মেকআপ করতে আমরা কত ধরনের টুলস ব্যবহার করি। ফেইস মেকআপের জন্য মেকআপ ব্রাশ ছাড়াও বিউটি ব্লেন্ডার ব্যবহার করে থাকি। তবে ব্রাশের তুলনায় বিউটি ব্লেন্ডার ফ্ললেস ফিনিশিং দেয়। কিন্তু বাজারে অ্যাভেইলেবল সব বিউটি ব্লেন্ডারই যে ফ্ললেস ও স্মুথ ফিনিশিং দিবে; তা কিন্তু নয়! তাই ফ্ললেস মেকআপ পেতে বেস্ট বিউটি ব্লেন্ডার বেছে নিয়েছেন তো? যদি না বেছে নেন; কিংবা কোন বিউটি ব্লেন্ডারটি বেস্ট হবে এই নিয়ে কনফিউশনে থাকেন তবে আপনার জন্যই আজকের এই ফিচার!
কেন বিউটি ব্লেন্ডার ব্যবহার করবেন?
লেখার শুরুতেই একটি বেনিফিট বলে নিয়েছিলাম। এছাড়াও বিউটি ব্লেন্ডার ব্যবহারে পাবেন আরও অনেক বেনিফিটস। তাই আমার পছন্দের ব্লেন্ডার কিংবা কোন বিউটি ব্লেন্ডারটি বেস্ট হবে এ সম্পর্কে বলার আগে জেনে নিন এর কিছু দারুণ উপকারিতা!
ফেইসে কোন দাগ তৈরি করে না
ব্রাশ দিয়ে মেকআপ ব্লেন্ড করতে গেলে অনেক সময় দেখা যায় যে, স্মুথভাবে প্রোডাক্টটা বসে না। ব্রাশের দাগ নখের আঁচড়ের মতন লেগে যায়। কিংবা, ত্বকে কোন সমস্যা; যেমনঃ ডেড স্কিন সেল, পিম্পল ইত্যাদি থাকলে মেকআপ ভেসে থাকে। বিউটি ব্লেন্ডার ব্যবহার করলে এরকম সমস্যা সহজেই সমাধান হয়ে যায়।
ন্যাচারাল লুক দেয়
অনেকক্ষেত্রে দেখা যায়, ব্রাশ দিয়ে ফাউন্ডেশন অ্যাপ্লাই করলে ভালোভাবে ব্লেন্ড হয় না। ফলে ফেইসে একটি কেকি ভাব তৈরি হয়; মেকআপ ক্র্যাক করে। ব্লেন্ডার ব্যবহার করলে এই সমস্যা হয় না! ফেইসে একটি ন্যাচারাল লুক দেয়।
সংবেদনশীল অঙ্গ নিরাপদ থাকে
আমাদের চোখ বেশ সংবেদনশীল অঙ্গ। ব্রাশের সাহায্যে মেকআপ ব্লেন্ড করতে গেলে, অসাবধানবশত চোখে ব্রাশ লাগতে পারে। অপরদিকে; আপনি যদি বিউটি ব্লেন্ডার ব্যবহার করেন তবে এরকম কিছু হওয়ার আশংকা থাকে না। কারণ; এটি নরম ফোম দিয়ে তৈরি। তাই নিশ্চিন্তে চোখের চারপাশ ব্লেন্ড করতে পারবেন।
সকল ধরনের ত্বকের জন্য নিরাপদ
প্রত্যেক মানুষেরই ত্বকে কোনও না কোনও সমস্যা থাকে। যেমনঃ কারো পোর বড় থাকে, কারো ত্বকে দাগ ছোপ বেশি থাকতে পারে। এছাড়াও; ত্বকে আরও অনেক সমস্যা থেকে থাকে। ব্লেন্ডার ব্যবহারে এই সমস্যাগুলো মেকআপ করার সময় নিরাপদভাবে হাইড করা যায়।
যেকোনো ধরনের মেকআপ প্রোডাক্ট অনায়াসে ব্লেন্ড করে ফেলে
ব্রাশের সাহায্যে যেকোনো মেকআপ প্রোডাক্ট ব্লেন্ড করতে গেলে অধিকাংশ সময়ই ঠিকভাবে ব্লেন্ড হয় না। বিউটি ব্লেন্ডারের ক্ষেত্রে এই ধরনের কোন সমস্যা হয় না। লিকুইড, ক্রিম কিংবা পাউডার বেইজড যেকোনো প্রোডাক্ট সহজেই অল্প সময় কোন ঝামেলা ছাড়াই ব্লেন্ড হয়। যেকোনো ধরনের মেকআপ প্রোডাক্ট অনায়াসে ব্লেন্ড করে ফেলে।
