ড্যামেজড হেয়ার নিয়ে চিন্তিত? ইদানিং এতো বেশি পল্যুশন, ধুলোময়লা; এতে আমাদের চুল খুব তাড়াতাড়ি ফ্রিজি আর ড্রাই হয়ে যায়। সেই সাথে হিট প্রোটেকটর ছাড়া রেগুলার হিট স্টাইলিং, হেয়ার স্প্রে এর ব্যবহার, কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট- সব মিলিয়ে চুলের বারোটা বেজে যায়! কি ঠিক বললাম তো? সুস্থ, সুন্দর আর ঝলমলে চুল কীভাবে পাবো, এটাই সবথেকে বড় চিন্তা। মাত্র ১ মাসেই ড্যামেজড হেয়ার রিপেয়ার করা পসিবল! দেরি না করে জেনে নেই চলুন।
হেয়ার ড্যামেজের বিভিন্ন ধরন
সল্যুশন জানার আগে হেয়ার ড্যামেজের বিভিন্ন ধরন সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-
কেমিক্যাল ড্যামেজ
পার্মানেন্ট হেয়ার স্ট্রেইটনিং, রিবন্ডিং, পার্মিং এগুলো চুলের অভ্যন্তরীণ গঠন ও টেক্সচারকে পরিবর্তন করে দেয়। এই কেমিক্যাল ট্রিটমেন্টের পরে সঠিকভাবে চুলের যত্ন না নিলে হেয়ার ব্রেকেজ বা আগা ফাটার মতো সমস্যা হতে পারে।
কালার ড্যামেজ
অনেক সময় হেয়ার কালারে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড (ব্লিচিং এজেন্ট) ও অ্যামোনিয়া থাকে, যা হেয়ার কিউটিকলগুলো ওপেন করে দেয়। এর ফলে হেয়ার স্ট্রাকচারে বিরূপ প্রভাব পড়ে। বার বার যখন এই ধরনের এজেন্ট আপনার চুলে ব্যবহার করা হচ্ছে, তখন চুল খুব স্বাভাবিকভাবেই দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে যায়।
ফ্রিজিনেস, ড্রাইনেস
কালার বা কোনো কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট না করলেও চুল অনেক সময় রাফ হয়ে যায়। হাইড্রেশনের অভাবে, সঠিক পদ্ধতিতে চুলের যত্ন না নিলে, সূর্যরশ্মির কারণে, কন্ডিশনিং না করার জন্য- এমন বিভিন্ন কারণেই কিন্তু হেয়ার ড্যামেজ হতে পারে। ফ্রিজিনেস, ড্রাইনেস, ব্রেকেজ এগুলো সবই ড্যামেজড হেয়ারের লক্ষণ।
এছাড়াও হিট স্টাইলিং টুলস রেগুলার ইউজ করা, ওয়েদার চেঞ্জ, হার্শ ইনগ্রেডিয়েন্টযুক্ত প্রোডাক্টের ব্যবহার, পুষ্টির অভাব এমন নানা কারণেই চুল ড্যামেজ হয়ে যেতে পারে।
মাত্র ১ মাসেই ড্যামেজড হেয়ার রিপেয়ার
আজ একদম সিম্পল ও মিনিমাল হেয়ার কেয়ার রুটিন শেয়ার করবো যা ফলো করলে মাত্র ১ মাসেই ড্যামেজড হেয়ারে ভিজিবল চেঞ্জ দেখতে পাবেন। তবে হেয়ার কতটুকু ড্যামেজ হয়েছে, আপনার লাইফস্টাইল কেমন, কী কী প্রোডাক্ট ব্যবহার করছেন, এসব কিছুই কিন্তু এর সাথে জড়িত। চলুন দেখে নেই হেয়ার কেয়ার স্টেপগুলো-
১) কনসার্ন অনুযায়ী শ্যাম্পু সিলেক্ট করুন
