শুধু কি মুখের সৌন্দর্য বাড়াতে দাঁত? বরং খাবার খাওয়ার কাজটি অত্যন্ত দক্ষতার সাথেই পালন করছে দাঁত। আর এই দাঁত আমাদের শরীরের এক অপরিহার্য অংশ বা বলা যায় দাঁত আমাদের মূল্যবান সম্পদ। বাংলাতে একটি প্রবাদ বাক্য আছে, আমরা দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা বুঝি না। দাঁত না থাকলে যেমন কোন কিছু খাওয়াও সম্ভব না তেমনি আমাদের শারীরিক সৌন্দর্যের ব্যাঘাত ঘটে। একটু অসচেতনার কারণে আপনি হারাতে পারেন আপনার মূল্যবান দাঁত। দাঁত ক্ষয় বা ডেন্টাল ক্যারিজ (Dental caries) তারই পূর্বের লক্ষণ। দাঁতের ক্ষয় রোধ নিয়ে কতটা জানেন আপনি? চলুন জেনে নেই বিস্তারিত।
কোন খাদ্য বা পানীয়তে কী পরিমান পিএইচ আছে?
এসিডিক খাবার খাওয়ার পরে মুখ ভালো ভাবে ওয়াশ করা না হলে দাঁতের ফাঁকে ফাঁকে খাদ্যকনা জমতে থাকে। ব্যাকটেরিয়া দাঁতের গোড়ায় লেগে থাকা খাবারে ল্যাকটিক এসিড তৈরি করে। দাঁতের ক্ষয় রোগের জন্য মূলত দায়ী করা হয় ল্যাকটিক এসিডকে। দাঁতের এনামেল থেকে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থ বের হয়ে যায়। এর ফলে দাঁতের ক্ষয়রোগ দেখা দেয়। পানীয় ও খাদ্যের মধ্যকার এসিড দন্ত ক্ষয়ের কারণ। “পিএইচ-এর পরিমাণ যত কম হবে পানীয় ও খাদ্য তত এসিডিক হবে”। তো চলুন জেনে নিই কোন খাদ্য বা পানীয়তে কী পরিমাণে পিএইচ বিদ্যমান।
আজকের সামান্য দাঁতের ক্ষয়, যা পরবর্তীতে অনেক ভয়ানক আকার ধারণ করতে পারে। কিন্তু কিছু সহজ অভ্যাসের গড়ে তোলার মাধ্যমে বা একটু সচেতন হলেই আমরা বেশ সহজেই প্রতিরোধ করতে পারি দাঁতের ক্ষয়। এই অভ্যাসগুলো ছোট বড় সকলের গড়ে নেয়া উচিত।
দাঁতের ক্ষয় রোধ করতে করণীয় কী?
১) সঠিক নিয়মে নিয়মিত ব্রাশ
প্রতিদিন অন্তত ২ বার দাঁত ব্রাশ করা উচিত। কিন্তু অনেকেই রাতের বেলা দাঁত ব্রাশ করে না। কিন্তু রাতের বেলাই জীবাণুর আক্রমণে দাঁতের ক্ষয় বেশি হয়। অনেকেই নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করার পরও দাঁতের ক্ষয় রোগে ভোগেন। এর কারণ হলো ঠিকমত ব্রাশ দিয়ে দাঁত ব্রাশ না করা। অনেকেই ভুলভাল দাঁতের ওপর ব্রাশ ঘষে থাকে। কিন্তু দাঁত ব্রাশের সঠিক নিয়ম হলো উপর থেকে নিচের দিকে ব্রাশ করা।
২) মাউথওয়াশ
আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষই মাউথওয়াশ ব্যবহার করেন না। মনে করেন দাঁত ব্রাশ করলেই চলবে। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ দাঁতের সুরক্ষার জন্য ছোট বড় সকলের মাউথওয়াশ ব্যবহার করা উচিত। এতে আপনার মুখের ভেতরের জীবাণু দূর হবে, আপনি রিফ্রেশিং ফিলিং পাবেন, মুখের দুর্গন্ধ দূর হবে।
৩) খাওয়া-দাওয়া
প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার দাঁতের ক্ষয়রোধে সাহায্য করে। বিভিন্ন ধরনের খাবার যেমন দুধ, মাখন, দই, শাক, ব্রকলিতে উচ্চ মাত্রার ক্যালসিয়াম থাকে। এতে দাঁতের ক্ষয় রোধ হয়। প্রতিদিন খাবার তালিকায় মাছ, শাকসবজি, দুধ ও আঁশযুক্ত সবজি রাখুন এবং প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে। পানি ডেন্টাল ফ্লসের ভূমিকা পালন করে। রাতে ঘুমানোর আগে চিনিজাতীয় খাবার বা মিল্ক চকলেট খেলে দাঁত ক্ষয় হওয়ার চান্স থাকে। তাই মজবুত দাঁত পেতে হলে খাওয়া-দাওয়ার বিষয়টিও খেয়াল রাখতে হবে!
এ খাবারগুলো খেলে এবং উপরে বর্ণিত কথাগুলো একটু সচেতনতার সাথে মেনে চললে আপনার দাঁতের ক্ষয়রোধের ঝুঁকি অনেকাংশেই কমে আসে। তারপরও দাঁতের সুস্থতা এবং ক্ষয়রোধের জন্য বছরে অত্যন্ত একবার হলেও দাঁতের চেকআপ করতে একজন ডেন্টিস এর কাছে যাওয়া উচিত।
ছবিঃ সংগৃহীতঃ সাটারস্টক