আমরা অনেকেই স্কিন কেয়ার করার ক্ষেত্রে হোম রেমেডিস বা ন্যাচারাল ইনগ্রেডিয়েন্টগুলো ইউজ করতে বেশি পছন্দ করি। মনে করে থাকি এই ন্যাচারাল ইনগ্রেডিয়েন্টগুলো ইউজ করলে স্কিনের কোনো রকম ক্ষতি ছাড়াই একটা বেটার রেজাল্ট পাওয়া যাবে। কিন্তু অনেক সময় এই হোম রেমেডিস ঠিকভাবে ব্যবহার না করার কারণে উল্টো স্কিনের আরো ক্ষতি হয়ে থাকে। আজকের আর্টিকেলে শেয়ার করছি রূপচর্চায় ন্যাচারাল ইনগ্রেডিয়েন্ট ব্যবহার করলে ত্বকের কী কী ক্ষতি হতে পারে তা নিয়ে।
রূপচর্চায় ন্যাচারাল ইনগ্রেডিয়েন্ট যেগুলো ব্যবহার করা হয়
অরেঞ্জ
আমরা প্রায়ই ইজি সল্যুশন হিসেবে সানট্যান রিমুভ করতে ডিরেক্টলি অরেঞ্জ ফেইসে ইউজ করে থাকি। এটি আমদের একদমই এভয়েড করা উচিত। কেননা অরেঞ্জ অনেক বেশি অ্যাসিডিক হওয়ায় তা আমাদের স্কিনের ph লেভেল ইমব্যালেন্সড করে ফেলে এবং স্কিন ব্যারিয়ারে ইফেক্ট ফেলে। যার কারণে আমাদের স্কিন অনেক বেশি সান সেনসিটিভ হয়ে যায়।
বেকিং সোডা
আমরা অনেকেই ডার্ক স্পট বা প্যাচেসের সল্যুশন হিসেবে বেকিং সোডা ফেইসে অ্যাপ্লাই করে থাকি। বেকিং সোডা এর পিএইচ লেভেল আমাদের স্কিনের তুলনায় অনেক বেশি। তাই এটি আমাদের ফেইসের স্কিনে ইউজ করা হলে বিভিন্ন রকমের ইস্যু যেমন ড্রাইনেস, ইচিনেস, ইরিটেশন হতে পারে। তাছাড়া বেকিং সোডা ফেইসকে ওভার এক্সফোলিয়েট করে স্কিন ব্যারিয়ার ড্যামেজ করে ফেলে, এমনকি স্কিন পাতলা হয়ে যায় বেকিং সোডা ইউজ করা হলে।
দারুচিনির গুড়া
অনেকেই পিম্পল রাতারাতি দূর করতে বা কমিয়ে আনতে ইন্সট্যান্ট সল্যুশন হিসেবে দারুচিনির গুড়া ব্যবহার করেন। কিন্তু এই হোম রেমেডি ইউজ করে পিম্পল তো কমবেই না বরং স্কিনের আরো ক্ষতি হতে পারে। দারুচিনির গুড়া স্কিনে ডিরেক্টলি অ্যাপ্লাই করা হলে স্কিনে অনেক বেশি ইরিটেশন দেখা যায়। যদি এটি ডিরেক্টলি পিম্পলের উপর অ্যাপ্লাই করা হয় তাহলে স্কিন আরো বেশি ইরিটেটেড হয়ে যেতে পারে, রেডনেস, ইচিনেস বেড়ে যেতে পারে। এছাড়া এটি অ্যাপ্লাই করলে স্কিনে অ্যালার্জিক রিয়েকশনও দেখা যেতে পারে।
কফি