প্রথমেই আপনাকে নজর দিতে হবে শ্যাম্পুর ইনগ্রেডিয়েন্টে। নারিশিং ও ময়েশ্চারাইজিং ইনগ্রেডিয়েন্ট থাকবে, ড্রাই না করেই প্রোপারলি ক্লিন করবে, চুলকে শাইনি ও সফট রাখবে- এমন শ্যাম্পু আপনাকে বেছে নিতে হবে। বানানা, এগ প্রোটিন, অ্যালোভেরা, কোলাজেন, বায়োটিন, কোকোনাট মিল্ক এই উপাদানগুলো ড্রাই ও রাফ হেয়ারে বেশ ভালো কাজ করে। যদি হেয়ার কালার করা থাকে, তাহলে কালার প্রোটেকশন হেয়ার কেয়ার রেঞ্জ বেছে নিন।
ফ্রিজি ও ডাল হেয়ারের সল্যুশনে আমি বেছে নিয়েছি ‘স্কিন ক্যাফে বানানা শ্যাম্পু উইথ এগ প্রোটিন’। এটি স্ক্যাল্প ও হেয়ার প্রোপারলি ক্লিন করার পাশাপাশি চুলকে সফট, সিল্কি করতে হেল্প করে। এতে আছে বানানা ও এগ প্রোটিন, যা ড্যামেজড হেয়ার রিপেয়ারে দারুণ কাজ করে।
২) কন্ডিশনিং করতে ভুলবেন না
অনেকেই যেই ভুলটা করেন, শ্যাম্পুর পর চুলে কন্ডিশনার অ্যাপ্লাই করেন না! এতে কিন্তু চুলের রুক্ষতা, শুষ্কতা আরও বেড়ে যায়। শ্যাম্পুর পর কন্ডিশনার অ্যাপ্লাই করলে হেয়ার কিউটিকল স্মুথ হয়, হেয়ার ব্রেকেজ প্রিভেন্ট হয়, চুলের ন্যাচারাল ময়েশ্চার রিস্টোর হয়। তাই যতবারই আপনি শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন, অবশ্যই চুলে কন্ডিশনিং করতে হবে। আর উইকে অন্তত ১ বার ডিপ কন্ডিশনিং হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন, এতে খুব তাড়াতাড়ি ড্যামেজড হেয়ার রিপেয়ার করা পসিবল।
৩) হেয়ার অয়েলিং কিন্তু মাস্ট
মাত্র ১ মাসেই ড্যামেজড হেয়ার রিপেয়ার করা সম্ভব যদি আপনি প্রোপার ওয়েতে চুলের যত্ন নিতে পারেন। সপ্তাহে অন্তত ২ দিন চুলে তেল দিতে হবে, যাতে চুল প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও আর্দ্রতা পায়। ড্রাই ও ড্যামেজড হেয়ারের জন্য নারকেল তেলের পাশাপাশি এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল সাজেস্ট করা হয়। কারণ অলিভ অয়েলে আছে Squalene, Oleic acid এর মতো ময়েশ্চারাইজিং ইনগ্রেডিয়েন্টস। অলিভ অয়েল ও কোকোনাট অয়েল একসাথে মিক্স করে স্ক্যাল্প ও চুলে অ্যাপ্লাই করে ১ ঘন্টা অপেক্ষা করুন। এরপর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিন।
৪) হেয়ার রিপেয়ার মাস্ক অ্যাপ্লাই করুন
সপ্তাহে অন্তত একদিন চুলের যত্নে বেছে নিন RAJKONNA HAIR REPAIR MASK যা ১০০% ন্যাচারাল ও অর্গানিক। এতে আছে আমলা, রিঠা, হেনা সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদানের পারফেক্ট ব্লেন্ডিং। চুলের লেন্থ অনুযায়ী রাজকন্যা হেয়ার রিপেয়ার মাস্ক নিন, এতে যোগ করুন ২ চা চামচ টকদই আর ২ চা চামচ নারকেল তেল। এবার সব উপাদান একসাথে মিক্স করে চুলে অ্যাপ্লাই করে ২০-৩০ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন শ্যাম্পু দিয়ে। ব্যস, এই মাস্কটি ম্যাজিকের মতো ড্যামেজড হেয়ার রিপেয়ার করবে।
