ডাবল ক্লেনজিং শব্দটি শুনতে যতটা সহজ মনে হচ্ছে, কাজটি আসলে ততটাই সহজ। অনেকে অবশ্য ভাবেন, ডাবল অর্থ হয়তো একই ক্লেনজার দিয়ে দু’বার মুখ ধোয়া। অর্থ কিছুটা একই রকম। তবে পার্থক্যটা হচ্ছে, একই ক্লেনজার নয়, বরং পরপর দু’বার দুই ধরনের ক্লেনজার দিয়ে শুধু মুখ পরিষ্কার করে ধুয়ে ফেলতে হয়। শুধু প্রথম ক্লেনজারটা হবে অয়েল বেইজড এবং পরেরটা ওয়াটার বেইজড। ত্বক সুস্থ রাখতে ড্রাই ও অয়েলি স্কিনে ডাবল ক্লেনজিং নিয়মিত করা উচিত।
কেন ড্রাই ও অয়েলি স্কিনে ডাবল ক্লেনজিং প্রয়োজন?
ফেইসওয়াশ দিয়ে একবার মুখ ধুলেই তো ময়লা চলে যাওয়ার কথা। তবে কেন আলাদাভাবে ড্রাই ও অয়েলি স্কিনে ডাবল ক্লেনজিং প্রয়োজন? কারণ আপনি নিশ্চয়ই চান না একটু অসাবধানতার কারণে আপনার ত্বকের কোনো ক্ষতি হোক! ত্বকের উপর দিয়ে প্রতিদিন যত ধকল যায় সেটা দূর করতেই ড্রাই ও অয়েলি স্কিনে ডাবল ক্লেনজিং নিয়মিত করতে হবে।
ডাবল ক্লেনজিং এর প্রথম ধাপ অয়েল ক্লেনজার। অয়েল বেইজড ক্লেনজার এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যেটাতে মেকআপ, সানস্ক্রিন, সিবাম এবন ধুলাবালি দূর করার মতো সকল উপাদান আছে। প্রথম ধাপ শেষ হলে পরের ধাপে আসছে ওয়াটার বেইজড ক্লেনজার। ত্বক থেকে ময়লা ও ঘাম দূর করতে কাজ করে এই ক্লেনজার।
ত্বক সাধারণত চার ধরনের হয়। যেমন-ড্রাই, অয়েলি, নরমাল ও কম্বিনেশন। এর মধ্যে যাদের ত্বক একদম ড্রাই ও অয়েলি তারা কীভাবে ত্বক পরিষ্কার করবেন, কী ধরনের ক্লেনজার ব্যবহার করবেন তা নিয়ে সবচেয়ে বেশি চিন্তায় থাকেন। নিচের লেখাটি পড়লে এ প্রশ্নের সমাধান পাওয়া সহজ হয়ে যাবে।
ড্রাই স্কিনে ডাবল ক্লেনজিং
ড্রাই স্কিন মানেই ত্বক টানটান হয়ে যাওয়া। একদমই হাইড্রেটেড না থাকা। অয়েলি স্কিনের চেয়ে ড্রাই স্কিনে ডাবল ক্লিনজিং কিছুটা আলাদা। কেন আলাদা সেটিও আপনাদের জানাবো তবে তার আগে জানতে হবে ত্বক আসলে কেন শুষ্ক হয়।
ত্বক কেন শুষ্ক হয়?
ত্বকে সিবাম (ন্যাচারাল অয়েল) এর পরিমাণ কম থাকলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। ত্বকের সিবাসিয়াস গ্ল্যান্ড যদি নিষ্ক্রিয় থাকে, তখন শুষ্ক ত্বকে খুব কম তেল তৈরি হয়। ড্রাই স্কিনে রোজাশিয়া (ত্বকের এ রোগে রোদে গেলে গাল লাল হয়ে যায়, অনেকের র্যাশও হতে পারে) হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
ড্রাই স্কিনের জন্য ক্লেনজার
বেশিরভাগ ক্লেনজার দিয়ে ত্বকের তেল আর ধুলো পরিষ্কার করা হয়। এ ধরনের ক্লেনজার ব্যবহার করলে ত্বকে যে ন্যাচারাল অয়েল থাকে, সেগুলো ধুয়ে যায়, ত্বক হয়ে ওঠে শুষ্ক। তাই শুষ্ক ত্বকের জন্য বেছে নিতে হবে আলাদা ক্লেনজার। সোডিয়াম সালফেট, স্যালিসাইলিক অ্যাসিড, গ্লাইকোলিক অ্যাসিড, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল (যেমন- ট্রাইক্লোজান), প্যারাবেন, অ্যালকোহল জাতীয় উপাদানগুলো ত্বক শুষ্ক করে দেয়। তাই যে ক্লেনজারে এসব উপাদান আছে সেগুলো এড়িয়ে চলাই ভালো।
