একরাশ সুন্দর ও ঝলমলে চুল কে না চায়? কিন্তু অনেক সময় সঠিক যত্নের অভাবে সুন্দর চুলগুলো দিন দিন নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে। চুলের যত্নের ক্ষেত্রে আমাদের সবচেয়ে সবচেয়ে বড় ভুল হলো পোরোসিটি না বুঝে হেয়ার কেয়ার করা। এতে করে চুল আরো ড্যামেজ হওয়ার চান্স থাকে। আজকের ফিচারটি মূলত লো পোরোসিটি হেয়ার কেয়ার নিয়ে। লো পোরোসিটি চুল কীভাবে বুঝবো, কীভাবে যত্ন নিতে হবে, কী ব্যবহার করা যাবে ও যাবেনা ইত্যাদি বিস্তারিত জানবো আজকের ফিচারে।
লো পোরোসিটি বলতে কী বোঝানো হয়?
পোরোসিটি শব্দের বাংলা অর্থ হচ্ছে ছিদ্র। ত্বকে যেমন অসংখ্য পোর বা ছিদ্র থাকে, চুলের ক্ষেত্রেও কিন্তু তাই রয়েছে। অর্থাৎ প্রতিটি চুলে অসংখ্য ছিদ্র বিদ্যমান, যার মাধ্যমে চুলে আর্দ্রতা প্রবেশ করে এবং চুল আর্দ্রতা ধরে রাখার চেষ্টা করে। একেই হেয়ার পোরোসিটি বলে। পোরোসিটি ৩ রকম, হাই, মিডিয়াম ও লো। এই হেয়ার পোরোসিটির মাত্রা প্রত্যেক মানুষের ক্ষেত্রে আলাদা হয়ে থাকে।
লো পোরোসিটির চুলগুলো কম ছিদ্র সম্পন্ন হয়ে থাকে। লো পোরোসিটি চুলের কিউটিকল লেয়ার খুব শক্ত ভাবে সংযুক্ত থাকে। যার ফলে এ ধরনের চুল আর্দ্রতা সহজে গ্রহণ করতে পারেনা, তবে একবার আর্দ্রতা গ্রহণ করলে এ ধরনের চুল সেটিকে অনেকক্ষণ ধরে রাখতে পারে। লো পোরোসিটি চুলকে ভালোভাবে হাইড্রেটেড রাখতে পারলে তা দীর্ঘক্ষণ বজায় থাকে এবং চুল হেলদি দেখায়। এ ধরনের চুল সহজে শুকাতে চায় না। চুল হেলদি দেখালেও চুলে বাউন্সি ভাব বা ভলিউম কম থাকে,যার ফলে চুল অনেকটা ফ্ল্যাট দেখায়।
চুলের পোরোসিটি বুঝবেন কীভাবে?
চুলের পোরোসিটি বাসায় খুব সহজেই পরীক্ষা করা সম্ভব। সব থেকে প্রচলিত একটি পদ্ধতি হলো ওয়াটার টেস্ট। ঝরে পড়া একটি বা কয়েকটি পরিষ্কার চুল নিয়ে এক গ্লাস পানিতে ফেলতে হবে এবং অপেক্ষা করতে হবে । কয়েক মিনিট পর যদি চুল একদম গ্লাসের নিচে চলে যায় বা তাড়াতাড়ি ডুবে যায়, তবে চুলের ধরন হাই পোরোসিটি। যদি চুলটি ডোবার কোনো লক্ষণ না দেখায় এবং গ্লাসের উপরে ভাসতে থাকে, তবে চুলের ধরন লো পোরোসিটি। যেহেতু লো পোরোসিটির চুলে ছিদ্র কম, তাই খুব সহজে এটি পানিতে ডুবেনা। আর যদি চুল আস্তে আস্তে ডুবে, তাহলে মিডিয়াম পোরোসিটি।
লো পোরোসিটি চুলে হেয়ার কেয়ার রুটিন কেমন হবে?
বাজারে বিভিন্ন ধরনের চুলের জন্য রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন প্রোডাক্ট। চুলের পোরোসিটি অনুযায়ী প্রোডাক্ট বাছাই করতে হবে। এতে চুলের সঠিক যত্ন নেওয়া সহজ হয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক কীভাবে লো পোরোসিটি চুলের যত্ন নিবেন-
হেয়ার অয়েল: তেল চুলে হাইড্রেশন ও ময়েশ্চারাইজেশন দেয়। তাই চুলে অবশ্যই তেল ব্যবহার করতে হবে। লো পোরোসিটির চুলে যেহেতু ছিদ্রের পরিমাণ কম, তাই একটু হেভি ওয়েটের তেল সহজে চুলে পেনেট্রেট করতে পারেনা এবং ময়েশ্চার প্রদান করতে পারেনা। তাই সবসময় লাইটওয়েট ও কম ঘনত্বের তেল ব্যবহার করুন। এ ধরনের চুলে মানানসই তেলগুলো হলো তিলের তেল, বাদাম তেল, কাঠবাদাম তেল, আর্গন অয়েল, বিভিন্ন প্ল্যান্ট ও ফ্লাওয়ার বেজড তেল, অ্যাভোক্যাডো তেল ইত্যাদি।
শ্যাম্পু: শ্যাম্পু বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ময়েশ্চারাইজিং, হেভি কনসিসটেন্সি, স্মুথ টেক্সচার ইত্যাদি শ্যাম্পুগুলো এড়িয়ে চলুন। কারণ এ ধরনের শ্যাম্পু গুলো তুলনামূলক বেশ ভারি হয়ে থাকে,যার ফলে চুলের উপর একটি ভারি লেয়ার ফেলে। যার ফলে চুল আরো বেশি ফ্ল্যাট মনে হয়। তাই লো পোরোসিটি চুলের জন্য সবসময় ভলিউমিনাইজিং, ডিপ ক্লিনিং শ্যাম্পু, ক্ল্যারিফায়িং শ্যাম্পু ও হালকা টেক্সচারের ক্লিয়ার শ্যাম্পু গুলো ব্যবহার করা উচিত।
