সেদিন এক বিয়েতে আনিকাকে একজন বললো, ‘আপনার মুখটা অনেক মলিন দেখাচ্ছে!‘ এ কথা শোনার পর থেকে তার মন খারাপ। বাসায় ফিরে আয়নায় নিজের মুখটা খুব ভালো করে খুঁটিয়ে দেখে সে। এতদিন লক্ষ্য করেনি যে কপালের চামড়া কুঁচকে গেছে তার, চোখের চারপাশে ফাইন লাইনস দেখা যাচ্ছে। চোখ বসে গেছে, আগের চেয়ে অনুজ্জ্বল দেখাচ্ছে। মুখের স্কিনও কেমন যেন অনুজ্জ্বল, মলিন! আবার চোয়ালের নিচে মাংস জমে ডাবল চিন দেখা যাচ্ছে। কেন এমন হলো? কোথায় হারিয়ে গেলো ত্বকের তারুণ্য?
আনিকার মতো এমন সিচুয়েশন অনেকেই ফেইস করেন। প্রতিদিন কাজের ব্যস্ততা, গাড়ির কালো ধোঁয়া, দূষণ, বাইরের ধুলো ময়লা ত্বকের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। ফলে চেহারায় ক্লান্তির ছাপ পড়ে, বলিরেখা দেখা দেয়। মেকআপ করে এই ছাপ কিছুক্ষণের জন্য ঢেকে দেয়া গেলেও ত্বকের হারানো উজ্জ্বলতা ফিরে আসে না। ত্বকের ভেতর থেকে উজ্জ্বলতা বের করে আনতে ব্যায়াম করতে হবে, মেনে চলতে হবে কিছু নিয়ম। তারুণ্যোজ্জ্বল চেহারার জন্য ব্যায়াম, কি নতুন শুনলেন এই কথাটি? ওজন কমাতে ব্যায়াম করার কথা তো আমরা সবাই জানি, কিন্তু সুন্দর ত্বক পেতেও ব্যায়াম করতে হবে? ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে কীভাবে ফেসিয়াল এক্সারসাইজ করতে হবে, চলুন সেটা জেনে নেই ফিজিওথেরাপি কনসালটেন্ট এর কাছ থেকে।
ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে ব্যায়াম
১) দিনের বেশির ভাগ সময় যারা কম্পিউটারের স্ক্রিনের সামনে সময় কাটান, তাদের জন্য রয়েছে কিছু যোগব্যায়াম। অল্প কিছু সময়ের জন্য যখন মনোযোগ সহকারে ব্যায়ামগুলো করা হয় তখন শরীর ও মনে প্রশান্তি আসে এবং যেকোনো কাজে একাগ্রতা বাড়ে।
২) অতিরিক্ত কাজের চাপ অথবা দুশ্চিন্তা বেশি করলে মাথা ব্যথা, ঘাড়ে ব্যথা সহ চেহারায় ক্লান্তি আসে। কিছু কিছু ব্যায়াম আছে, যা মাথা ব্যথা, কাজের চাপ, যাতায়াতের ধকল, এমন কী দুশ্চিন্তা দূর করে দেহে এনে দেয় প্রশান্তির ছোঁয়া। নিয়মিত এই ব্যায়াম করলে চেহারার ক্লান্তির ছাপ কেটে যায় এবং ত্বক হয়ে ওঠে তারুণ্যোজ্জ্বল।
৩) মুখের ব্যায়াম আপনার ত্বককে টানটান করবে, ঝুলে যাওয়া বা কুঁচকে যাওয়া ত্বককে ঠিক করবে, মুখের রক্তসঞ্চালন বাড়াবে। এতে করে ত্বকের গ্লো বাড়বে, ডাবল চিন দূর হবে সহজেই। এছাড়াও নতুন টিস্যু তৈরি করে ত্বকের তারুন্য ধরে রাখবে।
ব্যায়াম করার নিয়ম
১) ব্যায়াম করার জন্য নিরিবিলি পরিবেশ বেছে নিন। আলো বাতাস আছে এমন জায়গায় আসন পাতুন। ঢিলাঢালা পোশাক পরুন।
২) ধীরে ধীরে নিশ্বাস নিন, ধীরে ধীরে ছাড়ুন। এভাবে প্রথমে মিনিট দু’এক করুন। তারপর আস্তে আস্তে সময় বাড়ান।
৩) ব্যায়াম শুরু করার আগে ওয়ার্মআপ এবং শেষে কুলডাউন করে নিবেন। সপ্তাহে ৬ দিন নূন্যতম ৩০ মিনিট করে এক্সারসাইজ করলেও আপনি অবশ্যই পজেটিভ রেজাল্ট পাবেন।
কীভাবে ব্যায়াম করবেন?
