আমরা সবাই জানি যে খাবার খেলেই শরীরে মেদ জমে। কিন্তু এমন কিছু খাবার আছে যেগুলো খেলে শরীরের বাজে মেদ বার্ন হয়ে যায়। আর সেই খাবারগুলো যদি সকালের নাস্তায় খাওয়া যায় তাহলে সেটা আমাদের শরীরে সারাদিনের জন্য পুষ্টি সরবরাহ করে। আর তাই আজকে এমন কিছু খাবারের কথা বলবো যেগুলো নিয়ম করে সকালের নাস্তায় খেলে শরীরের ফ্যাট বার্ন হয়ে শরীর হবে মেদহীন এবং সুস্থ। চলুন তবে জেনে নেই ফ্যাট বার্ন করার খাবার কী কী হতে পারে?
ফ্যাট বার্ন করার খাবার
১) হোল গ্রেইন- ওটস, চিনি ছাড়া কর্ণ ফ্লেক্স
সকালের নাস্তায় ওটস, চিনি ছাড়া কর্ণ ফ্লেক্স, লাল আটার রুটি এ জাতীয় খাবার খেলে পেট ভরে যায় খুব সহজে এবং এই খাবারগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে বলে শরীরের অতিরিক্ত মেদ ঝরে যায়।
২) ফ্রুট সালাদ এবং সবজি
ফ্রেশ সবজি এবং সালাদ আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। কারণ এ জাতীয় খাবারে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ উপাদান এবং ফাইবার যা অনেকক্ষণ ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
৩) হাই প্রোটিন খাবার
যেসব খাবারে হাই প্রোটিন থাকে সেগুলো আমাদের দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এ ধরনের খাবারের মধ্যে আছে- ডিম, বিভিন্ন জাতীয় ডাল, ফ্যাট ছাড়া চিকেন ইত্যাদি। সকালের নাস্তায় এসব খাবার খেলে সারাদিন ক্ষুধা কম হবে এবং এর ফলে ক্যালরিও কম গ্রহন করতে হবে।
৪) বাদাম জাতীয় খাবার
বিভিন্ন ধরনের বাদাম যেমন- কাঠবাদাম, চীনাবাদাম, পেস্তাবাদাম, কাজু বাদাম ইত্যাদি খাবারে থাকে প্রাকৃতিক ফ্যাট যা আমাদের ত্বকের ও চুলের জন্য খুবই উপকারী। একই সাথে এ ধরনের খাবার শরীরে জমে থাকা ফ্যাট ঝরাতে সাহায্য করে।
৫) লেবু-মধু পানীয়
সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে এক গ্লাস পানিতে (নরমাল অথবা উষ্ণ) লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে খেলে শরীরের অতিরিক্ত মেদ ও ফ্যাট বার্ন হয়ে যায় বিশেষ করে পেটে জমে থাকা চর্বি কমাতে এই পানীয় খুবই উপকারী। তবে এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যে- খালি পেটে লেবু খেলে অনেকের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দেয়। তাই আপনার শরীর এটা সহজভাবে গ্রহন করছে কি না সেটা খেয়াল করতে হবে। যদি এই পানীয় খাবার ফলে কোন রকম শারীরিক সমস্যা দেখা দেয় তবে সাথে সাথে খাওয়া বাদ দিতে হবে।
৬) গ্রীন টি
গ্রিন টি আমাদের শরীর ও মনকে তাজা ও ক্লান্তিহীন রাখতে সাহায্য করে। গ্রিন টি আমাদের শরীরের ফ্যাট বার্নিং হরমোনকে সক্রিয় করে তোলে ফলে খুব সহজেই শরীরের অতিরিক্ত মেদ কমতে শুরু করে।
উপরের এই খাবারগুলো খাওয়ার সাথে সাথে কিছু খাবার বাদও দিতে হবে এবং কিছু অভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে। যেমন-
১. চিনিযুক্ত খাবার, প্যাকেটজাত জুস খাওয়া বাদ দিতে হবে।
২. বিভিন্ন ধরনের ক্যানড খাবার বাদ দিতে হবে। কেননা ক্যানড এবং প্রক্রিয়াজাত খাবারে প্রচুর পরিমাণ কোলেস্টরল এবং কার্বোহাইড্রেট থাকে যা শরীরে প্রচুর পরিমাণ মেদ জামায়।
৩. ফ্রোজেন খাবার, ভাজা পোড়া এবং ফাস্ট ফুড খাওয়া একদমই বাদ দিতে হবে।
৪. সব সময় খাবার খাওয়ার আগে পানি পান করুন এবং প্রতিদিন কমপক্ষে ২-২.৫ লিটার পানি পানের অভ্যাস করুন।
৫. খাবার সব সময় আস্তে আস্তে সময় নিয়ে খেতে হয়। এতে খাবার ভালোভাবে হজম হয়।
৬. টিভি দেখতে দেখতে কিংবা কোন কাজে ব্যস্ত থেকে খাবার খাবেন না। এতে বেখেয়ালে বেশী পরিমাণে খাবার খাওয়া হয়ে যায়।
৭. সব সময় চেষ্টা করবেন ছোট প্লেট কিংবা পাত্রে খাবার খাওয়ার জন্য। এতে পরিমাণে কম খাবার খাওয়া হয়।
৮. ক্যাফেইন শরীরের মেটাবলিজমকে বুস্ট করতে সাহায্য করে। তাই চিনি ছাড়া চা এবং কফি পান করতে পারেন।
৯. প্রতিদিন পরিমিত পরিমান ঘুমের প্রয়োজন। ভালো এবং পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে শরীরে হরমোনাল সমস্যা দেখা দেয় যার ফলে ওজন বেড়ে যায়।
১০. সঠিক ডায়েট, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের সাথে প্রতিদিন কিছু সময়ের জন্য হাঁটা কিংবা এক্সারসাইজ করাটা খুব জরুরি।
অতিরিক্ত ওজন বিভিন্ন ধরনের অসুখ এবং শারীরিক সমস্যার তৈরি করে। তাই সঠিক পদ্ধতিতে নিয়ম মেনে শরীরের অতিরিক্ত ফ্যাট বার্ন করে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন!
ছবি- সংগৃহীত: হেলথলাইন.কম, সাটারস্টক