গুলেন ব্যারি সিনড্রোম বা জিবিএস এর লক্ষণ ও চিকিৎসা

গুলেন ব্যারি সিনড্রোম বা জিবিএস এর লক্ষণ ও চিকিৎসা

paye betha

গুলেন ব্যারি সিনড্রোম বা সংক্ষেপে জিবিএস হচ্ছে এমন একটি মারাত্বক রোগ যা মাংশপেশীকে দুর্বল করে ধীরে ধীরে শরীরের শক্তি কমিয়ে দেয়। একপর্যায়ে নড়াচড়ার সামর্থ্যও হারিয়ে যেতে পারে। যেকোনো বয়সেই জিবিএস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু ৩০-৩৫ বছর বয়সী এবং নারীদের তুলনায় পুরুষদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। চলুন, ফিজিওথেরাপি কনসালট্যান্ট অ্যান্ড জেরোন্টলজিস্ট এর কাছ থেকে জেনে নেই এই রোগ নিয়ে বিস্তারিত।

এই রোগের কারণগুলো কী কী?

গুলেন ব্যারি সিনড্রোম নামটি অনেকের কাছে অপরিচিত হলেও রোগটির প্রাদুর্ভাব একেবারে কম নয়। সাধারণত প্রায় ৮০ শতাংশ রোগী সম্পূর্ণ সেরে ওঠে, ৫ থেকে ১০ শতাংশ রোগীর কিছু না কিছু শারীরিক দুর্বলতা স্থায়ীভাবে থেকে যায়। সঠিক কারণ এখন পর্যন্ত জানা যায়নি, তবে বেশ কয়েকটি ফ্যাক্টর এর সাথে জড়িত। যেমন-

  • ভাইরাল ইনফেকশন, যেমন- এইডস, হার্পিস সিমপ্লেক্স, ম্যাগনিওক্লিওসিস ইত্যাদি
  • ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন
  • অনেক সময় সার্জারীর পরও এই রোগ হতে পারে
  • ডায়রিয়া রোগী বা ইনফ্লুয়েঞ্জাতে আক্রান্ত রোগীরা পরবর্তী পর্যায়ে জিবিএসে আক্রান্ত হতে পারে

গুলেন ব্যারি সিনড্রোম বা জিবিএস এর লক্ষণ

১। খুব দ্রুত রোগীর অবস্থা খারাপ হতে থাকে।

২। কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েকদিনের মাঝে রোগীর হাত ও পা অবশ হয়ে যায়।

৩। সাধারণত পা থেকে দুর্বলতা শুরু হয় এবং দুই পা একসাথে আক্রান্ত হয়।

৪। ধীরে ধীরে পুরো পা থেকে কোমর পর্যন্ত অবশ হয়ে যায় এবং হাতও অবশ হতে শুরু করে।

৫। মাংসপেশীতে ব্যথা থাকে।

৬। স্বাভাবিক নড়াচড়ার সামর্থ্য হারিয়ে যায়।

৭। কিছু ক্ষেত্রে রোগীর শ্বাসতন্ত্রের মাংসপেশী প্যারালাইজড হয়ে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, অনেক সময় এসব রোগী মারা যায়।

চিকিৎসা

জিবিএস রোগটিকে খুব সহজে ডায়াগনোসিস করা যায় না। কারণ এই রোগের উপসর্গ অন্য নিওরোলজিক্যাল রোগের সাথে মিলে যায়। চিকিৎসক রোগের হিস্ট্রি নেন এবং ফিজিক্যাল এক্সামিনেশন করেন। তারপর কারও কারও ক্ষেত্রে স্পাইনাল ট্যাপ (লাম্বার পাংচার), ইলেক্ট্রো মায়োগ্রাফি, নার্ভ কনডাকশন স্টাডিজ এর মাধ্যমে রোগকে ডায়াগনোসিস করেন। বিভিন্ন ধরনের রিসার্চ থেকে জানা যায়, রোগীরা ছয় থেকে বারো মাসের মধ্যে সুস্থ হয়ে যান। কারও কারও ক্ষেত্রে এই রোগ থেকে পুরোপুরি সুস্থ হতে তিন বছরের মতো সময় লাগে। তবে এদের সংখ্যা খুবই কম। হাসপাতালে রোগীর অবস্থা ও ধরন দেখে চিকিৎসক দুই ধরনের চিকিৎসা চালু করেন।

