এর আগে আমি তৈলাক্ত ও সেনসেটিভ ত্বক নিয়ে পোস্ট দিয়েছিলাম। আজকে দেব শুষ্ক ত্বক নিয়ে। গরম কালে যদিও শুষ্ক ত্বকের অধিকারীদের কষ্ট কম তারপরেও তারা অনেক ঝামেলায় পড়ে। আর শীতকাল এলে তো কথাই নেই। শুষ্ক ত্বকের শত্রু এই শীতকাল। আর সামনে রোজা। দীর্ঘক্ষণ পানি না খেয়ে থাকার ফলে ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়ে। বলা হয়ে থাকে সবাই কোন না কোন সময়ে এই শুষ্ক ত্বকের ঝামেলায় পড়েন। চলুন আজ এই ত্বকটি সম্পর্কে জানি।
উপসর্গ :
শুষ্ক ত্বক নির্ভর করে – বয়স, স্বাস্থ্য, জিওগ্রাফিক অবস্থান (ঠান্ডা বা গরম প্রধান এলাকা কিনা), বাইরে কত সময় থাকা হয় সেটার উপর।
শুষ্ক ত্বকের অনেক উপসর্গ আছে। তবে বেসিক কিছু উপসর্গ এখানে বলা হলো –
০১. নরম ত্বকের পরিবর্তে ত্বকে রাফ এবং শুষ্ক ভাব দেখা যাবে।
০২. ত্বক শুকনো ও মলিন লাগবে।
০৩. গোসলের পর বা মুখ ধোয়ার পর ত্বক টানটান লাগবে।
০৪. চুলকানি ভাব থাকতে পারে।
০৫. টাফ ত্বক হয়ে যাবে।
০৬. নরমাল যে ত্বকে রেখা থাকে বা স্কিন লাইন থাকে, সেগুলো খুব বেশি দেখা যাবে এবং মুখে অনেক তাড়াতাড়ি বলিরেখা পড়ে যায়।
০৭. লাল ভাব থাকতে পারে।
০৮. চামড়া উঠে যাওয়ার মত হতে পারে। অর্থাত্ মরা কোষ খুব হয়।
কারণ:
০১. বংশগত বা জিনগত কারণে অনেকের ত্বকে তেল গ্রন্থিগুলো প্রয়োজনের তুলনায় কম থাকে। ফলে তেল নিঃসৃত হয় না ত্বকের প্রয়োজনমত। তাই ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়।
০২. বয়সের কারণে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। ৪০ এর পরে শরীরের প্রয়োজনীয় তেল তৈরীর ক্ষমতা চলে যায়। তেল ও ঘাম গ্রন্থি কমে যায়। ফলে প্রপার তেল না থাকার কারণে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। ছোট বাচ্চাদের তেল গ্রন্থিগুলো প্রপারলি গঠিত থাকেনা , ফলে তাদের ত্বক-ও শুষ্ক হতে পারে।
০৩. যাদের ত্বকের গঠন পাতলা তাদের ত্বক শুষ্ক হয়।
০৪. পেশার কারণে অনেকের ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। বিশেষ করে যেসব পেশায় অনেকবার হাত মুখ ধুতে হয়। যারা বাগানে বা কৃষিকাজ বা কনস্ট্রাকশনের কাজ করেন তাদের ত্বকও শুষ্ক হয়ে যায়।
০৫. অতিরিক্ত আকাশপথে ভ্রমণ করলে ।
০৬. ক্লোরিনযুক্ত পানিতে অতিরিক্ত সাঁতার কাটলে বা গোসল করলে বিশেষ করে গরম পানি বা ক্ষারযুক্ত সাবান বা এন্টিবায়োটিক যুক্ত সাবান ব্যবহার করলে।
০৭. বারবার ক্যামিকেল এর সাথে কন্টাক্ট হলে।
০৮. ধূমপান ও এলকোহল, ক্যাফেইন এর কারণে।
০৯. অতিরিক্ত পারফিউম ব্যবহার করলে।
১০. ভিটামিন এ ও বি এর অভাব হলে। জিংক ও ফ্যাটি এসিডের অভাব হলেও ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়।
১১. পানিশূন্যতা হলে যেমন – ডায়রিয়া, উচ্চ জ্বর, অতিরিক্ত ঘামা এবং প্রতিদিন প্রয়োজনীয় পানি পান না করা।
১২. কিছু ওষুধ , যেমন – এন্টিহিস্টামিন ত্বক শুষ্ক করে।
১৩. আবহাওয়ার কারণেও ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। ঠান্ডা আবহাওয়া ,অল্প আর্দ্রতা, খুব সূর্যের আলো ও শুষ্ক আবহাওয়ায় ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়।
১৪. এয়ারকন্ডিশনারে এ সবসময় থাকলে।
১৫. থাইরয়েড এর অসুখের ও ডায়াবেটিস এর কারণে।
১৬. কিছু চর্ম রোগের কারণে যেমন – একজিমা, ডার্মাটাইটিস, সোরিয়াছিস এ ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়।
প্রতিকার:
০১. ত্বক শুষ্ক হবার প্রকৃত কারণ বের করুন এবং তা পরিহার করুন।
০২. ত্বক যাতে শুষ্ক না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখুন।
০৩. একজন ভালো ডার্মাটোলজিস্টকে দেখান।
০৪. ভালো মশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। যেসব মশ্চারাইজারে ceramides, dimethicone & glycerin, hyaluronic acid, lanolin, mineral oil, petroleum jelly আছে তা কিনবেন। প্রোডাক্টের গায়ে উপাদান লেখা থাকে।
০৫. ময়েশ্চারাইজার লাগানোর আগে মুখের মরা কোষ পরিষ্কার করুন।
০৬. দীর্ঘক্ষণ গোসল করবেন না। গরম পানিতে গোসল করবেন না।
০৭. ময়েশ্চারাইজারযুক্ত সাবান ব্যবহার করুন।
০৮. গোসলের পানিতে বিভিন্ন তেল যেমন – আলমন্ড, অলিভ অয়েল দিয়ে গোসল করবেন।
০৯. সানস্ক্রিন SPF30 ব্যবহার করবেন।
১০. প্রচুর পানি খাবেন ও নরম সুতির আরামদায়ক কাপড় পরার চেষ্টা করবেন।
প্রাকৃতিক উপায়ে শুষ্ক ত্বকের যত্ন:
০১. অলিভ অয়েল গোসলের কয়েক মিনিট আগে সারা শরীরে মেখে গোসল করুন।
০২. অলিভ অয়েল ১চামচ + ৫ চামচ লবণ + ১ চামচ লেবুর রস দিয়ে তৈরী স্ক্রাব মুখে ও সারা শরীরে লাগাতে পারেন। এতে মরা কোষ দূর হবে।
০৩. শুষ্ক জায়গায় মধু ম্যাসেজ করে ২-৩ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
০৪. নারকেল তেল আক্রান্ত জায়গায় লাগালে উপকার পাবেন।
০৫. এলোভেরা জেল মধুর সাথে মিশিয়ে লাগিয়ে ১০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
০৬. দই বা পেঁপে মুখে ঘষে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
প্রচুর শাকসবজি খান। পানি খান। ত্বকের পরিচর্চা করুন। ভালো থাকুন।