এই এলো বলে কোরবানির ইদ। প্রতিটি মুসলিম পরিবারেই তোরজোড় চলছে কোরবানির পশু কেনা নিয়ে।উৎসব মুখর হয়ে উঠছে আমাদের চারপাশ। কোরবানির ইদ হলো ত্যাগ ও মহিমার ইদ। এই ইদে আনন্দের পাশাপাশি চলে প্রচুর খাটা খাটুনি।যে যার সাধ্য অনুযায়ী কোরবানির পশু কিনলেও বেশিরভাগ মানুষেরই পছন্দের তালিকায় থাকে গরু। গরুর ভুঁড়ি খেতে আমরা অনেকেই পছন্দ করি। কিন্তু কোরবানির পর ঝক্কির কাজ হলো গরুর ভুঁড়ি পরিষ্কার করা।
খেতে সুস্বাদু হলেও এটা পরিষ্কার করাটা বেশ ঝামেলা আর সময়ের কাজ। তাই বলে তো আর ভুঁড়ি খাওয়া বাদ পড়ে যাবে না!ভুঁড়ির গায়ে প্রচুর পরিমাণ ব্যাকটেরিয়া দ্বারা পরিপূর্ণ থাকে। কাজেই খাওয়ার আগে খুবই ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হয়। চলুন তবে দেখে নেই সহজ উপায়ে সঠিকভাবে কিভাবে আপনি গরুর ভুঁড়ি পরিষ্কার করতে পারেন!
সহজ উপায়ে গরুর ভুঁড়ি পরিষ্কার করার টিপস
গরুর ভুঁড়ি পরিষ্কার করার সামগ্রী
ভুঁড়ি পরিষ্কার করতে আপনার বেশ কিছু উপকরণ প্রয়োজন পড়বে। আর সেগুলো হলো-
১. চুন
২. হলুদ গুঁড়া
৩. ধারালো ছুরি
৪. বড় বালতি বা গামলা
৫. বড় হাড়ি
পরিষ্কারের পদ্ধতি
১. প্রথমেই ধারালো ছুরি দিয়ে ভুঁড়িটা দুইভাগ করে এর ভেতরের সব ময়লা বের করে নিতে হবে।
২. এরপর গরম পানি দিয়ে ভুঁড়ির ভেতরটা ভালো করে ধুতে হবে।
৩. ভুঁড়িটাকে বড় বড় টুকরো করে কেটে নিতে হবে।
৪. বালতিতে শুকনো চুন পরিমাণমতো পানি দিয়ে টুকরো করা ভুঁড়িগুলোকে ৪০/৪৫মিনিট ভিজিয়ে রাখতে হবে।এমনভাবে ভেজাতে হবে যেন চুনের পানিতে ভুঁড়িগুলো ডুবে থাকে।
৫. ৪০/৪৫মিনিট পরে ভুঁড়ির টুকরোগুলোকে চুন মিশ্রিত পানি থেকে তুলে ছুরি বা চামচ দিয়ে ভালোভাবে চেঁছে নিতে হবে।এতে করে খুব সহজেই ভুঁড়ি থেকে কালো অংশটুকু উঠে ভুঁড়ি সাদা হয়ে যাবে। যদি দেখা যায় যে ময়লাগুলো যায় নি, তাহলে আরও ১০/১৫ মিনিট চুনের পানিতে ডুবিয়ে রাখলেই সহজে ময়লাগুলো তুলে ফেলা যাবে।
৬. এবার একটা বড় পাতিলে পানি ফুটিয়ে এতে এক চা চামচ হলুদ গুঁড়া মিশিয়ে টুকরো করা ভুঁড়িগুলোকে ১০/১৫ মিনিট সেদ্ধ করতে হবে। এতে করে ভুঁড়িতে থাকা দুর্গন্ধ অনেকটাই কেটে যাবে।
৭. সেদ্ধ করা ভুঁড়ির টুকরোগুলো গরম থাকতে থাকতেই আবারও ছুরি বা চামচ দিয়ে চেঁছে নিতে হবে। গরম অবস্থায় চাঁছলে ভুঁড়ির পেছনে লেগে থাকা চর্বি আর পর্দাগুলো অনায়াসেই উঠে যাবে।
৮. পরিষ্কার করা ভুঁড়িগুলোকে ঠান্ডা হওয়ার পর ছোট ছোট টুকরো করে রান্নার উপযোগী বানিয়ে প্যাকেটে ভরে ফ্রিজে সংরক্ষণ করে রেখে দিলে ৩/৪ মাস পর্যন্ত খাওয়া যাবে।
গরুর ভুঁড়ির উপকারিতা ও সতর্কতা
ভুঁড়িতে আছে ৪টি পুষ্টি উপাদান যেমন- জিঙ্ক, সেলেনিয়াম, আয়রন ও ক্যালসিয়াম। এর প্রত্যেকটিই মানব শরীরের জন্য খুবই উপকারী। ১০০ গ্রাম ভুঁড়িতে থাকে ৪ গ্রাম ফ্যাট ও ১৫৭ মি.গ্রাম কোলেস্টেরল। একজন হার্টের রোগী দিনে ২০০ মি.গ্রাম কোলেস্টেরল খেতে পারেন এবং একজন সুস্থ মানুষ দিনে ৩০০ মি.গ্রাম কোলেস্টেরল খেতে পারেন।১০০ গ্রাম ভুঁড়ি খেলে একজন সুস্থ মানুষের দিনে কোলেস্টেরল গ্রহণের নিরাপদ মাত্রার অর্ধেক এবং একজন হার্টের রোগীর দিনে কোলেস্টেরল গ্রহনের নিরাপদ মাত্রার ৭৯% চলে আসে। এছাড়াও ভুঁড়িতে আছে দুই ধরনের ক্ষতিকর ফ্যাট- স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং ট্রান্স ফ্যাট।
সুতরাং মজাদার ভুঁড়ি খাওয়ার সময় অবশ্যই পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে। আর সহজে ও সঠিকভাবে কিভাবে গরুর ভুঁড়ি পরিষ্কার করবেন তা তো বলেই দিলাম! একইভাবে আপনি খাসির ভুঁড়িও পরিষ্কার করতে পারবেন। সবাইকে ইদ মোবারক!
ছবি- সংগৃহীত: স্যাটভিক.কম; বাংলাট্রিবিউন.কম