ঋতু পরিবর্তনের পরিক্রমায় প্রকৄতির মতো ত্বকেও আসে নানা পরিবর্তন। আর সেই পরিবর্তনের রেশ ধরেই কারও চলে পৌষ মাস আর কারও সর্বনাশ! এখন আপনারাই বলুন তো, কখন আপনাদের পৌষ মাস আর কখন সর্বনাশ? এর উত্তর কিন্তু আপনারা আপনাদের ত্বক স্পর্শ করেই বলতে পারবেন। হেলদি স্কিন পেতে বা স্কিনের কন্ডিশন ইম্প্রুভ করার জন্য বেসিক স্কিন কেয়ার রুটিনে ময়েশ্চারাইজার না রাখলেই নয়। ফ্ললেস ও হেলদি স্কিন পেতে কনসার্ন বুঝে স্কিন কেয়ার রুটিনে যোগ করতে হবে পারফেক্ট ময়েশ্চারাইজার। আজ আমরা এই বিষয়ে বিস্তারিত জানবো।
ময়েশ্চারাইজার কেন এতটা জরুরি?
প্রথমেই চলুন জেনে নেই ময়েশ্চারাইজার কী সেটা নিয়ে। ময়েশ্চারাইজার হলো এক ধরনের কসমেটিক প্রিপারেশন। এটা মূলত ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রেখে ড্রাই এবং ড্যামেজড হওয়া থেকে স্কিনকে রক্ষা করে। এছাড়া আরও অনেক ধরনের স্কিন প্রবলেমের সল্যুশন দেয়। আমাদের ত্বকে কিন্তু ন্যাচারাল ময়েশ্চারাইজেশনের সিস্টেম আছে। আপনারা কি জানেন সেটি কীভাবে হয়? চলুন চট করে জেনে নেই।
ন্যাচারাল ময়েশ্চারাইজেশন সিস্টেমই কি এনাফ?
আমাদের ত্বকের ভেতর সিবাসিয়াস নামক গ্ল্যান্ড থাকে, যা থেকে সিবাম বা তেল জাতীয় এক ধরনের পদার্থ সিক্রেশন হয়। ত্বকের আর্দ্রতা ও লুব্রিকেশন ধরে রাখতে এবং ত্বকের আপার ব্যারিয়ার প্রোটেকটেড রাখতে সিবাম প্রধান ভূমিকা পালন করে। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই গ্ল্যান্ডগুলো তাদের কার্যক্ষমতা হারাতে থাকে। আবার বৈরি আবহাওয়ায় এগুলোর উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। তাই এই ন্যাচারাল ময়েশ্চারাইজেশন সবসময় যথেষ্ট নয়। এছাড়া আবহাওয়া, বয়স, লাইফ স্টাইল এগুলোর উপর অনেকটাই নির্ভর করে।
আরেকটি ব্যাপার হচ্ছে ট্রান্স এপিডার্মাল ওয়াটার লস (Trans epidermal water loss) প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ত্বকের গভীর স্তর থেকে সবসময় পানি বাষ্পীভূত হতে থাকে। আমাদের স্কিনের প্রোটেকটিভ ব্যারিয়ার যখন ড্যামেজড হয়, তখন এই ওয়াটার লসের পরিমাণও বেশি হয়। আবার কখনো ওয়েদারের চেঞ্জ এর সাথেও ওয়াটার লসের প্রক্রিয়াটি ট্রিগারড হয়। সেক্ষেত্রে ত্বক ক্রমাগত আর্দ্রতা হারাতে থাকে। তাহলে বুঝলেন তো, ন্যাচারাল ময়েশ্চারাইজেশন প্রসেস কিন্তু এনাফ না। বেসিক স্কিন কেয়ারে অবশ্যই আপনাকে ময়েশ্চারাইজার ইউজ করতে হবে।
ময়েশ্চারাইজারের ভূমিকা কী?
ময়েশ্চারাইজার ত্বকের আর্দ্রতা ফিরিয়ে দেয় এবং ত্বকের উপরিভাগে একটা আস্তরণ তৈরির মাধ্যমে এই ওয়াটার লসকে কন্ট্রোল করে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। হাতের পাঁচ আঙ্গুল যেমন সমান নয়, তেমনি সবার স্কিন টাইপও কিন্তু এক নয়। কারো স্কিন ড্রাই, কারো অয়েলি, আবার কারো স্কিনের কিছু অংশ ড্রাই, আবার কিছু অংশ অয়েলি। স্কিনের ধরন অনুযায়ী প্রবলেমগুলো কিন্তু একটু ডিফারেন্ট। যেমন, যাদের স্কিন একটু বেশি ড্রাই, ময়েশ্চারাইজেশনের অভাবে তা পরবর্তীতে একজিমাতে রূপ নিতে পারে। আবার যাদের স্কিন অয়েলি সেসব স্কিনের কমন প্রবলেম একনে ব্রেকআউটস। এ ধরনের সমস্যা সমাধানে স্কিনের ময়েশ্চার লেভেল ব্যালেন্স করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সবার স্কিনে কি একই রকম ময়েশ্চারাইজার কাজ করে?
