নিজের জন্য সঠিক ফাউনডেশন বেছে কেনাটা সব সময়ই একটা বিরাট বড় চ্যালেঞ্জ। তাই এই সমস্যার সমাধানটা দ্রুত জেনে নেওয়া যাক। বাজারে অনেক ধরনের ফাউনডেশন পাওয়া যায় কিন্তু আপনার জন্য সঠিক কোনটা তা জেনে নেওয়া খুবই জরুরী। কিন্তু এক্ষেত্রে মনে রাখা প্রয়োজন সব ফাউনডেশন সবার জন্য নয়। ফাউনডেশন কেনার সময় যে যে বিষয়গুলো নজরে রাখতে হবে তা হল স্কিন টাইপ। কারো ত্বক অয়েলি কারো শুষ্ক আবার কারো কম্বিনেশন অথবা কারো নর্মাল টাইপের ত্বক হয়ে থাকে। আবার সবার গায়ের রঙ বা স্কিনটোন এক হয় না। আর ঠিক কতটা কভারেজ দরকার সেটাও কিন্তু বোঝা জরুরী। তাই ফাউনডেশন কেনার সময় এই তিনটে দিকের (স্কিন টাইপ, স্কিন টোন আর কভারেজ ) কথা মনে রাখতে হবে।
[picture]
১) এই দিক গুলোর কথা মনে রেখেই ফাউনডেশন কেনার সময় টেস্ট করে নিতে হবে। মনে রাখবেন অনান্য মেকআপ প্রোডাক্ট যেমন নেল পালিশ, লিপস্টিক ইত্যাদির রঙ দেখে কেনা যেতে পারে কিন্তু ফাউনডেশন সব সময় লাগিয়ে দেখে কিনতে হবে। যেকোনো ভালো শপিংমলে গিয়ে ফাউনডেশন কিনতে পারেন। কারণ ওখানে অনেকগুলো ভালো ব্রান্ডের ফাউনডেশন একসাথে পাওয়া যাবে। তার মধ্যে বেস্ট যেটা সেটা নিতে পারেন। কী করে বুঝবেন যে কোন রঙটা আপনাকে স্যুট করছে? এটা বোঝার জন্য আপনি আপনার স্কিনের রঙের থেকে ১ অথবা ২ টোন হালকা শেডের ফাউনডেশন নেবেন।সেই ফাউনডেশনটা নিজের চোয়াল বরাবর লাগাবেন আর সেটাকে ন্যাচারাল লাইটে দেখবেন। একদম লজ্জা পাবেন না এমন করতে কারণ মনে রাখবেন শপিং মলে টেস্টার রাখা থাকে যাতে কেনার আগে দেখে সঠিক জিনিসটা কেনা যায়। যদি আপনি মোটামুটি পছন্দসই শেড পেয়ে যান তাহলে পুরোপুরি শিওর হতে সেই শেডের ফাউনডেশনকে আরও একবার নিজের কপালে লাগিয়ে দেখুন। অনলাইনে ফাউনডেশন না কেনাই ভালো কারণ সেখানে টেস্ট করার কোন সুযোগ থাকে না। তাই সেক্ষেত্রে অযথা অর্থ ব্যয় হবার সম্ভবনা থেকেই যায়।
২) মনে রাখবেন ভালো ফাউনডেশনের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল সেটা খুব সহজেই স্কিনে মিশে যায়। মুখে যদি কোন বলিরেখা থাকে বা যদি কোন দাগ ছোপ অথবা আনইভেন স্কিন টোন থাকে সেগুলোকে সহজে ঢেকে দেয়। সঠিক ফাউনডেশন হল সেটাই যা লাগালে বোঝাই যাবে না যে মেকআপ করা হয়েছে অথচ মুখটাকে একই সাথে উজ্জ্বলও দেখাবে।
৩) স্কিন টাইপ অনুযায়ী ফাউন্ডেশন কী করে বাছবেন?
অয়েলি স্কিনের জন্য
যদি আপনার স্কিন অয়েলি হয় তাহলে আপনি সেইসব ফাউন্ডেশন কিনুন যেগুলোর বোতলের গায়ে “অয়েল ফ্রি” বা “অয়েল কন্ট্রোল” বলে লেখা আছে। যে সমস্ত ফাউন্ডেশন ম্যাট ফিনিশ বা ম্যাট লুক দেয় সেগুলো এই ধরনের স্কিনের জন্য খুব কার্যকরী। একটা ছোট্ট টিপস দিয়ে রাখছি। ফাউন্ডেশন দেবার পরে পাউডার একটু চেপে চেপে লাগাবেন তাহলে সেটা ফাউনডেশনকে তাড়াতাড়ি শুকনো হতে আর স্কিনের সাথে মিশে যেতে সাহায্য করবে। পাউডারকে ঘষে লাগাবেন না তাহলে কিন্ত হিতে বিপরীত হবে। শুষ্ক বা ড্রাই স্কিনের জন্য আর্দ্রতাযুক্ত বা ময়েশচারাইজারযুক্ত ফাউন্ডেশন প্রয়োজন। যেকোনো ক্রিম বেজড ফাউন্ডেশন কিনতে পারেন। সেইসব ফাউন্ডেশন কিনুন যেগুলোর বোতলের গায়ে “হাইড্রেটিং” বা “ময়েশচারাইজার রিচ” বলে লেখা আছে। ম্যাট ফিনিশিং এর ফাউন্ডেশন লাগাবেন না তাহলে আপনাকে নিষ্প্রভ দেখাবে।
কম্বিনেশন স্কিনের জন্য
ক্রিম টু পাউডার বেজড ফাউন্ডেশন কম্বিনেশন ত্বকের জন্য খুব ভালো ভাবে কাজ করে। আপনার যদি এই ধরনের স্কিন হয় তাহলে লিকুইড ফাউন্ডেশন ব্যবহার না করাই ভালো।
বয়স্কদের স্কিনের জন্যঃ যদি আপনার স্কিনে বলিরেখা দেখা যায় তাহলে আপনি মাঝারি কভারেজ যুক্ত ফাউন্ডেশন ব্যবহার করুন। ভুলেও হেভি কভারেজ যুক্ত ফাউন্ডেশন ব্যবহার করবেন না তাহলে সেটাতে বলিরেখা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠবে।
৪) কেমন কভারেজের ফাউন্ডেশন কিনবেন?
লাইট কভারেজ ফাউন্ডেশন
যাদের স্কিন খুব ভালো মানে কোন দাগ ছোপ নেই এবং যারা একটা ন্যাচারাল লুক চান তারা এটা ব্যবহার করতে পারেন। এই ধরনের ফাউন্ডেশন গরমকালে ভালো চলতে পারে আর রোজকার অফিস, কলেজে যেতে এরম কভারেজের ফাউন্ডেশন ব্যবহার করা যায়।
মিডিয়াম কভারেজের ফাউন্ডেশন
যাদের আনইভেন টোনের স্কিন বা যাদের সামান্য ব্লেমিসেস আছে তারা এই ধরনের ফাউন্ডেশন ব্যবহার করতে পারবেন।
হেভি কভারেজে ফাউন্ডেশন
এই ধরনের ফাউন্ডেশন মুলতঃ ফটো স্যুট, পার্টি ইত্যাদিতে চলে। এছাড়া যাদের স্কিনে খুব বেশি দাগ আছে তারা সেগুলো ঢাকতে এই ধরনের ফাউন্ডেশন ব্যবহার করতে পারেন।
গোলাপি বা হলদে শেডের ফাউন্ডেশন কী?
