উফফ বাবা!!! ইদের দিন যে কত্ত কাজ করতে হবে!!! নারীদের কি আর কাজের শেষ আছে! আর ইদের দিন যেন আর সেই আগের ইদ নেই। ছোটবেলায় মা রান্না করতেন, আর আমরা ইচ্ছামত সাজুগুজু করতাম। কিন্তু এখন তো আর তা সম্ভব নয় যে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাগিয়ে সাজুগুজু করব। তবুও ইদের দিন বলে কথা। একদমই একটু সাজগোজ না করলেও যে আবার ভালো লাগে না। কিন্তু সময় কই?
ঠিক আছে! আমি জানি, এই সমস্যা অনেকেরই। বাসার রান্নাবান্না এবং বিভিন্ন কাজের চাপে সাজুগুজু করা খুব কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তবে যাদের হাতে সময় আছে, তাদের তো কথাই নাই। তবে যাদের হাতে সময় অল্প তাদের জন্যে সুখবর! কারণ, মাত্র ২০ মিনিট হলেই কিন্তু আপনি ইদের দিনের বেলার মেকআপ-টা কমপ্লিট করে নিতে পারবেন। কারণ, দিনের বেলার লুক-তো আর রাতের মত গ্ল্যামারস হবে না, যার ফলে সময়ও কম লাগবে।
আচ্ছা চলুন, আর কথা না বাড়িয়ে ইদে দিনের বেলায় মেকআপ-টা কী ধরনের হতে পারে তার সম্পর্কে একটু আইডিয়া নিয়ে নেই।
[picture]
ফেস মেকআপ
১. ফেস মেকআপ শুরুর আগেও কিন্তু কিছু কাজ থাকে যা, মেকআপ-কে ফ্ললেস এবং সুন্দর লাগতে সাহায্য করে। মেকআপ শুরুর আগে এজন্যে আপনার পছন্দের একটা ফেসওয়াশ দিয়ে মুখটা ক্লিন করে নিবেন। এরপর একটা স্ক্রাব নিয়ে মুখটাকে স্ক্রাবিং করে নিবেন। এছাড়াও একটা লিপ স্ক্রাবার নিয়ে লিপস স্ক্রাবিং করে নিয়ে একটা লিপবাম লাগাবেন। এরপর একটা শীট মাস্ক লাগাবেন। শীট মাস্ক টা ১৫ মিনিট রাখার পর তুলে ফেলবেন এবং সিরাম-টা ফেস এ প্যাটিং মোশনে ম্যাসাজ করে নিবেন।ধোয়ার কোনোই প্রয়োজন নেই। এখানে একটা কথা বলে রাখি, যারা ইদের দিন প্রচুর ব্যস্ত থাকবেন, তারা স্ক্রাবার এবং শীট মাস্ক-টা আগের দিন রাতে লাগাবেন। তাহলে সকালে সময় বেঁচে যাবে।
এরপর আপনার স্কিন টাইপ অনুযায়ী ময়শ্চারাইজার লাগাবেন। আপনি ঘরে থাকুন কিংবা বাইরে ,একটা সানস্ক্রিন কিন্তু মাস্ট লাগাবেন।
২. স্কিন-টাকে প্রিপেয়ার করার পর এবার মেকআপ-এর পালা। প্রথমে আপনার স্কিন টাইপ অনুযায়ী প্রাইমার লাগিয়ে নিন। আপনার ফেস এ কোনো স্পট/ডার্ক সার্কেল থাকলে সেগুলো হাইড করার জন্যে একটা পিচ/অরেঞ্জ কালারের কন্সিলার লাগান এবং ব্লেন্ড করে নিন।
৩. দিনের বেলার মেকাপের জন্যে ফাউন্ডেশন এর বদলে নিয়ে নিবেন ২ টা শেইড-এর ফুল কভারেজ কন্সিলার। দিনের বেলা ফাউন্ডেশন-এর বদলে কন্সিলার ব্যবহার করলে মেকআপ-টা খুব বেশি ভারী লাগবে না এবং ন্যাচারাল একটা ফিনিশিং আসবে যা দিনের বেলার জন্য খুবই দরকারি। আর কন্সিলার-টি ফুল কভারেজ হওয়াতে পরিমাণেও বেশি লাগবে না।
আপনার স্কিনের সাথে পারফেক্টলি ম্যাচ করে এমন একটা শেইড এবং আপনার স্কিনের থেকে ২-৩ শেইড লাইটার অন্য একটা শেইড- এই ২ টা শেইডের কন্সিলার দরকার পড়বে। আপনার স্কিনের সাথে ম্যাচ করে যে কন্সিলার-টি, সেটি ফেইস-এর আউটার পার্ট-গুলোতে লাগান। আর লাইটার শেইড-টি ফেইস-এর ভেতরের দিকে লাগান যেমন, থুতনি, চোখের নিচে, কপালে ও নাকের উপরে। এতে করে একইসাথে ক্রিম হাইলাইটিং-এর কাজটাও হয়ে যাবে।
