বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে জনজীবন যেন থমকে গিয়েছে প্রায়! এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে ও পরিবারকে সুরক্ষিত রাখা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। কিছু সতর্কতা মেনে ঠিকমতো পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখলে আপনি এই ভাইরাসটির সংক্রমণ ও বিস্তারের ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে আনতে পারেন। এক্ষেত্রে শুধু নিজের হাইজিন ঠিক রাখলেই চলবে না, আপনার আশেপাশের জিনিসপত্র এবং পরিবেশকেও জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে। ডিজইনফেকট্যান্ট স্প্রে (disinfectant spay) নামটি নিশ্চয়ই শুনেছেন! করোনা ভাইরাসের প্রতিকার হিসাবে ডিজইনফেকট্যান্ট স্প্রের ব্যবহার এখন অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। অনেকেই জানেন না, এই একটি স্প্রে আপনাকে অনেকভাবেই জীবাণু থেকে সুরক্ষিত রাখতে পারে। তাহলে ডিজইনফেকট্যান্ট স্প্রে ব্যবহারের মাধ্যমে জীবাণুমুক্ত থাকার ৭টি উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই চলুন!
ডিজইনফেকট্যান্ট স্প্রে ব্যবহারের ৭টি উপায়
ডিজইনফেকট্যান্ট স্প্রে কী?
রোগ সৃষ্টিকারী জার্ম (germ) অর্থাৎ ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া নির্মূলে অনেক আগের থেকেই হাসপাতালে এটি ব্যবহার করা হয়। ডিজইনফেকট্যান্ট মানে হচ্ছে সংক্রামক শক্তিনাশক! কোভিড-১৯ বা করোনা ভাইরাস বিস্তারের পর থেকেই পারসোনাল হাইজিন বা ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা মেনটেইন করতে বিশেষভাবে জোর দেওয়া হচ্ছে। তাই ইদানীং ডিজইনফেকট্যান্ট স্প্রে এর নামটাও বার বার শোনা যাচ্ছে! যেকোনো জড় পদার্থের উপর স্প্রে করে দিলে, সেখানে থাকা অণুজীবগুলোকে এটা নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। কেননা এতে নির্দিষ্ট পরিমাণে অ্যালকোহল থাকে, যেটা ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার বিস্তার রোধ করতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
কী উপায়ে আমরা এটি ব্যবহার করতে পারি?
১) টয়লেট সিট পরিষ্কার করে নিন
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পাবলিক টয়লেটগুলো থেকে বিভিন্ন রোগের জীবাণু ছড়ায়। অফিসে, শপিং মলে কিংবা বাইরে কোথাও গেলে আমাদেরকে এই ধরনের টয়লেট ব্যবহার করতেই হয়। একটা ওয়াশরুম একসাথে অনেক মানুষ ব্যবহার করছেন। কারো মধ্যে যদি রোগ বহনকারী জীবাণু থেকে থাকে, সেটা খুব দ্রুত অন্যদের মধ্যেও ছড়িয়ে যেতে পারে। তাই ব্যবহারের আগে ডিজইনফেকট্যান্ট স্প্রে দিয়ে টয়লেট সিট পরিষ্কার করে নিন।
২) মোবাইল জীবাণুমুক্ত রাখুন
অনেকেই আছেন যারা কিছুক্ষণ পরপর কাপড় দিয়ে মোবাইল মুছে নেন। এতে ময়লা দূর হলেও ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া তো যাবে না! তাই সঠিক মাত্রার অ্যালকোহল বেইজড ডিজইনফেকট্যান্ট স্প্রে দিয়ে মোবাইল জীবাণুমুক্ত করে নিন। নিজের অজান্তে আমরা কতো জায়গাতেই তো মোবাইল রাখছি! গবেষণায় উঠে এসেছে, করোনা ভাইরাস জায়গাভেদে তিন ঘণ্টা থেকে তিন দিন পর্যন্ত সক্রিয় থাকতে পারে। তাই মোবাইল ফোন জীবাণুমুক্ত রাখতে একটু সতর্ক তো থাকতেই হবে!
