রমজান মাসে সেহরি থেকে শুরু করে ইফতার পর্যন্ত প্রতিদিন আমাদের পুরো পরিবার একত্র হয়ে থাকে। আর নয়তো সাধারণত এটা হয় না। তাই পবিত্র ঈদ-উল- ফিতর-এই পরিবারকে সময় দেয়ার সুযোগ পাই আমরা। তাই পরিবারের সাথে ঈদ হোক আনন্দময়, এটাই সবার কামনা। শহরে যে-যার প্রয়োজনে সবাই ব্যস্ত। বাড়ি ফেরার জন্য সবাই তাই ঈদের ছুটিই বেছে নেন। তবুও ঠিক মতো বাবা-মা, ভাই-বোন সময় দিচ্ছেন কিনা ভেবে দেখেছেন কি একবারো? নানা কাজে, পড়াশোনা,ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরিতে এতটাই কাজে সময় পার করতে হয় যে নিজেদের জন্য আর সময় বের হয় না। এভাবেই কাজের চিন্তায় আমরা ভুলে বসি আমাদের পরিবারকে। কিন্তু এই ঈদের ছুটিতে পরিবারের সাথে ঈদ কিভাবে আনন্দময় হতে পারে তাই দেখে নেই চলুন!
ব্যস্ততা ভুলে পরিবারের সাথে ঈদ যেভাবে হবে আনন্দময়
১) পরিবারকে খুশি রাখার চেষ্টা করুন
কলিগ বা বন্ধুদের সাথেতো সময় দেয়াই হয়। একসাথে খাওয়া-দাওয়া, বিভিন্ন অকেশন-এ ঘুরতে যাওয়া এমনকি শহরের বাইরে কোথাও কয়েকদিনের জন্য ট্যুর-এ যাওয়াও হয়। কিন্তু এভাবে কি সবসময় পরিবারকে সময় দেয়া হয়? এ জন্য পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর-এর ছুটির দিনটিতে সময় দিন পরিবারকে, তাদের প্রয়োজন, তারা আপনার কাছ থেকে কী আশা করে সেটা বুঝার চেষ্টা করুন। তাদের খুশি রাখার চেষ্টা করুন।
২) পারিবারিক দূরত্ব কমিয়ে আনুন
এটা সত্যি যে- পরিবারে বাবা-মা, ভাই-বোনদের জন্যই আপনি সব করছেন, তাদের সাথেই থাকছেন। কিন্তু সেটা কি সবসময় যথেষ্ঠ? আপনার বাবা-মা, ভাই-বোন , সন্তানের সাথে আপনার একটি দূরত্ব চলে আসবে যদি তারা আপনার প্রতি নির্ভয় না থাকে। অর্থাৎ আপনাকে এমনভাবেই তাদের সাথে সময় কাটাতে হবে যেন তারা আপনার সাথে তাদের সুখ দুঃখ শেয়ার করতে পারে।আর এরকম সময় দেয়ার জন্য ঈদের ছুটির সময়টুকু বেছে নিন। কারণ ঈদের ছুটিতেই আপনি অনেক বেশি সময় পাবেন পরিবারকে দেয়ার জন্য, তাদের সাথে একটু ভালো সময় কাটানোর জন্য।
৩) চাঁদ রাতের কেনাকাটা
ঈদের নতুন পোশাক সবচেয়ে বড় আকর্ষণ থাকে পরিবারের সকল সদস্যের। আমরা একটা নতুন পোশাক পেলেই অনেক খুশি হয়ে যাই। তাই সবার জন্য নিজেই চাঁদ রাতে কিনে নিয়ে আসতে পারেন ঈদের জামা কাপড়। আবার সবাই মিলে শপিং করতে চলে গেলেও সেটা সবার জন্য আরও আনন্দের হবে। শুধু পোশাকই নয়, রান্নার উপকরণ কিনতে সুপার শপ-এও যেতে পারেন একসাথে।
৪) পরিবারকে বোঝার চেষ্টা করুন
আপনি কি কখনও ভেবে দেখেছেন আপনার বাবা-মা, ভাই-বোনদের মধ্যে আত্মতৃপ্তি বোধ আছে কিনা? তারা আপনাকে বন্ধু ভাবে কি না? সঙ্গ দেয়া শুধু পাশাপাশি থাকা নয়, তাদের যেকোনো কাজে সাথে থাকা, তাদের খুশি রাখা। তারা যেন আপনাকে তাদের মনের কথা বলতে সঙ্কোচ না করে। একজন মানুষ যত বড় হোক না কেন তার সুন্দর জীবনের পিছনে থাকে তার পরিবারই। আপনার পরিবার যদি ভালো না থাকে, সুখে না থাকে বা আপনাকে নিয়ে তাদের কোন অতৃপ্তি থাকে তাহলে আপনিও আনন্দে থাকতে পারবেন না। কারণ, দিন শেষে আপনাকে আপনার পরিবারের কাছেই ফিরতে হবে। মনে রাখবেন আপনার পরিবারে, আপনার ঘরে সুখ না থাকলে আপনি আর কোথাও যেয়ে সেই সুখ বা আনন্দটা পাবেন না।
৫) পরিবারের শিশুদের গুরুত্ব দিন
পরিবারের একটি সুন্দর অংশ হলো পরিবারের শিশুরা। তাদের প্রতি আলাদা গুরুত্ব দিন। তাই বিশেষ করে শিশুদের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। আপনার পরিবারের শিশুরা যেন আপনার প্রতি নির্ভয় হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখবেন। তাদের ভালোভাবে গড়ে তোলা ও মানসিক বিকাশের জন্য এটা সবচেয়ে জরুরী।
৬) বেড়াতে যান বা টিভি দেখুন ও খেলুন
ব্যস্ততা বা কাজের চাপের কারণে পরিবারকে ঠিকমতো সময় দেওয়া সবার জন্য হয়ে উঠে না। তাই ঈদের ছুটির দিনগুলোতে তাদের সময় দিন। বেরিয়ে পড়ুন ঘুরতে কিংবা ঘরেই সবাই মিলে নাটক-সিনেমা দেখুন,বাচ্চাদের খেলায় সময় দিন। এসব করে আপনারও ভালো লাগবে।
৭) শহরে থাকলে গ্রামের বাড়ি বেড়াতে যান
আপনি হয়তো জানেন না আপনার পরিবারে আপনার বাবা-মা সারা বছর অপেক্ষা করে থাকে যে অন্তত এই দিনটির জন্য আপনি তাদের সময় দিবেন। তাই বাসায় বয়স্ক কেউ থাকলে তাকে সময় দেওয়ার চেষ্টা করুন। শহরে থাকতে থাকতে হয়তো গ্রামের বাড়ি যাওয়া হয়ে উঠে না। তারপরও পুরো পরিবার নিয়ে এই ঈদ-উল-ফিতর-এ ঘুরে আসতে পারেন আপনার গ্রামের বাড়িতে। এতে আপনার দৈনন্দিন জীবনের একঘেয়েমি দূর হবে,আপনার পরিবারের সদস্যরাও আনন্দ করবে।
একমাত্র ঈদ আমাদের পুরো পরিবারকে একত্রে নিয়ে আসে। তাই পরিবারের সাথে ঈদ এর সময়গুলো এমনভাবে কাটান যেন পরবর্তীতে আপনার বা আপনার পরিবারের কখনো আফসোস করতে না হয়। কারণ, এই সময়গুলো আর ফিরে আসবে না। তাই সময় নষ্ট না করে সময় দিন আপনার পরিবারের প্রিয় সদস্যদের।
ছবিঃ সংগৃহীত – shutterstock