মেকআপ ট্রেন্ডে পরিবর্তন আসাটা একটু সময়সাপেক্ষ। ভারী মেকআপ বা মিনিমাল মেকআপ লুক, সাজের ধারায় যেই ট্রেন্ডই চলুক না কেন, ব্লাশের কদর কিন্ত কমে নি কখনোই! ব্লাশ অ্যাপ্লাইয়ের কিছু কৌশল আছে, ভুলভাবে লাগালে বা সঠিক শেইড পিক না করলে এতে আপনাকে অতিরঞ্জিত দেখাবে আর পুরো লুকটাই বেমানান লাগবে। আপনার স্কিনটোনের জন্য পারফেক্ট ব্লাশ শেইড বেছে নিয়েছেন তো? বিগেনারদের জন্য কোন ব্লাশ প্যালেট ভালো হবে, কোন শেইডটি স্কিনটোনকে কমপ্লিমেন্ট করবে, কীভাবে পারফেক্টলি ব্লাশ অ্যাপ্লাই করতে হয়, এসব নিয়ে অনেকেরই কনফিউশন আছে। চলুন আজ আমরা এই বিষয়ে ডিটেইলসে জেনে নিবো।
আপনার জন্য ব্লাশের কোন শেইডটি পারফেক্ট?
ব্লাশ আপনার টোটাল লুককে কমপ্লিট করে, চেহারায় দারুন এক আভা এনে দেয়। মেকআপের মাধ্যমে ন্যাচারাল লুক ফুটিয়ে তুলতে চাইলেও একটুখানি ব্লাশ অ্যাপ্লাই করতে হয়। স্কিনটোন, অকেশন, আউটফিট, বয়স সবকিছু মাথায় রেখেই মেকওভার করা উচিত। মানানসই গেটআপ যেমন আপনার সেলফ কনফিডেন্স বাড়িয়ে দেয়, তেমনি আপনাকে অন্যদের কাছে ফ্যাশন আইকন করে তোলে। এতগুলো কথা বললাম এটা বুঝাতে যে, মেকআপের ক্ষেত্রে আপনাকে একটু বুঝে শুনে শেইড পিক করতে হবে। সেটা যেন অতিরঞ্জিত না হয়, আবার একদম সাদামাটাও না হয়! আপনার ত্বকের সঙ্গে মানানসই শেইডের ব্লাশ কোনটি, চলুন এখনই জেনে নেই।
লাইট স্কিনটোন
যারা ফর্সা ত্বকের অধিকারী, তাদের জন্য সফট পিংক, লাইট পীচ, লাইট অরেঞ্জ বেশ ভালো অপশন। সবসময় হালকা রঙের ব্লাশন ব্যবহার করবেন, এটা আপনার ন্যাচারাল স্কিনটোনকে আরও ফুটিয়ে তুলবে। গাঢ় রঙের ব্লাশ অ্যাপ্লাই করলে সেটা চড়া দেখাবে। সাধারণ ও পরিপাটি লুকের জন্য ব্লাশের হালকা শেইডগুলো বেছে নিন।
মিডিয়াম স্কিনটোন
আপনি যদি ইয়োলো আন্ডারটোনের হন, তবে লাইট পীচ শেইডটি দারুন মানাবে আপনাকে। কুল আন্ডারটোনে পিংকিশ কালার বেশি মানায়। উজ্জ্বল শ্যামলা হলে পিংক আর কোরালের ওয়ার্ম শেইডগুলো ইজিলি ক্যারি করতে পারেন।
ডার্ক স্কিনটোন
শ্যামবর্ণের সাথে মভ কালারের ব্লাশ বেশ ভালো মানায়। অরেঞ্জ, ব্রিক রেড, বেরি, প্লাম, বাবলগাম পিংক, ব্রাউনিশ পিংক এই ধরনের কালারও দারুন স্যুট করে। স্কিনের সাথে মানানসই ডিপ শেইড পেতে দুই তিনটা ব্লাশ মিলিয়েও অ্যাপ্লাই করতে পারেন। তবে খেয়াল রাখুন রঙের ব্লেন্ডিংটা যাতে ন্যাচারাল বিউটিকে এনহ্যান্স করে, ফেইসের উপর অতিরঞ্জিত না লাগে!
