সৌন্দর্য প্রকাশের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হলো চুল। কারণ সুন্দর ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল বাহ্যিক সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ। তবে সুন্দর চুল পেতে শুধু নিয়মিত তেল বা হেয়ার প্যাক ব্যবহার করলেই হবে না, পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর খাবারও খেতে হবে। চুল পড়া রোধ, নতুন চুল গজানো এবং সুস্থ চুল পাওয়ার জন্য খাদ্য তালিকায় কিছু খাবার যুক্ত করা উচিত। স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুলের জন্য কী কী পুষ্টির প্রয়োজন, এই উপাদানগুলো কোন কোন খাবারে পাবেন এবং এগুলো কীভাবে চুলের উপকার করবে- এ সকল প্রশ্নের উত্তর পাবেন আজকের ফিচারে।
সুস্থ ও সুন্দর চুলের জন্য কোন কোন উপাদান প্রয়োজন?
১) প্রোটিন ও অ্যামিনো অ্যাসিড
চুল কেরাটিন প্রোটিন দিয়ে তৈরি এবং অ্যামিনো অ্যাসিড চুলের প্রোটিন ধরে রাখতে সাহায্য করে। চুল সুস্থ রাখতে শরীরের ওজনের প্রতি কেজিতে ০.৮-০.৯ গ্রাম প্রোটিন গ্রহণ করা উচিত।
প্রোটিন ও অ্যামিনো অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবারগুলোর তালিকা-
- ডাল, কিডনি বিনস, মটর, সয়াবিন, মিষ্টি কুমড়োর বিচি, তিল, ব্রাউন রাইস, পেস্তা বাদাম, চিনা বাদাম, কাঠ বাদাম, সূর্যমুখীর বিচি, আখরোট ইত্যাদি (উদ্ভিজ্জ প্রোটিন)
- মুরগির মাংস, মাছ, গরুর মাংস, ডিম, পনির, টকদই, দুধ ইত্যাদি (প্রাণিজ প্রোটিন)
২) ওমেগা থ্রি
ইনফ্ল্যামেশন রোধ করতে এবং ফলিকল থেকে চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে ওমেগা থ্রি বা পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড।
ওমেগা থ্রি যুক্ত খাবারগুলোর তালিকা-
স্যামন ফিশ, টুনা, সার্ডিন, ফ্লেক্স সিডস, অলিভ অয়েল, আখরোট ইত্যাদি।
৩) অ্যান্টি অক্সিডেন্ট
ইউভি রেডিয়েশন, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের কারণ হয়। অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এই স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, চুলের বৃদ্ধিতেও এই উপাদানটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবারগুলোর তালিকা-
মিষ্টি কুমড়ো, গাজর, বিট, টমেটো, ব্রকলি, ডিম, কমলা, লেবু, তরমুজ, আঙ্গুর, বাদাম, অলিভ অয়েল ইত্যাদি।
৪) ভিটামিন
চুলের বৃদ্ধির জন্য বেশ কয়েকটি ভিটামিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যেমন-
i) বায়োটিন (ভিটামিন বি৭)
চুল ও নখের গ্রোথ বৃদ্ধির জন্য বায়োটিন প্রয়োজন। গবেষণা মতে, বায়োটিনের অভাবে ৩৮% নারীর চুল পড়া শুরু হয়। বংশগত, ধূমপান, মদ্যপান, অন্ত্রের সমস্যা, গর্ভধারণ ও দুগ্ধদানের সময় বায়োটিনের অভাব হয়। তাই এ সময় মায়েদের চুল পড়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।
বায়োটিনের অভাব দূর করতে যে খাবারগুলো খেতে হবে-
ডিমের কুসুম, কলিজা, গরুর মাংস, মুরগির মাংস, মাশরুম, পনির, টকদই, গরুর দুধ, ওটস, টমেটো, আলু, পালং শাক, গাজর, আপেল ইত্যাদি।
ii) ভিটামিন বি৬ ও বি১২
ভিটামিন বি১২-এর অভাব চুল পড়ার আরেকটি কারণ। ভিটামিন বি৬ ও বি১২ পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্রহণ করলে নতুন চুল গজায়। এই উপাদানগুলো পেতে গরুর কলিজা, সার্ডিন ফিশ, দুধ নিয়মিত খেতে হবে।
iii) ভিটামিন বি১, বি২ ও বি৩
ভিটামিন বি১ (থায়ামিন), বি২ (রিভোফ্লেবিন), বি৩ (নিয়াসিন)-এর অভাবের কারণেও চুল পড়ে। চুল পড়ার সমস্যা রোধ করতে এই ধরনের ভিটামিনের সন্ধান মিলবে গরুর মাংস, মুরগীর মাংস, মাছ, কলিজা, ব্রকলি, পালং শাক, বাদাম ইত্যাদি খাবারে।
