আমরা বেশির ভাগ নারী শুধুমাত্র মুখের যত্নে ব্যস্ত থাকি, কেউ কি বডির যত্নের কথা ভেবে দেখেছি? এই প্রশ্নের উত্তরে না এর পাল্লাটি ভারী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। মুখের মত আমাদের শরীরের ত্বকেরও যত্ন দরকার। কেননা স্ট্রেস,পলিউশন বা কাজের প্রতিনিয়ত প্রেশার মুখে যেমন স্পষ্ট বোঝা যায় তেমনি একটু খেয়াল করলে আপনার শরীরের ত্বকেও বুঝতে পারবেন। তাই আজ বডি পলিশের ব্যাপারে কিছু গাইড লাইন দেবো আপনাদের। বডি পলিশ বাইরের দেশে একটি জনপ্রিয় বডি ট্রিটমেন্ট, যা দেহের ত্বকে এক্সফলিয়েট এবং হাইড্রেট করে ফলে ত্বক হয় মসৃণ এবং কোমল। আমাদের দেশে নাম করা কিছু পার্লারে এই বডি পলিশের ব্যবস্থা আছে কিন্তু এমনটি নয় যে পার্লারে আপনাকে যেতেই হবে। বাসায় কারও সাহায্য নিয়ে বা নিজেই এটি করতে পারেন। বডি পলিশ ট্রিটমেন্টে চিনি, লবণ, দানাদার কফি, চালের গুঁড়ার সাথে ম্যাসেজ অয়েল এবং এরোম্যাটিক অয়েল মিশিয়ে শরীরে অ্যাপ্লাই করা হয়।
বডি পলিশ ট্রিটমেন্টের উপকারিতাঃ
– এটি এক ধরনের স্পা যা আপনার দেহের ত্বকের মরা কোষ দূর করে ত্বকে আনে উজ্জ্বলতা।
– ত্বককে হেলদি এবং নমনীয় করে তোলে।
– এই ট্রিটমেন্ট ব্লাড এবং লসিকানালীর সার্কুলেশন বাড়িয়ে দেয়।
– ত্বকের টেক্সচার, রঙের অনেকখানি পরিবর্তন ঘটে।
ত্বকের ধরন অনুযায়ী বডি পলিশ ট্রিটমেন্টঃ
ত্বকের ধরনের সাথে মিল রেখে ত্বকের যত্ন করা প্রয়োজন সেটি মুখের ত্বকের জন্য হোক বা দেহের ত্বকের জন্যই হোক না কেন। তাহলেই আপনি আপনার ত্বকের প্রয়োজন মিটিয়ে তাকে করে তুলতে পারবেন প্রাণবন্ত। সঠিক নির্বাচনের ফলে আপনার ত্বক ভালো ভাবে হাইড্রেট হবে এবং লাল লাল ফুসকুড়ি বা ব্রণ এর উৎপাত এড়ানো যাবে নিশ্চিন্তে।
শুষ্ক ত্বকের জন্যঃ
সুগার বেসড পলিশ আপনার ত্বকের জন্য আদর্শ হবে। এই চিকিত্সায় শরীরের জন্য মৃদু ময়েশ্চারাইজিং স্ক্রাব জড়িত। এমন স্ক্রাব বেঁছে নিতে হবে যেটিতে ময়েশ্চারাইজিং এবং হাইড্রেটিং উভয় বৈশিষ্ট্য উপস্থিত রয়েছে। ৩ টেবিল চামচ চিনি এবং ৩ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল, এক চামচ ওটমিল একসাথে মিশিয়ে নিন। তারপর পুরো শরীরে ম্যাসেজ করে লাগিয়ে ধুয়ে ফেলুন। অনেক সময় এই স্ক্রাবারের সাথে স্যান্ডেলউড বা গোলাপের সুগন্ধযুক্ত তেল ব্লেন্ড করে নেয়া হয়। এই তেল গুলোর এণ্টি – ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য আপনার ত্বককে নিষ্প্রাণ হওয়া থেকে রক্ষা করে।
তৈলাক্ত ত্বকের জন্যঃ