উত্তরটা হলো, না। এজন্যই ডিফারেন্ট স্কিন টাইপের উপর বেইজ করে ডিফারেন্ট ময়েশ্চারাইজার পাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে আপনাকে আগে বুঝতে হবে আপনার স্কিন টাইপ। ড্রাই স্কিন হলে যে ময়েশ্চারাইজার আপনি ইউজ করবেন, সেটি হবে ক্রিম বেইজড থিক ময়েশ্চারাইজার, যা ত্বকের গভীরে আর্দ্রতা পৌঁছে দিতে সাহায্য করবে। আবার অয়েলি স্কিনে ব্যবহার করতে হবে ওয়াটার বেইজড লাইটওয়েট ময়েশ্চারাইজার যা স্কিনের হাইড্রেশন ধরে রাখবে কিন্তু পোরসকে ক্লগ করবে না।
ভুল প্রোডাক্ট সিলেক্ট করলে কী হবে?
এখন অয়েলি স্কিনে যদি আপনি ড্রাই স্কিনের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করেন, তাহলে সেক্ষেত্রে কী হবে? সেক্ষেত্রে থিক ক্রিম স্কিনের পোরস ক্লগ করে একনে ব্রেক আউটকে ট্রিগার করবে। আবার এক্সট্রিম ড্রাই স্কিন হলে লাইট ওয়েট ময়েশ্চারাইজার আপনাকে এনাফ হাইড্রেশন ও ময়েশ্চারাইজেশন দিবে না! সব ধরনের স্কিনের জন্য সব ধরনের ময়েশ্চারাইজার কার্যকর নয়। তাহলে আমরা ময়েশ্চারাইজার কীভাবে সিলেক্ট করবো? দেখে নিন এখনই।
ড্রাই স্কিনের জন্য ময়েশ্চারাইজার
প্রথমে আসি ড্রাই স্কিনের ব্যাপারে। ড্রাই স্কিনের জন্য উপযোগী ময়েশ্চারাইজারগুলো সাধারণত ক্রিম বেইজড হয়। এতে ইমোলিয়েন্ট এবং অক্লুসিভের পরিমাণ বেশি থাকে।
- ইমোলিয়েন্ট ত্বককে রাখে নরম ও কোমল
- বহুল ব্যবহৃত কিছু ইমোলিয়েন্ট হচ্ছে Lanolin, Cocoa butter, shea butter, Mineral oil
- অক্লুসিভ হলো ময়েশ্চারাইজারের খুব গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা ত্বকের উপরিভাগে আবরণ তৈরি করে ভেতরের ময়েশ্চারকে লক করে রাখে
- Petroleum gelly, silicon, dimethicon, waxes, oils (olive and soybean) এগুলো হলো কমন কিছু অক্লুসিভ
- এ উপাদানগুলো স্কিনকে ডিপ লেভেল থেকে হাইড্রেট করে
- স্কিনের ওয়াটার লস কমায়, ফলে স্কিন থাকে সফট
অয়েলি স্কিনের ময়েশ্চারাইজার
আমাদের মাঝে অনেকেই মনে করে থাকি অয়েলি স্কিনের জন্য আলাদাভাবে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের কোনো প্রয়োজন নেই। সেক্ষেত্রে আমরা হয়তো যুক্তি দেখাই, এমনিতেই তো আমাদের স্কিন থেকে যথেষ্ট অয়েল সিক্রেট হয়, সেক্ষেত্রে আবার আলাদাভাবে ময়েশ্চারাইজার দেওয়ার কি দরকার! তৈলাক্ত ত্বকেও কিন্তু ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। কেন? অয়েলি স্কিনে স্কিন যখন অতিরিক্ত সিবাম প্রডিউস করে, তখন সেই এক্সেস অয়েলকে রিমুভ করার জন্য আমরা হয়তো বারবার মুখ ধুই। বারবার এই অয়েল রিমুভ করার ফলে সিবাসিয়াস গ্ল্যান্ড মনে করে স্কিনে হয়তো ময়েশ্চারের ঘাটতি হয়েছে, তাই সেটা ঠিক করার জন্য গ্ল্যান্ডগুলো তখন আরও বেশি সিবাম সিক্রেট করতে থাকে, যার কারণে মুখ আরও তেলতেলে লাগে।
- এ ধরনের স্কিনে ব্যবহার করতে হয় লাইট ওয়েট জেল বেইজড ময়েশ্চারাইজার
- এতে স্কিনের pH ব্যালেন্স ঠিক থাকে