নানান ধরনের ব্লাশ
পাউডার ব্লাশ, শিমারি ব্লাশ, ক্রিম ব্লাশ কত ধরনের যে ব্লাশ আছে! আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী যেকোনো একটি সিলেক্ট করতে পারেন। আবার সিঙ্গেল কালারের ব্লাশ যেমন পাওয়া যায়, আবার ব্লাশ প্যালেটও অ্যাভেলেবল। অনেক ব্লাশ প্যালেটের সাথে হাইলাইটার, ব্রোঞ্জার এগুলোও থাকে। আবার কিছু প্যালেট আছে পিংকেরই বিভিন্ন শেইডযুক্ত বা পীচ কালারের নানা শেইডের, অর্থাৎ কালার ভ্যারিয়েশনের উপর ডিপেন্ড করেও নানা রকম প্যাকেজিং আছে ব্লাশের।
কীভাবে অ্যাপ্লাই করবো?
খুবই সহজ, জাস্ট মেকআপ ব্রাশে একটু ব্লাশ নিয়ে ফেইসে ডাস্টিং করবেন। এক্সেস প্রোডাক্ট আগে ঝেড়ে ফেলবেন, তারপর গালে বুলিয়ে নিবেন। আর ক্রিম বেইজড ব্লাশ হাতের আঙ্গুলের সাহায্যে ফেইসে ব্লেন্ড করতে পারেন। এটি মেকআপের শেষের দিকের ধাপ। প্রথমে বেইজ মেকআপ করে চোখের সাজ আর কনট্যুরিং করে নিবেন। লুজ পাউডার দিয়ে মেকআপ সেট করে তারপর ব্লাশন। বেইজ মেকআপ ফ্ললেস হলে ব্লাশ দিলে সুন্দরমতো বসবে।
বিগেইনারদের জন্য ব্লাশ প্যালেট
অনেকেই জানতে চান রিজেনেবল প্রাইসে ভালো ব্লাশ কোনটি! বিগেইনারদের জন্য ব্লাশ প্যালেট সিলেক্ট করতে একটু কনফিউশন হয়। আবার কালারগুলো পিগমেন্ট কেমন, কী কী শেইডস আছে, ফেইসে স্মুথলি বসবে কি না, কোন ব্র্যান্ডের ব্লাশ ভালো হবে, এসব নিয়ে অনেকেরই প্রশ্ন আছে। আজ আমরা ৪ টি ব্লাশ প্যালেট সম্পর্কে জানবো। আশা করছি এই ছোট্ট রিভিউটি আপনাদের জন্য হেল্পফুল হবে আর আপনারা সহজেই নিজের জন্য পারফেক্ট ব্লাশ সিলেক্ট করতে পারবেন।
Technic Blush & Highlight Palette
ব্লাশ আর হাইলাইটার একই প্যালেটে পেয়ে যাবেন। Tropical Paradise আর Jungle Fever, দুইটা ভ্যারিয়েন্ট আমি ব্যবহার করেছি। টেকনিকের মেকআপ প্রোডাক্ট নিয়ে আসলে নতুন করে কিছু বলার নেই। এগুলোর রিভিউ খুবই ভালো। দুইটা ভ্যারিয়েন্টে কালার কালেকশন ডিফারেন্ট, আপনার প্রিফারেন্স অনুযায়ী বেছে নিতে পারেন। আপনার স্কিনটোনের জন্য পারফেক্ট শেইড বেছে নিতে পারেন এই প্যালেট থেকে। Jungle Fever এর প্যালেটে কালারগুলো একটু ডিপ শেইডের, যেগুলো উজ্জ্বল শ্যামলা ও শ্যাম বর্ণের ত্বকে খুব ভালো মানাবে। আর Tropical Paradise এ ন্যুড, ন্যাচারাল, লাইট শেইডগুলো আছে। এটি দিয়ে খুব সহজেই ন্যাচারাল গ্ল্যামলুক ক্রিয়েট করতে পারবেন।
Nirvana Color Face Palette – Windy Monsoon
নিরভানার ফেইস প্যালেটটি আমার রিসেন্ট ফেবারিট। এতে কনট্যুরিং, ব্লাশ, হাইলাইটার সবই আছে। একের মধ্যে সব আর কী! আর দামটাও হাতের নাগালে। কনট্যুরিং আর হাইলাইটিং করতে আলাদা প্রোডাক্ট কেনা লাগবে না। পীচ আর বাবলগাম, ব্লাশের এই দুইটা শেইডস আছে এই প্যালেটে। যারা পিংকিশ আর পীচই গ্লো পছন্দ করেন, তাদের জন্য এটা পারফেক্ট চয়েজ। পিগমেন্ট বেশ ভালো, স্কিনে রাফ লাগে না, সুন্দরভাবে বসে যায়, ওভারঅল খুব ভালো ফিনিশিং দেয়। যারা মেকআপ করতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য নিরভানার এই ফেইস প্যালেট কিন্তু মাস্ট হ্যাভ!
