নিশ্চয়ই আপনি নিজের দাঁত রোজ ব্রাশ করেন, সিল্কি চুল আর স্বাস্থ্যজ্জল স্কাল্পের জন্য নিজের চুল রোজ ব্রাশ করতেও ভোলেন না। কিন্তু আপনাকে যদি এখন আপনার স্কিন ব্রাশ করতে বলি তবে?
স্কিনের জন্য ড্রাই ব্রাশিং! ড্রাই ব্রাশিং-এর পপুলারিটি কয়েকবছর ধরেই আকাশছোঁয়া। এই স্কিন অ্যান্ড বডি কেয়ার মেথডের সবচেয়ে বড় ফ্যানদের মধ্যে আছেন সুপারমডেল মিরানডা কার (Miranda Kerr) এবং অস্কার বিজয়ী অভিনেত্রী গোয়েনথ প্যালট্র (Gwyneth Paltrow) আর তারা দুজনেই হলিস্টিক লাইফস্টাইল কালচারের দুই বড় নাম। কোরা অরগানিকস এবং গুপ এদের সাফল্যের প্রতিনিধিত্ব করে।
কিন্তু কেন তারা দুজনেই ড্রাই ব্রাশিং- এর ভক্ত? আসলে ‘ড্রাই ব্রাশিং’ শুনে যা মনে হয়, এটা একেবারেই তাই। বেসিক্যালি এটা হচ্ছে নির্দিষ্ট একটা ওয়েতে শুষ্ক (ভেজা নয়) স্কিন ন্যাচারাল কন স্ক্রাবিং ব্রাশের সাহায্যে ব্রাশ করে নেয়া। প্রেফারেবলি গোসল/ শাওয়ারের আগে।কিন্তু কেন এই এক্সট্রা কাজটা করবেন আর এটা করে কি এমন বেনেফিট পাবেন ভাবছেন? জানাচ্ছি…
নিয়মিত ড্রাই ব্রাশিং স্কিনকে উজ্জ্বল রাখে সেটা আমরা আর্টিকেলের নাম থেকেই বুঝতে পারছি। কিন্তু ড্রাই ব্রাশিং এর কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু হেলথ এবং বিউটি বেনেফিট আছে…
(১) লিম্ফ্যাটিক ড্রেইনেজ এবং সাপোর্ট
দেহের লিম্ফ সিস্টেম ডাকট, ভেসেল এবং লিম্ফ নডস নিয়ে তৈরি। এর প্রধান কাজ দেহের সর্বত্র সঠিকভাবে পানি পৌঁছে দেয়া, হোয়াইট ব্লাড সেলস, ফ্যাটি এসিড এবং ফ্যাট সেলস উৎস থেকে দেহের যেখানে প্রয়োজন সেখানে নিয়ে যাওয়া। কিন্তু আমরা অনেকে জানিি না এমন কিছু একটা আমাদের দেহে আছে, এবং তার সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা দরকার! অনেক অনেক লিম্ফ ভেসেল জাস্ট আমাদের স্কিনের ঠিক নিচেই থাকে, এবং যারা রেগুলার ড্রাই ব্রাশ করে থাকেন এবং একে সাপোর্ট করেন তারা বলেন, রেগুলার ড্রাই ব্রাশিংএ স্বাভাবিক লিম্ফ ফ্লো বজায় থাকে। এতে দেহের এখানে সেখানে জমে থাকা পানি (যা অনেকের জন্যই অতিরিক্ত ওজনের একটা বড় কারন) টক্সিন বের হয়ে যায়। সুতরাং আপনার যদি শরীরে পানি জমে যাওয়ার প্রব্লেম থাকে ট্রাই করে দেখতে সমস্যা কি?
[picture]
(২) এক্সফোলিয়েশন
প্রথমবার ড্রাই ব্রাশ করেই আপনি যে রেজাল্ট পাবেন সেটা হচ্ছে প্রপার এক্সফলিয়েশন। আমার পারসনালি অবাক লেগেছিল যে কত ডেড সেলস স্কিনে জমে আছে এবং আমি প্রপারলি ক্লিন করতে পারিনি সেগুলো। রাফ স্কিন, ফেটে যাওয়া চামড়ার সমস্যায় যারা ভুগছেন তাদের জন্য ড্রাই ব্রাশিং এর মতো উপকারি খুব কম জিনিসই আছে। আর এক্সফলিয়েটেড ত্বকের সাথে আপনি ফ্রি পাবেন উজ্জ্বল ট্যান মুক্ত লাবণ্যময় ত্বকও। সুতরাং স্কিনে এক গাদা নোংরা জমিয়ে রেখে ‘কিভাবে স্কিন গ্লো করবে ?’ এমন প্রশ্ন মাথায় না রেখে মাঠে নেমে পড়ুন।
(৩) রোমকূপ পরিস্কার করা এবং রোমকূপের আকার ছোট রাখা!
