সুন্দর মেকাপের জন্য যেমন ভালো ব্র্যান্ডের ভালো মানের প্রোডাক্ট ত্বকের সাথে মিল রেখে কেনাটা জরুরি, তেমনি জরুরি মেকাপ অ্যাপ্লিকেশনের সরঞ্জামগুলো প্রয়োজন বুঝে কেনা ও তার সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে জানা। তাই আজকের আর্টিকেলে আমি আপনাদের জানাবো বিভিন্ন ধরনের মেকাপ স্পঞ্জ ও এদের সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে। মেকাপ স্পঞ্জ মুখে এতো ন্যাচারাল ফিনিশ দেয় আর স্কিনে প্রোডাক্ট এত ভালোভাবে সেট করে ফেলে যে আমি সবসময়য়ই বেস মেকাপের জন্য স্পঞ্জই ব্যবহার করি। স্পেশালি গরমের সময় দীর্ঘস্থায়ী মেকাপ আর ফ্ললেস ফিনিশের জন্য স্পঞ্জের কোন বিকল্প নেই। আপনারা যারা আমার মতই মেকাপ পাগল তারা নিশ্চয়ই এতক্ষণে আমার হ্যাঁ তে হ্যাঁ মেলাচ্ছেন? যারা ঠিকভাবে জানেন না মেকাপ স্পঞ্জ সম্পর্কে তারা আসুন দেখে নিন, মেকাপের এই মিরাকল টুলের ব্যবহার-
[picture]
চলুন শুরু করা যাক এযুগের মেকাপ স্পঞ্জ দুনিয়ার ‘আল্টিমেট ডিভা’- কে দিয়ে-
বিউটি ব্লেন্ড স্পঞ্জ:
সব বিউটি ব্লগার আর মেকাপ আর্টিস্ট এই বিউটি ব্লেন্ডার স্পঞ্জের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। এই স্পঞ্জ আপনার ফাউন্ডেশনকে দেয় একদম ফ্ললেস ফিনিশ আর এর ব্যবহার এতো সহজ যে একদম মেকাপে বিগিনাররাও এটা দিয়ে প্রফেসনাল ফিনিশের বেস তৈরি করতে পারে। খুব কমপ্যাক্ট হওয়ায় এতে প্রোডাক্ট ওয়েসটেজ হয় না বলে লিকুইড মেকাপের ক্ষেত্রে এই স্পঞ্জ সুপারস্টার। বিউটি ব্লেন্ডার আর রিয়াল টেকনিকের মিরাকল কমপ্লেকশন স্পঞ্জ ব্যবহার করে দেখতে পারেন।
এটা দিয়ে যা যা ব্যবহার করা যায় –
- লিকুইড ফাউন্ডেশন
- ক্রিম ফাউন্ডেশন
- কনসিলার
- লিকুইড ব্লাশ
বেনিফিট-
- খুব ভারী ফাউন্ডেশনকে হালকা ওজনের করে নেবার জন্য
- স্মুথ, ফ্ললেস মেকাপ বেস পাবার জন্য
- প্রোডাক্ট ওয়েসটেজ কমানোর জন্য
- এর তীক্ষ্ণ কোণা মুখের জটিল অংশগুলোতেও পারফেক্টলি প্রোডাক্ট পৌঁছে দিতে পারে
কটন পাউডার পাফঃ
কটন পাউডার পাফ সাধারণত লুজ পাউডারের ইজি অ্যাপ্লিকেশনের জন্য ব্যবহার করা হয়। এই পাফ মুখে বড় অংশ অল্প সময়ে কাভার করে। অরগ্যানিক কটন ফাইবারে তৈরি এই স্পঞ্জ খুবই নরম আর কোমল হয়। তাই এটা সেনসিটিভ স্কিনের জন্য বেশ ভালো হয়। এর দাম বেশ কম আর সহজেই মার্কেটে পাওয়া যায়।
এটা দিয়ে যা যা ব্যবহার করা যায় –
- লুজ পাউডার
বেনিফিট-
- খুব কম সময়ে মুখের বড় অংশে লুজ পাউডার অ্যাপ্লাই করা যায়।
- সেনসিটিভ ত্বকের অধিকারীদের জন্য বেস্ট।
- অনেক দিন ধরে ব্যবহার করা যায়।
কমপ্যাক্ট পাউডার পাফ:
বাজারের মোটামুটি সব কমপ্যাক্টই এই সিক্রেট ওয়াপনসহ আসে। এটা গোলাকৃতি হয় এবং কমপ্যাক্ট অ্যাপ্লাই করার জন্য ব্যবহার করা হয়। এটা নিয়মিত ধুয়ে পরিষ্কার করে রাখা জরুরী, নয়ত মুখে ব্রণের মত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এটা দিয়ে যা যা ব্যবহার করা যায় –
- প্রেসড পাউডার
- লুজ পাউডার
বেনিফিট-
- স্কিনে খুব ম্যাট ফিনিশ দেয়।
- অ্যাপ্লিকেশনের উপর কন্ট্রোল থাকে।
- ইভেন কভারেজ দেয়।
- মেকাপ দীর্ঘস্থায়ী করে।
কণ্টুরিং স্পঞ্জ:
