গর্ভকালীন সময়ে মায়েরা অনেক রকমের অনিশ্চয়তায় ভোগেন। অহেতুক দুশ্চিন্তা থেকে দূরে রেখে হবু মাকে তাই রাখতে হবে শান্তিপূর্ণ ও আনন্দময় এক পরিবেশে, যেখানে তার চিন্তাভাবনা ও আচার-আচরণ নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং মানসিকভাবে তৃপ্ত থাকবেন। যা বাচ্চার ওপর একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। একঘেয়ে রুটিনে চলা জীবনকে তাই হুটহাট একটু চমক দিতে হবু মায়ের জন্য নতুন কিছু পরিকল্পনা তৈরি করুন। সময়ে সময়ে তাকে কিছু সারপ্রাইজ দিন। এতে করে তিনি নিজেকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ একজন হিসেবে ভাবতে পারবেন এবং হীনমন্যতায় ভুগবেন না।
গর্ভবতী মাকে সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য ছোট ছোট কিছু উদ্যোগ তাহলে নেয়া যেতেই পারে। যেমনঃ
০১। হবু মায়ের জন্য ম্যাটারনিটি ফোটোশ্যুটের আয়োজন করতে পারেন। সময়-সুযোগমত ভালো কোন একজন ফোটোগ্রাফারের সাথে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করে নির্দিষ্ট দিনে মাকে নিয়ে যেতে পারেন ছবি তোলার জন্য। ছবি তোলার স্থানও নির্ধারণ করতে পারেন তারই পছন্দের কোন জায়গায়। সাথে মায়ের মেকআপ এবং কস্টিউমও রেডি রাখতে পারেন। এতে করে তার মধ্যে দারুণ একটি অনুভূতি তৈরি হবে।
ছবিগুলো হাতে পাওয়ার পর সেগুলো দিয়ে মাকে একটি স্ক্র্যাপবুক বা অ্যালবামও তৈরি করে দিতে পারেন। চমকটা তাতে করে একটু বেশিই হবে।
০২। গর্ভকালীন সময়ে মায়ের শরীর প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকে। এসময় আরামদায়ক ও সঠিক মাপের জামাকাপড় এবং অন্তর্বাসের প্রয়োজন হয়। ভালো মানের ও ব্র্যান্ডের আরামদায়ক পোশাক-আশাক এসময়ে মায়ের জন্য হতে পারে তাই চমৎকার একটি উপহার! তাছাড়া মায়ের পছন্দের পোশাকের ব্র্যান্ডের গিফট ভাউচারও তাকে গিফট করা যায়।
০৩। গর্ভকালীন সময়ে প্রসাধনসামগ্রী ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনেকেই নানা বাধা নিষেধ মেনে চলেন। কিন্তু প্রসাধন মাঝেমধ্যে একটু লাগেই। সেক্ষেত্রে মায়ের জন্য অরগ্যানিক প্রসাধনী হতে পারে খুব যুতসই একটি উপহার। যেমনঃ ভেষজ সাবান, পারফিউম, লোশান, বডি ওয়াশ, বডি স্ক্রাব, ফেইস প্যাক ইত্যাদি। খেয়াল রাখবেন যেন গন্ধটা খুব ভালো হয়। আর প্যাকেজিংটাও। সুন্দর একটি প্যাকেজিংও কিন্তু যে কারো মন ভালো করে দিতে পারে চট করে!
০৪। হবু মায়ের মানসিক ও শারীরিক রিলাক্সেশানের জন্য তাকে মানসম্মত কোন পার্লারে স্পা প্যাকেজও অফার করতে পারেন। তাছাড়া ম্যানিকিওর-পেডিকিওর, ফেশিয়াল, হেয়ার ট্রিটমেন্ট ইত্যাদিতো আছেই।
০৫। গর্ভকালে মায়ের মানসিক শান্তি বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যোগব্যায়াম ও মেডিটেশান এক্ষেত্রে খুব কাজে দেয়। হবু মাকে তাই উপহার দিতে পারেন যোগব্যায়াম কিংবা মেডিটেশানের কোন সিডি অথবা বই।
তাছাড়া তার পছন্দের বই বা সিনেমার ডিভিডিও উপহার দিতে পারেন। তাকে নিয়ে যেতে পারেন কোন চমৎকার সিনেমায়। মন ভালো করে দেয়া কোন শুভেচ্ছা কার্ডও তাকে উপহার দিতে পারেন।
০৬। এসময়ে মায়েরা অনাগত শিশুর জন্য আগেভাগেই অনেক কিছু কেনাকাটা করতে পছন্দ করেন। শিশুর কাজে লাগবে ভবিষ্যতে, এমন কিছু তাই তাকে কিনে উপহার দিতে পারেন। হতে পারে সেটা কাপড়-চোপড়, হতে পারে স্ক্র্যাপবুক, হতে পারে বেবি টয়লেট্রিজের সেট কিংবা উলের জুতো-মুজো-টুপি।
০৭। মায়েরা এ সময়ে অনেককিছু খাওয়ার ইচ্ছে পোষণ করেন। তাকে তারই পছন্দের কোন রেস্টুরেন্টে নিয়ে গিয়ে কিংবা বাড়িতে নিজেরাই আয়োজন করে খাওয়াতে পারেন। আবার অনেক মা-ই আঁচার খেতে খুব ভালোবাসেন এসময়ে। সেজন্য একটি ট্রে বা ঝুড়িতে নানারকম আঁচার বয়ামে সুন্দর করে সাজিয়ে তাকে দিয়ে আসতে পারেন। খুব খুশি হবেন।
০৮। গর্ভবতী মাকে সবসময় রাখতে হবে অনেক খুশি আর চিন্তামুক্ত। তাই তার সাথে বসে কিছুক্ষণ কথা বলা, নানান পরামর্শ দেয়া, তাকে হাসানো কিংবা তাকে কাজকর্মে একটু সহযোগিতা করাটাই মূলত সবচেয়ে বড় উপহার হবে তার কাছে। কারণ, এতে করে নিজেকে তিনি খানিকটা স্পেশাল ভাবতে পারবেন। এই স্পেশাল অনুভব করার ব্যাপারটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেটি বাচ্চার উপর খুবই ভালো প্রভাব ফেলে।
কাজেই সারপ্রাইজ দিন, হবু মাকে আনন্দে রাখুন। অনাগত ভবিষ্যত সুখের হোক।
লিখেছেনঃ নুজহাত ফারহানা
ছবিঃ রিয়্যাল সিম্পল ডট কম, প্যারেন্টম্যাপ.কম