মানবদেহে ইমিউন সিস্টেম একটি নিরাপত্তা সিস্টেম স্বরূপ। এই সিস্টেম আপনার শরীরের জন্য ক্ষতিকর পদার্থ যেমন ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া এবং রাসায়নিক উপাদান প্রবেশ এবং রোগে আক্রান্ত হওয়া থেকে দূরে রাখে। ইমিউনিটি দেহ প্রতিরক্ষার জন্য একটি প্রাকৃতিক উপায়। একটি শক্তিশালী ইমিউন সিস্টেম স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি কমিয়ে দেয় এমনকি রোগ নিরাময় ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু এমন কিছু কাজ আছে যার ফলে এই ইমিউন সিস্টেমের কার্যকারিতা ধীর হয়ে আসে। এর মধ্যে একটি হল খাদ্য, যা গ্রহণের ফলে ইমিউন সিস্টেম ধ্বংস হয়ে যায়। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে আমরা যেসব প্রসেসড ফুড খেয়ে থাকি তা দীর্ঘদিন খেলে এতে থাকা এডিটিভস যেমন কেমিক্যাল বা প্রিজারভেটিভস, উচ্চ পরিমাণ রিফাইন্ড সুগার আপনার ইমিউন সিস্টেমকে দুর্বল করে তুলবে। ফলশ্রুতিতে অসুস্থতার জন্য আপনার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায় এবং নিরাময় গতি মন্থর হয়ে যায়। এখন হয়ত বা জানতে ইচ্ছা করছে কোন কোন খাবার আমাদের ইমিউন সিস্টেমের সুস্থতা এবং অসুস্থতার জন্য দায়ী। চলুন জেনে আসি সেই সব অজানা কথাগুলো।
ইমিউন সিস্টেমকে সাপ্রেস করে এমন কিছু খাবার
১. রেড মিট
গরু, ভেড়া ও ছাগলের মাংসকে সাধারণত রেড মিট বলা হয়ে থাকে। এই রেড মিট স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা সম্পৃক্ত চর্বির একটি শীর্ষ উৎস। যার ফলে আপনার শরীরের প্রদাহ বৃদ্ধি হতে পারে – এটি আবার ক্ষতিকর পদার্থ, জখম ও রোগের প্রতি দেহের রিয়াক্ট করার একটি সাধারণ উপায়। তাই আপনার খাদ্য তালিকা থেকে লাল মাংস নির্মূল এবং এর পরিবর্তে প্রোটিনের জন্য তৈলাক্ত মাছের উপর নির্ভর করার বিশেষ পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে । তৈলাক্ত মাছ ওমেগা -৩ ফ্যাটি এসিড প্রদান করে। এতে প্রদাহবিরোধী বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান।
২. ভাজা খাবার
ভাজাপোড়া যেমন পটেটো চিপস, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই অতিরিক্ত সম্পৃক্ত চর্বির উৎস। কিছু কিছুতে আবার ট্রান্সফ্যাটও থাকে। যার ফলে আপনার এলডিএল, বা “খারাপ” কোলেস্টেরল বৃদ্ধি এবং আপনার এইচডিএল বা “ভালো” কোলেস্টেরল কমে যায় আর এগুলোর ফলেই উল্লেখযোগ্য ভাবে হৃদরোগ ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
৩. চিনি
চিনি খাবারে মিষ্টি স্বাদ এবং ক্যালোরি যোগ করে, কিন্তু কয়েক পুষ্টি উপাদান খুব কম থাকে। যুক্তরাজ্যের পরিবেশগত আইন কেন্দ্র অনুযায়ী, ৮ টেবিল চামচ চিনি আপনার রক্তের শ্বেতকণিকা দ্বারা জীবাণু ধ্বংস করার ‘ক্ষমতা ৪০ শতাংশ কমিয়ে দিতে পারে। এই ইমিউন-দমন প্রভাব আহার এর ৩০ মিনিটের মধ্যে শুরু হয় এবং ৫ ঘন্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। চিনির স্বাস্থ্যসম্মত বিকল্প হতে চিনিবিহীন ফলের রস বা কম চিনিযুক্ত খাবার। এছাড়াও কোমল পানীয় কোলাতে যে এসিডের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে তা ইমিউন সিস্টেমকে দুর্বল করে তোলে।
৪. অ্যালকোহল
অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ চিনি বা কোমল পানীয়ের মতই প্রভাব ফেলে। সাদা রক্ত কণিকা দ্বারা জার্ম ধ্বংস করার কাজটি ব্যাহত হয়। দীর্ঘদিন অ্যালকোহল গ্রহণের ফলে আপনি ক্যান্সারের মত দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হতে পারেন।
ইমিউন সিস্টেম বুস্ট করে এমন কিছু খাবার
১. দই
দই probiotics নামক ভালো ব্যাকটেরিয়ার একটি বড় উৎস। যখন হজম প্রসঙ্গ আসে তখন এই সাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়ার গুরুত্ব অনুধাবন করা যায়। আমাদের শরীরের ইমিউন সিস্টেম ৭০ ভাগ প্রতিক্রিয়া আমাদের জি আই ট্র্যাক্টে পাওয়া যায় এবং যেহেতু আমাদের অন্ত্র সামনের লাইনে অবস্থিত সেহেতু তা বাইরের ব্যাকটেরিয়ার সাথে সর্বপ্রথম সংস্পর্শে আসে। তাই সামগ্রিক সুস্থতার জন্য আমাদের অন্ত্র স্বাস্থ্যকর রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
২. গাজর
আমাদের ত্বক বাইরের পরিবেশ থেকে প্রতিরক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লেয়ার। তাই এই আবরণকে স্বাস্থ্যকর রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আর গাজর থেকে পাওয়া ভিটামিন এ এই ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর পাশাপাশি ভিটামিন এ আভ্যন্তরীণভাবে ইমিউন সিস্টেম উন্নত করে তোলে এবং এই ভিটামিনের অভাবে রোগ সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়, ইনফেক্সনের সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। সুতরাং প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রতিদিন ৭০০-৯০০ মাইক্রোগ্রাম গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয়। এছাড়াও ভিটামিন এ এর অন্যান্য উৎসের মধ্যে আছে: বাঁধাকপি, ব্রকলি, মাছ ও মিষ্টি আলু।
৩. পানি
কোন অসুস্থতার বাইপ্রডাক্ট দূর করার জন্য বা ইনফেকসনের সাথে লড়াই করার জন্য দেহে পানির সমতা বজায় রাখা খুবই জরুরী। ডিহাইড্রেসন আপনার ঘুম এবং এনার্জিকে প্রভাবিত করতে পারে সেই সঙ্গে শরীর থেকে টক্সিন বের হওয়াও ব্যাহত হয়। তাই প্রত্যেকদিন ৮ গ্লাস পানি গ্রহণ আপনার ইমিউন সিস্টেম বুস্ট করবে।
৪. ব্ল্যাক টি
ব্ল্যাক টি এ আছে সামান্য পরিমাণে L-theanine নামক অ্যামিনো অ্যাসিড, যা ইমিউন সিস্টেম সমর্থন করতে সাহায্য করে। একটি ছোট গবেষণায় দেখা গিয়েছে প্রতিদিন যারা পাঁচ কাপ কালো চা গ্রহণ করে তাদের সংক্রমণের সাথে যুদ্ধ করার ক্ষমতা বেশি থাকে।
৫. কাজুবাদাম
আপনার দেহে জিঙ্কের মাত্রা কমে গেলে ইমিউন সিস্টেমও দুর্বল হয়ে যায় আর কাজুবাদাম জিঙ্কের খুব ভালো উৎস। শরীরিক বিকাশ এবং টি-লিম্ফোসাইট একটিভেট করার জন্য জিঙ্ক জরুরী। এর ফলে ইমিউন সিস্টেম ইনফেক্সনের প্রতি সাড়া দেয় এবং আক্রান্ত কোষ প্রতিরক্ষায় সাহায্য করে। কাজুবাদাম ছাড়াও জিঙ্কের ভালো উৎস হল মুরগির মাংস, মটরশুটি।
৬. আয়রন
দেহে আয়রনের অভাব হবে সংক্রমণের এবং অসুস্থথার ঝুঁকি বেড়ে যায়। আবার বেশি হলেও একই সমস্যা দেখা দেয়। সুতরাং দিনে আপনার জন্য আয়রন কতটা প্রয়োজন? প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের জন্য ৮মিলিগ্রাম এবং মহিলাদের জন্য ১৮ মিলিগ্রাম। তবে ৫০ বছর বয়সের বেশি মহিলাদের জন্য ৮মিলিগ্রাম কমিয়ে দেওয়া উচিত।
সবাই সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।
ছবিঃ সংগৃহীত – ডেইলিঅল্টারনেটিভ.কো.ইউকে, হিভিসাসা.কম