MAKEUP REVOLUTION Blush Palette Goddess
মোটামুটি বাজেটের মধ্যে যদি বেস্ট কোয়ালিটির ব্লাশ প্যালেট চান, তাহলে এটি আপনার জন্য রাইট চয়েজ। কারন-
- চারটি ব্লাশ শেইড ও চারটি ভিন্ন কালারের হাইলাইটার থাকছে এতে।
- সুপার পিগমেন্টেড, স্মুথ ফিনিশিং দেয়, গ্লুটেন ফ্রি।
- পিংক, পীচ সব কালারই আছে, এই শেইডগুলো সব ধরনের ত্বকে মানিয়ে যায়।
- রেগুলার ইউজের জন্যও এটি পারফেক্ট।
- বিগেনার হিসাবে যারা মেকআপ প্রোডাক্ট কিনতে চাচ্ছেন, এই ব্র্যান্ডটি আপনার জন্য বেশ ভালো অপশন।
Technic Cool Edit blush palette
আমার খুবই পছন্দের একটি ব্লাশ প্যালেট এটি। চারটি ডিফারেন্ট শেইডস আছে এতে। ছবিতেই বুঝতে পারছেন কালারগুলো কতটা সুন্দর। রিয়েল কালারটি যাতে বোঝা যায় তাই দিনের আলোতেই ক্যাপচার করা হয়েছে।
এই প্যালেটের বড় সুবিধা হচ্ছে-
- সব স্কিনটোনে মানায় এমন শেইডস আছে।
- পিগমেন্ট খুবই ভালো আর স্কিনের সাথে ভালোভাবে ব্লেন্ড হয়ে যায়।
- রেগুলার লুকের জন্যও এটি পারফেক্ট।
এছাড়াও, আরও অনেক ব্লাশ আছে রিজেনেবল প্রাইসের মধ্যে। W7 Candy Blush, la femme এগুলোও দেখতে পারেন, প্যালেট ছাড়াও সিঙ্গেল কালারের আছে। আর ব্লাশ অ্যাপ্লাই করার জন্য ভালোমানের মেকআপ ব্রাশের প্রয়োজন। একটি ফেইস মেকআপ ব্রাশ কিনে নিলে আপনি মাল্টিপল কাজে ইউজ করতে পারবেন।
তাহলে, এই ছিল ব্লাশ নিয়ে যতকথা! আপনার স্কিনটোনের জন্য পারফেক্ট ব্লাশ শেইড বেছে নিতে আর কোনো কনফিউশন হবে না আশা করি। বিউটি রিলেটেড সাজেশনের জন্য সাজগোজ সবসময় আছে আপনার পাশে। মেকআপের জন্য যা যা প্রয়োজন, সবই পেয়ে যাবেন শপ.সাজগোজ.কম এ। অনলাইনে পারচেজের সুযোগ তো আছেই, সারাদেশে মাত্র ৪৯ টাকাতে ডেলিভারি দিচ্ছে সাজগোজ। আর দুইটা আউটলেট আছে যেগুলো যমুনা ফিউচার পার্ক ও সীমান্ত সম্ভারে অবস্থিত। আজ এই পর্যন্তই, ভালো থাকবেন।
ছবি- সাজগোজ