আমাদের দেশের কনটেক্সটে ডিটক্স ওয়াটার বা ইনফিউসড ওয়াটার শব্দটা একেবারেই নতুন। লোকে বলে এর সাহায্যে নাকি এক দুই সপ্তাহের মাঝে সব মেদ ঝরিয়ে ফেলা যায়, আবার অনেকে বলে এটা নাকি মসৃণ, উজ্জ্বল ত্বক দেয় চোখের নিমেষে। কিন্তু আসলে ডিটক্স ওয়াটার কী? স্লিম ফিগার ও সুন্দর ত্বকের জন্য ডিটক্স ওয়াটার কি কার্যকরী? আমার মতে মাঝে মাঝেই যেমন সৌন্দর্য জগতে একেকটা জোয়ার আসে, যাকে বলে Fad এটাও তেমনি কিছু একটা হতে চলেছে। সম্পূর্ণভাবে মোটা হয়ে যাবার আগেই স্লিম ফিগার ও সুন্দর ত্বকের জন্য ডিটক্স ওয়াটার কতটা কার্যকরী, এর ভালো-খারাপ সব দিক আপনাদের জানিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই আজকের এই লেখা।
স্লিম ফিগার পেতে ডিটক্স ওয়াটার
ডিটক্স ওয়াটার কী?
ইনফিউসড ওয়াটার বা ডিটক্স ওয়াটার সাধারণত বলা হয় ঠান্ডা পানিতে যে কোনো ফল অথবা উপকারী হার্বস, সবজি বড় বড় করে কেটে বেশ খানিকক্ষণ ডুবিয়ে রাখলে যে মিশ্রণটা পাওয়া যায় তাকে। এই ফল বা সবজি ডুবানো পানি একদিকে হয় ফ্লেভারে ভরপুর আবার অন্যদিকে এতে থাকে না কোন সুগার বা ক্যালরি যার কারণে প্রতিনিয়ত এটা পান করলে এটা আপনার মেদ দূর করা ও সুন্দর ফিগারের অধিকারী হওয়ার যুদ্ধে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে।
কীভাবে তৈরি করবেন ডিটক্স ওয়াটার?
ডিটক্স ওয়াটার আপনি একটা কাঁচের গ্লাসেও বানাতে পারেন আবার আড়াই লিটার পানির জগেও বানাতে পারেন। পরিমাণ নির্ভর করবে আপনি কতটুকু পান করবেন তার উপর। আপনি যদি চান আপনি আপনার রোজকার পানির চাহিদা ডিটক্স ওয়াটার দিয়েই পূর্ণ করবেন তাহলে কমপক্ষে আড়াই লিটারের জগ বা বোতল ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া যে কোনো আকারের বোতল বা জগ আপনি আপনার ইচ্ছা মত ব্যবহার করুন। কিন্তু মনে রাখবেন বোতল বা জগ কাঁচের বা ফুড গ্রেড মেটালের হওয়া ভালো, কারণ আমরা সবাই জানি প্লাস্টিকের খারাপ প্রভাব সম্পর্কে। বদভ্যাসগুলো যতটা পারা যায় এড়িয়েই যান।
১. পাত্রে আপনার ইচ্ছা মত বিশুদ্ধ পানি নিন। এতে এবার আপনার পছন্দের যেকোনো মৌসুমি ফল, সবজি (শসা, গাজর, লাউ, কুমড়া নয় কিন্তু) আর হার্বস কেটে পানিতে ঢালুন।
২. এবার পাত্রটি কোন ঠাণ্ডা স্থানে বা ফ্রিজে রাখুন। এটা তৈরি হতে খুব বেশি হলে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা লাগে আর এখন গরমের সময়ে আমাদের দেশে পানিতে ভেজান ফল পঁচে যাবার সম্ভবনা বেশি। এক্ষেত্রে ভালো হয় যদি রাতে ঘুমানোর আগে পানিটা রাখেন, এতে সকালে উঠেই আপনি তৈরি পাবেন আপনার ডিটক্স ওয়াটার। বাইরে রাখলেও সমস্যা নেই কিন্তু পঁচে যাবার ভয় এড়াতে তাড়াতাড়ি আপনাকে পুরোটা পান করে ফেলতে হবে। ফ্রিজে রাখলে ঠাণ্ডা ড্রিঙ্ক খেতেও ভালো লাগবে পঁচার ভয়ও থাকবে না।
৩. এরপর সারাদিন ধরে যখন খুশি তখন সাধারণ পানির জায়গায় এটা পান করুন।
৪. মনে রাখবেন পরের দিনের ডিটক্স ওয়াটার বানাবার জন্য একদিনের কাটা ফলের মধ্যেই আবার পানি দেবেন না যেন। এতে কোন উপকারই হবে না। কারণ এর মধ্যেই ঐ ফলের গুনাগুণ একবার পানিতে চলে গিয়েছে। ডিটক্স ওয়াটার তৈরির জন্য প্রতিদিন আপনাকে নতুন করে ফল কাটতে হবে।
কেন ডিটক্স ওয়াটার পান করবেন?
