitamin E Cream Cleanser
– Himalaya Herbals Gentle Hydrating Face Wash
– Lakme Gentle and Soft Deep Pore Cleanser
ময়েশ্চারাইজার-
– The Bodyshop’s Vitamin E moisturiser
– Olay Natural White Day Cream
ফেইস প্যাক-
-পাকা পেঁপের একটি টুকরা নিয়ে পেস্ট করে মুখে লাগান। শুকালে ধুয়ে ফেলুন। এটি শুষ্ক ত্বকের জন্য খুব ভালো একটি ফ্রুট মাস্ক।
– ২ চা চামচ মধু, একটি ডিমের সাদা অংশ, ২ চা চামচ গ্লিসারিন, ২ চা চামচ ময়দা ভালো ভাবে মিশিয়ে পেস্ট করে মুখে লাগান। ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। ত্বক নরম এবং উজ্জ্বল হবে।
৩। সেনসিটিভ ত্বকঃ
যাদের ত্বক সেনসিটিভ তাদের সবসময়ই খুব ঝামেলায় থাকতে হয়। না জানি কখন কোন প্রোডাক্টে ত্বক রিয়্যাকশন দেখায়। কারণ এই ধরনের ত্বক কিছু নির্দিষ্ট প্রোডাক্ট বা উপাদানের প্রতি অত্যন্ত প্রতিক্রিয়াশীল। সেনসিটিভ ত্বকে সাধারণত লালচে ভাব দেখা দেয় এবং এলার্জি প্রবণ হয়ে থাকে। একেক জনের একেক প্রোডাক্টে সেনসিটিভিটি থাকতে পারে। একজনের ত্বক যে প্রোডাক্টে রিয়্যাকশন দেখায়, অন্য জনের সেটাতে নাও দেখাতে পারে। তাই সেনসিটিভ ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার জন্য এই ত্বকের চাই বিশেষ যত্ন। সঠিক প্রোডাক্ট ব্যবহারের মাধ্যমে এই ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা ম্যানেজ করা সম্ভব। বিভিন্ন ত্বক বিশেষজ্ঞদের মতে, ডিওডোরেন্ট সোপ বা অতিমাত্রায় সুগন্ধযুক্ত সোপে রয়েছে শক্তিশালী ডিটারজেন্ট যা সেনসিটিভ ত্বকে একদমই ব্যবহার করা উচিত নয়। তাই ক্লিনজার বা ফেইস ওয়াশ কেনার সময় এসব জিনিস দেখে নিতে হবে এবং সেনসিটিভ ত্বকের জন্য যে আলাদা ফেইস ওয়াশ রয়েছে সেটা কিনতে হবে। ময়েশ্চারাইজার কেনার সময় দেখে নিতে হবে যাতে কম উপাদান রয়েছে এবং হালকা বা কোন সুগন্ধ নেই। আর সেসব প্রোডাক্ট বর্জন করতে হবে যেগুলোতে এন্টি ব্যাক্টেরিয়াল প্রপার্টিস, অ্যালকোহল এবং রেটিনয়েডস বা আলফা হাইড্রক্সি এসিড রয়েছে এবং বাইরে যাওয়ার আগে অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে।
ফেইস ওয়াশ-
– Cetaphil gentle cleanser for sensitive skin
– The Bodyshop’s Aloe Calming Facial Cleanser
ময়েশ্চারাইজার-
– Neutrogena moisturizer for sensitive skin
-The Bodyshop’s Aloe Soothing Moisturiser
ফেইস প্যাক-
-অর্ধেক কলা, ১ চা চামচ টক দই এবং ডিমের সাদা অংশ ভালো ভাবে মিশিয়ে মুখে লাগান। ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।
– একটি সেদ্ধ গাজর এবং ২ চা চামচ মধু মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। মুখে লাগিয়ে শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। শুকালে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
লিখেছেনঃ নাহার
ছবিঃ ন্যাচারালকেয়ার.বডিএক্সবিউটি.কম