স্কিনকেয়ার রুটিনে অপরিহার্য ধাপ হিসাবে এক্সফোলিয়েট করার কথা শুনেছেন নিশ্চয়! এক্সফোলিয়েট বলতেই স্ক্রাব দিয়ে মুখটা ম্যাসাজ করে নেওয়া বুঝে নেয় অনেকেই। দানাদার স্ক্রাবগুলোই তো এক্সফোলিয়েট করে, এর আবার রকমভেদ আছে নাকি! এটাই ভাবছেন তো? জি, স্ক্রাব অবশ্যই এক্সফোলিয়েট করে। কিন্তু এর যে আরও রকমভেদ আছে; আর ত্বকের ধরন ও প্রবলেম বুঝে এক্সফোলিয়েশনের উপায় যে আলাদা; সেটা জানেন কি? কোনটা কীভাবে কাজ করে, এটার প্রয়োজনীয়তা কতটুকু, সঠিক ব্যবহারবিধি কেমন এসব বিষয়ে অনেকেরই স্বচ্ছ ধারণা নেই। আশা করছি; আজ এক্সফোলিয়েটর নিয়ে আপনাদের কনফিউশনগুলো দূর হবে। কেমিক্যাল নাকি ফিজিক্যাল এক্সফোলিয়েটর, আপনার জন্য কোনটা ভালো সেটা জানতে হলে আমাদের সাথেই থাকুন।
প্রথমেই আপনার ত্বক সম্বন্ধে জানুন
ত্বক মূলত দুই স্তরে গঠিত হয়- এপিডার্মিস (Epidermis) আর ডার্মিস (Dermis)। এপিডার্মিস হচ্ছে বহিস্তর, এটি ত্বকের পৃষ্ঠের উপর বা সার্ফেসে একটি প্রতিরক্ষামূলক বাধা তৈরি করে এবং ময়েশ্চার ধরে রাখে। কেরাটিনোসাইটস (Keratinocytes) হল প্রধান কোষ, যা বহিস্ত্বকের ৯৫% গঠনকারী এবং মাইটোসিস (Mitosis) এর মাধ্যমে কোষ গঠন করে।
স্কিন সেলের কিন্তু বয়সসীমা আছে; মানে নির্দিষ্ট সময় পর এটা ডেড সেলসে পরিণত হয়। বহিস্ত্বকের অনেকগুলো স্তর আছে যার মধ্যে স্ট্রাটাম কার্নেয়াম সার্ফেসে (Surface stratum coronium) থাকে এবং মৃত কোষের লেয়ার ওখানেই জমা হতে থাকে। স্বাভাবিকভাবেই কোষ পুনর্গঠিত ও রিপ্লেস হয়। কিন্তু কিছু ফ্যাক্টর এই ন্যাচারাল প্রসেসকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। যেমনঃ এজিং (Aging), ওয়েদার চেঞ্জ, হরমোনাল প্রবলেম, ভুল প্রোডাক্ট অ্যাপ্লাই করা, ডায়েট ইত্যাদি। মরা কোষের সাথে ত্বকের তেলগ্রন্থির নিঃসরণ আর ধূলোবালি মিশে রোমকূপ বন্ধ হলেই স্কিন প্রবলেম যেমন- স্কিনে ক্লগড পোর (Clogged pore), রাফনেস, রিংকেল, ডার্ক প্যাচ দেখা যায়।
এক্সফোলিয়েটরের পরিচিতি
ডেড স্কিন সেলস রিমুভালের এজেন্টকে এক্সফোলিয়েটর বলা হয়। কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েটর আর ফিজিক্যাল এক্সফোলিয়েটর – দু’টা ধরন আছে। চলুন আজ আমরা এই বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেই। কোনটা কীভাবে কাজ করে, কোন ধরনের ত্বকে কোনটা উপযোগী এগুলোও শেয়ার করবো।
১) ফিজিক্যাল এক্সফোলিয়েটর (Physical exfoliator)
ফিজিক্যাল এক্সফোলিয়েশনের ব্যাপারে আগে কথা বলি কারণ এটা আমাদের সবারই কম বেশি পরিচিত। স্ক্রাবিং ফিজিক্যাল এক্সফলিয়েশনের একটা ফর্ম। স্ক্রাবের ছোট ছোট দানার মাধ্যমে ম্যাসাজ করে ত্বকের উপরিভাগের ডেড সেলসের লেয়ার আর ব্ল্যাকহেডস সহজেই ক্লিন করা যায়।
এছাড়াও ফিজিক্যাল এক্সফোলিয়েশনের আরেকটা প্রসেস আছে; মাইক্রোডার্মাব্রেশন (Microdermabrasion)। এটা বেশ স্ট্রং একটা ফিজিক্যাল এক্সফোলিয়েটর কারণ এটা ত্বকের উপরের লেয়ার থেকে ডেড সেলসের পরত তুলে ফেলে। অনেকদিন ধরে যারা স্কিন কেয়ার করেন না, ডেড স্কিন সেলসের স্তর জমে একদম রাফ হয়ে গেছে আর নরমাল স্ক্রাবিং এ পুরোপুরি পরিষ্কার হচ্ছে না, শুধুমাত্র তারা এক্সপার্টের মাধ্যমে মাইক্রোডার্মাব্রেশন করাতে পারেন। যারা নিয়মিত ত্বক ক্লিন করেন তাদের জন্য মাইক্রোডার্মাব্রেশনের কোনো প্রয়োজন নেই। বিভিন্ন ব্রাশ, স্পঞ্জ এগুলোও ফিজিক্যাল এক্সফোলিয়েটর।
২) কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েটর (Chemical exfoliator)
কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েটরও সেইম কাজটাই করে; স্কিন থেকে মরা কোষ বের করে আনে কিন্তু স্লো প্রসেসে। এটা মূলত স্কিন লেয়ারের সাথে ডেড সেলের বন্ডিং ধীরে ধীরে লুজ করে দেয় যা হালকা ম্যাসাজে বা মুখ ধোয়ার সময়ই ক্লিন হয়ে যায়। ভিটামিন সি, হাইড্রক্সি অ্যাসিড (Hydroxy acid), ল্যাক্টিক অ্যাসিড (Lactic acid) এগুলো কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েটর হিসাবে কাজ করে।
কেমিক্যাল উপাদান থাকায় এক্সফোলিয়েশনের পাশাপাশি স্কিনে আরও উপকার হয়; যেমন: ব্রণ বা পিগমেন্টেশন রিমুভ করতে হেল্প করে। উদাহরন হিসাবে বলা যায় স্যালিসাইলিক অ্যাসিড (Salicylic acid) হচ্ছে এক প্রকার বি-এইচ-এ বা বিটা হাইড্রক্সি অ্যাসিড। এই উপাদানটি পোরস এর গভীরে যেয়ে ত্বক পরিষ্কার করে, সেবাম ক্ষরণকে নিয়ন্ত্রণ করে। যে কারণগুলির জন্য ব্রণ দেখা দিচ্ছে, সে সমস্যাগুলোই আর থাকবে না। এক্সফোলিয়েশন আর স্কিন প্রবলেমের সল্যুশন এক সাথেই কিন্তু হয়ে গেল। কিন্তু ইনস্ট্যান্ট রেজাল্ট পাবেন না স্ক্রাবিং এর মতো।
কোন এক্সফোলিয়েটর আমার জন্য সবচেয়ে ভালো কাজ করবে?
কোন এক্সফোলিয়েটর কার জন্য এই প্রশ্নটা আপনার মাথায়ও ঘুরপাক খাচ্ছে তাই তো? সব ধরনের এক্সফোলিয়েটরই কার্যকরী, শুধু আপনার ত্বকের ধরন বুঝে সিলেক্ট করে নিতে হবে।
১) আপনি যদি ড্রাই টু নরমাল স্কিনের অধিকারী হন আর দ্রুত ডেড স্কিন সেলস এর স্তর জমতে থাকে তাহলে স্ক্রাবিং করতে হবে সপ্তাহে ২ বার করে মানে ফিজিক্যাল এক্সফোলিয়েটর বেশি কার্যকর হবে। যারা বিভিন্ন কারণে স্কিন কেয়ার রুটিন প্রোপারলি মেনটেইন করেন না, আর স্কিনে তেমন কোনো সমস্যা নেই, তাদের জন্য ইনস্ট্যান্ট সল্যুশন হিসাবে ফিজিক্যাল এক্সফোলিয়েটর বেস্ট। এক্ষেত্রে মাইল্ড বিডস আছে, এমন স্ক্রাব বেছে নিন।
২) আবার যাদের ত্বকে সেনসিটিভিটির কারণে দানাদার স্ক্রাবে ইরিটেশন হয়, তাদের জন্য কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েটর ভালো কাজ করবে। অ্যাকটিভ বা ইনফেক্টেড একনের (Infected acne) উপর যদি আপনি স্ক্রাব ঘষাঘষি করেন, কী অবস্থা হবে নিশ্চয় বুঝতে পারছেন। পিম্পল পপ হয়ে আশেপাশের অংশেও জীবাণু ছড়িয়ে যাবে। এতে কিন্তু ব্রণ ও র্যাশের প্রবণতা আরও বাড়বে। তাই অয়েলি-সেনসিটিভ ত্বকের জন্য কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েটর বেছে নিতে পারেন যেটা পোরসকে গভীর থেকে পরিষ্কার করে নতুন সজীব ত্বককে বের করে আনে।
শুধু একটা বিষয় খেয়াল রাখবেন কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েটর ইউজ করলে বাইরে যাওয়ার আগে অবশ্যই সানস্ক্রিন লাগাবেন, কোনোভাবেই স্কিপ করা যাবে না।
দুইটাই কি একসাথে ইউজ করা যায়?
