হ্যালো, কিছুদিন আগেই গার্নিয়ার হোয়াইট কমপ্লিট রেঞ্জের ডে অ্যান্ড নাইট ক্রিমের রিভিউ করেছিলাম… সেখানে বলেছিলাম, আমার স্কিনে সেই ক্রিম দুটি ডার্ক স্পট কমিয়ে আনতে পেরেছিল এবং সাশ্রয়ী মূল্যে সেটা একটা নরমাল ডেইলি ময়েশ্চারাইজার হিসেবেও বেশ ভালো। তো আজকে গার্নিয়ার হোয়াইট কমপ্লিট রেঞ্জের আরেকটি প্রোডাক্ট, তাদের ‘ফেয়ারনেস’ ফেইসওয়াশটির রিভিউ করার ট্রাই করছি। দেখা যাক, গার্নিয়ার হোয়াইট কমপ্লিট ফেইসওয়াশ, কেমন ছিল…
দাম গার্নিয়ারের সব প্রোডাক্টের দামই কোয়ালিটির তুলনায় হাতের নাগালে থাকে, এই ফেইসওয়াশের বিষয়টাও একই, আমি কিনেছিলাম ৫০ গ্রামের টিউব আর দাম ছিল ১২৫ টাকা।
প্রাপ্তি স্থল যেকোনো বিশ্বস্ত কসমেটিক শপ অথবা সুপারশপ।
মেয়াদ টিউবের ক্রিম্পে ম্যানুফ্যাকচারের ডেট দেয়া আছে। প্রোডাক্টের মেয়াদ এই ডেট থেকে ৩৬ মাস বা ৩ বছর।
ক্রিম্পে ১৯/৭/২০১৬ নাম্বার দিয়ে প্যাকেজিং ডেট বুঝানো হয়েছে।
উপাদান লিস্ট প্যাকেজিং এর নিচে পরিস্কারভাবে সম্পূর্ণ উপাদান লিস্ট এবং প্রোডাক্টের মেয়াদ দেয়া আছে । এতে থাকা পিউর লেমন এসেন্স ত্বকের গভীর থেকে ময়লা বের করে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে তুলতে কাজ করে। এই ফেইসওয়াশটি সব ধরণের ত্বকের অধিকারীরা ডেইলি বেসিসে ইউজ করতে পারবেন।
প্যাকেজিং ফেইসওয়াশটি টিউবে করে আসে। টিউবের কোয়ালিটি এবং ওপেনিং দুইই বেশ ভালো। অনেকদিন ইউজের পড়েও ফ্লিপ ক্যাপ ভেঙ্গে যাওয়া বা আলগা হয়ে যাওয়ার প্রবলেম দেখিনি।
আর অনেকেই বাজেট প্রোডাক্টের authenticity নিয়ে চিন্তিত থাকেন। আমাদের দেশে যে হারে প্রোডাক্ট নকল হয় চিন্তিত হওয়াটাই স্বাভাবিক। মনে রাখবেন, গার্নিয়ার ডে এবং নাইট ক্রিম স্বচ্ছ প্লাস্টিক র্যাপারে সিল করা থাকে। ফেইসওয়াশ এবং সব ক্রিমের গায়েই প্রোডাক্টের বারকোড আছে। সিল বিহীন প্রোডাক্ট কিনবেন না। আর বারকোড, সিরিয়াল নাম্বার স্ক্যান করেও আশ্বস্ত হতে পারেন। এবং আপনি নিজে যখন ব্যবহার শেষে জার/টিউব ফেলে দিবেন তখন সেটা কোনভাবে নষ্ট করে (কেটে/ ফুটো করে) ফেলবেন। এতে ওগুলো যোগার করে নকল প্রোডাক্ট ভরে আবার আপনারই কাছে কেউ বিক্রি করতে পারবে না।
ব্যবহার বিধি প্রোডাক্টের ডিরেকশন হচ্ছে ভেজা মুখে একটু ম্যাসাজ করে এটা লাগানো। এরপর পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলা। কিন্তু আমি আগে হাত পরিস্কার করে হাতে প্রোডাক্ট ঘষে ফেনা তৈরি করে তারপর সেই ফেনা দিয়ে ভেজা মুখ খুব লাইটলি ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলি। আমার মনে হয় এতে মুখে ফেইসওয়াশের রেজিডিউ থাকার সম্ভবনা কমে যায়। যাদের মুখে ফেইসওয়াশ ঘষে ফেনা তৈরি করার হ্যাবিট আছে তারা এই আর্টিকেলটি পড়ে সঠিকভাবে ফেসওয়াশ ব্যবহার শিখে নিতে পারেন।
