আই মেকআপে আইশ্যাডো এক জাদুর প্রলেপ। আইশ্যাডো প্যালেট নামক জাদুর বাক্স নিয়ে আপনি মুহুর্তেই বদলে ফেলতে পারেন আপনার আইলুক, যা কিনা বদলে দিতে পারে পুরো আউটলুকটাই। আইশ্যাডো অ্যাপ্লিকেশনে প্রয়োজন শুধু চর্চার আর সাথে সঠিক কিছু টুলস আর ট্রিকসের। বিগেইনার হিসেবে শুরুতেই আমরা বেশ কিছু ভুল করে ফেলি আইশ্যাডো অ্যাপ্লিকেশনে। ফলে আই মেকআপ দেখতে বিদঘুটে দেখায় আর এই দুঃখ ভয়ে শখের আইশ্যাডো প্যালেটে জমে ধুলোর প্রলেপ। কিছু কমন মিসটেকস এড়িয়ে আর ছোটখাটো অথচ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাথায় রাখলেই সম্ভব এই ভুলভ্রান্তি বাদ দিয়ে সহজেই আইশ্যাডো অ্যাপ্লাই করা। তাহলে চলুন চটজলদি জেনে নেয়া যাক বিগেইনারদের জন্য আইশ্যাডো অ্যাপ্লিকেশন টিপস অ্যান্ড ট্রিকস সম্পর্কে।
বিগেইনারদের জন্য আইশ্যাডো অ্যাপ্লিকেশন টিপস
শুধু আইশ্যাডো লাগিয়ে নিলাম আর আইলুক হয়ে গেলো ব্যাপারটি কিন্তু মোটেই এমন নয়। আইশ্যাডো অ্যাপ্লিকেশনের কিছু টিপস ও ট্রিকস রয়েছে। চলুন তাহলে সেগুলো সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক-
১) আই প্রাইমার ব্যবহার করা
চোখের পাতায় অর্থাৎ আইলিডে আই প্রাইমার অ্যাপ্লাই করে নিলে বেশ স্মুথ আর ইভেন স্কিন পাওয়া যায়। আই প্রাইমার আলাদা হয় যা কিনা হাইড্রেশনের কাজও করে। সেই সাথে আইশ্যাডোর পিগমেন্টেশনও ভালো পাওয়া যায়। ব্রাইট কালার আইশ্যাডোতে এক্সাক্ট প্যালেটের রঙ পেতে প্রাইমার ব্যবহার করা জরুরি। আই প্রাইমার ছাড়াও কনসিলার ব্যবহার করে ইভেন বেইজ ক্রিয়েট করা সম্ভব। প্রাইমার ব্যবহার করা আইশ্যাডো অ্যাপ্লিকেশনের কাজ সহজ করে দেয় অনেকাংশেই।
২) নিউট্রাল বেইজ ক্রিয়েট করা
স্কিনটোনের সাথে সিমিলার আইশ্যাডো আইলিডে অ্যাপ্লাই করলে সুন্দর বেইজ ক্রিয়েট হয়। এতে চোখের আনইভেন স্কিনটোন ঢেকে যায়। পরবর্তীতে অন্যান্য কালারের আইশ্যাডো ব্লেন্ড করতে সুবিধা হয়। এজন্য নিউট্রাল কালার দিয়ে বেইজ তৈরি করা উচিত। আইশ্যাডো প্যালেট কেনার সময় প্যালেটে আপনার স্কিনটোনের সাথে মানানসই বেইজ কালার আছে কিনা তাও দেখে নিবেন।
৩) উইংড এজ ক্রিয়েট করা
আইশ্যাডো ক্রিয়েটের পরও অনেক সময় লুক বেশ মেসি দেখায়। এই মেসি লুক এড়ানোর জন্য আইশ্যাডো দিয়ে উইং ক্রিয়েট করা প্রয়োজন। যদি আপনি বিগেইনার হন তাহলে অ্যাপ্লাইয়ের আগে টেইপ ব্যবহার করলে বেশ ইজিলি এই উইং তৈরি করে নিতে পারবেন। এছাড়াও অ্যাপ্লাইয়ের পর ওয়েট ওয়াইপস বা মাইসেলার ওয়াটার কটনবাডে নিয়েও একটু কেয়ারফুলি এক্সেস শ্যাডো মুছে উইংড লুক ক্রিয়েট করা যায়।
৪) ডাইমেনশন ক্রিয়েট করা
আই মেকআপ ড্রামাটিক করতে ডার্ক আর লাইট কম্বিনেশন বেছে নিতে পারেন। ইনার কর্ণারে লাইট শিমারি শেইড, মাঝখানে ব্রাইট কালার এবং ক্রিজে ডার্ক ম্যাট শ্যাডো অ্যাপ্লাইয়ে ইজিলি ডাইমেনশন ক্রিয়েট করা সম্ভব। এই টিপস কাজে লাগানোই ড্রামাটিক আই লুকের বেসিক একটি রুলস।
৫) শিমারি শেইডের জন্য ব্রাশ ব্যবহার করা
শিমারি শেইডগুলো সহজে ব্রাশে উঠতে চায় না, আবার ব্রাশে নেয়া গেলেও আইলিডে বসানো কষ্টকর হয়ে যায়। এক্ষেত্রে ব্রাশটা মেকআপ সেটিং স্প্রে দিয়ে হালকা ভিজিয়ে শিমারি শ্যাডো অ্যাপ্লাই করলে অ্যাপ্লিকেশন স্মুথ হয় এবং পিগমেন্টেশন ভালো পাওয়া যায়।
৬) শিমার আইশ্যাডো ক্রিজে ব্যবহার না করা
ট্র্যানজিশন শেইড ব্যবহার হয় আলাদা শেইড ব্লেন্ডিংয়ে। শিমারি শেইড এই স্টেপে ব্যবহার করলে উল্টো ব্লেন্ড না হয়ে আরো বেশি চকচকে ভাব আনে এবং পুরো লুকটা নষ্ট করে দেয়। এজন্য ব্লেন্ডিংয়ের ট্র্যানজিশন শেইড মাস্ট ম্যাট ফিনিশের ব্যবহার করতে হবে।
৭) ওভার ব্লেন্ডিং না করা
স্মুথ আর সফট লুকের জন্য ব্লেন্ডিংয়ে গুরুত্ব দেয়া হয়। কিন্তু ওভারব্লেন্ডিং মোটেও ভালো কিছু নয়। ওভার ব্লেন্ডিং করলে প্যাচি আর আনইভেন লুক ক্রিয়েট হয়। ডার্ক, লাইট আর কালারফুল শ্যাডো একসাথে মিশে ধূসর বা গ্রে লুক দেয়, ফলে চোখ দেখায় আরো নির্জীব। তাই ব্লেন্ডিংয়ে লাগাম টেনে ধরাটাও জরুরি। বিগেইনারদের জন্য আইশ্যাডো অ্যাপ্লিকেশন এ এইদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।
৮) হাইলাইট করা
ইনার কর্ণার, আইব্রোর ঠিক নীচে অর্থাৎ ব্রো বোন এ লাইট শিমারি কালার শ্যাডো দিয়ে হাইলাইট করলে আই লুক গর্জিয়াস লাগে। ডিউয়ি মেকআপ এর ট্রেন্ডে এই ট্রিকটা মাস্ট ডু!
