মুখে ১টা ব্রণ বা একনে দেখলেই খুব ব্যস্ত হয়ে যাই আমরা কি করে এর হাত থেকে মুক্তি পাব। আঙ্গুল অথবা নখ দিয়ে খুঁচিয়ে ব্রণের চারপাশ লাল করে ফেলি। কতরকম ঘরোয়া টোটকা পদ্ধতি অবলম্বণ করে ব্রণের উপর এটা সেটা অনেক কিছু মাখি। ইদানিং অনেকে বলে পেস্ট, আদা/রসুনের রস মেখে বসে থাকতে। হ্যা, এমন না যে এসব কখনই কাজ করে না, কিন্তু এগুলো ব্যবহারে হিতে বিপরীত হয়ে যেতে পারে।
আমার এক আপুর গল্প বলি তাহলে। উনার স্কিন ন্যাচারালি বেশ ভালোই। কিন্তু ভালো স্কিন মানে এই না যে কখনই ব্রণ হবে না। সবার মুখেই বিভিন্ন কারণে কখনো-সখনো এক-দুইটা ব্রণ হতেই পারে। আপুর বিয়ের মাত্র ১ সপ্তাহ আগে স্ট্রেসজনিত কারণেই হোক অথবা অন্য যে কারণেই হোক গালে ১টা ব্রণ উঠে। এরপর উনি ইউটিউব ঘেঁটে জানলেন যে ব্রণের উপর আদা বা রসুনের টুকরা ঘষলে ব্রণ মিলিয়ে যায়। ঐ রাতেই ঘুমানোর আগে ব্রণের উপর রসুনের রস লাগিয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন। হালকা জ্বালা করছিলো কিন্তু আপু সেটাকে পাত্তা দেননি। সকালে উঠে আয়নার সামনে গিয়ে উনি কেঁদেই দিয়েছিলেন। কারণ রসুন লাগানো জায়গাটা একেবারে পুড়ে ফোস্কা পড়ে গিয়েছিল!
[picture]
অবস্থা এতই ভয়াবহ ছিল যে উনি ঐদিনই নামকরা ডারমাটোলজিস্ট দেখান। ডাক্তার প্রথমেই ওনাকে বকে নেন বিয়ের ইমিডিয়েট আগে উনি কেন নিজের স্কিনের ধরণ না বুঝেই রসুনের মতো স্ট্রং, ঝাঁঝালো কিছু লাগাতে গেলেন। ডাক্তার বলেন যে আপুর গালে সেকেন্ড ডিগ্রি বার্ন হয়ে গিয়েছে। এর মানে হল ওনার স্কিনের এপিডারমিস এবং ডারমিস লেয়ারটা পুড়ে গিয়েছে। যার ফলে স্কিন পুড়ে ফোস্কা পড়ে গিয়েছে। এভাবে পুড়লে চামড়া কুঁচকে কালো হয়ে থাকে। এমন হলে সাধারণত ঠিক হতে ৩ সপ্তাহ সময় লাগে। বুঝতেই পারছেন আপুর মনে অবস্থা কি হয়ে গিয়েছিল? মাত্র ১ সপ্তাহ পরেই ওনার বিয়ে! ডাক্তার আগে ওনাকে বার্নের ট্রিটমেন্ট দিয়েছিল। এবং পুড়ে যাওয়া স্কিন ঠিক হওয়ার পর পোড়া দাগ দূর করার ট্রিটমেন্ট করেছিল। বেচারিকে কড়া মেকআপ দিয়ে বিয়ের সময় পোড়া দাগ ঢাকতে হয়েছিল।
তাহলে কেন বিভিন্ন ইউটিউব ব্লগাররা এসব টিপস দেয়?
আসলে একেক জনের স্কিনের ধরণ একেক রকম। কারো স্কিন খুব সহনশীল, অনেক এক্সপেরিমেন্ট করলেও কিছু যায় আসে না। কারো স্কিন আবার খুবি সেনসিটিভ। একটু উনিশ-বিশ হলেই ব্রণ উঠে এবং দাগ বসে যায়। এক্সট্রা সেনসিটিভ স্কিনে তাই কোন এক্সপেরিমেন্ট না করাই সেইফ। যদি ব্রণ অথবা একনে উঠেই, কোন অভিজ্ঞ স্কিন স্পেশালিস্ট দেখান।
তাহলে কি স্কিনে রসুন লাগাবেন না?
রসুনে আছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমাটরি উপাদান যার ফলে কারো কারো স্কিনে এটা কাজ করে। কিন্তু হাইপার-সেন্সিটিভ স্কিনের জন্য এটা খুবই ভয়ংকর সাইড-ইফেক্ট এর কারণ হতে পারে। রসুনে আছে আলিসিন (Allicin) যা ত্বকে সরাসরি লাগালে চামড়া পুড়ে ফোস্কা পড়ে যেতে পারে। এছাড়াও একনের দাগের উপর রসুনের রস লাগালে সেখানে হাইপার-পিগমেন্টেশন অর্থাৎ জায়গাটা কালো হয়ে যেতে পারে। এবার আপনিই ডিসিশন নিন এত বড় রিস্ক নেবেন কিনা।
বেসিকালি স্কিনের যত্নে আমরা সবাই সচেতন থাকতে চাই। ভালো স্কিনের জন্য দরকার একটু যত্ন আর একটু ধৈর্য। আপনি যদি স্কিন কেয়ার সামগ্রীর পেছনে খুব বেশি খরচ করতে না চান, তাহলে ঘরোয়া টোটকা পদ্ধতি অবলম্বণ না করে মুখ পরিষ্কার রাখুন আর বাহির থেকে এসে মুখে বরফ ঘষুন। আন্দাজে কিছু করলে খেসারতটা ত্বকের মাধ্যমে দিতে হতে পারে, আর ট্রিটমেন্ট ও ঔষধের খরচ তো আছেই।
ছবি – জেকেএন ডট কম
লিখেছেন – ফারহানা হক অনি