আমার অভিজ্ঞতা ডে এবং নাইট ক্রিমের মতো ফেইসওয়াশ থেকেও হালকা কসমেটিক লেমন ফ্রেগর্যান্স পাওয়া যায়। যারা কসমেটিকে সুঘ্রাণ পছন্দ করেন তাদের খারাপ লাগবে না। আমার মতো যারা অযথাই ফ্রেগর্যান্স অ্যাড করা পছন্দ করেন না তারা ভয় পাবেন না। কিন্তু যাদের সিনথেটিক ফ্রেগর্যান্ন্সে অ্যালার্জি আছে তারা অবশ্যই সাবধানে থাকবেন।
আমি রোজ তিন বার মুখে ছবিতে দেখানো পরিমান ব্যবহার করেছি। ফেইসওয়াশটি অপেক/ অস্বচ্ছ সাদা রঙের। এবং একটু pearlescent … যারা ponds white beauty face wash ইউজ করেছেন তারা ওই ফেইসওয়াশ টির সাথে গার্নিয়ার হোয়াইট কমপ্লিট ফেইসওয়াশের টেক্সচার এবং lather/ ফেনার মিল পাবেন। কিন্তু গারনিয়েরের কনসিসটেন্সি পন্ডস থেকে লাইট। গার্নিয়ার হোয়াইট কমপ্লিট ফেইসওয়াশে সালফেট বেসড ডিটারজেন্ট থাকার কারণে স্বভাবতই প্রচুর ফেনা হয়।
দেখছেন? চোখে পড়ার মত ফেনা তাই না? ফেইসওয়াশের পর পর স্কুইকি ক্লিন ফিল যারা ভালোবাসেন আমি তাদেরই দলে, সো সেই হিসেবে আমার গার্নিয়ার হোয়াইট কমপ্লিট ফেইসওয়াশ ভালোই লেগেছে । আমার ত্বকে যখন সানস্ক্রিন / মেকাপ অথবা দুটোই ছিল আমি ক্লিনজিং অয়েল ইউজের পরে এই ফেইসওয়াশটি ইউজ করেছি। এবং ত্বকে রয়ে যাওয়া ক্লিনজিং অয়েলের রেজিডিউ, ধুলা, ময়লা একবারেই খুব ভালোভাবে ক্লিন হয়েছে। যার প্রমাণ আমি ক্লিনজিং এর পর কটন প্যাডে টোনার লাগানোর সময় খুব ভালোভাবেই পেয়েছি। কটন প্যাড ব্যবহারের পড়েও সম্পূর্ণ পরিস্কার ছিল!
গার্নিয়ার হোয়াইট কমপ্লিট ফেইসওয়াশ ক্লেইমস- ময়লা দূষণ স্কিনকে ডাল করে তোলে। এর ফর্মুলা স্কিনের ভেতর থেকে এসব ইমপিওরিটিজ দূর করবে। হুম, এই ফেইসওয়াশ তা করে বৈকি। সো নো কমপ্লেইন। তবে মেকাপ এবং সানস্ক্রিন থাকলে শুধু ফেইসওয়াশ দিয়ে তা কখনই পুরোপুরি ক্লিন করতে পারবেন না। প্রমাণ চান? দেখুন-
হাতে আইলাইনারের রেখা টানা আছে। লাইনারটি ওয়াটার প্রুফ নয়।
উপরে ফেইসওয়াশের ফেনা দিলাম, এবং ঘড়ি ধরে এক মিনিট ধরে মোটামুটি মুখে যেভাবে ম্যাসাজ করি (স্কিনের ক্ষতি না করে) সেভাবে ম্যাসাজ করলাম।
পানি দিয়ে ফেইসওয়াশ ধুয়ে ফেললাম। তারপরেও প্রায় ৩০% আইলাইনার রয়েই গেল। ওয়াটার প্রুফ মেকাপ হলে সেটা আরও জেদি হত। ফেইসওয়াশের আগে অবশ্যই অয়েল ক্লিনজার/বাম দিয়ে মেকাপ সানস্ক্রিন ক্লিন করে না নিলে ফেইস ওয়াশ কখনই নিজের কাজ ঠিকভাবে করতে পারবে না, এটা মনে রাখবেন।