৫) আয়রন
নারীদের আয়রনের ঘাটতি একটি অন্যতম সমস্যা। আর চুল পড়ার জন্য আয়রনের অভাব অনেক বেশি দায়ী। আয়রনের ঘাটতি পূরণে গরুর মাংস, কলিজা, বিনস, খেজুর, কচুর শাক, বিভিন্ন সবজি ইত্যাদি নিয়মিত খেতে হবে।
৬) জিংক
জিংকে থাকা এনজাইম চুল পড়া কমায়, ভঙ্গুরতা রোধ করে। এর সাথে নতুন চুল গজাতেও সাহায্য করে। মাংস, চিংড়ি, কাঁকড়া, বাদাম, দুধ, পনির ইত্যাদি খাবারে এই উপাদানটি পাওয়া যাবে।
স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুলের জন্য যে খাবারগুলো নিয়মিত খেতে হবে
১) ডিম
ডিমের পুষ্টি উপাদান দুইভাবে চুলের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কাজ করতে পারে। ডিমের সমৃদ্ধ জৈব প্রোটিন শরীরের পুষ্টি চাহিদা মেটানোর মতোই চুলকেও পুষ্টি জোগায়। এছাড়া এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে জিংক, সেলেনিয়াম, সালফার ও আয়রন। আয়রন চুলের গোড়ায় রক্ত ও অক্সিজেনের সরবরাহ নিশ্চিত করে। প্রতিদিন খাওয়ার সাথে সাথে চুলের প্যাক হিসেবেও ডিম ব্যবহার করতে পারেন।
২) বাদাম
নানা ধরনের বাদামে পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান এবং তেল ত্বক, চুল, মস্তিষ্ক ও হৃৎপিণ্ডের জন্য দারুণ উপকারী। কাজু, কাঠ, চিনা ও পেস্তা বাদামে প্রচুর পরিমাণে বায়োটিন আছে। তাই সুস্থ চুল পেতে প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় এক কাপ বাদাম রাখুন।
৩) পালং শাক
এই শাকে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, লৌহ ও ওমেগা ফ্যাটি অ্যাসিড আছে। এই সবুজ শাকটি নিয়মিত খেলে আমাদের দেহে হিমোগ্লোবিন-এর মাত্রা বাড়ে এবং এতে চুলের ফলিকল-এ অক্সিজেন পৌঁছায়, যা চুল দ্রুত বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। শুধু পালং শাকই নয়, এমন নানা শাকই চুলের জন্য ভালো।
৪) গাজর
প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ গাজর নিয়মিত খাদ্যতালিকায় রাখা জরুরি। গাজরের এই ভিটামিন মাথার ত্বকে ‘সিবাম’ নামের একটা তৈলাক্ত রাসায়নিক পদার্থ উৎপাদনে সাহায্য করে। এটা চুলের গোড়াসহ স্ক্যাল্পের শুষ্কতা রোধে উপকারী।
৫) মিষ্টি আলু
মিষ্টি আলু ভিটামিন এ-এর একটি ভালো উৎস। এতে থাকা ভিটামিন-এ মাথার ত্বকে প্রয়োজনীয় তেল তৈরিতে সাহায্য করে। এই উপাদানের অভাব হলে মাথার ত্বকে চুলকানি ও খুশকির মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৬) সামুদ্রিক মাছ
বিভিন্ন প্রকারের সামুদ্রিক মাছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে। মাছের তেল চুলের জন্য বেশ উপকারী।
চুল পড়া আমাদের কমন একটি প্রবলেম। খাদ্য তালিকায় উপকারী উপাদানগুলো যুক্ত করে এই প্রবলেম অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব। তাই স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল পেতে নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খান, সুস্থ থাকুন। এছাড়া হেয়ার রিলেটেড যে কোনো অথেনটিক প্রোডাক্ট কিনতে পারেন সাজগোজ থেকে। অনলাইনে শপ.সাজগোজ.কম অথবা সাজগোজের চারটি ফিজিক্যাল শপ – যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত সম্ভার, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার এবং উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে) থেকে কিনতে পারবেন পছন্দের প্রোডাক্টগুলো।
ছবিঃ সাজগোজ, সাটারস্টক