গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস! অনেক গর্ভবতী মা-ই বুঝতে পারেন না কেন হলো, কীভাবে হলো। তাদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি এর ইতিবৃত্ত। এই সমস্যাটি খুব কমন হয়ত না , কিন্তু যার হবে তার জন্যে খুব পীড়াদায়ক হবে। নিজের না হলেও, আত্মীয় স্বজন, বান্ধবীদের অনেকেই দেখতে পাবেন এই জটিলতায় ভুগছেন। এখন হয়তো ভাবছেন গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস কী? শুধু ডায়াবেটিসের মানে তো আমরা সবাই জানি।
আগে কখনো ডায়াবেটিস ছিল না, কিন্তু গর্ভাবস্থায় রক্তের চিনি প্রথম বেড়ে গেলে এবং প্রসবের পর আবার স্বাভাবিক হয়ে যায় এই অবস্থাকে বলে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস (gestational diabetes)। RBS এর ফল নরমাল লেভেলের বেশি হলে (৭ এর বেশি হলে সাধারণত) এবং শুধু একবার হলেই হবে না অন্তত পক্ষে ৩ বার বেশি আসলে FBS (খাবার আগে), 2hr ABF, AL, 2 hr BD টেস্ট গুলো করে নিশ্চিত হতে হবে। এই টেস্ট গুলো শুধু গর্ভাবস্থার জন্য নয় যে কোনো সময়ে হওয়া ডায়াবেটিসের মতই।
মানুষের শরীরে স্ট্রেস এর কারণে অনেক সময়ই রক্তে চিনির পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। একে লেটেন্ট ডায়াবেটিস (latent diabetes) বলে। গর্ভ, অপারেশন, ইনফেকশন স্ট্রেসের সৃষ্টি করতে পারে।
সব মা-ই কি এই সমস্যায় পড়তে পারেন? অন্যান্য গর্ভকালীন সমস্যার মত এরও কিছু ঝুঁকিপূর্ণ দিক আছে। গর্ভাবস্থায় রুটিন চেক আপ সবারই করা উচিত এবং এই ঝুঁকিপূর্ণ দিকগুলো থাকলে অবশ্যই রেগুলার স্ক্রিনিং করাতে হবে।
ঝুঁকিপূর্ণ দিকগুলো
১. ডায়াবেটিসের পারিবারিক ইতিহাস থাকলে অর্থাৎ বংশের অন্য কারো ডায়াবেটিস থাকলে
২. আগের সন্তানের ওজন ৪ বা ততোধিক হয়ে থাকলে
৩. আগে কোনো সন্তান অজানা কোন কারণে মারা গিয়ে থাকলে
৪. গর্ভ থলিতে পানির পরিমাণ বেশি হলে
৫. বারবার যোনিপথে ছত্রাকের সংক্রমণ হলে
৬. দীর্ঘদিনের গ্লাইকোস ইউরিয়া
৭. স্থূলতা
৮. বয়স ত্রিশ বা তার বেশি হলে
৯. স্থান ভেদে কিছু মানুষের বেশি হয় , যেমন – পূর্ব এশিয়া , আফ্রিকায়
ডায়াবেটিস আক্রান্ত মায়ের জন্যে উপদেশ
১. সঠিক সময়ে অর্থাৎ গর্ভধারণের প্রথম দিকে ধরা পরলে খাদ্য তালিকা মেনে চলে কন্ট্রোলে রাখতে হবে । মনে রাখবেন মেনে না চললে আপনার সন্তানের স্বাস্থ্যের উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে।
২. ডায়াবেটিসের শিশুরা অন্য শিশুদের থেকে ওজনে ভারী হয়। কারণ মায়ের পেটে অবিরাম অতিরিক্ত গ্লুকোজ পেয়ে থাকে। কিন্তু জন্মের পর মা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তাৎক্ষনিক ভাবে এই সাপ্লাই বন্ধ হয়ে যায় যা তার শরীরে এতদিনে অভ্যস্ত ছিল। হঠাৎ করে এই পরিবর্তনে বাচ্চা হাইপোগ্লাইসেমিয়া (Hypoglycemia) হয়ে যাওয়া এড়াতে জন্মের পরপরই তাকে মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে।
৩. খাদ্য তালিকায় শর্করা জাতীয় খাবার কম ও শাকসবজি বেশি থাকতে হবে। পানি খাবেন পরিমাণ মত। ডায়াবেটিস আক্রান্ত মায়েদের মুটিয়ে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক তাই রেস্ট নিবেন কিন্তু হাঁটাহাঁটি ও করবেন এবং ভারী কাজ করবেন না। প্রসবের পরেও তিন মাস এই নিয়মটা মেনে চলতে হবে ( নরমাল হোক বা সিজার হোক )। গর্ভাবস্থায় মা ও সন্তানের কী কী জটিলতা হতে পারে?
গর্ভাবস্থায় মা ও সন্তানের কী কী জটিলতা হয়
১. রক্ত চাপ বৃদ্ধি পেতে পারে
২. গর্ভ থলিতে পানির পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে
৩. নির্দিষ্ট সময়ের আগেই লেবারে চলে যেতে পারে
৪. বাচ্চা নষ্ট হতে পারে
৫. প্রস্রাবের রাস্তায় ইনফেকশন হতে পারে
৬. ডায়াবেটিস কন্ট্রোলে না থাকলে কিটোএসিডোসিস (Ketoacidosis), বৃক্ক ও চোখে সমস্যা হতে পারে
প্রসবকালীন সমস্যা
১. প্রসবে দেরি হতে পারে
২. মাথা বের হলেও কাঁধ আটকে যেতে পারে
প্রসব পরবর্তী সমস্যা
১. প্রসব পরবর্তী রক্তপাত হতে পারে
২. ইনফেকশন হতে পারে
৩. দুধ আসতে দেরি হতে পারে
বাচ্চার সমস্যা
১. মাথা বড় হওয়া
২. জন্মগত ত্রুটি যেমন – Anencephaly, Microcephaly, neural Tube defect, ASD, VSD etc হতে পারে।
চিকিৎসা
ডেলিভারির পর নিয়মিত ফলো আপে থাকতে হবে। মা কে মানসিক সাপোর্ট দিতে হবে। অদূর বা দূর ভবিষ্যতে মায়ের ডায়াবেটিস হয় কিনা খেয়াল রাখতে হবে। একটি সুন্দর সন্তান কামনা না করে, আসুন সবাই একটি সুস্থ, পরিপুষ্ট সন্তান কামনা করি।
ছবি – সংগৃহীত: সাটারস্টক