মুখের কঠিন কঠিন জায়গায় প্রোডাক্ট পৌঁছে কন্টুর করে চেহারার ধাঁচ আর ফিচারের বিভিন্ন খুঁত ঢেকে ফেলায় এর কোন তুলনা নেই। এই স্পঞ্জগুলো সাধারণত টিয়ার শেপড বা এগ শেপড হয়।(ছবির মত)
এটা দিয়ে যা যা ব্যবহার করা যায় –
- হাইলাইটার
- ব্রোঞ্জার
- লিকুইড আর ক্রিম দুই ধরনের প্রডাক্টই ব্যবহার করা যায়
বেনিফিট-
- গাঢ় শেডের ব্রোঞ্জারের রঙ হালকা করা যায়।
- খুব কম সময়ে প্রোডাক্ট ব্লেনড করা যায়।
কসমেটিক স্পঞ্জ:
যারা পার্লারে মেকাপ করেছেন তারা নিশ্চয়ই এই স্পঞ্জ দেখেছেন? খুব কমদামি এই স্পঞ্জ চলে বহুদিন। যেকোনো মেকাপ যেমন ক্রিম, লিকুইড প্যানকেক ব্যবহারের জন্য এটা ব্যবহার করা যায়। আর খুব সহজে কসমেটিক শপে পাওয়াও যায়।
এটা দিয়ে যা যা ব্যবহার করা যায় –
- ক্রিম, লিকুইড প্যানকেক ফাউনডেশন
- পাউডার প্রোডাক্টস
বেনিফিট-
- ড্রাই আর ওয়েট দুই ধরনের অ্যাপ্লিকেশনেই ব্যবহার করা যায়।
- স্পঞ্জ প্রোডাক্টের এক্সেস লিকুইড শুষে নেয়।
- ফুল কাভারেজ বেস মেকাপের জন্য সবচেয়ে ভালো।
- লেয়ারিংয়ের পরেও মেকাপ কেকি লাগে না।
কসমেটিক ওয়েজ:
অনেকেই হয়ত আজকাল বড় বড় সুপারশপে এই কসমেটিক ওয়েজ বিক্রি হতে দেখে থাকবেন। এই ওয়েজ শেপড স্পঞ্জ মেকাপ আর্টিস্টদের মাঝে ফুল কাভারেজ বেস মেকাপ তৈরির জন্য বেশ পপুলার। এটা ল্যাটেক্স দিয়ে তৈরি হয়ে থাকে। এর কাট ও শেপ মুখের সব অংশে হেভি ফাউন্ডেশন পৌঁছে দিতে পারে।
এটা দিয়ে যা যা ব্যবহার করা যায় –
- লিকুইড , ক্রিম ফাউনডেশন
- ইলুমিনেটর
- কনসিলার দিয়ে ডার্ক সারকেল কাভার করা
বেনিফিট-
- ওয়েজ স্পঞ্জ খুবি কম প্রোডাক্ট শুষে নেয়, ব্যবহারে সাশ্রয়ী।
- মুখের সব জায়গায় ব্যবহার করা যায়।
- ফুল কাভারেজ দিতে পারে।
সেলুলোজ ক্লিন্সিং স্পঞ্জ:
আজকাল ত্বক পরিষ্কার করা বা স্ক্রাব করার জন্যই অনেকেই সেলুলোজ স্পঞ্জ ব্যবহার করে থাকেন। ন্যাচারাল বৃক্ষ তন্তু থেকে তৈরি হওয়া এই স্পঞ্জ খুব কোমলভাবে ত্বকের ডেড সেলস দূর করে ফেলে। এটা দুই দিক থেকেই ইউজ করা যায়। ভারী মেকাপ তোলা আর ত্বক ভেতর থেকে পরিষ্কার করার জন্য এর কোন জুড়ি নেই।
বেনিফিট-
- সহজেই ভারী মেকাপ তুলে ফেলতে সক্ষম।
- রোমকূপের ভেতর পর্যন্ত পরিষ্কার রাখে।
- সেনসিটিভ স্কিনের জন্য পারফেক্ট স্ক্রাব হিসেবে কাজ করে।
বোনাস টিপস:
- মেকাপ স্পঞ্জ সবসময় ধুয়ে পরিষ্কার জীবাণুমুক্ত রাখুন, এতে স্পঞ্জ আর আপনার ত্বক দুই-ই ভালো থাকবে।
- আপনার স্পঞ্জের শেপ যদি বদলে যায় বা স্মেল আসে তবে সাথে সাথে স্পঞ্জ চেঞ্জ করুন।
- সবসময় স্পঞ্জ ব্যবহার করার আগে পানিতে ভিজিয়ে চেপে পানি বের করে নিন। স্পঞ্জ ভেজা থাকবে কিন্তু পানি থাকবে না। এতে বেস ফিনিশ ভালো হবে।
- স্পঞ্জ থেকে জেদি মেকাপের দাগ দূর করতে বেবি অয়েল ব্যবহার করতে পারেন।
কোথায় পাওয়া যাবে?
অনলাইনে USA বা UK থেকে অর্ডার করে আনতে পারেন। দেশে এখানে পাবেন। আশা করি মেকাপ স্পঞ্জ সম্পর্কে আপনাদের একটা বেসিক আইডিয়া দিতে পেরেছি। ভবিষ্যতে আপনাদের জন্য বিখ্যাত সব মেকাপ স্পঞ্জের রিভিউ নিয়ে লিখব। অপেক্ষা করুন।
ছবি – এ্যারাবিয়ানস্টাইল.কম
লিখেছেন – মীম তাবাসসুম