আমার স্কিন অয়েলি এবং সেনসিটিভ, এই ফেইসওয়াশ ইউজ করার পর স্কিন এই প্রচণ্ড গরমে বেশ কিছুক্ষন অয়েল ফ্রি থাকে। আর একটু টান টান লাগে। সো ফেস ওয়াশের সাথে সাথেই আমি টোনার এবং ময়েশ্চারাইজার ইউজ করে ফেলি। ইউজ করা শুরু করার পর সবসময়ই আমি একই রেজাল্ট পেয়েছি। সুতরাং আমি বলব, খুবই তৈলাক্ত থেকে নরমাল স্কিনের জন্য এই ফেইসওয়াশটি সবচেয়ে ভালো হবে। কম্বিনেশন এবং ড্রাই স্কিনের অধিকারীরা এই ফেইসওয়াশ ইউজ করলে সাথে মনে করে অবশ্যই হাইড্রেটিং টোনার এবং ময়েশ্চারাইজার ইউজ করবেন। এবং এখনই এটা বলা হয়ত ঠিক হচ্ছে না, কারণ শীতের শুষ্ক আবহাওয়ায় আমি এই ফেইসওয়াশ ইউজ করিনি, কিন্তু শীতকালে ড্রাই স্কিনে এই ফেইসওয়াশটি স্যুট করবে না বলেই আমার ধারণা। তাই কেউ যদি ড্রাই স্কিনের অধিকারী হন এবং এটা ইউজ করে থাকেন শীত কালে, কেমন লেগেছিল জানাবেন…
[picture]
তো, এবার এক নজরে দেখে নেই, এই ফেস ওয়াশের কোন দিকগুলো আমার ভালো লেগেছে-
– সাশ্রয়ী দাম, সুন্দর sturdy প্যাকেজিং। – অন্যান্য ড্রাগষ্টোর counter part এর তুলনায় লাইট texture, অয়েলি স্কিনের জন্য বেশি মানানসই। – অত্যন্ত ট্র্যাভেল ফ্রেন্ডলি – এই গরমে ডেইলি ইউজের জন্য ভালো। স্কিনে একবারেই ক্লিন করে। – স্কিনের ধুলা ময়লা, মেকাপ, সানস্ক্রিন এবং ক্লিনজিং অয়েলের রেজিডিউ পুরোপুরি পরিস্কার করে। – পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলার পড়ে স্কিনে ফেইসওয়াশের বিন্দুমাত্র উচ্ছিষ্ট থাকে না। – যারা ফেইসওয়াশে প্রচুর ফেনা এবং স্কিনে স্কুইকি ক্লিন ফিল পছন্দ করেন তারা এটা বেশ এঞ্জয় করবেন। – আমার মতে একটু কমবয়সীদের জন্য এই প্রোডাক্টটি সব চেয়ে ভালো হবে। যারা বাজেটের মধ্যে ডেইলি ইউজের জন্য একটা ফেইসওয়াশ খুঁজছেন। আর বেশি খরচ বা এক্সপেরিমেন্ট করতে চাইছেন না।
যে দিকগুলো ভালো লাগেনি –
আমি এক্সপেক্ট করিনা এখনও ড্রাগ ষ্টোর কসমেটিক / ফেইসওয়াশের পি এইচের ইনফরমেশন আমি প্যাকেজিং-এ পাবো। আর যেহেতু আমার নিজের কাছেও পি এইচ টেস্ট করার উপকরণ নেই তাই রিভিউতে ফেইসওয়াশের পি এইচ কি সেটা জানিয়ে দিতে পারলাম না। ইন্টারনেটে অনেক খুজলাম, কিন্তু পেলাম না। আশা করি ভবিষ্যতে যেকোনো রিভিউ (সেটা যত সাশ্রয়ী বা দামি ব্র্যান্ডই হোক না কেন) তে প্রোডাক্টের পি এইচ কতো সেটা জানিয়ে দিতে পারব (অচিরেই একটা কিট কেনার ইচ্ছা আছে) স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টের পি এইচ জানাটা যে কতো ইম্পরট্যান্ট সেটা নিয়েও লেখার ইচ্ছা আছে ভবিষ্যতে।
সবশেষে, আমি শিওর নিজের স্কিন বোঝেন, স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট বোঝেন এমন সব ইউজারই এই ডেইলি ময়েশ্চারাইজার অথবা ফেইসওয়াশকে এটা যা তাই হিসেবেই দেখবেন, আর গার্নিয়ার হোয়াইট কমপ্লিট ফেইসওয়াশ হল একটা ভালো মানের বাজেট ড্রাগস্টোর ফোমিং/ সেকেন্ড স্টেপ ক্লিনজার । সব মিলিয়ে, যারা বাজেট রেঞ্জে ভালো প্রোডাক্ট খুঁজছেন তাদের জন্য গার্নিয়ারের হোয়াইট কমপ্লিট ফেইসওয়াশ একটা ভালো অপশন।
লিখেছেন – তাবাসসুম মুস্তারি