কেন গুয়েরিসন নাইন কমপ্লেক্স ক্রিম নিয়ে কথা বলছি? জানেন? বয়স বাড়ার সাথে সাথে বেটার, একটু রিচ অ্যান্টি এজিং ক্রিম খোঁজা মানেই কিন্তু সারাজীবন তরুণ থাকার ফাউনটেইন অব ইয়ুথের খোঁজ করা নয়… অ্যান্টি এজিং প্রোডাক্টের কাজ হচ্ছে বয়স বাড়ার সাথে সাথে আপনার স্কিনের বাড়তি নিডগুলো পূরণ করা। একটু এজ বেড়ে গেলে স্কিনের যে রাফনেস, একটু বেশি ড্রাইনেস আর হাল্কা পাতলা যে ফাইন লাইনগুলো দেখা যায় সেগুলো একটু কন্ট্রোলে রেখে স্কিনের গ্লো ফিরিয়ে দেয়ার জন্যই আসলে একটা ভালো ডেইলি ক্রিমের খোঁজ করছিলাম।
ড্রাই স্কিনের রেগুলার প্রবলেম যেগুলো বলতে গেলে তার সবই আমার আছে, যেমন-
– সারাদিন মুখের স্কিন টান টান লাগা
– ঠোঁটের পাশে আর চোখের পাশে হাল্কা ফাইন লাইনের আভাস
– গালের স্কিন লালচে হয়ে থাকা, যেন ওখান থেকে জোরে ঘষা দিয়ে স্কিন তুলে নেয়া হয়েছে
– মেকাপের কথা তো বাদই দিলাম, যত ভালো ব্রাশ বা স্পঞ্জ ইউজ করি না কেন ফিনিস কখনই মনের মত হয় না। সবই মনে হয় স্কিনে ভেসে থাকে, বসে না!! তার উপরে অফিসের এসি তো আছেই!! মরার উপর খাড়ার ঘায়ের মত!!। দিনে বার বার ফেস মিষ্ট আর হেভি ময়েশ্চারাইজার ইউজ করেও স্কিনের টান টান ভাব কমাতে পারি না।
আর এসব থেকে একটু বাচার জন্যই অনেক খুঁজে পেতে এই ক্রিমটা কিনলাম। এটা ড্রাই স্কিনের জন্যই ফরমুলেটেড। কোরিয়াসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বিখ্যাত গুয়েরিসন নাইন কমপ্লেক্স ক্রিম আমার বাঙালি ড্রাই সেনসিটিভ স্কিনে প্রায় ৮ মাস হল ইউজ করছি। এখন আমার ২য় ক্রিমের জার প্রায় অর্ধেক খালি।
[picture]
গুয়েরিসন নাইন কমপ্লেক্স ক্রিম আসলে কি?
গুয়েরিসন নাইন কমপ্লেক্স ক্রিম (Guerisson 9 Complex Cream) খুব রিচ টেক্সচারের একটা ক্রিম এবং এতে আছে খুবি ইউনিক উপাদান ‘হর্স অয়েল’ …! যা ড্রাই এবং এজেড স্কিনের রাফনেস এবং রিঙ্কেল কমিয়ে স্কিনের ইউথফুল গ্লো বজায় রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও গুয়েরিসন ক্রিম দাবি করে, রেগুলার ব্যবহারে স্কিন হবে চোখে পড়ার মত স্মুথ এবং দাগ ছোপও কমবে।
উপাদান
উপাদান লিস্টিটা বলতে গেলে একটু বড়ই। তবুও পুরোটা লিখে দিলাম-
Purified water, Glycerin, Shea Butter, Horse Oil, Jojoba Seed Oil, Butylene Glycol, Cyclopentasiloxane, Niacinamide, Cetyl Alcohol, Cetearyl Olivate, Beeswax, Dimethicone/Vinyl Dimethicone Crosspolymer, Sorbitan Olivate, Cyclohexanone Siloxane, Sodium Polyacryloyldimethyl Taurate, Snail Slime Filtrate, Bixa Seed Oil, Titanium Dioxide, Peppermint Leaf Extract, Apple Mint Leaf Extract, Sage Leaf Extract, Rosemary Leaf Extract, Lavender Flower Extract, Melissa Officinalis Leaf Extract, Chamomile Extract Leaf, MonardaDidyma Leaf Extract, Betaine, Tocopheryl Acetate, Aluminum Hydroxide, Hydrated Silica, Disodium Stearyl Sulfosuccinamate, Sodium Hyaluronate, Fragrance, Centella Asiatica Extract, Green Tea Extract, Ligularia FischeriExtract, Carbomer, Polysorbate 20, Palmitoyl Oligopeptide, Palmitoyl Tetrapeptide-7, Sodium Ascorbyl Phosphate, Soybean Oil, Human Oligopeptide-1, Lecithin, Astaxanthin, Xanthan Gum, 1,2-Hexanediol, Caprylyl Glycol, Caprylhydroxamic Acid, Boswellia Serrata Resin Extract, Adenosine, Disodium EDTA, Octyldodecanol, Hydrogenated Lecithin, Ceramide 3, Phenoxyethanol
