আমাদের চুলের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যেগুলোর উপর ভিত্তি করে চুলের হেলথ বোঝা যায়। এবার একটু ভেবে বলুন তো, আপনার একটি চুল ধরে যদি টান দেন তাহলে কী হয়? চুলটি কি ছিঁড়ে যায়? নাকি আগের জায়গায় ফিরে আসে? নাকি কুঁকড়ে যায়? এটি আসলে নির্ভর করে আপনার চুলের ইলাস্টিসিটি কতটুকু তার উপর। হেয়ার ইলাস্টিসিটি কী, এর প্রকারভেদ এবং এটি বুঝে কীভাবে চুলের যত্ন নেওয়া যেতে পারে ইত্যাদি নিয়েই আমাদের আজকের ফিচার।
চুলের ইলাস্টিসিটি আসলে কী?
আমাদের চুলের ধরন বোঝার জন্য বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যেগুলোর মধ্যে ইলাস্টিসিটি একটি। একটি চুল ধরে টান দিলে সেটি নিজের অরিজিনাল শেইপ এবং স্ট্রাকচার ঠিক রেখে কতটুকু লম্বা হতে পারে সেটির পরিমাপকেই ইলাস্টিসিটি বলে। অর্থাৎ আপনার চুল কতটুকু টান সহ্য করতে পারে তার পরিমাপই হচ্ছে আপনার চুলের ইলাস্টিসিটি।
চুলের ইলাস্টিসিটি তিন ধরনের হয়ে থাকে।
১) হাই ইলাস্টিসিটিঃ এই ধরণের চুল ভেঙ্গে যাওয়ার আগ পর্যন্ত বেশ অনেকটা লম্বা হতে পারে। সব ধরনের চুলের মধ্যে এই ধরনের চুল সবচেয়ে মজবুত হয়ে থাকে। তাছাড়াও এই চুল বেশ ঝলমলে হয়।
২) মিডিয়াম ইলাস্টিসিটিঃ এই ধরনের চুল খুব বেশি না হলেও মোটামুটি টান সহ্য করতে পারে। বেশিরভাগ মানুষের চুল এই ধরনের।
৩) লো ইলাস্টিসিটিঃ এই ধরনের চুল খুব সহজেই ভেঙ্গে যায়। এমনকি রাবার ব্যান্ডের সামান্য চাপও এই ধরনের চুল নিতে পারেনা এবং ছিঁড়ে যায়।
কীভাবে চুলের ইলাস্টিসিটি টেস্ট করবেন?
আপনারা বাড়িতে বসে দুই মিনিটেই নিজেদের হেয়ার ইলাস্টিসিটি কতটুকু তা নির্ণয় করতে পারবেন।
১) একটি ভেজা চুলের মাঝ বরাবর ধরে রেখে অপরদিক থেকে টান দিন। এবার চুলটি যদি সহজে ছিঁড়ে না যায় এবং ছেড়ে দিলে আবার আগের মতো হয়ে যায়, তাহলে আপনার হেয়ার ইলাস্টিসিটি হাই।
২) যদি দেখেন চুল টান দিলে ছিঁড়ে না গিয়ে লম্বা হচ্ছে, কিন্তু ছেড়ে দিলে আবার কুঁকড়ে যাচ্ছে, তাহলে বুঝবেন ইলাস্টিসিটি মধ্যম পর্যায়ে আছে।
৩) যদি দেখেন একটু টান দিতেই চুল ছিঁড়ে গেছে, তাহলে বুঝতে হবে ইলাস্টিসিটি লো।
চুলের ইলাস্টিসিটির উপর কোন বিষয়গুলোর প্রভাব রয়েছে ?
অনেকের জেনেটিক্যালি চুলের ইলাস্টিসিটি কম থাকে। বয়সের সাথে সাথে এটি কমে যেতে শুরু করে। তাছাড়াও সূর্যের আলট্রাভায়োলেট রশ্মির কারণে হেয়ার শ্যাফটে ড্যামেজ হয়, যা থেকে ইলাস্টিসিটি কমে যেতে থাকে। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, আমাদের চুলের বেশিরভাগ অংশ কেরাটিন নামক প্রোটিন দ্বারা তৈরি। কোনো কারণে চুলের প্রোটিন লেভেল কমে যায়, তাহলে ইলাস্টিসিটি নষ্ট হতে থাকে এবং চুল ক্রমশই দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে যায়। যদি আপনার প্রতিদিনের ডায়েটে পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন না থাকে, তাহলে এ সমস্যাটি সবচেয়ে বেশি হয়।
এগুলোর বাইরে আমাদের যে প্র্যাকটিসগুলো হেয়ার ইলাস্টিসিটিকে দুর্বল করে দিতে পারে সেগুলো হচ্ছেঃ
১) যেসব কালার ট্রিটমেন্টে ক্ষতিকর কেমিক্যাল রয়েছে সেগুলো অ্যাপ্লাই না করা।
২) চুলে খুব ঘন ঘন হিট স্টাইলিং ও ব্লো ড্রাই করা।
৩) খুব কড়া রোদে বেশিক্ষন থাকা।
৪) ভুল হেয়ারব্রাশ দিয়ে চুল আঁচড়ানো, বিশেষ করে যদি ব্রাশের ব্রিসলগুলো হার্শ হয়ে থাকে, তাহলে তা চুলের ইলাস্টিসিটি কমিয়ে দেয়।
কীভাবে যত্ন নিবেন?
