চুল পরা কমাতে, আগা ফাটা রোধ করতে, চুলকে সিল্কি ও কোমল রাখতে আমরা কতরকমের প্রোডাক্ট ব্যবহার করি। কিন্তু ভেতর থেকে সুস্থ ও সুন্দর থাকার জন্য ঠিকঠাক খাবার খাওয়া হয় কি? চুলের জন্য পরিচর্যা তো চাই, সঙ্গে থাকতে হবে প্রয়োজনীয় খাবারদাবার। স্কিন ও হেয়ার কেয়ার রুটিন সবকিছু মেনে চললাম, কিন্তু আসল জায়গাতে ফোকাস করলাম না, এতে কিন্তু তেমন উপকার পাওয়া যায় না! স্বাস্থ্যজ্জ্বল ও সুন্দর চুল পেতে রেগ্যুলার ডায়েটে কোন খাবারগুলো রাখা উচিত সে বিষয়ে জানা আছে তো? আজকে আমরা জেনে নিব চুলের সুস্থতার জন্য খাদ্যউপাদানের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে এবং রেগুলার ডায়েটে কোন খাবারগুলো অবশ্যই রাখা উচিত সেই বিষয়ে।
কেন চুলের সুস্থতার জন্য প্রোপার ডায়েট প্রয়োজন?
চুল যদি শরীর থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি জোগাড় করতে না পারে, তাহলে চুলের স্বাস্থ্য খারাপ হতে থাকে। চুলের সুস্থতার জন্য প্রোপার ডায়েট ম্যান্ডেটরি। অনেকে অভিযোগ করে থাকেন, জেনেটিকালি সুন্দর চুল নিয়ে জন্মালেও একটা সময়ে এসে চুল লালচে হয়ে যাচ্ছে, আগা ফেটে যাচ্ছে। আবার অনেকেই হেয়ার কেয়ারের ব্যাপারে খুব সচেতন, দামি প্রোডাক্ট দিয়ে চুলের যত্ন নেন, নিয়মমতো প্যাক লাগান। তারপরও চুল প্রাণহীন, অকালেই পেকে যাচ্ছে বা চুল পরে যাচ্ছে। মেইন প্রবলেমটা কোথায়, সেটা বুঝতে পারছেন কি? পুষ্টিহীনতা! নিউট্রিয়েন্টের অভাবে চুল দুর্বল হয়ে যায় এবং বাইরে থেকে দেখতে মলিন লাগে।
আমরা জানি যে, চুল হচ্ছে এক প্রকারের প্রোটিন তন্তু যার প্রধান উপাদান হচ্ছে কেরাটিন। চুল, নখ এগুলো মৃত কোষ, সেইজন্যই আমরা চুল, নখ কাটলে ব্যথা পাই না। শরীরের সব চাহিদা মিটিয়ে নিউট্রিয়েন্ট এই কোষগুলোতে পৌঁছে। শরীরে প্রয়োজনীয় খাদ্যউপাদান ইনটেক না হলে অর্থাৎ পুষ্টির ঘাটতি থাকলে আপনার চুল ও ত্বকে সেই প্রভাবটা পরবেই। তাই চুলের সুস্থতার জন্য প্রোপার ডায়েট প্রয়োজন।
স্বাস্থ্যজ্জ্বল ও সুন্দর চুল পেতে ডায়েটে কোন খাবারগুলো রাখবেন?