শুষ্ক ত্বকের অধিকারী হলে এমন একটি ক্লেনজার বেছে নিন যার pH ব্যালেন্স আছে। আমাদের ত্বকের উপর একটি পাতলা প্রতিরক্ষামূলক স্তর রয়েছে যাকে অ্যাসিড ম্যান্টল বলা হয়। এখান থেকে সিবাম তৈরি হয়। যেটি শরীরের ঘাম থেকে ল্যাকটিক অ্যাসিড ও অ্যামিনো অ্যাসিডের সঙ্গে মিলে ত্বকে ৫.৫ মাত্রার pH তৈরি করে। আদর্শ ক্লেনজার ব্যবহারে প্রাকৃতিক এই ক্লেনজার ত্বক থেকে হারিয়ে যাবে না।
ধরুন, বাইরে ঘুরতে গিয়েছেন, ক্লেনজিং এর জন্য সময় পাচ্ছেন না। তখন বিকল্প হিসেবে মাইসেলার ওয়াটারও ব্যবহার করতে পারবেন। ত্বককে সুস্থ রাখতে মাইসেলার ওয়াটার ব্যবহার একদম সহজ ও নিরাপদ। মাইসেল যুক্ত এই সল্যুশনে রয়েছে এমন শক্তি যা আপনার ত্বকে থাকা ময়লা বের করে নিয়ে আসে।
এমন স্কিনের ক্লেনজারে যে উপাদানগুলো থাকা উচিত
হায়ালুরনিক অ্যাসিড- স্কিন কেয়ারে হায়ালুরনিক অ্যাসিড অন্যতম জরুরি একটি উপাদান। ত্বককে ময়েশ্চারাইজড করার পাশাপাশি দীর্ঘ সময় ময়েশ্চার লক করে রাখে। পানি ধরে রাখার ক্ষমতা থাকায় ড্রাই স্কিনের ক্লেনজারে এটি একদম সঠিক একটি চয়েস।
গ্লিসারিন- উদ্ভিজ্জ চর্বি থেকে পাওয়া থিক সিরাপ গ্লিসারিন। এটি এমন একটি হিউমিকট্যান্ট যেটি পানির সঙ্গে মিশে স্কিনে আটকে থাকে। গ্লিসারিন একই সঙ্গে হাইড্রেটিং এবং নন-কমেডোজেনিক। আর এটি স্কিনের পোরসও ক্লগ করে না।
সিরামাইডস- সিরামাইডস মূলত লিপিডস যেগুলো ত্বকে খুঁজে পাওয়া যায়। ত্বকের ন্যাচারাল ব্যারিয়ার হিসেবে কাজ করে সিরামাইডসের সিমেন্টিং এই স্ট্রাকচার। বাইরের ধুলোবালি, সূর্যরশ্মি, ধোঁয়া এই সিরামাইডসের ক্ষতি করতে পারে। ক্লেনজারে যখন সিরামাইডস যুক্ত করা হয় তখন ত্বকে থাকা সিরামাইডস আরও শক্তিশালী হয় এবং পানি বের হয়ে যাওয়াকে রোধ করে।
অ্যালোভেরা- ত্বককে ময়েশ্চারাইজড রাখতে প্রাকৃতিক উপাদান অ্যালোভেরার কথা আমরা সবাই জানি। ত্বকের ন্যাচারাল অয়েলকে আটকে রেখে ত্বককে কোমল রাখতে অ্যালোভেরার জুড়ি নেই।
নিয়াসিনামাইড- নিয়াসিনামাইড ভিটামিন বি৩ নামেও পরিচিত। এর বেশ কয়েকটি উপকারিতা আছে। স্কিন ব্যারিয়ারের ড্যামেজ রিপেয়ার এবং ওয়াটার লস কমায় নিয়াসিনামাইড। ড্রাই স্কিনের পাশাপাশি অয়েলি স্কিন, ফাইন লাইনস, পিগমেন্টেশন, ডিহাইড্রেশনসহ আরও অনেক সমস্যার সমাধান আছে এই উপাদানে।
আপনার স্কিন যদি ড্রাই হয়, আর ক্লেনজিং রুটিনে দিনে কয়েকবার ক্লেনজারের ব্যবহার থাকে, তাহলে জেনে রাখুন নিজের ত্বকের ক্ষতি আপনি নিজেই করছেন। বিশেষ করে যদি সেটি আপনার ত্বকের জন্য মানানসই না হয়। তাহলে সবার আগে আপনার স্কিন টাইপ বুঝে বেছে নিন ক্লেনজার। শিয়া বাটার ও সানফ্লাওয়ার, কোকোনাট ও জোজোবা অয়েল সমৃদ্ধ ক্লেনজার ড্রাই স্কিনের জন্য খুবই ভালো। ত্বকের হাইড্রেশন ধরে রাখতে এই উপাদানগুলো খুবই উপকারী।
অয়েলি স্কিনে ডাবল ক্লেনজিং
অয়েল ক্লেনজিং শুনেই হয়তো বুঝতে পারছেন প্রথম ধাপে ত্বক পরিষ্কার করতে হবে অয়েল দিয়ে। কিন্তু প্রশ্ন করতে পারেন অয়েলি স্কিন কেন আবার অয়েল দিয়েই পরিষ্কার করবেন? এর উত্তর জানার আগে জানতে হবে কেন আমাদের স্কিন অয়েলি হয়। তাহলেই অয়েলি স্কিনেও কেন ডাবল ক্লেনজিং প্রয়োজন সহজেই বোঝা যাবে।
স্কিন কেন অয়েলি হয়?