১) ঠোঁট বন্ধ করে যতটা সম্ভব দুই গালকে মুখের ভেতরের দিকে টেনে নিন। অনেকটা সেলফি তোলার সময় ঠোঁট পাউট করার মতো। এইভাবে ১০ সেকেন্ড ধরে রাখুন। ৩ থেকে ৫ বার এই ব্যায়ামটি করুন।
২) বেলুন ফোলানোর মতো করে মুখে হাওয়া ভরে নিন। এভাবে ১০ সেকেন্ড ধরে রাখুন। তারপর আস্তে আস্তে হাওয়া ছেড়ে দিন। এতে করে গালের বাড়তি ফোলাভাব কমে যাবে। ব্যায়ামটি ৩ থেকে ৫ বার করুন।
৩) প্রথমে বাম দিকে মাথা ঘোরান, এমনভাবে করবেন যেন আপনি আপনার বাম কান দিয়ে বামদিকের ঘাড় ছুঁতে চেষ্টা করছেন। যতটা সম্ভব কান আর ঘাড়ের মধ্যেকার গ্যাপ কম করার চেষ্টা করুন। এভাবে ৪-৫ বার করুন। একইভাবে ডান দিকেও করুন।
৪) একটা চেয়ারে বসে ছাদের দিকে তাকান। এবার ঠোঁট সুচালো করে কিস করার মতো করুন। ১০ সেকেন্ড ধরে রাখুন। ডাবল চিনের সমস্যা দূর করতে এই ব্যায়াম অধিক কার্যকর। এই ব্যায়ামটিও ৩ থেকে ৫ বার করুন।
৫) হাসুন, প্রাণ খুলে হাসুন। হাসলে মুখের প্রতিটি পেশি সংকুচিত ও প্রসারিত হয় এবং রক্ত সঞ্চালন বাড়ে। বাড়তি চর্বি কমে মুখে ছড়িয়ে পড়ে আনন্দের দীপ্তি।
যোগব্যায়াম করার সময় নিয়মাবলী ভালো করে জেনে নিবেন। কখন গভীর নিশ্বাস নিতে হবে, কখন ছাড়তে হবে, সেই সাথে দেহ /মাংসপেশি আরামে রাখতে হবে। বলিরেখা দূর করার জন্য এটা বেশ কার্যকর। নিয়মিত এই ব্যায়ামগুলো করলে আপনার চেহারায় তারুণ্যদীপ্ত উজ্জ্বলতা আবারও ফিরে আসবে! ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে ঘরে বসেই আপনি যেকোনো সময় এই সহজ ব্য্যায়ামগুলো করে নিতে পারেন। মনে রাখবেন আপনার মানসিক ও শারীরিক কাজের ক্ষমতাই প্রকাশ করবে আপনার তারুণ্য। আসুন নিজেকে ভালবাসি, নিজের যত্ন নেই।
লিখেছেন- মাহমুদা আক্তার রোজী
ফিজিওথেরাপি কনসালটেন্ট অ্যান্ড জেরন্টোলজিস্ট
ছবি- সাজগোজ