১) গ্রিন ভেজিটেবল
সবুজ শাকসবজি যেমন পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম ও ওমেগা ফ্যাটি অ্যাসিড আছে। মটরশুঁটি চুলের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় উপাদান কেরাটিন সমৃদ্ধ। লেটুস ও কপি জাতীয় সবজিতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, আয়রন, ভিটামিন থাকে যেটা স্বাস্থ্যজ্জ্বল চুলের জন্য খুবই প্রয়োজন। প্রায় প্রতিটি গ্রিন ভেজিটেবল দরকারি আয়রন, বায়োটিন, ভিটামিন-এ, পটাশিয়াম ইত্যাদি খাদ্যউপাদানে ভরপুর। এগুলো স্ক্যাল্পের সুস্থতা ও চুলের গ্রোথ নিশ্চিত করে। তাই প্রতিদিনের ডায়েটে সবুজ শাক সবজি রাখা উচিত। তবে উচ্চ তাপে রান্না করলে পুষ্টিগুণ কমে যায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
২) প্রোটিনজাতীয় খাবার
প্রোটিন বা আমিষ চুলের সুস্থতায় সবচেয়ে বড় ভুমিকা পালন করে। উদ্ভিজ্জ ও প্রাণীজ আমিষ আপনাকে পরিমাণমতো গ্রহন করতে হবে। পনির, ডিম, চিকেন, মাছ, ডাল, দুধ এগুলো আমিষের খুব ভালো উৎস। জৈব প্রোটিন শরীরের পুষ্টি চাহিদা মেটানোর মতোই চুলকেও পুষ্টি জোগায়। চুলের কেরাটিন প্রোটিন যখন দুর্বল হয়ে যায় বা কমে আসে, তখন চুল ঝরে পরা বা আগা ফাটার মত সমস্যা দেখা দেয়। তাই রেগ্যুলার ডায়েটে প্রোটিন রাখা প্রয়োজন, কেননা এটি হেয়াররুটে স্ট্রেন্থ বাড়ায় এবং চুল ভেতর থেকে সুন্দর রাখে।
৩) সুন্দর চুল পেতে বাদাম
আমণ্ড, কাজু কিনবা চিনা বাদাম, আপনার ডায়েটে রাখুন নাটজাতীয় খাবার। ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন-ই, জিঙ্ক, ফলিক এসিডযুক্ত হওয়ায় সুন্দর স্কিন ও চুলের জন্য বাদাম খাওয়া উচিত। এসব উপাদান চুলের রুক্ষতা দূর করে, হেয়ার ফলিকলে পুষ্টি যোগায়, চুলের গোঁড়ায় ন্যাচারাল অয়েল প্রোডাকশন কন্ট্রোল করে। জিঙ্ক চুল পরা কমাতে সাহায্য করে, ভিটামিন-ই চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। মজবুত চুল পেতে বাদাম তেলের গুনাগুন তো শুনেছেন! ভেতর থেকে পুষ্টি নিশ্চিত করতে পরিমাণ বুঝে বাদাম খেতেও হবে।
৪) ভিটামিন-সি যুক্ত এবং পানিসমৃদ্ধ ফল / ফলের রস
তরমুজ, শসা, টোম্যাটো, আপেল, ডাবের পানি এগুলো পানিসমৃদ্ধ যা শরীরের ডিহাইড্রেশন রোধ করে। শরীরে যখন পানির চাহিদা পুরন হয় না, তখন চুলেও রুক্ষতা আসে, চুল প্রাণহীন দেখায়। হাইড্রেশন বা ওয়াটার লেভেল কোনোভাবেই কমতে দেয়া যাবে না। সুন্দর স্কিন ও চুলের জন্য নিয়মিত যত্ন নেয়ার পাশাপাশি প্রচুর পানি খেতে বলা হয়। মৌসুমি ফলমূল থেকে আপনি দরকারি মিনারেলস ও পুষ্টি পেয়ে যাবেন। ভিটামিন-সি কোলাজেন প্রোডাকশন বাড়াতে হেল্প করে, এতে চুলের ফলিকল থেকে নতুন চুল গজায় ও চুলের গ্রোথ ভালো হয়। আমড়া, লেবু, আমলকী, মাল্টা, বেরি জাতীয় ফল এগুলো ভিটামিন-সি এর খুব ভালো উৎস।
তাহলে জেনে নিলেন, চুলের সুস্থতার জন্য প্রোপার ডায়েট প্রয়োজন কেন এবং কী কী খাবার আপনাকে বেশি বেশি খেতে হবে। নিয়মমতো চুলের যত্ন নিবেন, পরিস্কার রাখবেন, হেলদি ডায়েট মেনে চলবেন। তাহলে চুল পরা বা চুল অকালে পেকে যাচ্ছে বা চুল ডিসকালার হয়ে যাচ্ছে, এসব নিয়ে আর ভাবতে হবে না। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন!
ছবি- সাটারস্টক