আজকের পোস্টে বাজারের সবচেয়ে সহজ প্রাপ্য একটি ময়েশ্চারাইজার রিভিউ করব বলে ঠিক করলাম। প্রশ্ন আসতে পারে হঠাৎ ফেয়ারনেস ক্রিমের রিভিউ কেন? আসলে এটা খুব একটা প্ল্যান করা ছিল না। কিন্তু যখন দেখলাম যে এই প্রোডাক্টের বিভিন্ন ধরণের সাইজ খুব সহজেই পাওয়া যাচ্ছে তখন ঠিক করলাম করেই না হয় ফেলি একটা এক মাসের ট্রায়াল। আগেও বলেছি, আমি মিনিমাম ২৮ দিন ট্রাই না করে কোন প্রোডাক্ট রিভিউ করি না। তাই পুরো একমাস ধরে গার্নিয়ার হোয়াইট কমপ্লিট ফেয়ারনেস ডে ক্রিম এর ট্র্যাভেল সাইজ ইউজ করার পরেই এই রিভিউ লেখা…
জানি অনেকের কাছেই “ফেয়ারনেস ক্রিম” শব্দ দুটি চুম্বক অংশ হিসেবে কাজ করবে… যদিও “ফর্সা” হবার জন্য আমি এটা কিনি নি। আমি মনে করি ত্বক স্বাস্থ্যবান থাকলেই উজ্জ্বল দেখায়।
দামঃ
আমি ১৮ গ্রাম গার্নিয়ার হোয়াইট কমপ্লিট ডে ক্রিমের ট্র্যাভেল জার কিনেছি ১৩১ টাকায়। পরিমানের তুলনায় প্রোডাক্টটি অত্যন্ত সাশ্রয়ী।
প্রাপ্তিস্থলঃ
আশেপাশের যেকোনো বিশ্বস্ত কস্মেটিক শপ/ সুপার শপ।
গার্নিয়ার – এর দাবিঃ
গার্নিয়ার দাবি করছে, তারা তাদের প্রোডাক্ট ফরমুলেশনে সবসময় একটিভ ন্যাচারাল উপাদান ব্যবহার করে। এই নির্দিষ্ট ডে ক্রিমে সেই সুত্র ধরেই রয়েছে তাদের ট্রেডমার্ক স্পীড হোয়াইট সিরাম (যেটা কিছু একটিভ উপাদানের একটা কমপ্লেক্স), পিওর লেমন এসেন্স(কারন লেবু প্রাকৃতিক ভাবে ত্বকের রোদে পোড়া ভাব কমাতে কাজ করে) এবং spf 19 , PA+++ … (এই রেটিং অল্প কিছু সময় সান প্রোটেকশন দিতে সক্ষম)
প্যাকেজিং-এ খুব স্পষ্টভাবে উপাদান,পরিমান, ব্যবহার বিধি দিয়ে দেয়া আছে। উৎপাদনের তারিখ জারের নিচে দেয়া আছে।
ফেয়ারনেস স্কেল
তো, আসলে এই ডে ক্রিম একমাস ব্যবহারে আমি কী দেখলাম?
আমার অভিজ্ঞতা
আমি সবসময়ই দিনের বেলা মুখ ধয়ে এই ক্রিম একটা পি সাইজ পরিমান ব্যবহার করেছি… ৫ মিনিট পড়ে উপরে সানস্ক্রিন লাগিয়েছি… কারণ যদি কেউ মনে করে থাকেন, পি সাইজ এমাউনট ক্রিমের এসপিএফ ১৯ আপনাকে কোন সাবসটানসিয়াল সান প্রোটেকশন দেবে তবে আপনি ভুল ভাবছেন… কখনই একটি ডে ক্রিম আপনার সানস্ক্রিন হিসেবে কাজ করবে না। চৈত্র বৈশাখের কড়া রোদে তো নয়ই।
সো অবশ্যই ডে ক্রিমের উপরে পরিমান মত সানস্ক্রিন ব্যবহার করবেন, এবং নির্দিষ্ট সময় পর পর রি-অ্যাপ্লাই করবেন… যদি সত্যিই আপনি সুস্থ উজ্জ্বল ত্বক চান।
গারনিয়েরের প্যাকেজিং তো সবাই চেনেন… এই জারটি বেশ শক্ত প্ল্যাস্টিক দিয়ে তৈরি। যা নিয়ে আমার কোন কমপ্লেইন নেই। ক্রিমটি বেশ ঘন এবং সম্পূর্ণ অস্বচ্ছ সাদা রঙের… হালকা প্যাট করলে খুব সহজেই অল্প পরিমান ক্রিম পরিষ্কার স্কিনে মিলিয়ে যায়…
ইউজ করার পর পর ক্রিমটা আমার স্কিনকে একটা ম্যাট লুক দেয়… সানস্ক্রিন ইউজ করার পরেও স্কিন আগের থেকে একটু বেশি ম্যাট লাগে। মুখ ধোয়ার পরের টান টান ভাবটা থাকে না, কিন্তু আমি দেখেছি যদি পরিমান একটু এদিক ওদিক হয়ে বেশি হয়ে যায়, তখন আবার এটা গরম আর রোদের এই সময়ে খুব ভারি লাগে… আমার স্কিন সাধারণত অনেক বেশি তৈলাক্ত এবং একনে-প্রন… তাই খুব অল্প ক্রিমেই স্কিনের ময়েশ্চার লেভেল বজায় থাকে… এবং ১৮ গ্রামের জারের তিন ভাগের একভাগ এখনও বাকি আছে আমার… আমার মনে হয়, নরমাল, কম্বিনেশন অথবা ড্রাই স্কিনের এই গ্রীষ্মে পরিমাণ নিয়ে এত সচেতন হওয়ার দরকার নেই… এবং গার্নিয়ার ডে ক্রিম তাদের বেশ ভালো স্যুট করবে… কিন্তু যেহেতু এটা অয়েল কন্ট্রোল করে না, অয়েলি স্কিনে ২-৩ ঘণ্টা পর তেলতেলে ভাব দেখতে পাওয়া স্বাভাবিক…
