রমজান মাসে সেহেরি ও ইফতার ঘিরে থাকে আমাদের নানা আয়োজন। মুখরোচক খাবারের পাশাপাশি রোজায় স্বাস্থ্যসম্মত সেহেরি ও ইফতারের কথাও কিন্তু মাথায় রাখতে হয়। নইলে দেখা দিতে পারে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা। সুস্থভাবে রমজান মাস কাটানোর বিষয়টি প্রায় পুরোপুরি নির্ভর করে ইফতার ও সেহেরিতে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়া হচ্ছে কিনা তার ওপর।
অনেকেই জানতে চেয়েছেন রোজায় স্বাস্থ্যসম্মত সেহেরি ও ইফতার হিসেবে কী খাবেন, কীভাবে সুস্থ থাকবেন -তাদের সবার জন্য আজকের এই আলোচনা।
রোজায় স্বাস্থ্যসম্মত সেহেরি কেমন হওয়া চাই ?
১) যারা ওজন নিয়ে একটু ঝামেলা পোহাচ্ছেন তারা সেহেরি খাওয়া শুরু করার আগে এক গ্লাস লেবুর শরবতের সাথে ১ চামচ ইসবগুলের ভুসি মিশিয়ে নিতে পারেন। এতে করে খাওয়া অতিরিক্ত হবে না। তবে যাদের অ্যাসিডিটির সমস্যা আছে তারা লেবু বাদ দিতে পারেন।
২) সেহেরিতে অবশ্যই লাল চালের বা একটু নরম ভাত রাখার চেষ্টা করবেন। তবে ভাতের সাথে রাখতে হবে উচ্চ প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার, যেমন- মাছ, মাংস বা ডিম। সাথে মসুর বা মুগের ডালও রাখতে পারেন।
৩) কম মসলা দিয়ে রান্না করা খিচুড়ি খেতে পারেন। এতে সব ধরনের সবজি, মুরগির মাংস যুক্ত করতে পারেন। এতে করে আপনি আপনার চাহিদা মত সকল পুষ্টি উপাদান একসাথে পাবেন। সেহেরির খাদ্য তালিকায় সবজি হিসেবে ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, পেঁপে, আলু, টমেটো, পটল, ঢেঁড়স ইত্যাদি রাখতে পারেন।
৪) হজমে সমস্যা হয় এমন কোনও খাবার সেহেরিতে খাওয়া উচিত নয়। যাদের গ্যাসের সমস্যা বা ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স নেই তারা চিনি ছাড়া ১ গ্লাস হালকা গরম দুধ পান করতে পারেন। তবে খুব ঘন দুধ পান না করাই ভালো।
৫) খাবার শেষ করার কিছুক্ষণ পরে প্রয়োজন মতো পানি পান করে নিন। একবারে অতিরিক্ত পানি খাবেন না।
৬) যারা ক্যালরি মেপে খাবার খেতে চান, তারা ওটস খিচুড়ি বা পাতলা লাল আটার রুটির সাথে সবজি খেতে পারেন। প্রোটিন সোর্স হিসেবে মাছ বা মাংস খাবেন, সাথে সালাদ।
৭) সেহেরি শেষ করার ৫-১০ মিনিট পরে কিছুক্ষণ হাঁটুন। এতে করে খাবার সহজে হজম হবে।
রোজায় স্বাস্থ্যসম্মত ইফতারের মেন্যু কেমন হবে ?
১) শুরুতেই শরবতঃ দিনভর রোজা পালন শেষে ইফতার শুরু করুন শরবত দিয়ে। শরবতে যেন আর্টিফিশিয়াল রং, অতিরিক্ত চিনি না থাকে তা খেয়াল রাখতে হবে। চিনির বদলে গুড়ের শরবত খেতে পারেন।
২) ইফতারে ফলের রসঃ শরবতের পরিবর্তে ফলের রস খেতে পারেন। ইফতারে ফলের রস বেশ উপকারী। ফলে থাকে প্রচুর ভিটামিন ও খনিজ, যা আপনার স্বাস্থ্য ভালো রাখবে।
৩) খাবার হোক সহজপাচ্যঃ সারাদিন রোজা রাখার পর সন্ধ্যায় পাতলা স্যুপ, অল্প পরিমাণ ছোলা ও মুড়ি খেতে পারেন। দই-চিড়াও খেতে পারেন। এটি শরীরে শক্তি জোগাবে এবং হজমে সাহায্য করবে।
৪) ভাজাপোড়া এড়িয়ে চলুনঃ বেগুনি,পেঁয়াজু ইত্যাদি তেলে ভাজা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। খেলেও খুব অল্প পরিমাণে খান। ইফতারের পর থেকে শুরু করে যতক্ষণ জেগে থাকবেন পানি,তরল জাতীয় খাবার,শরবত খাওয়ার চেষ্টা করুন।
রোজায় বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে যে বিষয়গুলো
১) শর্করা ও প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার, আঁশ জাতীয় সবজি, ফল খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে।
২) নির্ধারিত ক্যালরির বাইরে খাবার না খাওয়ার চেষ্টা করুন।
৩) ইফতার করে সাথে সাথেই চা, কফি বা কোমল পানীয় পান করবেন না। এ ধরনের পানীয় পানিশূন্যতা বাড়ায়।
৪) রোজার সময় হালকা ব্যায়াম করতে পারেন। প্রতিদিন সন্ধ্যার দিকে নিয়মিত ১০-১৫ মিনিট হাঁটাহাঁটি করতে পারেন।
৫) সেহেরির পরও ১৫-২০ মিনিট হাঁটতে পারেন।
আজ এ পর্যন্তই। আশাকরি সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
ছবি- সাটারস্টক