শরীরের ক্ষয় পূরণের জন্য গ্রহণযোগ্য যে কোনো খাবারকেই খাদ্য বলা হয়। আর রুগ্ন অবস্থায় বিশেষ চাহিদা অনুযায়ী খাদ্যকে পরিবর্তন করে যা দেয়া হয় তাকে পথ্য বলে। উপযুক্ত পথ্যই রোগীর অন্যতম চিকিৎসা।
রোগীর জন্য প্রথম প্রয়োজন ওষুধ, তারপর পথ্য। আবার সংকট কেটে গেলে ধীরে ধীরে ওষুধের প্রয়োজনীয়তা কমতে থাকে এবং পথ্যের প্রয়োজন বাড়তে থাকে। অসুস্থও অবস্থায় হজমশক্তি কমে যায় বলে সহজপাচ্য ও পুষ্টিকর খাদ্য দিয়ে পথ্য প্রস্তুত করা হয়।
পথ্য বিভিন্ন রোগের জন্য ভিন্ন মাত্রায় তৈরি করা হয়ে থাকে। কয়েক ধরনের পথ্য আছে। যেমনঃ নরম, থকথকে, তরল, অর্ধ তরল, উচ্চ আঁশ যুক্ত, কম আঁশ পথ্য ইত্যাদি। রোগের ধরন অনুযায়ী পথ্যের ধরন পরিবর্তন হতে থাকে। এমন কি একই রোগে একাধিক বার খাবারের ধরন পরিবর্তনের দরকার পড়তে পারে। কিছু কিছু রোগ আছে যেগুলোতে ওষুধের তেমন প্রয়োজন হয় না। যেমনঃ রক্তস্বল্পতা, রাতকানা, বেরিবেরি, মুখের কোনায় ঘা, স্কারভি, রিকেট এগুলা খাদ্য দিয়েই নিরাময় করা সম্ভব।
পথ্যকে আরোগ্যকারী খাদ্যও বলা হয়। পথ্য নির্বাচনের সময় রোগের ধরন, রোগীর খাদ্যাভ্যাস, রোগীর পথ্য গ্রহণের ক্ষমতা যেমন দেখতে হবে , তেমন রোগীর আর্থিক সঙ্গতিও বিচার করতে হবে। দীঘস্থায়ী অসুখে এটার যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। তবে সকল অবস্থাতেই পথ্য হবে সহজপাচ্য, পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও আকর্ষণীয়।
পথ্য সম্পর্কে বলতে গেলে বলা যায় যে, কিছু কিছু রোগের ক্ষেত্রে রোগমুক্তির সময় উচ্চ ক্যালরি মূল্যের পথ্য একান্ত প্রয়োজন। যেমনঃ জ্বর। এসময় এমন পথ্য দিতে হবে যাতে ৩৫০০-৪০০০ ক্যালরি থাকে। একসঙ্গে বেশি খাওয়া সম্ভব নয় বলে ৪/৫ বারে খেতে হবে। এক্ষেত্রে বাড়াতে হবে চিনি, গুড় , দুধ ও দুধের তৈরি খাবার। সেই সাথে চাল, ডাল ও গমের পরিমাণ ।
প্রাক্ কোয়াশিয়রকর, কোয়াশিয়রক, সিরোসিস অফ লিভারে উচ্চমানের প্রোটিন আবশ্যক। এজন্য প্রয়োজন অতিরিক্ত মাছ, মাংস,ডিম, কলিজা। আবার অসুস্থ কিডনীর সমস্যার ক্ষেত্রে তাদের উপর চাপ কমানোর জন্য প্রথম শ্রেণীর প্রোটিন আবশ্যক। সাধারণতঃ দৈনিক ২০-৩০ গ্রাম পর্যন্ত প্রোটিন দিতে হয়।
গলব্লাডার বা পিত্তকোষের ব্যাধি , জন্ডিস, লিভারের অসুখ, আমাশয়, ক্রনিক কোলাইটিস, পেটের অসুখ, ধমনী ও হৃদপিণ্ডের অসুখে মাংস কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। ডায়াবেটিস ও মেদ বৃদ্ধিতে শর্করা কমাতে হয়। কিডনি ও হার্টের যাবতীয় অসুখ , সিরসিস অফ লিভার , উচ্চ রক্তচাপ এবং গর্ভাবস্থায় লবণ নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। এ সকল বিষয়কে বিবেচনায় রেখে আলাদা আলাদা রোগের জন্য আলাদা পথ্য বা খাবার তৈরি করা হয়।
পথ্য প্রকৃত ওষুধের কাজ করে। অসুস্থতার সঙ্গে এমন পথ্য চাই যাতে অসুখের বিরুদ্ধে লড়াই করবে। অনেক সময় ওষুধ যখন কাজ করে না তখন ভালো ও উপযুক্ত খাদ্যও অসুখ সারাতে সাহায্য করে। আবার অনেক ক্ষেত্রে ঘটে তার বিপরীত। শুধু মাত্র পথ্য নির্বাচনে ভুলের কারণে রোগী আরো বেশি অসুস্থ হয়ে যেতে পারে।
সঠিক সময় যদি দিতে চাই সঠিক পথ্য, জানতে হবে এই সম্পর্কে অনেক অনেক তথ্য।
তাই যারা পথ্য সম্পর্কে জানে না তাদের জন্য সহজে অসুখ থেকে সেরে উঠা সময় সাপেক্ষ হয়ে যায়। পূর্বে হাসপাতালেই রোগীকে পথ্য দেয়া হত, কিন্তু বর্তমানে রোগীর আশে পাশে সবাইকে পথ্য সম্পর্কে জ্ঞান রাখতে হবে।
লিখেছেনঃ ফারিয়া ইসলাম বৃষ্টি
ছবিঃ সিম্পলফুড.কম, স্পুনলাইটনিং, ফিটগার্লকোড.কম, ক্রিয়েশানবাইকারা.কম