আপনার চুলের ইলাস্টিসিটি যদি লো হয়ে থাকে, তাহলে নিচের টিপস গুলো মেনে চলুন।
- চুলে নিয়মিত ডিপ কন্ডিশনার ব্যবহার করুন।
- কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট করা থেকে বিরত থাকুন।
- যেকোনো ধরনের হিট স্টাইলিং করা এড়িয়ে চলুন।
- কড়া রোদে বের হলে চুলে স্কার্ফ বা ইউভি প্রোটেকশন স্প্রে ব্যবহার করুন।
- চুলে ওয়াশ করতে খুব বেশি গরম পানি ব্যবহার করবেন না। বরং হালকা গরম পানি দিয়ে চুল শ্যাম্পু করে ফাইনাল ওয়াশের সময় ঠাণ্ডা পানি ব্যবহার করুন।
- চুল আঁচড়াতে সব সময় মোটা দাঁতের চিরুনি ব্যবহার করুন।
আপনার চুলের ইলাস্টিসিটি যদি মিডিয়াম হয়ে থাকে তাহলে-
- ঘন ঘন শ্যাম্পু করবেন না। মাইল্ড শ্যাম্পু ব্যবহার করুন।
- যখনই শ্যাম্পু করবেন অবশ্যই কন্ডিশনার ব্যবহার করুন।
- মাথার স্ক্যাল্প এবং চুলে হট অয়েল ম্যাসাজ করুন।
- প্রয়োজন ছাড়া হিট স্টাইলিং টুলস ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
হাই ইলাস্টিসিটি হেয়ার হয়ে থাকলে কিছু বেসিক হেয়ার কেয়ার টিপস ফলো করাই এনাফ। শুধু কিছু জিনিস মেনটেইন করে চলবেন-
- মাঝে মাঝে চুলে প্রোটিন ট্রিটমেন্ট করাতে পারেন।
- ভেজা চুলে ঘুমাবেন না।
- চুল খুব শক্ত করে পনিটেইল করে বাঁধবেন না।
চুলের যত্নে ইনক্লুড করুন ন্যাচারাল ইনগ্রেডিয়েন্ট
আপনারা হাতের কাছে থাকা কিছু প্রাকৃতিক উপকরণের মাধ্যমে ঘরে বসেই চুলের যত্ন নিতে পারবেন এবং হেয়ার ইলাস্টিসিটি ইমপ্রুভ করতে পারবেন।
আমলকিঃ
চুলের জন্য আমলকি ভীষণভাবে উপকারী। এতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং ট্যানিন। এটি চুলকে নারিশ এবং কন্ডিশনিং করতে খুব ভালো কাজ করে। চুলের যত্নে এই উপকরণটি যোগ করলে চুলের টেক্সচার ইমপ্রুভ হয় এবং চুল হয়ে ওঠে শাইনি। ২-৩ চা চামচ আমলকি পাউডার, ১-২ চা চামচ লেবুর রস ও পরিমাণমতো পানি মিলিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এরপর পুরো চুলে লাগিয়ে এক ঘণ্টা রেখে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
জবা ফুলঃ
জবা ফুলে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, সি ও অ্যামাইনো অ্যাসিড। এটির ব্যবহারে চুল ডিপলি নারিশড হয়, চুলের গোড়া শক্ত হয় এবং চুলের ব্রেকেজও কমে যায়। একটি জবা ফুলের সাথে ২-৩ টি জবাফুলের পাতা বেটে নিয়ে এর সাথে মিশিয়ে নিন ২ টেবিল চামচ টকদই। এই মিশ্রণটি পুরো চুলে ভালোভাবে লাগিয়ে এক ঘণ্টা পরে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
অ্যালোভেরাঃ
অ্যালোভেরাতে ময়েশ্চারাইজিং প্রোপার্টিজ রয়েছে বলে স্ক্যাল্প ও চুলের নারিশমেন্টে এটির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২ চামচ ফ্রেশ অ্যালোভেরা এক্সট্র্যাক্টের সাথে, ১ চামচ টক দই ও অল্প মধু মিশিয়ে চুলে লাগিয়ে এক ঘণ্টা পরে ভালভাবে ধুয়ে ফেলুন।
আশা করি চুলের ইলাস্টিসিটি বুঝে হেয়ার কেয়ারের উপায় ও গুরুত্ব সম্পর্কে সবাই বুঝতে পেরেছেন। পরিশেষে বলতে চাই, চুলের উজ্জ্বলতা হারানো, চুল সহজেই ভেঙে যাওয়া, চুল কুকড়ে যাওয়া প্রভৃতির অন্যতম কারণই কিন্তু ইলাস্টিসিটি কমে যাওয়া। সঠিকভাবে নিয়মিত যত্ন নিলে ইলাস্টিসিটি ইমপ্রুভ করে হেলদি চুল পাওয়া অবশ্যই পসিবল। অথেনটিক মেকআপ, স্কিনকেয়ার ও হেয়ারকেয়ার প্রোডাক্টস আপনারা পেয়ে যাবেন সাজগোজে। ভিজিট করুন সাজগোজের ওয়েবসাইট, অ্যাপ বা ফিজিক্যাল স্টোরে। সাজগোজের বেশ কয়েকটি ফিজিক্যাল শপ রয়েছে। এই শপগুলো যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত সম্ভার, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, ইস্টার্ন মল্লিকা, ওয়ারীর র্যাংকিন স্ট্রিট, বসুন্ধরা সিটি, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে), মিরপুরের কিংশুক টাওয়ারে ও চট্টগ্রামের খুলশি টাউন সেন্টারে অবস্থিত। এই শপগুলোর পাশাপাশি চাইলে অনলাইনে শপ.সাজগোজ.কম থেকেও কিনতে পারেন আপনার দরকারি বা পছন্দের সব প্রোডাক্টস।
ছবিঃ সাটারস্টক, সাজগোজ