চমৎকার সব উপাদান দেখেই আসলে মুগ্ধ হয়ে আমি এই ক্রিমটা অর্ডার দেই। দেখতে পাচ্ছেন কতো ডিফারেন্ট আর বেস্ট উপাদানের কম্বিনেশন এই ক্রিমে? (সবুজ মার্ক করা)
গুয়েরিসন নাইন কমপ্লেক্স ক্রিম কোথায় পাবেন ও এর পরিমাণ
এক জারে থাকে ৭০ গ্রাম ক্রিম। এটা এই মুহূর্তে শপ.সাজগোজ.কম-এ পাবেন। আমি আমার প্রথম জার এনেছিলাম অনেক কষ্টে অনলাইন অর্ডার করে। হাতে পেয়েছিলাম ১.৫ মাস পড়ে!! পরেরটা তাই শপ.সাজগোজ.কম থেকেই নিয়েছি।
গুয়েরিসন নাইন কমপ্লেক্স ক্রিম কত দামে পাবেন?
এক জার শপ.সাজগোজ.কম-এ ১৫০০/- টাকায় পেয়ে যাবেন। ২০% ডিস্কাউন্ট-এ সীমিত সময়ের জন্য পাচ্ছেন ১২০০/- টাকায়। কিনতে নিচের ইমেইজ-এ ক্লিক করুন।
গুয়েরিসন নাইন কমপ্লেক্স ক্রিম নিয়ে আমার এক্সপেরিয়েন্স
ক্রিমের প্যাকেজিং অস্বাভাবিক সুন্দর লেগেছে আমার কাছে। সাথে আছে একটা ছোট স্প্যাচুলা। এমন হেভি ক্রিম আমি হাত দিয়ে তুলে একেবারেই পছন্দ করি না। স্প্যাচুলাটা তাই খুব কাজে লেগেছে…!
ভেতরের ক্রিমটা দেখতে অনেকটা মাখনের মত! আমি ক্রিমটা ফ্রিজে রাখি। এতে ক্রিমটা পুরো লাইট ফ্লাফি মাখনের মত লাগে মুখে দেয়ার সময়। বাইরে রাখলে আমাদের দেশের টেম্পারেচারে অনেকটা হুইপড ক্রিমের মত লাগে।
দেখেছেন টেক্সচার কতো রিচ? এসিতে থাকার কারণে আমার ডিহাইড্রেটেড রাফ স্কিনের জন্য আমি এমন কিছুই চাচ্ছিলাম।
এটা মুখে লাগাবার সাথে সাথে প্রায় স্কিনে গলে যায়। আমাদের দেশে যেসব ইন্ডিয়ান আর ওয়েস্টারন ক্রিম পাওয়া যায় সেগুলোর মত ঘষাঘষি করতে হয় না। দীর্ঘদিন ইউজ করে বুঝলাম এটা আসলে হয় এই ক্রিমের ন্যাচারাল অয়েলস এবং প্ল্যান্ট এক্সট্রাকট এর জন্য। অন্যান্য ক্রিমে সিলিকনের অধিক্যের কারণে মুখে দিলে যেমন একটা মোটা ফিল্মের মত ক্রিমটা মুখে বসে থাকে গুয়েরিসনের সাথে মোটেও তেমন কিছু আমি পাইনি। মাত্র ১৫ সেকেন্ডের মাথায় ক্রিম স্কিনে মিশে যায়। তার পর ৫ মিনিট ওয়েট করে আমি আমার ডেইলি মেকাপ করি।
আপনাদের মনে হতে পারে আমি যে গ্লোইং স্কিনের কথা বললাম সেটা কোথায়? আপনাদের জন্য আছে ভিজুয়াল প্রুফ! আমি আগে কখনও কোন কস্মেটিক ইউজ করে এমন ভিসিবল ডিফারেন্স দেখিনি। কারণ আমাদের যাদের ড্রাই স্কিন আছে তারা তো জানিই স্কিন কতো ডাল লাগে তাই না? কিন্তু দেখুন লাগানোর সাথে সাথে গুয়েরিসন ক্রিম স্কিনে কেমন একটা হাল্কা শাইন নিয়ে আসে…
ক্লিন স্কিন আগে গুয়েরিসন ক্রিম ইউজ করার পরে
এর চেয়েও বেশি ভাল ফল দেখেছি আমি ফাউন্ডেশন লাগানোর পরে। খুব মনোযোগ দিয়ে আমার স্কিনের ক্লোজআপ ছবিগুলো দেখুন।
প্রথম ছবিতে, নরমাল হাইড্রেটিং প্রাইমার দেবার পরে ফাউনডেশন দেয়া হয়েছে। তারপর স্কিনে নাকের উপরে কেকি আনন্যাচারাল ভাবটা দেখতে পাচ্ছেন?