আজকাল বাজারে যে ফাউন্ডেশনগুলো পাওয়া যায় সেগুলো হয় পিঙ্ক বা ইয়েলো শেডের হয়ে থাকে। যদি আপনি খুব ফর্সা হন তবেই পিঙ্ক শেডের ফাউন্ডেশন ব্যবহার করুন। যদি আপনার গায়ের রঙ চাপা হয় তাহলে সেটাতে আপনাকে আরও কালো লাগতে পারে। সাধারণত এশিয়ানদের হলদে শেডের ফাউন্ডেশন সব থেকে বেশি স্যুট করে। মনে রাখবেন আজকাল যে ফাউন্ডেশনগুলো পাওয়া যায় তার প্রায় সবকটাই এসপিএফ যুক্ত হয়। সেগুলো সাধারণত এসপিএফ ১৫ যুক্ত হয় যা আপনাকে সূর্য তাপ থেকে একটা হালকা প্রোটেকশন দেয়। তাই শুধু ফাউন্ডেশন লাগিয়েই রোদে বের হবেন না তাতে স্কিন ট্যান হবার সম্ভাবনা থাকে। তাই সানস্ক্রিন (Sunscreen) প্রথমে লাগিয়ে তার উপরে ফাউন্ডেশন লাগাবেন। এতে সান ট্যান হবে না। যদি সানস্ক্রিন না থাকে তাহলে আপনি বিবি ক্রিমও লাগিয়ে নিতে পারেন।
এখানে আমার পছন্দের কিছু মিডিয়াম থেকে হেভি কভারেজের ফাউন্ডেশনের নাম দিলাম যেগুলো পার্টিতে পরা যাবেঃ
- ল্যাকমে অ্যাবসোলিউট হোয়াইট ইনটেনস স্কিন কভার এসপিএফ ১৫
- ম্যাক ম্যাচমাসটার ফাউন্ডেশন
- ল’রিয়াল ম্যাট মরফোস ফাউন্ডেশন
- রেভলন ফটোরেডি লিকুইড ফাউন্ডেশন
- রেভলন কালার স্টে ফাউন্ডেশন
- ম্যাক স্টডিও স্কাল্পট ফাউন্ডেশন
নিজের স্কিন টাইপ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ফাউন্ডেশন
আমার পছন্দের কিছু ফাউন্ডেশন আর তার একটা মোটামুটি দামের তালিকা
অয়েলি স্কিনের ফাউন্ডেশন
- ল’রিয়াল ম্যাট মরফোস ফাউন্ডেশন। দাম ১১৭৫ টাকা
- রেভলন ফটোরেডি মেকআপ। দাম ৮৪৫ টাকা
- রেভলন কালার স্টে ফাউন্ডেশন । দাম ৭৪৫ টাকা
ড্রাই স্কিনের জন্য
- লোটাস হারবাল ন্যাচারাল ব্লেনড কম্ফরট লিকুইড ফাউন্ডেশন। দাম ৩৪৫ টাকা
- রেভলন কালার স্টে মেকআপ উইথ সফট ফ্লেকশ নরমাল/ ড্রাই স্কিন বাফ। দাম ৮৭৫ টাকা
- রেভলন কালার স্টে মেকআপ উইথ সফট ফ্লেকশ নরমাল/ ড্রাই স্কিন । দাম ৮৭৫ টাকা
কম্বিনেশন স্কিনের জন্য
- রেভলন কালার স্টে মেকআপ কম্বিনেশন/অয়েলি স্কিন , আইভরি। দাম ২,৭৭৯ টাকা
- ল্যাকমে অ্যাবসোলিউট হোয়াইট ইনটেনস স্কিন কভার এসপিএফ ১৫ ।দাম ৫৭৫ টাকা
- লোটাস হারবাল পিওর স্টে নারিশিং ফাউন্ডেশন । দাম ৫৯৫ টাকা
বয়স্ক স্কিনের জন্য
- ল’রিয়াল প্যারিস ভিসিবল লিফট স্মুথ মেকআপ অ্যাবসোলিউট ন্যাচরাল বাফ। দাম ১,৮১০ টাকা
- মেইবিলিন নিউ ইয়র্ক ইন্সট্যানট এজ রিওয়াণ্ডীং রেডিএন্ট ফারমিং মেকআপ।দাম ১,৪৮০ টাকা
বি দ্র: এই লেখাটির লেখিকা কলকাতার বিধায় উল্লেখিত পণ্যের মূল্যসমূহ কলকাতার বাজার মূল্য এবং ইন্ডিয়ান রুপিতে দিয়েছেন।
লিখেছেন – নন্দিনী পোদ্দার
ছবি – পলিশড.টিভি