দুই ধরনের এক্সফোলিয়েটর সেইম বেনিফিট দিচ্ছে, একইদিনে দু’টাই ইউজ করার প্রয়োজন আছে কি? অবশ্যই না, কারণ দুই ধরনের এক্সফোলিয়েটর একসাথে ইউজের ফলে ওভার এক্সফোলিয়েশন (Over exfoliation) হয়ে স্কিনের স্বাভাবিক কোষ বৃদ্ধি প্রসেস বাঁধাগ্রস্ত হয় আর ডেড স্কিন সেলসের সাথে নতুন তৈরি হওয়া কোষগুলোও ওয়াশ আউট হয়ে যেতে পারে। ডাবল টাইম স্ক্রাবিং এরও কোনো প্রয়োজন নেই, কারণ এতে ত্বকের এপিডার্মিস লেয়ার (epidermis layer) দুর্বলহয়ে যায়। তাই সঠিক নিয়মে এক্সফোলিয়েটর ব্যবহার করা জরুরি।
এক্সফোলিয়েশনের সঠিক নিয়ম
আপনার উদ্দেশ্য শুধু স্ট্র্যাটাম করণিয়াম (stratum corneum) এক্সফোলিয়েট করা, স্কিনকে খুব বেশি ইরিটেট করা নয়। তাই সপ্তাহে দু’দিন এক্সফোলিয়েট করাই যথেষ্ট। যাদের পোরস ব্লক থাকায় স্কিন একেবারেই ড্রাই আর রাফ দেখায় এবং হোয়াইট হেডস আছে, তারা স্ক্রাবিং এর আগে একটু গরম পানির ভাপ নিতে পারেন। আলতোভাবে সার্কুলার মোশনে নিচে থেকে উপরে ম্যাসাজ করতে হবে। স্ক্রাবিং শেষ হবার পর মুখে ঠাণ্ডা পানির ঝাপটা দিয়ে ভালভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে। আইস কিউব অ্যাপ্লাই করে নিলে ওপেন পোরগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছে নিয়ে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন।
ব্যস, এতটুকুই! কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েটর সপ্তাহে একদিন করে শুরু করা যেতে পারে। ক্লেনজিং আর টোনিং এর পর কটন প্যাড দিয়ে অথবা হাতের আঙ্গুলের সাহায্যে চেপে চেপে অ্যাপ্লাই করে নিতে হয়। আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড, বিটা হাইড্রক্সি অ্যাসিড, ভিটামিন সি এগুলো একসাথে স্কিন কেয়ারে রাখা যাবে না। রাতের স্কিন কেয়ারে যেকোনো একটি অ্যাড করতে পারেন কেননা কিছু প্রোডাক্ট কিন্তু সান-সেনসিটিভ (Sun-Sensitive) বা ফটোসেনসিটিভ (photosensitive) হয়ে থাকে। এক্সপার্টের সাথে পরামর্শ করে শুরু করবেন। স্ট্রং কেমিক্যাল সমৃদ্ধ প্রোডাক্ট চোখের আশপাশের অংশে ব্যবহার করতে যাবেন না। লেবেল দেখে নিয়ে উপকরণ এবং ব্যবহারবিধি সম্পর্কে নিশ্চিন্ত হোন।
তো এই ছিল এক্সফোলিয়েটরের খুঁটিনাটি। এখন প্রশ্ন হলো কোথায় পাবো অরিজিনাল প্রোডাক্ট? আপনি চাইলে অনলাইনে অথেনটিক স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট কিনতে পারেন শপ.সাজগোজ.কম থেকে। তাছাড়া, সাজগোজের ৪টি ফিজিক্যাল শপে নিজে যেয়েও কিনতে পারেন, যা যমুনা ফিউচার পার্ক, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, উত্তরার পদ্মনগর ও সীমান্ত সম্ভারে অবস্থিত। বিভিন্ন ধরনের স্ক্রাব, কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েটর আছে তাদের কালেকশনে। আপনি ইনগ্রেডিয়েন্ট দেখে ত্বকের ধরন অনুযায়ী বেছে নিতে পারবেন। ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।
ছবি- সাজগোজ