- লাইট ফর্মুলার ময়েশ্চারাইজার ত্বককে হাইড্রেটেড রাখে, ফলে স্কিন থাকে হেলদি
- এ ধরনের ময়েশ্চারাইজার এর প্রধান উপাদান হিউমেক্ট্যান্ট যা পানিকে ত্বকের উপর ধরে রাখতে সাহায্য করে
- প্রধান কিছু হিউমেক্ট্যান্ট এর উদাহরণ Glycerin, hyaluronic acid, propylene glycol, Butylene glycol
কম্বিনেশন স্কিনের ময়েশ্চারাইজার
বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্কিনে কিছু চেঞ্জ আসা শুরু করে। দেখা যায় স্কিনের টি জোন থাকে অয়েলি এবং বাকি পার্ট থাকে ড্রাই। এ ধরনের স্কিনকে বলা হয় কম্বিনেশন স্কিন। এসব স্কিনে কিন্তু এক টাইপ ময়েশ্চারাইজার ইউজ করলে সেটা প্রোপারলি কাজ করবে না। এক্ষেত্রে টি জোনে দিতে হবে জেল টাইপ ময়েশ্চারাইজার এবং বাকি পার্টসে দিতে হবে ক্রিম বেইজড ময়েশ্চারাইজার। ডার্মালজিকা টি জোন সল্যুশন এমনই একটি ময়েশ্চারাইজার, এটাতে আলাদা করে জেল বেইজড ও ক্রিম বেইজড ময়েশ্চারাইজার পেয়ে যাচ্ছেন।
সেনসিটিভ স্কিনের ময়েশ্চারাইজার
অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায়, স্পেসিফিক কিছু ইনগ্রেডিয়েন্টস এর জন্য স্কিনে রিঅ্যাকশন দেখা যায়। এ ধরনের স্কিনকে আমরা বলি সেনসিটিভ স্কিন। তাই প্রোডাক্ট ব্যবহারের আগে প্যাচ টেস্ট করে দেখতে হবে স্কিনের জন্য সেটা মানানসই কিনা। এছাড়াও কিছু বিশেষ উপাদান যেমন ফ্রেগ্রেন্স, অ্যাসেনশিয়াল অয়েল, হার্শ এক্সফোলিয়েট এজেন্ট যেমন AHA/BHA, Sulfate, Alcohols এ ধরনের উপাদান সমৃদ্ধ প্রোডাক্ট সেনসিটিভ স্কিনের জন্য অ্যাভোয়েড করাই ভালো।
মেকআপের আগে স্কিন প্রিপারেশনের জন্য ময়েশ্চারাইজার
ফ্ললেস মেকআপ লুক তৈরিতেও ময়েশ্চারাইজার খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে! মুখের একপাশে ময়েশ্চারাইজার দিয়ে এবং অন্য পাশে ময়েশ্চারাইজার ছাড়া মেকআপ করে খুব সহজেই কিন্তু পার্থক্যটা আপনি বুঝতে পারবেন। ময়েস্ট স্কিনে মেকআপ বেইজ খুব সুন্দরভাবে বসে যায়। তাই মেকআপের আগে স্কিন প্রিপারেশনের জন্য ময়েশ্চারাইজার স্কিপ করা যাবে না।
আরেকটা কথা, স্কিনের হাইড্রেশন ধরে রাখার জন্য ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের পাশাপাশি প্রচুর পানিও কিন্তু পান করতে হবে। এর ফলে স্কিন ভেতর থেকে হাইড্রেটেড থাকার পাশাপাশি স্কিনের ইলাস্টিসিটিও বজায় থাকে। ফ্ললেস ও হেলদি স্কিন পেতে কনসার্ন বুঝে ময়েশ্চারাইজার সিলেক্ট করার গুরুত্ব তো জানা হলো। অথেনটিক স্কিন ও হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্টস কিনতে পারেন শপ.সাজগোজ.কম থেকে। সাজগোজের ফিজিক্যাল শপ- যমুনা ফিউচার পার্ক, মিরপুরের কিংশুক টাওয়ার, ওয়ারীর র্যাংকিন স্ট্রিট, ইস্টার্ন মল্লিকা, বসুন্ধরা সিটি, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে), সীমান্ত সম্ভার, চট্টগ্রামের খুলশি টাউন সেন্টার থেকেও বেছে নিতে পারেন আপনার পছন্দের প্রোডাক্টটি।
লিখেছেন- ফার্মাসিস্ট তাসনুভা জাহান
ছবি- সাজগোজ