আপনি যদি তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারী হয়ে থাকেন তবে সি সল্ট হবে আপনার পলিশ চিকিত্সার জন্য সঠিক। যদি সি সল্ট না থাকে তবে আমরা যেসব লবণ রান্নার কাজে ব্যবহার করে থাকি তা নিতে পারেন। লবণ আপনার ত্বককে এক্সফলিয়েট করে সেই সঙ্গে ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে যা ব্রণের প্রধান কারণ। এটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থ যেমন পটাসিয়াম, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, ক্লোরাইড সরবরাহ করে যা শরীরের ত্বক কে স্বাস্থ্যবান এবং গ্লোয়িং করতে সাহায্য করে। এই লবণের সাথে মিশিয়ে নিন লেবু, টি ট্রি বা পুদিনা এবং eucalyptus মত অপরিহার্য তেল। এদের ব্যাকটেরিয়া বিরোধী এবং germicidal প্রভাবের কারণে ত্বকে জেগে ওঠে প্রানের ছোঁয়া। এক কাপ সি সল্টের সাথে আধা কাপ মধু , ১০ ফোঁটা টি ট্রি অয়েল এবং ২ টেবিল চামচ এলোভেরা জেল মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি পুরো শরীরে সার্কুলার মুভমেন্টে ম্যাসেজ করুন। তারপর ধুয়ে ফেলুন।
স্বাভাবিক ত্বকের জন্যঃ
দানাদার কফি, চালের গুঁড়া এবং চিনি স্বাভাবিক ত্বকের জন্য ভালো কাজ করে। এই উপাদান গুলোর সাথে এভোকাডো, তিল অথবা অন্য সুগন্ধযুক্ত কোন এসেন্সিয়াল ওয়েল মিশিয়ে নিন। চাইলে এর সাথে পেঁপের পাল্প, গোলাপের পাপড়ি মিশিয়ে নিতে পারেন। ফল আপনার ত্বক কে ময়েশ্চারাইজ এবং নরিশ করে। ফলমূলে থাকা প্রাকৃতিক অ্যাসিড ত্বক পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে সেই সঙ্গে ডি টক্সিফাইও করে। এতে করে আপনি একটি গ্লোয়িং ত্বক পেয়ে থাকেন।
সংবেদনশীল ত্বকের জন্যঃ
সংবেদনশীল ত্বকের জন্য মৃদু এবং সুদিং বডি পলিশ মনোনীত করা উচিত। Chamomile বা ল্যাভেন্ডার সুবাসযুক্ত তেল আর শিয়া বাটারের মিশ্রণ আপনার শরীর এবং মনকে প্রফুল্ল করে তুলবে। আপনি চাইলে এমন তেল বেঁছে নিতে পারেন যেটিতে ভিটামিন এ, ই এবং সি আছে অথবা প্রদাহ বিরোধী এবং প্রাকৃতিকভাবে নিরাময় বৈশিষ্ট্য আছে।
উপরে বর্ণিত স্ক্রাব থেকে আপনার ত্বক উপযোগী মিশ্রণটি বেঁছে নিন। তারপর পুরো শরীরে ঘষে ঘষে ম্যাসেজ করুন। এভাবে ১৫-২০ মিনিট করুন। এখন স্ক্রাব তুলে ফেলার পালা। আপনি চাইলে গোসলের মাধ্যমে তুলে ফেলতে পারেন বা একটি তোয়ালে গরম পানিতে ভিজিয়ে ভালো করে চিপে নিন। তারপর সেই তোয়ালে দিয়ে পুরো শরীর কয়েক বার করে মুছে নিন।
এই বডি পলিশ ট্রিটমেন্ট সবার জন্য প্রযোজ্য। কিন্তু যাদের সানবার্ন আছে বা এমন কোন স্কিন ডিজিস আছে যাতে স্ক্রাব করার ফলে অবস্থার আরও অবনতি হতে পারে তাদের এটি করা একদমই উচিত হবে না।
ছবিঃ দেসিডাইম.কম