ডেড সেলস, নোংরা, ময়লা, তেল স্কিনে জমে থাকলে কি হয় জানেনতো? স্কিনের রোমকূপ বড় হয়ে যায়। আমি দেখি কারোই এই অজাচিত ঝামেলা প্রিভেনট করার কথা কখন মনে থাকে না ! কিন্তু একবার পোর বড় হয়ে গেলে তারপরে সে কি আর্তনাদ ! প্রিভেনটশন ইজ বেটার দ্যান কিওর! এটা তো ছোটবেলা থেকেই জানি আমরা তাই নয় কি? বডি স্কিনের টানটান ভাব এবং রোমকূপের আকার সঠিক রাখার চেষ্টায় স্কিন ঠিকভাবে ক্লিন রাখার কোন জুড়ি নেই।
(৪) সেলুলাইট কমাতে সাহায্য করা
মোটা হন বা পাতলাই হন, সেলুলাইটের সমস্যা আমাদের অনেকেরই থাকে। সেলুলাইট কাকে বলে না জানলে নিচে দেখে নিন। এটা হচ্ছে স্কিনের নিচে ফ্যাট সেলের এক ধরনের অসসাভাবিক বিস্তার যা স্কিনের উপরে একটা এবড়ো থেবড়ো লুক দেয়।
থাই/ হাতের উপরের অংশ চেপে ধরে নিজের সেলুলাইটের অস্তিত্ব দেখে নিতে পারেন। স্কিন কমলার খোসার আকৃতি নিলে আপনার সেলুলাইট আছে।
অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, অনিয়মিত রক্তসঞ্চালন এবং জেনেটিক কারনে দেহে অতিরিক্ত সেলুলাইট জমে যাওয়ার ফলাফল। বডিতে জমে থাকা অতিরিক্ত পানি , অনিয়মিত রক্তচলাচল এই অবস্থার একটা প্রধান কারণ। আর রেগুলার ড্রাই ব্রাশিং স্কিনের প্রতিটা প্রান্তে রক্তসঞ্চালন বাড়ায়, অতিরিক্ত পানি বের করে দেয়। যাতে করে এই জেদি সেলুলাইট একটু হলেও কমে। আর বিশ্বাস করুন রোজ যারা এক্সারসাইজ করে, হেলদি লাইফ লিড করে তারাও কিন্তু এই সেলুলাইট কমাতে হিমশিম খায় ! বিখ্যাত আকর্ষণীয় মডেল তারকারাও কিন্তু একি দলে পড়ে, সো ভাববেন না ফ্যাট জমেছে তো কি হয়েছে? ৩ দিনে না খেয়ে কমিয়ে ফেলব! আর অনেকটা এই কারনেই তারকা জগতে ড্রাই ব্রাশিং এর ভক্তের অভাব নেই।
অচিরেই সেলুলাইট এবং এর প্রতিকার নিয়ে বিস্তারিত লিখব।
ড্রাই ব্রাশিং কাল থেকেই শুরু করবেন বলে ভাবছেন? কিন্তু নিজের নাইলনের স্ক্রাব দিয়ে কিন্তু এটা হবে না! যেহেতু শুকনো স্কিনে ব্রাশ করা হচ্ছে সেজন্য আপনাকে অবশ্যই বেছে নিতে হবে প্রপার ন্যাচারাল কোন বডি ব্রাশ। নিচে কিছু প্রোডাক্টের নাম দিলাম-
- The body shop round body brush – দাম, প্রায় ১২০০ টাকা, ৬-৭ মাস ইউজ করতে পারবেন। কোন বড় সেলের সময় অর্ডার করলে অর্ধেক দামে পেয়ে যেতে পারেন। আমি সেটাই করি।
- The body shop cactus long handle brush দাম- একই প্রায়, ১২০০-১৩০০ টাকা। এটার হাতল লম্বা হওয়ায় যেকোনো জায়গায় ইজিলি রিচ করা যায়।
- Loofah / ধুন্দল- দাম- ২৫-৩০ টাকা পার পিস। যেকোনো কাঁচা বাজারে পাবেন। আমি ম্যাক্সিমাম সময়ে ধুন্দলই ব্যবহার করি। দাম খুবি কম বলে এতেই সুবিধা, কিন্তু মনে রাখবেন, ধুন্দল কিন্তু খুবি রুক্ষ। সুতরাং একেবারেই লাইট প্রেসার ইউজ করবেন। ব্যবহারের আগে নতুন ধুন্দল পানিতে কয়েকদিন ভিজিয়ে নিতে পারেন। তারপরে আবার শুকিয়ে নিয়ে ড্রাই ব্রাশ করবেন। এতে একটু নরম হবে এটা। এক ধুন্দল প্রতিবার ব্যবহারের পর পরিস্কার করে নিলে ১ মাস ইউজ করতে পারবেন।
আবারো বলছি, এটা খুবি গুরুত্বপূর্ণ যে সবসময় ড্রাই ব্রাশ করার জন্য ন্যাচারাল স্ক্রাব ব্যাবহার করতে হবে।কিভাবে করবেন ড্রাই ব্রাশিং ?