ফিজিক্যাল স্ক্রাব ইউজ করলে স্কিনের ডেড সেল রিমুভ হয়ে স্কিন হয় সফট এন্ড স্মুথ – এটা আমরা সবাই জানি। অনেকেই ভাবেন বাজারে থাকা ফিজিক্যাল স্ক্রাবের চেয়ে ন্যাচারাল স্ক্রাব ইউস করলে বেশ ভালো রেজাল্ট পাওয়া যাবে। ন্যাচারাল স্ক্রাব হিসেবে কফিকেই সবাই প্রিফার করে। আমাদের ফেইসের স্কিন বডির স্কিনের তুলনায় অনেক বেশি পাতলা ও সেনসিটিভ হয়। কফির দানাগুলো অনেক বেশি হার্শ হয় যা ফেইসের স্কিনে মাইক্রো টিয়ারিং এর কারণ হতে পারে। এর ফলে স্কিন ব্যারিয়ার ড্যামেজ হয়ে স্কিনে নানা রকম প্রবলেম দেখা দিতে পারে।
কোকোনাট অয়েল
হেয়ারে কেয়ারে কোকোনাট অয়েল এত বেনেফিটস দেয় তাহলে একই জিনিস যদি ফেইসে ইউজ করা হয় তাহলেও নিশ্চয়ই ফেইসে রাতারাতি চেঞ্জ চলে আসবে? আপনিও কি সেইম এটাই ভাবছেন আর ভাবনা অনুযায়ী ইউজ করছেন? তাহলে আজই কোকোনাট অয়েল অ্যাপ্লাই করা বন্ধ করুন। কেননা কোকোনাট অয়েল কমেডোজেনিক একটি প্রোডাক্ট। মেকআপ ক্লিন করতে, ডাবল ক্লেনজিং করতে বা ময়েশ্চারাইজার হিসেবে ফেইসে কোকোনাট অয়েল ইউজ করা হলে পোরস ক্লগড হয়ে যাওয়ার প্রবলেম দেখা দিতে পারে। এছাড়া যাদের অতিরিক্ত অয়েলি ও একনে-প্রন স্কিন তাদের জন্য কোকোনাট অয়েল ইউজ করা একদমই ঠিক হবে না। কেননা এটি অয়েলি স্কিনকে আরো তেল চিটচিটে এবং একনে-প্রন স্কিনে একনে আরো বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই হেয়ার কেয়ারে কোকোনাট অয়েল বেস্ট সল্যুশন হলেও ফেইসে ইউজ করা একদমই উচিত না।
কাঁচা অ্যালোভেরা
বাইরে থেকে এসেই সানট্যান রিমুভ করতে বা স্কিনকে রিল্যাক্স ফিল দিতে অ্যালোভেরা আমরা কুইক সল্যুশন হিসেবে অনেকেই বেছে নেই। সেক্ষেত্রে অনেকেই প্রসেসড অ্যালোভেরা থেকে কাঁচা অ্যালোভেরা ইউজ করাকে বেনেফিশিয়াল মনে করে থাকেন। কিন্তু কাঁচা অ্যালোভেরা ফেইসে ইউজ করলে অনেকের নানা রকম স্কিন প্রবলেম দেখা দেয়। কাঁচা অ্যালোভেরাতে কিছু ন্যাচারাল কম্পাউন্ড থাকে যা অনেকের স্কিনে ইরিটেশন বা অ্যালার্জি এর কারণ হতে পারে। আবার কাঁচা অ্যালোভেরাতে ল্যাটেক্স নামের উপাদান থাকে যা আমাদের স্কিনের জন্য ক্ষতিকর। এছাড়া কাঁচা অ্যালোভেরাতে অনেক ধরনের ময়লা থাকে যা ঠিকমতো পরিষ্কার করা না হলে স্কিনে নানা রকম প্রবলেম হতে পারে।
আশা করি এখন বুঝতে পারলেন যে রূপচর্চায় ন্যাচারাল ইনগ্রেডিয়েন্ট ব্যবহার করার মানেই তা স্কিনের জন্য সেইফ সেটা কিন্তু না। তাই চোখ বন্ধ করে ঘরোয়া মাস্ক বা হোম রেমেডিস ব্যবহার না করে সঠিকভাবে বুঝে তারপর ইউজ করুন। এতে স্কিন থাকবে হেলদি ও ব্রাইট।
ছবিঃ সাটারস্টক, সাজগোজ।