মনে হচ্ছে স্কিনের সব ডেড সেলস এর কারনে মেকআপ স্কিনে ভেসে থাকছে, তাই না? ড্রাই স্কিনে মেকআপ করতে গেলে এমনটাই হয়…
এবারে দেখুন, গুয়েরিসন ইউজ করার পরে আমার নাকের স্কিনে মেকাপ কেমন দেখাচ্ছে। বলা বাহুল্য স্কিন ড্রাই হবার পরেও আগের থেকে অনেক বেটার বসেছে মেকাপ। আমি দুটো ছবিতেই সেম মেকাপ এবং সেম স্পঞ্জ ইউজ করেছি।
আর একটি ছবি দিয়ে আমি বুঝাব কেন ড্রাই স্কিনের জন্য এই ক্রিমটা আমার এত ভালো লেগেছে!!
দেখুন গুয়েরিসন নাইন কমপ্লেক্স ইউজ করার আগে আমার নাক আর গালের রাফ স্কিন এবং এই ক্রিম প্রায় ২ মাস ইউজ করার পরে তোলা ছবিতে স্কিনের বৈষম্য কতোটুকু…
আগে পরে
নাকের পাশের ডেড সেলসগুলো দেখতে পাচ্ছেন? এখন এগুলোদেখা যায় না বললেই চলে।
যেসব দিক আমার ভাল লেগেছে
– খুবই লাইট ফ্লাফি টেক্সচারের রিচ একটা ক্রিম
– লাগানোর সাথে সাথে স্কিনে মিশে যায়, অন্যান্য ড্রাই স্কিনের ক্রিমের মত স্কিন তেলতেলে করে তোলে না।
– ড্রাই স্কিনের রাফনেস নিয়মিত ব্যবহারে ২ মাসের মাথায় পুরোপুরি দূর করে।
– কোন ধরণের ব্রণের সমস্যা তৈরি করে না।
– যাদের স্কিনে রাফনেসের জন্য মেকাপ বসে না তাদের এই ক্রিমটা খুবি পছন্দ হবে।
– ড্রাই স্কিনে গ্লো ফিরিয়ে আনার জন্য এটার কোন তুলনা আমি আজ পর্যন্ত পাইনি।
– দীর্ঘদিন ব্যবহারের পরে আমার ঠোঁট আর চোখের পাশের টান টান ভাব অনেক কমেছে। তাই এই ক্রিমের যে অ্যান্টি এজিং গুন আছে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
যা ভালো লাগে নি
তেমন কিছু নেই। কিন্তু এটা বলতেই হবে যে গুয়েরিসন ক্রিম খুব ড্রাই আর একটু বয়স্ক স্কিনে ভালো কাজ করলেও এতে এত ধরণের সেরামাইড এবং অয়েলস আছে যে এটা অয়েলি স্কিনের অধিকারিরা কখনই ইউজ করতে পারবেন বলে আমার মনে হয়নি। সুতরাং তৈলাক্ত ত্বকের কেউ এত রিচ ক্রিম ইউজ করতে পারবেন না।
আমাদের দেশে অয়েলি স্কিনের প্রোডাক্টের ভীরে ভালো মানের ড্রাই স্কিনের জন্য স্পেশাল প্রোডাক্ট খুঁজে পাওয়াই মুশকিল। কিন্তু আমি সবাইকে শেষমেশ এটাই বলতে চাই, যারা ড্রাই স্কিন নিয়ে সাফার করছেন এবং মুখে বয়স হওয়ার আগেই রিঙ্কেল পড়ে যাবে কিনা তা নিয়ে টেনশনে আছেন তারা চান্স পেলে এই ক্রিমটা ট্রাই করে দেখবেন… কারণ আমার তরফ থেকে ড্রাই স্কিনের জন্য গুয়েরিসন ক্রিমের রেটিং ৫/৫……!!!
ছবি- সংগৃহীত: সাজগোজ