একনজরে দেখে নিন এই হেয়ার রিপেয়ার মাস্কে কোন কোন উপাদান আছে এবং এগুলোর বেনিফিট কী-
- আমলা- চুল পড়া কমিয়ে আনে
- হেনা- স্ক্যাল্প ও চুলে নারিশমেন্ট প্রোভাইড করে
- নিম- হেয়ার গ্রোথে হেল্প করে
- রিঠা- হেয়ার টেক্সচার ইম্প্রুভ করে চুলকে হেলদি করে তোলে
- ব্রাহ্মী ও ভৃঙ্গরাজ- চুলে নারিশমেন্ট প্রোভাইড করে, ব্রেকেজ প্রিভেন্ট করে
এই একটি মাস্কেই কিন্তু অনেকগুলো প্রাকৃতিক উপাদান একসাথে পেয়ে যাচ্ছেন। মাত্র ১ মাসেই ড্যামেজড হেয়ার রিপেয়ার করতে এই ছোট্ট প্রোডাক্টটি কিন্তু একদম ব্লেসিং!
দেখলেন তো, মাত্র ৪টি প্রোডাক্ট দিয়েই ড্রাই, ডাল হেয়ারের সল্যুশন পাওয়া যায়! হেয়ার ড্যামেজ প্রিভেন্ট করতে কিছু বিষয় আপনাকে খেয়াল করতে হবে। চলুন সেগুলো জেনে নেই এবার।
বোনাস টিপস
হিট প্রোটেকটর সিরাম বা স্প্রে ব্যবহার করা
যেই কাজটি আপনার হেয়ার ড্যামেজ প্রিভেন্ট করবে এবং চুলকে হেলদি রাখতে হেল্প করবে, সেটা হচ্ছে হিট প্রোটেকটর সিরাম বা স্প্রে ব্যবহার করা। এগুলো এমনভাবে ফর্মুলেট করা হয় যা উচ্চমাত্রার তাপ থেকে হেয়ার কিউটিকলকে সুরক্ষিত রাখে। এমনিতে যাদের একদম ড্রাই ও ড্যামেজড হেয়ার, তাদেরকে হিট স্টাইলিং টুলস থেকে দূরে থাকতে বলা হয়। যদি করতেই হয়, তাহলে আগে হিট প্রোটেকটর সিরাম বা স্প্রে ব্যবহার করুন।
হেলদি ডায়েট চার্ট ফলো করা
বাইরে থেকে আপনি যতই চুলের যত্ন নিন না কেন; আপনার ফুড মেন্যুতে যদি প্রোটিন, বায়োটিন, আয়রন এই পুষ্টি উপাদানগুলো মিসিং থাকে তাহলে কিন্তু সবই বৃথা। তাই খাদ্যাভ্যাসে পজেটিভ চেঞ্জ আনতে হবে। ডিম, বাদাম, ফলমূল, সবজি, মাছ এগুলো অবশ্যই খেতে হবে। সেই সাথে দরকার পরিমিত ঘুম।
তাহলে বুঝতে পারলেন কীভাবে ঘরে বসে মাত্র ১ মাসেই ড্যামেজড হেয়ার রিপেয়ার করা যায়! মাত্র কয়েকটি স্টেপস ফলো করলেই কিন্তু চুল হয়ে উঠবে সুন্দর, ঝলমলে আর প্রাণবন্ত। চুলের যত্ন নিতে অনলাইনে অথেনটিক প্রোডাক্ট কিনতে পারেন শপ.সাজগোজ.কম থেকে অথবা সাজগোজের ৪টি শপ- যমুনা ফিউচার পার্ক, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, উত্তরার পদ্মনগর ( জমজম টাওয়ারের বিপরীতে) ও সীমান্ত সম্ভার থেকেও বেছে নিতে পারেন আপনার পছন্দের প্রোডাক্টটি।
ছবি- সাজগোজ