কন্ডিশনার: চুলের যত্নে কন্ডিশনার স্কিপ করা যাবেনা। এক্ষেত্রে হাইড্রেশন দিবে এমন ধরনের কিছুটা হালকা টেক্সচারের কন্ডিশনার বাছাই করতে হবে। ভারি কন্ডিশনার চুলকে ফ্ল্যাট করে দিতে পারে। তাই হেভিওয়েট কন্ডিশনার স্কিপ করতে হবে।
ডিপ কন্ডিশনিং মাস্ক: কন্ডিশনিং মাস্ক ব্যবহার করার ক্ষেত্রে কিছুটা লাইটওয়েট মাস্ক ব্যবহার করলেই ভালো। সপ্তাহে একদিন বা দশ দিনে একবার ব্যবহার করুন, এর বেশি ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। কেউ চাইলে ডিপ কন্ডিশনিং মাস্ক স্কিপ করতে পারেন, যদি রেগুলার কন্ডিশনারই তার চুলের জন্য যথেষ্ট হয়।
সিরাম, লিভ ইন কন্ডিশনার,স্টাইলিং ক্রিমঃ চুলের যত্নে লাইটওয়েট হেয়ার সিরাম ব্যবহার করা যেতে পারে। শাওয়ারের পর হালকা ভেজা চুলে হেয়ার সিরাম বা নন স্টিকি অয়েল ব্যবহারের ফলে চুলে হাইড্রেশন লক হবে, যা এ ধরনের চুল দীর্ঘক্ষণ হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে থাকে। লিভ ইন কন্ডিশনারও অনেকটা এরকম।
লাইটওয়েট লিভ ইন কন্ডিশনার চুলে হাইড্রেশন ও ময়েশ্চারাইজেশন দিবে। লিভ ইন কন্ডিশনার ব্যবহার করার পর হেয়ার সিরাম অ্যাপ্লাই করা যেতে পারে হাইড্রেশন লকের জন্য। স্টাইলিং ক্রিম যেহেতু বেশ কিছুটা ভারি হয়ে থাকে। তাই পরিমাণে খুবই অল্প ব্যবহার করতে হবে।
হিট স্টিম: চুলের যত্নে তেল অথবা হেয়ার মাস্ক ব্যবহারের পর হিট স্টিম নেওয়া যেতে পারে। এর ফলে সহজে চুলে ময়েশ্চার অ্যাবজর্ব হয়।
গড়ে তুলুন এই অভ্যাসগুলো
দৈনন্দিন জীবনের কিছু অভ্যাস যেকোনো ধরনের চুলকে হেলদি রাখতে সাহায্য করে। আসুন জেনে নেই সে অভ্যাস গুলো সম্পর্কে।
১. চুল যত ভেজা থাকে ততই ড্যামেজ হয়। তাই গোসলের পর দ্রুত চুল শুকানোর চেস্টা করতে হবে।
২. অনেকেই চুল রোদে শুকাতে পছন্দ করেন। কিন্তু চুল রোদে শুকানো থেকে বিরত থাকতে হবে, কারন ইউভি রে চুল শুষ্ক ও ড্যামেজ করে দিতে পারে।
৩. হিট স্টাইলিং করার ক্ষেত্রে অবশ্যই হিট প্রটেক্ট করে এমন হেয়ার সিরাম বা ক্রিম ব্যবহার করতে হবে।
৪. ভেজা চুল আঁচড়ানো থেকে বিরত থাকুন।
৫. মোটা দাঁতের কাঠের চিরুনি ব্যবহার করুন।
৬. চুল মুছতে পাতলা সুতি কাপড়, গামছা বা সুতির টি শার্ট ব্যবহার করুন।
৭. পর্যাপ্ত পানি পান করুন ও পুষ্টিকর খাবার খান।
৮. তৈলাক্ত খাবার পরিহার করুন।
৯. প্রতিদিন অল্প পরিমাণে হলেও বাদাম খান।
১০.শক্ত করে চুল না বেঁধে হালকা বেনি বা পনিটেইল ইত্যাদি স্টাইল বেছে নিন।
১১.খুব জোরে জোরে চুল ব্রাশ করবেন না। এতে চুলের কিউটিকল লেয়ার ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
এটুকুই ছিলো লো পোরোসিটি চুল নিয়ে আজকের আলোচনা। সঠিক অভ্যাসগুলো মেনে চললে এবং লো পোরোসিটি চুলের জন্য মানানসই প্রোডাক্ট ব্যবহার করলে খুব সহজেই হেলদি, সিল্কি ও শাইনি চুল পাওয়া সম্ভব। অনলাইনে অথেনটিক প্রোডাক্ট কিনতে পারেন শপ.সাজগোজ.কম থেকে অথবা সাজগোজের ফিজিক্যাল শপ- যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত সম্ভার, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, ইস্টার্ণ মল্লিকা, ওয়ারীর র্যাংকিন স্ট্রিট, বসুন্ধরা সিটি, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে), মিরপুরের কিংশুক টাওয়ারে এবং চট্টগ্রামের খুলশি টাউন সেন্টার থেকেও বেছে নিতে পারেন আপনার পছন্দের প্রোডাক্টটি।
ছবিঃ সাজগোজ, সাটারস্টক, hairstylecamp.com