এবার উপায়টা স্টেপ বাই স্টেপ বলে দেই-
সবচেয়ে ভালো হয়, সকালে ঘুম থেকে উঠে গোসলের আগে ড্রাই ব্রাশ করে নিলে। এতে রক্তসঞ্চালন বাড়বে, দেহে এনার্জি পাবেন। অবশ্যই জেন্টল ব্রাশে লাইট প্রেসার ইউজ করবেন। অতিরিক্ত ঘষলে অতিরিক্ত রেজাল্ট পাবেন এমন কিছু কিন্তু না এটা! সো পর পর ৩-৪ দিন জান প্রান দিয়ে ঘসাঘসি না করে সপ্তাহে ২-৩ দিন করে শুরু করুন। আস্তে আস্তে পরিমান বাড়ান।
- পা থেকে শুরু করুন। আমি পায়ের নিচে থেকে গোলাকার মোশনে আস্তে আস্তে উপরের দিকে উঠি।
- ড্রাই ব্রাশের সিস্টেম হচ্ছে যেখানে বডির লিম্ফ সিস্টেম ড্রেইন করে সেখানে উঠে আসা। আর সেটা হচ্ছে দেহের সেন্টার বা হার্ট। সুতরাং নিচ থেকে আপনাকে হার্টের কাছে উঠে আসতে হবে। আবার হাতের আঙ্গুল থেকেও হার্টের দিকে উঠে আসতে হবে। কিন্তু গলার কাছ থেকে আসতে আসতে ব্রাশ নিচের দিকে (অর্থাৎ হার্টের দিকে) নামিয়ে নিয়ে আসতে হবে।
- পেটে এবং আরমপিটে গোলাকার ক্লকঅয়াইজ (আপনার ক্লক অয়াইজ) ম্যাসাজ করবেন।
- পিঠের দিকের কথা ভুলবেন না যেন। পুরো শরীর ব্রাশ করাটা জরুরী। লম্বা হাতলের ব্রাশ এইজন্যই আমি দাম বেশি হলেও কিনি।
- বার বার স্কিন ব্রাশ করবেন না। বডির সব অংশে মাত্র একবার ব্রাশ করবেন। এতে পুরো প্রসেসে কোনভাবেই ৩-৪ মিনিটের বেশি লাগবে না। বারবার একি জায়গা ব্রাশ করলে স্কিন কেটে যেতে পাড়ে/ ক্ষত তৈরি হতে পাড়ে। অতি উৎসাহীরা সাবধান !
আসলেই কি কোন চেঞ্জ হয় স্কিন এবং হেলথের ? নাকি এটা শুধুই ‘হাইপ’ … ?
ডাক্তাররা ড্রাই ব্রাশিং এ স্কিনের জরুরী এক্সফলিয়েশন হয় এবং স্কিনের স্বাস্থ্য ভালো থাকে সেটা মেনে নেন। রক্তসঞ্চালন বাড়ানো এবং ত্বক উজ্জ্বল রাখার ব্যাপারটাও বহুবার পরীক্ষিত। কিন্তু অনেক ড্রাই ব্রাশপ্রেমী বলেন ড্রাই ব্রাশে রোগের উপশম হয়, ওজন কমে যায়, দেহে শক্তি বাড়ে। এসব টপিক নিয়ে কোন ধরনের পরীক্ষা এখনো হয়নি। সুতরাং এসব ক্লেইমস বিশ্বাস করার কোন দরকার নেই।
আমি ড্রাই ব্রাশিংএর ফ্যান! কারণ এটা পরীক্ষিত যে এই মেথডের কোন নেগেটিভ ইফেক্ট নেই। যদি আপনি কোন ইফেক্ট দেখেন সেটা যত ক্ষুদ্রই হোক না কেন পসিটিভ হবে। আর সময়ও খুব বেশি লাগছে না কিন্তু! সুতরাং এত কম সময় আর কম খরচে যদি নিজের স্বাস্থ্য এবং ত্বকের কিছু উন্নতি করে নেয়া যায়, তবে স্কিন কেয়ার রুটিনে ড্রাই ব্রাশের জন্য একটু জায়গা রাখতে ক্ষতি কি? তাই না?
ছবি – পিন্টারেস্ট ডট কম, স্টাইলক্রেজ ডট কম
লিখেছেন – তাবাসসুম মুশতারি মীম