৩) অফিসের ডেস্ক ও ল্যাপটপ পরিষ্কার রাখুন
সবক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা মেনে চললে রোগজীবাণু থেকে আপনি অনেকটাই সেইফ থাকবেন। আপনার কর্মক্ষেত্রের পারসোনাল স্পেস বা জায়গাটুকু নিজ উদ্যোগেই জীবাণুমুক্ত রাখুন। অফিসে গিয়েই ডেস্ক, ফাইল, ল্যাপটপ, ল্যাপটপের মাউস, পানির বোতল, ব্যাগ সবকিছুতেই ডিজইনফেকট্যান্ট স্প্রে দিয়ে নিন।
৪) বেসিনের কলে স্প্রে ব্যবহার করুন
বার বার হাত ধুয়ে আমরা সবাই নিজেকে পরিষ্কার রাখছি। কিন্তু একবার ভাবুন তো, যেই বেসিনের কল ঘুরিয়ে পানি বন্ধ করলেন, সেটা কী জীবাণুমুক্ত? দেখা যায়, পরিবারের সবাই একটা বেসিনই ব্যবহার করে। অফিসে থাকলেও সবার জন্য একটা বা দুইটা বেসিন থাকে। সেক্ষেত্রে বেসিনের কল থেকেও ইনফেক্টেড হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই এটি ব্যবহারের আগে অবশ্যই ডিজইনফেকট্যান্ট স্প্রে দিয়ে নিন।
৫) বাচ্চার খেলনাগুলো জীবাণুমুক্ত রাখুন
ছোট বাচ্চারা কোনো খেলনা হাতে পেলেই মুখে দেয়! সেজন্য পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের উচিত এই ব্যাপারে সতর্ক থাকা। নতুন কোনো খেলনা এনেই আগে ডিজইনফেকট্যান্ট স্প্রে দিয়ে নিন। যেই খেলনাগুলো দিয়ে সে সবসময় খেলে, সেগুলো ফ্লোরে ছড়িয়ে না রেখে পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত স্থানে রাখুন।
৬) বাসা ও অফিসের দরজার হাতল
হাত থেকেই ভাইরাসঘটিত রোগের জীবাণু ছড়িয়ে পরে। আপনার আগে অফিসের দরজার হাতল কতজনই তো ধরেছে! এর মধ্যে কেউ একজনও যদি সংক্রমিত থাকে, সেই জীবাণুটা কিন্তু হাতলে থেকে গেল। তাই অফিসের দরজার হাতলে হাত দেওয়ার আগে ডিজইনফেকট্যান্ট স্প্রে দিয়ে নিন। ঠিক একইভাবে বাসায় এসেও আগে চাবি, হাতল, কলিং বেল ডিজইনফেক্ট করে ফেলুন।
৭) আসবাবপত্র ও গৃহস্থালি জিনিস ক্লিন করুন
সোফা, কার্পেট, আলমারি, ডাইনিং টেবিল সবকিছুই জীবাণুমুক্ত রাখা প্রয়োজন। করোনা ভাইরাস কার্ডবোর্ড বা অন্যান্য সারফেসে ১ দিন, ধাতব জিনিস যেমন স্টিলে ৩দিন, তামাতে ৪ ঘন্টা এমনকি বাতাসে ৩ ঘন্টা পর্যন্ত সারভাইভ করে। তাই এই সময়ে বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন। সম্ভব হলে প্রতিদিনই গৃহস্থালি জিনিসপত্রে ডিজইনফেকট্যান্ট স্প্রে দিয়ে দিন।
র্যানস ডিজইনফেকট্যান্ট স্প্রে রিভিউ
করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে প্রায় সবজায়গাতেই ডিজইনফেকট্যান্ট স্প্রে স্টক আউট! কারণ নিজের পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে এখন সবাই কমবেশি সচেতন। খুঁজতে খুঁজতে সাজগোজে পেয়ে গেলাম র্যানস ডিজইনফেকট্যান্ট স্প্রে (Rans Disinfectant Spray)! দামটাও হাতের নাগালে, তাই দেড়ি না করে প্রোডাক্টটি নিয়ে নিলাম ও ব্যবহার করা শুরু করলাম। এতে ৭০% অ্যালকোহল আছে, যেটা করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে কার্যকরী।
আমার এক্সপেরিয়েন্স
আমার সবথেকে ভালো লেগেছে যে এটা বেশ দ্রুত অ্যাবজর্ব হয়ে যায় এবং পরে মোছার কোন দরকার হয় না। তবে আপনি মোবাইল, ল্যাপটপে পরিষ্কার টিস্যু দিয়ে মুছে ফেলতে পারেন। এটা ১০০ মিলির ছোট বোতল, তাই সবসময় ব্যাগেও রাখতে পারি। জীবাণুমুক্ত করতে যেকোনো জিনিসের থেকে ১৫-২০ সেমি দূরত্বে ধরে রেখে স্প্রে করে নেই। তবে এটি মুখে বা স্কিনে লাগানোর স্প্রে নয়! আরেকটা কথা, এতে অ্যালকোহল যেহেতু দাহ্য পদার্থ তাই আগুন থেকে দূরে যথা সম্ভব দূরে রাখুন ও আপনি সাবধানে থাকুন।
তাহলে, ডিসইনফেকট্যান্ট স্প্রে ব্যবহারের মাধ্যমে জীবাণুমুক্ত থাকার উপায়গুলো জেনে নিলেন। যেখানে যেই পরিস্থিতিতে থাকুন না কেন, সুস্থ ও নিরাপদ থাকতে পরিচ্ছন্নতা অবলম্বন করতেই হবে! আপনি এটি পেয়ে যাবেন সাজগোজের দু’টি ফিজিক্যাল শপে; যার একটি যমুনা ফিউচার পার্ক ও অপরটি সীমান্ত স্কয়ারে অবস্থিত। আর অনলাইনে কিনতে চাইলে শপ.সাজগোজ.কম থেকে কিনতে পারেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
ছবি- সাজগোজ