পরিবার একটা সামাজিক প্রতিষ্ঠান যেখানে একজন বাবা থাকেন এবং একজন মা। এই বাবা-মায়ের থেকেই আসে নতুন প্রজন্ম। পরিবারে মায়ের যেমন দায়িত্ব আছে ঠিক একইভাবে বাবাদেরও অনেক দায়িত্ব থাকে। কারণ বাচ্চারা শুধু মায়ের কাছ থেকেই শিক্ষা নেয় না, তারা বাবার আচরণকে গভীরভাবে লক্ষ করে। তাই একটা পরিবারে যদি ছেলে বাচ্চা থাকে, সে ছোট বেলা থেকেই নিজেকে বাবার যায়গায় চিন্তা করা শুরু করে। বড় হয়ে সে বাবার মত একজন মানুষ হতে চায়।
তাই বাবা সারাদিন কাজ শেষ করে যখন নিজের বাসায় ফিরে এসে টেবিলে গরম ভাত পায়, বাসাটা গোছানো পায়। সে কখনই বছরের ৩৬৫ দিনে একটি বারও প্রিয়তমা স্ত্রীর সারাদিন ঘরে বসে থাকা কাজ করা হাতটা ধরে বলে না তুমি আমার জীবনে আশির্বাদ স্বরুপ এসেছো, তোমাকে না পেলে আমি আমার এই জীবনটাকে গোছাতে পারতাম না, আমি তোমার কাছে ঋনী।
বরং বাবা বাসায় ফিরে কোন কিছু গোছানো না পেলে অথবা খুব তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করেন মা নামক মানুষটির সাথে। ছোট বেলায় বাচ্চারা বাবার এই চেঁচামেচিকে ভয় পায় এবং মায়ের পিছনে লুকিয়ে থাকে। মাকেই তখন তার একমাত্র নিরাপদ আশ্রয় স্থান মনে হয়।
এই বাচ্চারাই যতবড় হতে থাকে তখন বাড়ির মেয়েটা মায়ের দুঃখ বোঝে এবং নিজেকে তার মায়ের যায়গায় চিন্তা করে মায়ের হাতটা ধরে পাশে বসে। মাকে অনুভব করতে দেয় আমি আছি তোমার পাশে। কিন্তু বাড়ীর ছেলেটা মায়ের এই কষ্ট উপলব্ধি করে না, কারণ অনেক আগেই সে নিজেকে তার বাবার যায়গায় দাঁড় করিয়ে ফেলেছে।
তাই মায়ের কষ্ট অথবা ত্যাগকে এবং মায়ের প্রতি বাবার অবহেলাকে তার অন্যায় মনে হয় না। বাস্তব জীবনে যখন এই ছেলেটা নিজের সংসার শুরু করে সে তার প্রিয়তমার সাথেও একই ব্যবহার করে। সেটা মা-বাবা সম্মতিতে বিয়ে হোক অথবা তার নিজের পছন্দের মেয়েকেই সে বিয়ে করুক না কেন সে এই স্বভাবের থেকে বের হতে পারে না।
পরকীয়ার ক্ষেত্রেও দেখায় যায়, কোন মেয়ে যখন কোন পরপুরুষের প্রেমে পড়ে সেই মহিলা অথবা মেয়ে শুধু ওই বাবা নামক মানুষটাকে নিয়ে আলাদা সংসার করতে চায় কিন্ত সে তার অবৈধ প্রেমিকের ছেলের দিকে হাত বাড়ায় না। কিন্ত যখন একটা ছেলে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে যায়, সে শুধু ওই একজন মহিলাতেই সন্তুষ্ট থাকে না, সে ওই মহিলা/মায়ের পরেই চোখ দেয় ওই বাড়ি ছোট মেয়েটার দিকে। যে কিনা তার নিজের মেয়ের মত এবং এখানেই সে থেমে থাকে না ওই বাড়ির আরও যত মেয়ে থাকে তাদের সবাইকে সে তরকারীর স্বাদ নেওয়ার মত কামনা করতে থাকে। এমনকি বাড়ির কাজের মেয়েটাও তার সেই লোভনীয় দৃষ্টি থেকে মুক্তি পায় না। আমি কোন নারীবাদী মানুষ নই, আমি আগে একজন মানুষ তারপর নারী।
আজ সমাজ যতটা খারাপের দিকে যাচ্ছে তার ৮০% দায় একজন ছেলের কারণ তার বাবা তাকে কখনই শেখায়নি মেয়েদের কীভাবে সম্মান করতে হয়। তাই বাবা নামক মানুষটিকে বলছি, একটি বার নিজেকে আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে দেখুন, আপনি আপনার পরিবারের মানুষদের কতটা সন্মান এবং কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছেন। কারণ আপনার দিকে তাকিয়ে আছে নতুন প্রজন্মের একটা ছেলে শিশু। যে কিনা আপনারই প্রতিচ্ছবি।
কাউকে ব্যক্তিগত ভাবে আঘাত করার জন্য আমার এই লেখা নয়। এটা আমার চারপাশের সমাজ থেকে দেখা। সেটা বাংলাদেশই হোক আর এই সুদূর ইংল্যান্ডই হোক না কেন সব যায়গায় একই চিত্র। একটা মহিলা পরিকীয়া করলে শুধু বাবা দূরে সরে যায়। কিন্ত একটা ছেলে পরকীয়া করলে পুরো সংসারটাই ভেঙ্গে যায় তার কুরুচিপূর্ণ আচরনের জন্য। একটা মা তখনই একটা ভাল প্রজন্ম দিতে পারবেন যখন তার সঙ্গি প্রিয়তম স্বামী তাকে ১০০% সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিবেন এবং তাকে সন্মান করবেন। মা-বাবা কেউ কারো বিকল্প নয়। প্রত্যেকেরই নিজস্ব কিছু দায়িত্ব থাকে। তাই আসুন আমরা সবাই শুধু নিজের স্বার্থে নয় পুরো সমাজের স্বার্থে নিজেদের পরিশুদ্ধ করি। সবাইকে মানুষ হিসাবে সন্মান করি। সেটা প্রিয়তমা স্ত্রী হোক আর বাড়ীর কাজের লোকই হোক না কেন। আপনার সন্মানের দৃষ্টিভঙ্গি আপনার সন্তান পাবে, আর আমরা পাবো পরিচ্ছন্ন সমাজ।
ছবি – সংগৃহীত: সাটারস্টক