ওয়াটারপ্রুফ মেকআপ এবং ধুলাবালি সিবামের সাথে মিশে ত্বকের ভীষণ ক্ষতি করে। এগুলো সাধারণভাবে ওয়াটার বেজড ক্লেনজার দিয়ে ব্রেক ডাউন হয় না। একনে অয়েলি বলে অনেকেই এমন ক্লেনজার ব্যবহার করেন যেগুলো ত্বক আরও শুষ্ক করে দেয়। অয়েলি স্কিনে ড্রাই ক্লেনজিং করলে ত্বক আরও শুষ্ক হয়ে ওঠে। ত্বকের এই ড্রাই সিগন্যাল তখন সেবাসিয়াস গ্ল্যান্ডে পৌঁছে যায়। এই গ্ল্যান্ড থেকেই অয়েল তৈরি হয়। ঠিক তখনই এই গ্ল্যান্ড ত্বকের ব্যালেন্স রাখার জন্য ত্বকে আরও অয়েল তৈরি করে। ফলে ত্বক আরও তৈলাক্ত হয়ে ওঠে। যার কারণে পোরস ক্লগ হয়ে যায়। ত্বক প্রস্তুত হয় ব্রণ ওঠার জন্য। সর্বশেষ মুখে দেখা দিতে শুরু করে মন খারাপ করা ব্রণ। ত্বকের জন্য কোন ক্লেনজার ভালো সেটি সঠিকভাবে না জেনে কিছু ভুল সিদ্ধান্তের জন্যই অয়েলি স্কিনের মানুষেরা ব্রণের সমস্যায় ভোগেন। এ সমস্যা থেকে দূরে থাকার জন্য ডাবল ক্লেনজিং করা আবশ্যক।
অয়েলি স্কিনের ক্লেনজারে যে উপাদানগুলো থাকা উচিত
ক্লেনজিং অয়েলের বদলে অনেকে ন্যাচারাল অয়েল ব্যবহার করেন। ন্যাচারাল অয়েল বেশ হেভি ও কমেডোজেনিক (পোরস বন্ধ করে ব্ল্যাক হেডস ও ব্রণ তৈরি করে)। এগুলো ছাড়াও ন্যাচারাল অয়েল ত্বক থেকে উঠিয়ে ফেলার পরও ত্বকে অয়েলি ভাব থেকে যায়। অপরদিকে ক্লেনজিং অয়েলে ইমালসিফায়ার থাকে। ইমালসিফায়ার নামক উপাদানটি তেল ও পানিকে একত্রিত করে। এর সাহায্যে ত্বক ভেতর থেকে পরিষ্কার হয়ে যায়। পানি দিয়ে ধোয়ার পর ত্বক হয়ে ওঠে সুস্থ। এছাড়া এমন স্কিনের জন্য মাইসেলার ওয়াটারও ব্যবহার করতে পারেন।
অয়েল ক্লেনজিং এর পরের ধাপ হচ্ছে ওয়াটার বেইজড ক্লেনজিং। অয়েলি অথবা একনে-প্রন স্কিনের জন্য জেল অথবা ফোমিং ক্লেনজার ব্যবহার করলে ভালো। স্যালিসাইলিক অ্যাসিড, বেনজয়েল পার অক্সাইড অথবা থানকুনি পাতা, গ্রীন টি আছে এমন ক্লেনজারও ব্যবহার করা যায়। এ উপাদানগুলো ব্যবহারে পোরস পরিষ্কার হয়ে যাবে, কোনো ইরিটেশন বা রেডনেস থাকলে আরাম মিলবে, যেসব ব্যাকটেরিয়ার কারণে ব্রণ হয় সেগুলো দূরে থাকবে।
লেখাটি পড়েই হয়তো বুঝতে পারছেন ড্রাই ও অয়েলি স্কিনের ক্লেনজারে কী কী উপাদান থাকা প্রয়োজন সে সম্পর্কে। আপনি কোন ক্লেনজার ব্যবহার করবেন সেটি বোঝার জন্য অবশ্যই আগে আপনার ত্বকের ধরন বুঝতে হবে। তাহলেই আপনার ত্বক থাকবে সুস্থ। আপনিও থাকবেন নির্ভাবনায়। আপনার পছন্দমতো ক্লেনজার কিনতে পারেন অনলাইনে শপ.সাজগোজ.কম থেকে। যদি সরাসরি কিনতে চান তাহলে ঘুরে আসতে পারেন যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত সম্ভার, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, ইস্টার্ণ মল্লিকা, ওয়ারীর র্যাংকিন স্ট্রিট, বসুন্ধরা সিটি, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে), মিরপুরের কিংশুক টাওয়ারে এবং চট্টগ্রামের খুলশি টাউন সেন্টার এ অবস্থিত সাজগোজের ফিজিক্যাল শপগুলো থেকেও।
ছবি: সাজগোজ