ফেসবুকের কল্যাণে আমাদের জীবনে যোগাযোগ এখন অনেক সহজ। পুরনো বন্ধুবান্ধবদের সাথে, দূরে থাকা পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ, বিভিন্ন ইভেন্ট, অনলাইন ব্যবসা এবং আরও অনেক ধরনের সুযোগ সুবিধা আমাদের জীবনে যোগ করেছে ফেসবুক। এখন অনলাইন কেনাকাটার পাশাপাশি ফেসবুকও আমাদের কেনাকাটার অন্যতম অপশন। তবে এতো সহজ সুযোগের অপব্যবহারটাও কিন্তু সহজ। আপনার শখের বা পছন্দের জিনিসটি কিনতে গিয়ে ধরা খেয়ে যাবার সম্ভাবনা কিন্তু এখানে প্রবল। মাঝে মাঝেই ফেসবুকে বিকিকিনি নিয়ে প্রতারনার খবর পাওয়া যায়। তাই ফেসবুকে কেনাকাটার আগে সতর্ক থাকলে এ ধরনের ধোঁকাবাজির হাত থেকে রক্ষা পেতে পারেন।
প্রথমেই আপনার ফেসবুক কেনাকাটা করার পেজগুলো সম্পর্কে খুব ভালো মতো ধারণা থাকতে হবে। আপনি যা কিনতে চান, যেসব পেজে তা বিক্রয় করা হয় সে ধরনের অনেকগুলো পেজ নিয়ে মোটামুটি একটি রিসার্চ করে ফেলুন। এতে আপনার পণ্যের মান, দাম এবং ধরন সম্পর্কে তো আইডিয়া হবেই, তার ওপর যে ফ্যাশন বা স্টাইল চলছে, সে ব্যাপারেও ভালো ধারণা পাবেন। কোথায় কোন পোশাকের রেপ্লিকা বিক্রয় হয়, কোথায় আসলটি পাওয়া যায়, কোথায় ডিজাইনার পোশাক পাওয়া যাবে এসব ব্যাপারে আপনার খুব ভালো আইডিয়া হয়ে যাবে যদি আপনি পেজগুলো নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করেন। তবে ভাববেন না এটা এক দিনের কাজ। যখনি ফেসবুকে ঢুকছেন, চেষ্টা করুন প্রতিবার বেশ কিছু পেজ ঘেঁটে দেখার। আপনি নিজেই টের পাবেন যখন আপনি সহজেই কোন পণ্য নিয়ে মতামত দিতে পারছেন। ভালো-মন্দ পেজ বোঝার আরেকটি ভালো উপায় হল পেজগুলোর রিভিউ দেখার। যারা এর আগে ঐ পেজ থেকে কিনেছেন, তারা তাদের অভিজ্ঞতাটি লিখে রিভিউ দিয়ে থাকেন। রিভিউ দেখেও আপনি ধারণা নিতে পারবেন পেজটি বিশ্বাসযোগ্য কিনা।
[recommended]
দ্বিতীয়ত, যে পণ্যটি কিনছেন যেমন রেডিমেড পোশাক, জুতা, ব্যাগ এগুলোর সঠিক মাপ এবং ম্যাটেরিয়াল সুস্পষ্টভাবে জেনে নিন। ইনবক্স করে, কিংবা সবচেয়ে ভালো হয় সরাসরি ফোন করে এসব জেনে নিন। পেজ এ সাধারণত গাউন, ব্যাগ, জুতা ইত্যাদির মাপ দেয়া থাকে। যেহেতু আপনি জিনিসটি কিনছেন, আর এটা ডিস্টেন্স শপিং, তাই পণ্য সম্পর্কে পূর্ণ নিশ্চয়তা পাবার অধিকার আপনার আছে। তবে আগে নিশ্চিত হয়ে নিন আপনি পণ্যটি কিনতে চান, তবেই ফোন করুন। কিনবেন কি কিনবেন না, সেটা নির্ধারিত হয়ে যাবে আপনি যখন এর মান নিয়ে নিশ্চিত হবেন। এখানে একটা ব্যাপার খেয়াল রাখবেন, কিছু কিছু জিনিস আসলে সামনা সামনি দেখেই কেনা ভালো। যেমন- জুতা, ফাউন্ডেশন ইত্যাদি। কেননা এগুলো টেস্ট করে কিনতে হয়। অনেক সুন্দর একজোড়া জুতা আপনার পায়ে ভালো নাও লাগতে পারে অথবা জুতার মাপ ঠিকমতো হয়নি। ফাউন্ডেশনের, লিপস্টিক ইত্যাদি ক্ষেত্রে দেখা যেতে পারে যেটি কিনলেন তা আপনার স্কিন শেডের সাথে হয়তো ম্যাচ করছে না। তখন আপনার মনঃক্ষুণ্ণ হবে, কিন্তু কাউকে অভিযোগও করতে পারবেন না। তাই প্রত্যেক ক্ষেত্রে খুঁটিনাটি ডিটেইলস জেনে নিতে হবে।
তৃতীয়ত, পেমেন্টের ক্ষেত্রে বিশ্বাসযোগ্যতাটা অনেক বড় ব্যাপার। ক্যাশ অন ডেলিভারি সবচেয়ে ভালো ব্যবস্থা, কিন্তু দূরে বসে কেনাকাটা করলে অগ্রিম পেমেন্ট করতেই হয়। অধিকাংশ পেজে কেনাকাটা করার আগে ফুল পেমেন্ট বা পেজভেদে নির্দিষ্ট পারসেন্ট পর্যন্ত অগ্রিম পেমেন্ট করে অর্ডার কনফার্ম করতে হয়। সেক্ষেত্রে নিরাপত্তার জন্য “অর্ডার কনফার্ম হলো”, এই কথাটি মোবাইল ফোনে মেসেজের মাধ্যমে বা ফেসবুকের ইনবক্স এ জানিয়ে দিতে বলবেন। তাহলে দুর্ভাগ্যবশত আপনি প্রতারনার শিকার হলেও ফোন বা ইনবক্সের মেসেজটি অন্তত প্রমাণ হিসেবে থাকবে। আপনার পার্সেলটি কীভাবে, কবে আসবে সেটি নিশ্চিত হয়ে নিন। ক্যাশ অন ডেলিভারিতে কোন কোন পেজের পণ্য ডেলিভারির পিকআপ পয়েন্ট থাকে। সেক্ষেত্রে আপনার সুবিধামত তারিখ, সময় ও জায়গাটি জানিয়ে দিন।
মনে রাখবেন, যারা বিক্রয় করেন, তাদের জন্য ভালো মার্কেটিং মানে হল কাস্টোমারের সাথে ভালো যোগাযোগ রাখা এবং কাস্টোমারের সুযোগসুবিধার কথা খেয়াল রাখা। আর আপনি একবার কোন পেজ থেকে ভালো সার্ভিস পেলে দ্বিতীয়বার তাদের ওপর বিশ্বাস রাখতে পারবেন। সেক্ষেত্রে একটা ভালো রিভিউ দিয়ে তাদের উৎসাহিত করুন। হ্যাপি ফেসবুক শপিং।
লিখেছেনঃ শান্তা সোহেলী ময়না
ছবিঃডায়নামিকইশপ.কম