ত্বকের যত্নে নাইট ক্রিমের ব্যবহার আসলে নতুন কিছু না। রূপচর্চার আদিকাল থেকে রাতের বিশেষ যত্নই কালেভদে নাইট ক্রিমে রূপান্তরিত হয়েছে। আমাদের দাদি-নানীরা রাতের কিছুটা সময় ত্বকের যত্নের জন্য আলাদাই করে রাখতেন। তবে যুগ পাল্টেছে ! আজকাল আমাদের হাতে অতো সময় কই! হাতের কাছে চাই এমন একটি প্রোডাক্ট যা একটি নয় অনেক সমস্যার সমাধান করবে একাই! এতক্ষণে নিশ্চয়ই চিন্তা করছেন নাইট ক্রিম নিয়ে তো আপনার জানার পরিধি কম নয়। আর জেনে কি হবে!! তবে সাশ্রয়ী মূল্যে একটা ভালো নাইট ক্রিমের সম্পর্কে জানতে পারলে ভালো হতো!
সেই ভাবনাকে মাথায় রেখে আজকে গার্নিয়াররের ফেয়ারনেস ক্রিম রেঞ্জের নাইট ক্রিমটি সম্পর্কে আপনাদের বিস্তারিত জানাব। এই প্রোডাক্টটি ব্যবহার করার কয়েকদিন পরেই মনে হয়েছে একটি রিভিউ তো দিতেই হয়। তবে চেয়েছি বেশ অনেকটা সময় ধরে ব্যবহার করার পর রিভিউতে যাব। এই প্রোডাক্টটি ফেয়ারনেস রেঞ্জের হলেও আলাদা করে ২ টি পয়েন্টস এই ক্রিমটি কিনতে আমার আগ্রহ জুগিয়েছে তা হল- নাইট ক্রিমের পাশাপাশি এর ডার্ক স্পট রেডিউজ এবং তারুণ্য বজায় রাখার দাবি।
[picture]
দাম –
আমি গার্নিয়ার হোয়াইট কমপ্লিট মাল্টি অ্যাকশন ফেয়ারনেস নাইট ক্রিমের ১৮ গ্রামের জার কিনেছি ২২৪ টাকায়। পরিমাণের তুলনায় প্রোডাক্টটি অত্যন্ত সাশ্রয়ী। এছাড়াও ৪০ গ্রাম পাওয়া যাচ্ছে ৩৩২ টাকায়।
প্যাকেজিং –
বলতেই হবে দামের তুলনায় বেশ ভালো মানের প্যাকেজিং করার ট্রাই করেছে গার্নিয়ার। কিউব শেপের কার্ডবোর্ড বক্সের ভেতরে করে আসা বেশ শক্ত প্লাস্টিকের স্ক্রু ক্যাপ জারের এই নাইট ক্রিমটি অনায়েসেই যেকোন জায়গায় ক্যারি করা যায়। প্যাকেজিং-এ খুব স্পষ্টভাবে উপাদান , পরিমাণ , ব্যবহার বিধি দিয়ে দেয়া আছে। উৎপাদনের তারিখ জারের নিচে দেয়া আছে।
প্রাপ্তিস্থল –
আশেপাশের যেকোনো বিশ্বস্ত কসমেটিক শপ/ সুপার শপ।
প্রোডাক্টের লাইফ – টাইম –
উৎপাদনের সময় হতে ৩৬ মাস পর্যন্ত এই ক্রিমটির কার্যকারিতা অক্ষুন্ন থাকবে। কেনার আগে ম্যানুফেকচারিং এর ডেট দেখে কিনুন।
প্রোডাক্টটির রঙ এবং টেক্সচার –
খুব সুন্দর সাদা রঙের এই ক্রিমটি বেশ স্মুদ এবং খুব সহজেই ব্লেন্ড করা যায়।
কীভাবে ব্যবহার করব?
প্যাকেটের গায়ে স্পষ্ট করে লেখা আছে পুরোপুরি পরিষ্কার মুখে এই ক্রিমটি অ্যাপ্লাই করেতে হবে। নিয়মটা ফলো করে মুখ ভালোভাবে ধুয়ে পুরো মুখে এবং গলা থেকে মুখ পর্যন্ত ডট ডট করে ক্রিম লাগিয়ে আস্তে আস্তে সার্কুলার মোশনে নিচ থেকে উপরের দিকে ম্যাসাজ করে লাগিয়েছি। প্যাকেটের গায়ে ঠিক যেভাবে ব্যবহার করতে বলা হয়েছে আমি ঠিক সেভাবেই ব্যবহার করেছি। তবে ঘুমোতে যাওয়ার ২০-৩০ মিনিট আগে আমি এটি ইউজ করেছি। ফলে ত্বক ক্রিমটি পুরোপুরি শুষে নেয়ার সময়টুকু পেয়েছে। তা না হলে ক্রিমটি ত্বকের বদলে পিলো কাভারেই লেগে থাকার সম্ভবনা বেশি থাকত।
গার্নিয়ার এর দাবি –
এই নাইট ক্রিমে থাকা লং ড্যান এক্সট্রাক্ট এবং ভিটামিন সি ত্বকের ম্যালানিন তৈরিকে বাঁধাগ্রস্ত করে যার ফলে ত্বকের ডার্ক স্পট ধীরে ধীরে কমতে থাকে।
এতে থাকা ন্যাচারাল পিলিং ফ্রুট এক্সট্রাক্ট ত্বকের গভীর থেকে এক্সফলিয়েট-এর মাধ্যমে ইম্পিউরিটিজ এবং মৃত কোষ দূর করে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে তোলে আর ভিটামিন সি ত্বকের ইলাস্টিসিটি ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ত্বকের উজ্জ্বলতা কয়েকগুণ বাড়িয়ে তোলে।
এই তো গেল গার্নিয়ার নাইট ক্রিমের দাবি, এবার আসা যাক আমার নিজের অভিজ্ঞতায়।
পুরো শীতের সময়টায় আমি নাইট নারিশমেন্ট হিসেবে আমন্ড অয়েল এবং রোজমেরি এসেনশিয়াল অয়েল ইউজ করেছি। কিন্তু গরম পড়ার সাথে সাথে নাইট কেয়ারেও একটু পরিবর্তন আনাটা জরুরী ছিল। এমন একটি নাইট ক্রিম খুঁজছিলাম যা আমার ত্বকের ড্রাইনেস এবং ডার্ক স্পট-গুলো কমাতে সাহায্য করবে। তাই আমন্ড এবং রোজমেরি অয়েল ইউজ করা বাদ দিয়ে গার্নিয়ারের এই নাইট ক্রিমটি; যা কিনা ডার্ক স্পট হালকা করার দাবি রাখে; ইউজ করার সিদ্ধান্ত নিই।
সত্যি বলতে আমার মুখের থাকা ব্রণের দাগগুলো এখন বেশ হালকা। প্রায় দেড় মাসের ব্যবহারে জেদি ব্রণের দাগগুলো মিলিয়ে যেতে শুরু করেছে এবং আমি শিওর খুব শীঘ্রই এই দাগগুলো একেবারেই মিলিয়ে যাবে এবং আমার ত্বক হয়ে উঠবে ফ্ললেস!