আমি মুখের ত্বকে এতটুকুই ব্যবহার করি। গলায়ও একই পরিমাণ ব্যবহার করি।
ডে ক্রিম পুরোপুরি মিলিয়ে যাবার পরপর…
এবার আসি গারনিয়েরের ক্লেইম এবং আমার ত্বকে একমাস ব্যবহারের পর ভিসিবল রেজাল্ট এর ব্যাপারে… একটু শুরু থেকেই বলি…
প্রথমত, আমি রোজ সানস্ক্রিন ব্যবহার করার পক্ষপাতী। আমি চাই না কড়া রোদে আমার ত্বক ট্যান হয়ে যাক এবং স্কিন ড্যামেজ হোক… আমি সবসময়ই সানস্ক্রিন আর ছাতা ব্যবহার করি। আমি ডে/ নাইট ক্রিমের কাছ থেকে কী চাই? আমি চাই এই প্রোডাক্টগুলো আমার ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখুক… কিন্তু ত্বক যেন তেলতেলে না হয় এবং প্রোডাক্টের কোন উপাদান আমার ত্বকে ব্রণের উৎপাত যেন ফিরিয়ে না আনে সেটাও আমার দেখার বিষয়…
আমি যা চাই, তা গার্নিয়ার হোয়াইট কমপ্লিট ডে ক্রিম ব্যবহার করে কী পেয়েছি?
– আমি বলব- হ্যা, মাত্র ১৩১ টাকায় এটা খুবই ভালো একটি ডেইলি ময়েশ্চারাইজার… এত কম বাজেটে একটি ক্রিমের যা যা করার কথা সে সবই করেছে…
সে কি কোন ম্যাজিকাল রেজাল্ট দেখিয়েছে? যেমন আমার বাঙালি ত্বককে ২ শেড সাদা করে দেয়া?
– না, আমি আমার ত্বকের রং ২ শেড সাদা করার কোন প্রয়োজোনও অনুভব করছি না… আমি চাই একটি হেলদি স্কিন যা এমনিতে উজ্জ্বল দেখায়।
প্রোডাক্টটির যে দিকগুলো ভালো লেগেছে-
– খুবই সাশ্রয়ী দাম।
– জারের কোয়ালিটি এবং মানবেশ ভালো, পরিমাণটাও দাম অনুসারে একদম ঠিক।
– খুব অল্পতেই ত্বক ময়েশ্চারাইজড থাকে।
– তৈলাক্ত, স্বাভাবিক, শুষ্ক সব ধরনের ত্বকেই গ্রীষ্ম কালীন ময়েশ্চারাইজার হিসেবে এটা ভালো হবে। ত্বকের ধরণ বুঝে প্রোডাক্ট কতটুকু ইউজ করতে হবে সেটা চেঞ্জ হবে।
– প্রোডাক্টে এসপি এফ এবং PA রেটিং উল্লেখ করে দেয়া হয়েছে। যদিও এটা সানস্ক্রিন হিসেবে একেবারেই যথেষ্ট নয়। কিন্তু সানস্ক্রিন ব্যবহারে এই ধরণের প্রোডাক্ট ক্রেতাদের উৎসাহী করে।
– আমার তৈলাক্ত ত্বকে রিয়াকশন হিসেবে কোন ব্রণ/ হোয়াইটহেডস দেখিনি।
– সানস্ক্রিনের নিচে খুব ভালো কাজ করে। ত্বকের তৈলাক্ত ভাব অতিরিক্ত বাড়িয়ে দেয় না।
– আমার মতে কলেজ-ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্ট যারা খুব কমের ভেতর একটা ভালো প্রোডাক্ট খুঁজছেন (যেটা সাইড ইফেক্ট ছাড়া স্কিনের স্বাস্থ্য বজায় রাখবে) তাদের জন্য ডে ক্রিম হিসেবে এটা বেস্ট হবে।
যে দিকগুলো ভালো লাগেনি-
– এই উপাদান লিস্ট এবং সান প্রোটেকশন রেটিং এ যদি প্রোডাক্টটিকে “ব্রাইটেনিং ডে ক্রিম” হিসেবে বাজারজাত করা হত, তখনও আমি এটা ট্রাই করতাম। “ফেয়ারনেস স্কেল” এর ব্যপারটা ভালো লাগেনি ।
কেউ যদি খুব কমদামে একটা ডেইলি ডে ক্রিমকিনতে চান যেটা সানস্ক্রিন আর মেকাপের নিচে কাজ করবে… তবে আমি বলব,গার্নিয়ার ‘হোয়াইট’ কমপ্লিট মাল্টি অ্যাকশন ‘ফেয়ারনেস’ ডে ক্রিম একবার ট্রাই করতে পারেন। নামের চুম্বক অংশগুলো উপেক্ষা করলে, এই দামে যা যা করা সম্ভব গার্নিয়ার সবই করেছে।
লিখেছেন – নীলা