৯) সঠিক ব্রাশ ব্যবহার করা
বিভিন্ন কাজের জন্য বিভিন্ন সাইজের আইশ্যাডো ব্রাশ ব্যবহার করা হয়। তাই যেকোনো একটি ব্রাশ নিলেই হবে এই বুদ্ধি কাজে লাগাতে গেলে ভুল ব্রাশ ব্যবহারই হবে পুরো লুক নষ্ট করার জন্য যথেষ্ট। তাই কোন ব্রাশের কী কাজ আগেই জেনে নেয়া দরকার। যেমন- কমন আইশ্যাডো ব্রাশের মধ্যে ফ্লাফি ব্রাশ ব্লেন্ডিংয়ের কাজে আর ফ্ল্যাট ব্রাশ আইশ্যাডো অ্যাপ্লাইয়ের কাজেই সাধারণত ব্যবহার করা হয়।
১০) চোখের রঙের সাথে মিল রেখে শ্যাডো অ্যাপ্লাই করা
প্রফেশনালদের মতো পারফেক্ট আই মেকআপ লুক ক্রিয়েট করতে চোখের লেন্সের সাথে মিল রেখে আইশ্যাডো শেইড চুজ করতে হবে। সচরাচর আমাদের দেশের মেয়েদের চোখের লেন্স খুব ডার্ক ব্রাউন হয় যা লো লাইটে কালোই দেখায়। তাছাড়াও ইদানিং অন্য রঙের ফ্যাশন লেন্সের ব্যবহারও বেড়েছে। লেন্সের রঙকে কম্পলিমেন্ট করে এমন আইশ্যাডো শেইড বেছে নেয়া উচিত। যেমন- ডার্ক ব্রাউনের সাথে বেগুনি, নীল এই ধরনের শেইড ভালো ফুটে ওঠে, আবার নীল বা ধূসর চোখের সাথে কোরাল কিংবা কপার টোন ভালো মানায়।
১১) অতিরিক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহার না করা
মেকআপ মানেই একগাদা প্রোডাক্ট নয়। ব্রাশে অনেক পরিমাণ আইশ্যাডো অ্যাপ্লাই করলে সেটা ব্লেন্ড করা খুব কঠিন হয় এবং বেশিরভাগ সময় আনন্যাচারাল লুক ক্রিয়েট হয়। সফট ন্যাচারাল লুক যেহেতু এখন ট্রেন্ড তাই আইশ্যাডো হতে হবে পরিমিত। তাছাড়াও অতিরিক্ত আইশ্যাডো ফলআউট হয় এবং চোখের নীচে ডার্কনেস ক্রিয়েট করে পুরো মেকআপ লুকটাই নষ্ট করে দেয়।
এই কয়েকটি বেসিক ব্যাপার মাথায় রাখলে বিগেইনারদের জন্য আইশ্যাডো অ্যাপ্লিকেশন অনেক সহজ হয়। তাছাড়াও দরকার প্র্যাকটিস আর নতুন কিছু এক্সপেরিমেন্ট করার সাহস। জাদুর বাক্স আইশ্যাডো প্যালেটটা এইবার ধুলো মুছে খুলতেই পারেন! অথেনটিক মেকআপ এবং স্কিন ও হেয়ার প্রোডাক্ট কিনতে পারেন সাজগোজ থেকে। সাজগোজের কয়েকটি ফিজিক্যাল শপ রয়েছে। শপগুলো যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত সম্ভার, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, ইস্টার্ন মল্লিকা, ওয়ারীর র্যাংকিন স্ট্রিট, বসুন্ধরা সিটি, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে), মিরপুরের কিংশুক টাওয়ার এবং চট্টগ্রামের খুলশি টাউন সেন্টার এ অবস্থিত। এই শপগুলোতে ঘুরে নিজের পছন্দমতো অথবা অনলাইনে শপ.সাজগোজ.কম থেকে কিনতে পারেন আপনার দরকারি প্রোডাক্টগুলো।
ছবিঃ সাজগোজ