শরীরকে পানিশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন থেকে রক্ষা করতে পর্যাপ্ত পানি পান করা অত্যন্ত জরুরি। কারণ শরীরে পানির অভাব হলে মানসিক শ্রান্তি, মাথা ব্যথা, ত্বকের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া, পেশীর সমস্যা, নিম্ন রক্তচাপের মতো আরও নানা সমস্যার সৃষ্টি করে। বিশেষজ্ঞরা সবসময় বলেন দৈনিক অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করতে। একজন পূর্ণবয়স্ক নারীর শরীরে পানির পরিমাণ থাকতে হবে ৪৫-৬০% আর একজন পূর্ণবয়স্ক পুরুষের শরীরে পানির পরিমাণ থাকতে হবে ৫০-৬৫%। চলুন তবে পানিশূন্যতা প্রতিরোধের খাবার সম্পর্কে একটু বিস্তারিত দেখে নেয়া যাক!
পানিশূন্যতা প্রতিরোধের খাবার নিয়ে গুরুত্বপূর্ন কথা
কোথায় জমা থাকে এই পানিগুলো?
শরীরের বিভিন্ন অংশ | পানির পরিমাণ (%) |
ব্রেইন এবং হার্ট (brain and heart) | ৭৩% |
শ্বাসযন্ত্র (Lungs) | ৮৩% |
স্কিন (skin) | ৬৪% |
কিডনি ও পেশী (kidney and muscles) | ৭৯% |
হাড় (bone) | ৩১% |
শরীরে পানি কেন প্রয়োজন?
১) খাবার থেকে প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট শরীরের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছানো
২) ইউরিনের মাধ্যমে শরীর থেকে সব বর্জ্য দূর করা।
৩) শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখা।
৪) সংবেদনশীল টিস্যুগুলোকে রক্ষা করা।
৫) ব্রেইন এবং গর্ভের সন্তানকে রক্ষা করা।
৬) রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।
৭) স্কিন এবং হেলথ ভালো রাখতে সহায়ক।
৮) কিডনিকে ড্যামেজ হওয়া থেকে রক্ষা করে।
৯) পুরো শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ করতে সহায়তা করে।
পানিশূন্যতা প্রতিরোধের খাবার
পানি পানের সাথে সাথে কিছু বিশেষ খাবার খেয়েও পেতে পারেন পানিশূন্যতা থেকে মুক্তি! কথা হবে পানিশূন্যতা প্রতিরোধের খাবার নিয়ে।
১. শসা
শসাতে প্রায় ৯৫ শতাংশ পানি থাকে। শসা খুবই কম ক্যালোরি সম্পন্ন এবং এতে আছে ভিটামিন কে, পটাসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম। তাই এটি ওজন নিয়ন্ত্রণসহ ডিহাইড্রেশন দূরীকরণেও দারুণ ভূমিকা রাখে।
২. লেটুস
এতে আছে প্রায় ৯৬% পানি। তাই বুঝতেই পারছেন প্রতিদিনের খাবারে লেটুস রাখাটা শরীরের জন্য কতটা মঙ্গলের। তাছাড়া লেটুসে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ ও কে যা হাড় ও ইমিউন সিস্টেমকে ভালো রাখে। আর শরীরকে পানিশূন্য হতে দেয় না একদমই।
৩. স্ট্রবেরি
এর ৯১ শতাংশই পানি। এতে আছে ফাইবার, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ভিটামিন ও মিনারেলস। ডিহাইড্রেশন, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার ইত্যাদি থেকে দেহকে রক্ষা করে। তাছাড়া ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং ইমিউন সিসটেমকে ফিট রাখাতেও স্ট্রবেরির তুলনা নেই।
৪. কমলা
এর ৮৮%-ই পানি। জানেন কি একটা কমলায় আধা কাপ পানি থাকে। তাছাড়াও এতে আছে ভিটামিন সি, পটাসিয়াম এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস। ডিহাইড্রেশন ছাড়াও কমলা কিডনিতে পাথর হওয়াও রোধ করে।
৫. টক দই
টক দইয়ের প্রায় ৮৮ ভাগই পানি। তাছাড়া আছে ভিটামিনস ও মিনারেলস যা হাড় মজবুত রাখতে সহায়তা করে। এতে আছে প্রচুর প্রোটিন। টক দই ডিহাইড্রেশন, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং ওজন কমানোর জন্য উৎকৃষ্ট একটি খাবার।
৬. তরমুজ
তরমুজে প্রায় ৯২ শতাংশ পানি থাকে। ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধের খুবই কার্যকর একটি উৎস এটি। ভিটামিন এ ও সি, ম্যাগনেসিয়াম, ফাইবার এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর তরমুজ ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং ওজন কমানোর জন্য খুবই কার্যকর ভূমিকা রাখে।
৭. টমেটো
টমেটোর ৯৪ শতাংশই পানি। এতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিনস, মিনারেলস এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস। টমেটো প্রোস্টেট ক্যান্সার এবং হৃদরোগ প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর। তাই সুপ, সালাদ, তরকারি ইত্যাদিতে প্রতিদিন কমবেশি টমেটো রাখার চেষ্টা করুন।
৮. ফুলকপি
এটি অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং হাইড্রেটিং একটি সবজি। এতে ৯২% পানি আছে। তাই ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধে এটি দারুণ কাজ করে নিঃসন্দেহে। তাছাড়া এতে আছে প্রচুর ভিটামিনস ও মিনারলস যা ব্রেইন ও মেটাবোলিজম ভালো রাখে।
৯. বাঁধাকপি
বাঁধাকপির ৯২ শতাংশই পানি। এতে আছে ভিটামিন সি ও কে, বিভিন্ন মিনারেলস এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস যা ইনফ্লামেশন, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং কিছু ক্যান্সারের প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। আর ডিহাইড্রেশন দূরীকরণে এই সবজির জুড়ি নেই।
১০. ডাব
ডাবে ৯৫% পানি থাকে। ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধে ডাবের পানিকে বলা হয় খুবই কার্যকর ও সুস্বাদু একটি উৎস। তাছাড়া এতে পটাশিয়াম, সোডিয়াম ও ক্লোরাইডও আছে। ব্যায়ামের পর ডাবের পানি একটা এনার্জি ড্রিংকের মতো কাজ করে। তাছাড়া এটি ব্লাড প্রেশার কমায় বলে উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য খুবই ভালো। হৃদরোগ ও কিডনিতে পাথর প্রতিরোধ করে।
এই তো জানলেন পানিশূন্যতা প্রতিরোধের খাবার সম্পর্কে। পানিশূন্যতা প্রতিরোধের খাবার খাওয়ার অভ্যাস করে ফেলতে হবে। ফলে শরীর সবসময় হাইড্রেটেড থাকবে। ডিহাইড্রেশন থেকে নিজেকে এবং পরিবারের সবাইকে নিরাপদে রাখুন। সুস্থ থাকুন।
ছবি- সংগৃহীত: সাটারস্টক