আসুন এবারে জেনে নেই আসলে ডিটক্স ওয়াটার আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য কী করতে পারে। ডিটক্স ওয়াটার মূলত ক্রাশ ডায়েটের অংশ। যেহেতু এতে ফলের ভিটামিন ও অন্যান্য গুনাগুণ আছে এবং কোন ক্যালরি নেই তাই ক্রাশ ডায়েটাররা সারাদিন এই পানি খেয়েই থাকার চেষ্টা করে। কিন্তু এরকম ক্রাশ ডায়েটে যা হয়, সেই ডায়েটাররা ভীষণ পুষ্টিহীনতায় ভোগে। একারণে শুধু এই ডায়েটকে পুরোই ভিত্তিহীন বলা হয়। কিন্তু পরিপূর্ণ ডায়েটের অংশ হিসেবে ডিটক্স ওয়াটার বেশ উপকারী।
১. ডিটক্স ওয়াটার সুস্বাদু হবার কারণে এটা আপনার পানি পান অনেক বাড়িয়ে দেয় যে কারণে শরীর থেকে দূষিত পদার্থ দ্রুত বেরিয়ে যায়।
২. প্রচুর পানি খাবার ফলে জাঙ্ক ফুড খাবার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়। এটা ফলের স্বাদ যুক্ত হবার কারণে আপনার সুগার ক্রেভিং বা মিষ্টি খাবার হারও কমিয়ে দেয়।
৩. শরীরের ফ্যাট সেলগুলো নিষ্কাসনে সাহায্য করে।
৪. খাবার হজমে সহায়তা করে ও শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ভালো রাখে।
৫. ব্যায়াম করার জন্য যে মাসল ফ্যাটিগ বা শারীরিক অবসাদ তৈরি হয় তা দূর করে।
দ্রষ্টব্যঃ
উপরের এই কারণে আপনার অতিরিক্ত ওজন কিছুটা কমবে এবং ত্বক উজ্জ্বল ও লাবণ্যময় হবে। কিন্তু আপনি যদি মনে করেন শুধু ডিটক্স ওয়াটার আপনার শরীর থেকে অপ্রয়োজনীয় সব মেদ ঝরিয়ে ফেলতে সক্ষম তাহলে আপনি ভুল ভাবছেন। প্রথম প্রথম এর সেবনে আপনার শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত পানি বের হয়ে যেতে পারে যাকে বলে ‘ওয়াটার ওয়েট’ কিন্তু সেই কমে যাওয়া ওজন কিন্তু মেদ নয়। আর এর ভরসায় ক্রাশ ডায়েটে যাবার ভুল আশা করি করবেন না।
আপনি ডিটক্স ওয়াটার পান করতে পারেন সুসাস্থ্যের জন্য কিন্তু এটা কোন জাদুর ছোঁয়ায় আপনাকে এক সপ্তাহে স্লিম ফিগার দেবে না। সেটা scientifically সম্ভবও নয়। বলাই বাহুল্য সেই জন্য আপনার ওয়ার্ক আউট করা ও ক্যালরি ইনটেক কমানো ছাড়া আর কোন scientifically proven উপায় নেই।
কিছু জনপ্রিয় রেসিপি
এবার দেখুন স্লিম ফিগার ও সুন্দর ত্বকের জন্য ডিটক্স ওয়াটারের কিছু সহজ রেসিপি। যার মাধ্যমে আপনি আজকে থেকেই এটা পান করা শুরু করতে পারবেন।
১. একটা আস্ত লেবু চাকা চাকা করে কাটুন। তার সাথে এক মুঠো পুদিনা পাতা পানিতে দিয়ে সারারাত রেখে দিন। এটা সবচেয়ে সহজ ও অন্যতম কর্মক্ষম ওয়াটার রেসিপি। লেবু আর পুদিনা দুটোই ওজন কমাতে সাহায্য করে।
২. পাতলা স্লাইস করে একটা আপেল কেটে ফেলুন এবার এরসাথে এক চা চামচ দারুচিনি গুঁড়া পানিতে মেশান। এই রেসিপিটা আপনার মেটাবলিসম হার বাড়াতে সাহায্য করবে।
৩. যতটা পারেন পাতলা চাকা চাকা করে একটা শসা আর একটা লেবু কেটে পানিতে মেশান। এই পদ্ধতি টা আমার নিজের খুব পছন্দ। খুবি রিফ্রেশিং ড্রিঙ্ক তৈরি হয়।
এছাড়াও আপনি আপনার পছন্দের যে কোনো ফল বা হার্বসের কম্বিনেশনে তৈরি করতে পারেন আপনার পছন্দের ডিটক্স ওয়াটার।
ছবিঃ সংগৃহীত – সাটারস্টক