আমরা সবাই গাছ ও ফুল দুটো সমান ভাবে ভালোবাসি। ফুলকে ভালোবাসে না এমন মানুষ আশা করি পাওয়া যাবে না। ফুল শুধু মাত্র সৌন্দর্য দিয়ে মুগ্ধ করে না, তার সাথে আমাদের দেয় অনাবিল প্রশান্তি। আর সেই ভালোবাসার ফুল যদি হয় নিজের হাতে লাগানো তাহলে তো কথাই নেই। শিশুদের প্রকৃতির কাছাকাছি রাখলে শিশুর চারিত্রিক বৈশিষ্টে নির্মলতার প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। তাই মনের কোথায় যেন একটা সুপ্ত বাসনা থেকে যায় ছোট্ট একটা বাগান করার। কিন্তু পর্যাপ্ত জায়গা না থাকার জন্য বাগান করার স্বপ্নটা স্বপ্নই থেকে যায়। সারা বছর ধরে যারা গাছ না লাগিয়েছে তারাও আসন্ন শীতে যখন ভ্যানে ভর্তি গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা, কসমস, গোলাপ সহ ইত্যাদি নানা রকম গাছ দেখে না কিনে পারবে না আর সেই গাছের কীভাবে যত্ন নিতে হবে বা কীভাবে বেশি ফুল পাওয়া যাবে সেই সকল টিপস দিতেই এই লেখা শুরু করছি-
জায়গা নির্বাচনঃ
সর্বপ্রথম একটি রোদ্র উজ্জ্বল জায়গা নিবার্চন করতে হবে। সেটা ছাদ কিংবা আপনার প্রিয় ব্যালকনিও হতে পারে। একটু খেয়াল রাখতে হবে সেটা যেন অতিরিক্ত রোদ্র-স্থান না হয়, এবং সকাল বেলার রোদটা যেন থাকে, কারণ সেটা গাছের জন্য খুব জরুরী।
টব নির্বাচনঃ
ফুল গাছের জন্য বেশি বড় টবের প্রয়োজন হবে না। ফুল গাছের জন্য ১০-২০ সেঃ মিঃ বা মাঝারি আকারের টব নিলেই চলবে। কিন্ত যত বড় জায়গা হবে ততই গাছ প্রসারিত হতে পারবে এবং টবে অব্যশই পানি নিষ্কাসনের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
মাটি তৈরিঃ
সবচেয়ে উত্তম মাটি হল দোঁ-আঁশ মাটি। দোঁ-আঁশ মাটিতেই ফুল বা ফলের গাছ সব চেয়ে ভালো হয়। গাছ লাগানোর আগে মাটিতে কম্পোস্ট সার বা গোবর সার দিতে হবে। বিশেষ করে টবের ২-৩ সেঃ মিঃ উপরের দিকে। মাটি অবশ্যই ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় যদি নার্সারি থেকে মাটি কেনা যায়।
চারা গাছঃ
গাছ লাগানোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল চারা গাছ বাছাই করা। আপনি নার্সারি কিংবা ফুল গাছ বিক্রেতার কাছ থেকে সংগ্রহ করতে পারেন। আপনি যার কাছ থেকেই গাছ সংগ্রহ করুন না কেন অবশ্যই খেয়াল করুন চারা গাছটি সুস্থ সবল কিনা। আর যদি আপনার কাছে গত বছরের বীচি থাকে তাহলে বীচি বুনেও চারা সংগ্রহ করতে পারেন। তাহলে অবশ্যই মৌসুম শুরু হবার ২ মাস আগে তা বুনতে হবে। তবে কিছু কিছু গাছের বীজ না বুনলেও চলে। যেমন চন্দ্রমল্লিকা গাছের শিকড় থেকে কান্ড বের হয়ে চারা তৈরি হয়। আবার বৃষ্টির সময় গাঁদা ফুলের ডাল কেটে মাটিতে পুঁতলেও চারা তৈরি হয়।
পানি বা সেচঃ
গাছে নিয়মিত প্রতিদিন পানি দিতে হবে। যারা দু বেলা পানি দিতে চান, খেয়াল রাখবেন গাছের গোড়ায় যেন পানি না জমে যায়। আর সপ্তাহে এক দিন গাছের পাতায় পানি স্প্রে করতে হবে। গাছের গোড়ায় এমন ভাবে পানি দিতে হবে যেন গোড়ার মাটি না ধুয়ে যায়। তাই সম্ভব হলে ঝাঝরির মাধ্যমে পানি দিন। মাটি যেন সব সময় ভেজা থাকে।
সারঃ
গাছে সার দিতে হবে খুব সাবধানে কারণ একটু এদিক ওদিক হলেই গাছ মারা যেতে পারে। আমাদের মনে রাখতে হবে আমরা সার দিচ্ছি একটি টবের ভিতর আর জায়গাটা খুব ছোট। তাই একটি টবের জন্য এক মুঠো সার যথেষ্ট। গাছের গোড়ায় কখনো সার দেওয়া যাবে না সার দিতে হবে গাছের গোড়া থেকে ৪-৫ সেঃ মিঃ দূরে। আর সার হতে হবে মিশ্র সার বা তার চেয়ে ভালো হয় যদি গোবর সার দেওয়া যায়। কিন্তু গোবর সার শুকিয়ে গুঁড়ো করে মাটির সাথে মিলিয়ে দিতে হবে। কেউ যদি চান তাহলে সবজির ছোলা পঁচিয়ে জৈব সার তৈরি করে নিতে পারেন সেটাও গাছের জন্য খুব ভালো। গাছ পরিপক্ক হলে বা ফুল আসার ২-৩ সপ্তাহ আগে সার দিতে হবে।
ফুলের সময়ঃ
আপনাকে আগে ঠিক করতে হবে যে আপনি ফুল বড় চান নাকি অনেক ফুল চান। যদি আপনি বেশি ফুল চান তাহলে গাছ যখন ২০-২৫ সেঃ মেঃ হবে তখন থেকে গাছের আগা অল্প অল্প করে ছাঁটা শুরু করতে হবে। আর যদি বড় ফুল চান তাহলে গাছে কুঁড়ি আসার পর কিছু কুঁড়ি কেটে ফেলতে হবে।
যদি গাছ হেলে পড়ে তাহলে অবশ্যই গাছের সাথে শক্ত কোনো ডাল বা কাঠি বেঁধে দিবেন।
গাছে যদি কোনো পোকা মাকরের উপদ্রব হয় তাহলে আক্রান্ত পাতা, ফুল বা ডাল কেটে ফেলতে হবে। আর সম্পূর্ণ গাছে সাবান পানি স্প্রে করতে হবে। তাহলে অনেকটা পোকা মাকড় থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। তো আজ থেকেই শুরু করে ফেলুন আপনার বাড়িতে ছোট্ট একটি বাগান।
লিখেছেনঃ জুঁই শতাব্দী
ছবিঃ সেলফডিজাইন.ওয়ার্ডপ্রেস.কম, জুঁই শতাব্দী.ব্লগস্পট.কম