ফ্ললেস মেকআপ পেতে যে বিউটি ব্লেন্ডারটি আমার কাছে বেস্ট মনে হয়েছে
বিউটি ব্লেন্ডার পারচেজ করার ক্ষেত্রে আমার পূর্ব অভিজ্ঞতা বেশ বাজে ছিল। কারণ; একটি ভালো বিউটি ব্লেন্ডারের কী কী বৈশিষ্ট্য থাকে; তা আমার অজানা ছিল। ফলে দেখা যেত যেটাই কিনতাম; ফোমটার কোয়ালিটি দাম অনুযায়ী ভালো হতো না। খুব শক্ত ফোম হতো; মেকআপ ব্লেন্ড করতে একরকম যুদ্ধ করতে হতো। এছাড়াও ২-৩ বার ব্যবহারেই ছিঁড়ে যেত। ফাঙ্গাস পড়ে যেতো। একসময় বিউটি ব্লেন্ডার নিয়ে আমি যথেষ্ট ধারণা পাই। আর তখনি কম বাজেটের মধ্যেই খুঁজে পাই বেস্ট বিউটি ব্লেন্ডারটি। সেটি হল গ্রুমি মেকআপ ব্লেন্ডার স্পঞ্জ।
কেন আমার কাছে বেস্ট লাগে গ্রুমি মেকআপ ব্লেন্ডার স্পঞ্জ?
- রিজনেবল প্রাইজের মধ্যে বেশ ভালোভাবে ও অনায়াসে যেকোনো মেকআপ প্রোডাক্ট ব্লেন্ড করে।
- ফ্ললেস ফিনিশিং দেয়। যেকোনো ধরনের মেকআপ খুব সুন্দরভাবে ত্বকে বসে যায়।
- ফোমের কোয়ালিটি ভালো। এখন পর্যন্ত আমি অনেকবার ব্যবহার করেছি; ছিঁড়ে নাই।
- ফোমটি বেশ সফট। ফলে; মেকআপ ব্লেন্ড করার সময় হাতে প্রেশার পড়ে না।
- আমি পশুপ্রেমী! তাই সবসময় ক্রুয়েলিটি ফ্রি প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে পছন্দ করি। আর; এই ব্লেন্ডারটি ১০০% ভেগান ও ক্রুয়েলিটি ফ্রি প্রোডাক্ট।
- এটি নন লেটেক্স ফোম দিয়ে তৈরি। যা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল; ফলে ত্বকে এলার্জি বা ব্যাকটেরিয়া থাকলে তা কমিয়ে আনে।
- ভেজা কিংবা শুকনো অবস্থায় ব্যবহার করতে পারবেন।
- লিকুইড, ক্রিম কিংবা পাউডার বেইজড মেকআপে ব্যবহার করতে পারবেন।
গ্রুমির দুই ধরনের বিউটি ব্লেন্ডার আছে; একটি হল ওভাল শেইপড বা টিয়ারড্রপ শেইপড (হলুদ রঙের); আরেকটি হল ফ্ল্যাট অ্যাজযুক্ত টিয়ারড্রপ শেইপড(গোলাপি রঙের)। দুইটি মেকআপ ব্লেন্ডার স্পঞ্জই আমি ব্যবহার করেছি। তবে; দুইটি স্পঞ্জেরই কিছু ইউনিক বৈশিষ্ট্য আছে। যেমন-
ওভাল শেইপড বা টিয়ারড্রপ শেইপড
এটি হলুদ রঙের একটি টিয়ারড্রপ শেইপড বিউটি ব্লেন্ডার। মেইড ইন USA। এর উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যগুলো হচ্ছে-
রাউন্ড শেইপ
মেকআপ ব্লেন্ডার স্পঞ্জটির নিচের দিকটি রাউন্ড শেইপের। ফলে খুব দ্রুত এবং নিখুঁতভাবে যেকোনো ধরনের মেকআপ প্রোডাক্ট গাল, কপাল ও চিবুকের অংশে ব্লেন্ড করতে পারবেন।
চিকন কোণাযুক্ত
উপরের অংশটি চিকন ও কোণাযুক্ত। এই অংশটি দিয়ে চোখের কোণার দিক, নাক ও নাকের দুইপাশের অংশ এবং ফেইসের ছোট ছোট অংশের মেকআপ ব্লেন্ড করতে পারবেন।
অ্যাজলেস ডিজাইন