কন্সিলার-টা কিন্তু ব্রাশ অথবা ড্যাম্প মেকাপ স্পঞ্জের সাহায্যে ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিতে ভুলবেন না।
৪. এবার একটা ফেস পাউডার এবং পাউডার ব্রাশের সাহায্যে পুরো মেকআপ-টা সেট করে নিন।
৫. আপনার ফেস যদি একটু গোলগাল হয় তবে কনট্যুরিং করে নিতে পারেন। তবে একদমই হার্ষ কনট্যুরিং করবেন না। চিকস-এর নিচে, কপালে হেয়ার লাইন-এ, নাকের দুইপাশে, চিন-এর নিচে হালকা কনট্যুরিং করে নিতে পারেন। তবে ফেইস-এর ফিচার স্কিনি হলে কনট্যুরিং এর কোনই দরকার নেই।
৬. দিনের বেলায় যে পার্ট-টি একদমই স্কিপ করবেন না, তা হলো ব্লাশ। কারণ, দিনের বেলায় ব্লাশ ফেইস-এ একটা হেলদি গ্লো ক্রিয়েট করে। একটা ব্লাশ ব্রাশের সাহায্যে চিকস এর উপর ব্লাশ লাগিয়ে ব্লেন্ড করে নিন। চাইলে পাউডার ব্লাশের বদলে টিন্টেড ব্লাশ ব্যবহার করতে পারেন। খুবই ন্যাচারাল লুক আসবে। ব্লাশ হিসেবে বেছে নিতে পারেন- কোরাল, মভ, মভি পিংক, ব্রাউনিশ পিংক, পিচ ইত্যাদি কালার।
৭. দিনের বেলা চাইলে আপনি পাউডার হাইলাইটার নাও লাগাতে পারেন। তবে আমার মতো হাইলাইটার প্রেমী হলে কি আর বাদ দেয়া যায়? চিক বোনের উপরে, নাকের উপরে, থুতনি, আইব্রো বোনে আর চোখের ইনার কর্ণার-এ হাইলাইটার লাগিয়ে নিতে পারেন। তবে খুব বেশি লাগালে কিন্তু আবার ন্যাচারাল ফিনিশিং-টা থাকবে না।
আই মেকআপ
১. ফেস মেকআপ-তো মোটামুটি কমপ্লিট। এবারে আই মেকআপ চলে যাওয়া যাক। আই মেকাপের শুরুতে আইব্রো-গুলো এঁকে নিন ন্যাচারাল-ভাবে। এক্ষেত্রে চটজলদি কাজটা সারতে পারবেন আইব্রো পেনসিল দিয়ে। আইব্রো-গুলো একটা আইব্রো জেল দিয়ে সেট করে নিন। হাতে সময় থাকলে একটা কন্সিলার দিয়ে আইব্রো-এর চারপাশে লাগিয়ে আইব্রো-গুলো ডিফাইন করে নিতে পারেন।
২. ফেইস মেকাআপ-এর সময় যেহেতু চোখের পাতায় কন্সিলার লাগিয়ে পাউডার দিয়ে সেট করেছেনই। তাহলে আইমেকআপ-এর সময়ে আই প্রাইমার লাগানোর কোনো প্রয়োজন নেই। আই শ্যাডো হিসেবে দিনের বেলায় বেছে নিন পিংক, ব্রাউন, কোরাল, অরেঞ্জ, ইয়েলো, মভ, পিচ, শ্যাম্পেইন, রোজ গোল্ড, গোল্ডেন, সিলভার ইত্যাদি কালার। ম্যাট, শীমারি, মেটালিক- যে কোনো আইশ্যাডো লাগাতে পারেন। তবে গ্লিটার ব্যবহার না করলেই ভালো লাগবে।
৩. চোখে চিকন করে উইংড লাইনিং করে নিতে পারেন। আবার না চাইলে শুধুমাত্র মাসকারা-ও লাগাতে পারেন। তবে মাসকারা বাদ দেয়া যাবে না। দিনের বেলা ফলস আইল্যাশ বাদ দেয়াই ভালো হবে।
লিপস্টিক
১. দিনের বেলার মেকআপ-এ ডার্ক লিপস্টিক-টা রাতের জন্যে রেখে দিয়ে বেছে নিন পিংক, ন্যুড, ব্রাউন, কোরাল, পিচ, অরেঞ্জিস ব্রাউন, পিংকিস ব্রাউন, মভ ইত্যাদি কালার। এগুলো দিনের লুকের সাথে বেশ মানিয়ে যাবে।
২. শেষে যেটির কথা না বললেই নয়, তা হলো মেকআপ সেটিং স্প্রে। মেকআপ-টা কে সারাদিন ধরে লং লাস্টিং করতে এবং মেকআপ-এর পাউডারি ফিনিশিং দূর করতে পুরো ফেইস-এ মেকআপ সেটিং স্প্রে ব্যবহার করে নিন। ব্যস, আপনার ইদের মেকাপ কমপ্লিট।
ট্রাস্ট মি, এই মেকআপ-টা হাত চালিয়ে করলে আপনার ২০ মিনিটের বেশি সময় লাগার কথা নয়। আশা করছি, ইদের দিনের বেলার মেকআপ নিয়ে একটু হলেও আইডিয়া দিতে পেরেছি।
লিখেছেন- জান্নাতুল মৌ