কার্যকারিতার দিক থেকে আমি বলব এই প্রোডাক্টটি আপনাকে রাতারাতি কোন পরিবর্তন এনে দিবে না। সময় নিয়ে ব্যবহার করতে হবে। আর রাতারাতি কোন ফলাফল যে ত্বকের জন্য মঙ্গল বয়ে আনে না তা তো সাজগোজের নিয়মিত পাঠকেরা জানেনই।
ছবিতে দেখুন নাইট ক্রিম ব্যবহারের পূর্বে ত্বকের অবস্থা…
এখন দেখুন পরের অবস্থা…
ক্রিমটি লাগনোর পর কিচ্ছুক্ষণ সময় দিয়ে দেখুন ক্রিম যে অ্যাপ্লাই করেছেন তা বোঝাই যাবে না তবে একটা সফট ফিলিং পাবেন।
নিয়মিত রাতে পরিষ্কার ত্বকে অ্যাপ্লাইয়ের পর সকালে ঘুম থেকে উঠে ত্বকে হাত দিলে মনটা ভালো হয়ে যায়। ড্রাই ত্বকের অধিকারীরা জানেন সকালে ঘুম থেকে উঠে মুখ ধোয়ার পর ড্রাইনেস কীভাবে কষ্ট দেয়। সাথে সাথে ময়েশ্চারাইজার অ্যাপ্লাই না করলে বারোটা বাজার উপক্রম!
এই ক্রিমটি ব্যবহারের প্রথম দিন থেকেই ত্বকের রুক্ষতা কমতে শুরু করে এবং মেকাপের পরে ব্রেক আউটের কারণে বার বার প্যাচ-আপ করবারও প্রয়োজন পড়ে না। কাজেই অতিরিক্ত ড্রাইনেসের সমস্যায় যারা ভুগছেন তাদের জন্য বেশ উপকারী হবে এই নাইট কেয়ারটি।
প্রোডাক্টটির যে দিকগুলো ভালো লেগেছে-
– ক্রিমটির কন্সিস্টেন্সি বেশ লাইট।
– খুব অল্পতেই ত্বক ময়েশ্চারাইজড থাকে।
– ক্রিমটা ব্যবহারের পর লেমনের খুব হালকা একটা সুগন্ধ নাকে এসে পৌঁছে। আমার কাছে এই হালকা গন্ধটা বেশ ভালো লেগেছে।
– ত্বকের ডার্ক স্পটগুলো আসলেই অনেকটা হালকা করে দেয়।
– সারা রাত ক্রিমটি মুখে লাগিয়ে রাখার পর সকালে ত্বকের উজ্জ্বলভাব মনকে চাঙ্গা করে দেয়।
– এই গরমে ডেইলি ইউজের জন্য ভালো। স্কিনে সহজে মিলিয়ে যায়, স্কিনের উপরে অয়েলি হেভি লেয়ার হয়ে একেবারেই পড়ে থাকে না।
– নাইট ক্রিম হিসেবে দামের দিক থেকে অনেকখানি সাশ্রয়ী।
– পরিমাণে খুব অল্প লাগে।
– দেখতে ছোট হলেও দিব্যি ১ মাস ব্যবহার করে যেতে পারবেন।
– এটা ব্যবহারের পর ত্বকে কোন প্রকার ব্রেক-আউট লক্ষ্য করিনি।
যে দিকগুলো ভালো লাগেনি-
– অনেকেই আছেন যাদের কাছে এই লেমন-এর গন্ধটা একটু কটু লাগতে পারে।
– এই নাইট ক্রিমটি সব ধরণের ত্বকের অধিকারীরা ইউজ করতে পারবেন। মিশ্র থেকে ড্রাই স্কিনের অধিকারীদের বেশ মানিয়ে যাবে। এই ধরণের ত্বকের অধিকারীরা কোন রকম সন্দেহ ছাড়াই ব্যবহার করতে পারবেন। তবে তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারীরা একটু অয়েলি ফিল করতে পারেন।
লিখেছেন – নিলা