এই ব্লেন্ডারের অ্যাজলেস (edgeless) ডিজাইনের জন্য আপনি পারফেক্ট এবং ম্যাক্সিমাম কভারেজ পাবেন।
ফ্ল্যাট অ্যাজযুক্ত টিয়ারড্রপ শেইপড
এটি গোলাপি রঙের একটি ফ্ল্যাট অ্যাজযুক্ত (flat edge) টিয়ারড্রপ শেইপড ব্লেন্ডার। এই ধরনের ব্লেন্ডারকে মাল্টি-টাস্ককিং ব্লেন্ডার ও বলা হয়। এটি মেইড ইন P.R.C (People’s Republic of China) । এর উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যগুলো হচ্ছে-
চিকন কোণা
ফেইসের ছোট ছোট এবং সংবেদনশীল অংশ (যেমনঃ নাক ও নাকের দুইপাশ; চোখ ও চোখের কোণা এবং মুখ) যেখানে মেকআপ অ্যাপ্লাই করলে ব্লেন্ড করা কষ্টকর হয়ে যায়; সেখানে অনায়াসে কোন প্রকার ঝামেলা ছাড়াই ব্লেন্ড করে।
গোল অংশ
এই বিউটি ব্লেন্ডারে একটি গোলাকৃতি অংশ আছে যেটা দিয়ে গাল, কপাল ও চিবুকের অংশের যেকোনো লিকুইড, ক্রিম বা পাউডার ধরনের মেকআপ অনায়াসে ও সুন্দরভাবে ব্লেন্ড করতে পারবেন।
ফ্ল্যাট অ্যাজ
এই ব্লেন্ডারে আছে সমতল প্রান্ত (flat edge) যা চোখের ও নাকের দিকে কনট্যুরিং করতে সাহায্য করে। এছাড়াও ফেইসে পাউডার দিয়ে বেকিং ও সহজে করা যায়।
তাহলে আপনার জন্য কোনটি পারফেক্ট?
আমি বলবো আমার কাছে দুইটাই মেকআপ ব্লেন্ডিং এর জন্য পারফেক্ট লেগেছে! তবে; আপনি যদি মেকআপ ব্লেন্ডিংয়ে বিগেনার হয়ে থাকেন; তবে হলুদ রঙের টিয়ারড্রপ শেইপ ব্লেন্ডারটি বেছে নিতে পারেন। কিন্তু আপনি যদি মেকআপ ব্লেন্ডিং ও বেকিং দুইটাতেই এক্সপার্ট হতে চান; তবে গোলাপি রঙের ফ্ল্যাট অ্যাজযুক্ত টিয়ারড্রপ শেইপড গ্রুমি ব্লেন্ডারটি বেছে নিতে পারেন।
বোনাস টিপস
- ব্লেন্ডার অবশ্যই ভেজা অবস্থায় ব্যবহার করবেন। এতে করে অল্প প্রোডাক্ট দিয়েই মেকআপ ব্লেন্ডিং করতে পারবেন।
- একবার ব্যবহার করার পর ভালোভাবে লিকুইড সাবান দিয়ে পানিতে ধুয়ে ফেলবেন। ব্যবহারের পর ঠিকভাবে পরিষ্কার না করলে ত্বকে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হবে।
- ব্লেন্ডার ভালোভাবে ফ্যানের বাতাসে শুকিয়ে নিবেন। নাহলে ফাঙ্গাস পড়ে নষ্ট হয়ে যাবে।
- সূর্যালোকে ব্লেন্ডার না শুকানোই ভালো। এতে করে ফোমের টেক্সচার নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
আশা করি, আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য হেল্পফুল ছিল। ফ্ললেস মেকআপ পেতে বেস্ট বিউটি ব্লেন্ডার বেছে নিতে আর কোন কষ্ট হবে না। অথেনটিক গ্রুমি মেকআপ ব্লেন্ডার স্পঞ্জ কিনতে আপনারা চাইলে সাজগোজের দুটি ফিজিক্যাল শপ যার একটি যমুনা ফিউচার পার্ক ও অপরটি সীমান্ত সম্ভারে অবস্থিত, সেখান থেকে কিনতে পারেন আর অনলাইনে কিনতে চাইলে শপ.সাজগোজ.কম থেকে কিনতে পারেন। আজ এ পর্যন্ত!
ছবি- সাজগোজ