  • প্লাজমা এক্সচেঞ্জ
  • ইমিউনোগ্লোবিউলিন থেরাপি

অনেক সময় দুই ধরনের চিকিৎসা-ই চিকিৎসক চালু রাখেন, রোগীর অবস্থা অনুযায়ী তাকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এছাড়াও ব্যথা কমানোর জন্য, রক্ত জমাট না বাঁধার জন্যেও রোগীর মেডিকেশন চালু থাকে।

ফিজিওথেরাপি

এই সময়ে রোগীর ফিজিওথেরাপি চিকিৎসাও শুরু করে দেওয়া হয়। ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে হাতের, পায়ের মুভমেন্ট সচল রাখার জন্য বিভিন্ন এক্সারসাইজ করানো হয়। এতে করে মাংসপেশীর ক্ষয়, শুকিয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করা হয়।

১) রোগী যখন ধীরে ধীরে সুস্থ হতে শুরু করেন, তখন ওয়েট বেয়ারিং এর মতো এক্সারসাইজ করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

২) রোগীর অবস্থার উন্নতির উপর নির্ভর করে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার ধরনের পরিবর্তন আনা হয়। বিভিন্ন ধরনের এক্সারসাইজের মাধ্যমে হাতে-পায়ের মাংসপেশীকে সবল করে পুনরায় আগের অবস্থানে আনা হয়।

৩) অনেক ধরনের এক্সারসাইজের সমন্বয়ে রোগীর জন্য গাইড লাইন বানানো হয়। কিছুদিন পর পর এই গাইড লাইনে নতুন এক্সারসাইজ সংযোজন ও বিয়োজনের মাধ্যমে আপডেট করা হয়। এই সময়ে একজন অভিজ্ঞ ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিতে হয়।

৪) সাধারণত জিবিএস রোগীরা কয়েক মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠেন। কারও কারও ক্ষেত্রে হয়তো বছর লেগে যায়। এই সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য রোগের প্রকোপ, রোগীর শারীরিক ফিটনেস, ভালো হয়ে ওঠার চেষ্টা, মানসিক শক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

গুলেন ব্যারি সিনড্রোম এ আক্রান্ত রোগীদের নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা

এই রোগের প্রথম উপসর্গ দেখা দেওয়ার পরে দুই সপ্তাহের মধ্যেই অবস্থা খারাপের দিকে চলে যায়। অনেকেই বলেছেন, সপ্তাহ দুয়েক আগে হালকা ঠাণ্ডা লেগেছিল, ভালোও হয়ে গিয়েছে। তারপর হঠাৎ একদিন লক্ষ্য করলেন তার হাত-পা অবশ হয়ে আসছে এবং সেটা দ্রুত পুরো দেহে ছড়িয়ে যাচ্ছে। এই ছিল তাদের অভিজ্ঞতা। অনেকের ক্ষেত্রে চার সপ্তাহ অবধি অবস্থা খারাপ হতে থাকে। তারপর থেকে রোগের প্রকোপ কমে আসে এবং তারা ভালো হতে শুরু করেন। কারও কারও ক্ষেত্রে এই রোগ থেকে পুরোপুরি সুস্থ হতে তিন বছরের মতো সময় লাগে।

আজ আমরা গুলেন ব্যারি সিনড্রোম নিয়ে অনেক কিছু জানলাম। রোগীর শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা কমে এলে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা শুরু করে দিতে হবে। একমাত্র সঠিক ফিজিওথেরাপির মাধ্যমেই গুলেন ব্যারি সিনড্রোম এ আক্রান্ত রোগীকে তার স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। সচেতন হোন, সুস্থ থাকুন।

SHOP AT SHAJGOJ

     

    ছবি- সাটারস্টক

    5 I like it
    3 I don't like it
    পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

    escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort