দূষণ, ক্ষতিকর কেমিক্যালের ব্যবহার, ঘন ঘন আয়রন করা, ড্রায়ারের অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে চুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে, চুলের ঘনত্ব কমে যায়, হয়ে পড়ে নিষ্প্রাণ, নির্জীব। অনেকেই চুল পরে যাওয়া থেকে রক্ষা পেতে নানা রকম হেয়ার ট্রিটমেন্ট করেন। এর কোনটিই দীর্ঘস্থায়ী হয় না! ব্যয়বহুল ট্রিটমেন্ট-এর চেয়ে বাড়িতে বসেই প্রাকৃতিকভাবে পাতলা চুল ঘন করার জন্য টিপস দেখে নিন তাহলে।
চুলের ঘনত্ব বাড়াতে প্রাকৃতিক উপায়
১) তেল
চুলের যত্নে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় তেল। আর এই তেলই হতে পারে আপনার চুল ঘন করার জন্য সবচেয়ে সহজ উপায়। চুলের তেল বলতে সাধারণত সবাই নারিকেল তেলকে বুঝে থাকেন। তবে চুল ঘন করার এবং যাদের চুল পরে যাচ্ছে তারা এই তেলের মিশ্রণ ব্যবহার করলে ভালো ফল পাবেন। আমাদের দেশে এই তেলগুলো সবচেয়ে সহজলভ্য-
১. আমণ্ড অয়েল ও ক্যাস্টর অয়েল
২. তিলের তেল ও সরিষার তেল
৩. অলিভ অয়েল ও ক্যাস্টর অয়েল
রাতে ঘুমানোর আগে এই তেলের মিশ্রণ হালকা গরম করে নিয়ে মাথার তালুতে ভালোভাবে ম্যাসাজ করে নিতে হবে। চুলের প্রতিটি গোড়ায় যেন তেল পৌঁছায় সেজন্য একটু সময় নিয়ে আস্তে আস্তে পুরো চুল আর তালুতে তেল দিয়ে নিতে হবে। সারা রাত রাখা সম্ভব না হলে গোসলের ১ ঘণ্টা আগে চুলে তেল দিয়ে তারপর শ্যাম্পু করে নিতে হবে। সপ্তাহে ২ বার যদি এটা করা যায়, ১ মাসের মধ্যেই চুল পাতলা ভাব কমে আসবে, চুল পড়া বন্ধ করে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করবে।
২) ডিম
সবচেয়ে সহজতর এবং কম সময়ে ফল পাবার জন্য ডিম হতে পারে আপনার চুল ঘন করার উপাদান। ডিম হচ্ছে প্রাকৃতিক প্রোটিন, যা চুলকে ঘন করতে সাহায্য করে। এর ভিটামিন চুলের গোড়ায় পৌঁছে পুষ্টি যোগায়, চুলের স্বাস্থ্য ফিরিয়ে দিতে চমৎকার কাজ করে। একটি ডিমের সাদা অংশ নিয়ে ভালোভাবে ফেটিয়ে নিতে হবে। তারপর পরিষ্কার চুলে সরাসরি হাত অথবা ব্রাশ-এর সাহায্যে ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত লাগাতে হবে। ডিম দিতে গেলে অনেকে চুল জট বেঁধে এলোমেলো হয়ে যায় বলে এড়িয়ে যান। চুলে ডিমের সাদা অংশ লাগানোর পর একটি মোটা দাঁতের চিরুনির সাহায্যে সাবধানে চুল আঁচড়ে নিন। তারপর হালকা ঝুটি করে নিন বা শাওয়ার ক্যাপ পরে নিন। ২০-৩০ মিনিট রেখে নরমাল পানিতে চুল ধুয়ে নিন এবং শ্যাম্পু করুন। যেদিন ডিম দেবেন সেদিন আর আলাদা করে কন্ডিশনার দেবার প্রয়োজন হবে না। প্রতি ৭ দিনে ১ বার করুন দেখবেন চুল ঘন হওয়ার সাথে সাথে আসবে বাউন্স।
৩) জেলাটিন
সাধারণত জেলি তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয়। তবে চুল ঘন করার জন্য এটি বেশ কার্যকর। বাজারে সাধারণত ২ রকম জেলাটিন পাওয়া যায়, ফ্লেভার সহ এবং ফ্লেভার ছাড়া। তবে চুলের জন্য ফ্লেভার ছাড়া জেলাটিন ব্যবহার করাই ভালো হবে। জেলাটিন ব্যবহার করতে পারেন দুভাবে। শ্যাম্পুর সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন, অথবা আলাদাভাবে প্যাক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। গরম পানিতে জেলাটিন নরম করে নিন, এরপর আপনার শ্যাম্পুর সাথে মিশিয়ে ফেলুন। প্রতিবার শ্যাম্পু করার পূর্বে বোতল ভালোভাবে ঝাকিয়ে নিন। তারপর ব্যবহার করুন। এতে চুল কিছুটা হলেও ঘন দেখাবে। প্যাক হিসেবে ব্যবহার করার জন্য গরম পানিতে জেলাটিন দিয়ে তা ধীরে ধীরে নেড়ে মিশিয়ে নিন, তারপর চুলে লাগান। জেলাটিন আপনার চুলের ক্ষতিগ্রস্ত স্ট্র্যান্ড-গুলোকে ভরাট করতে সাহায্য করবে এবং নিয়মিত ব্যবহার আপনার চুলকে ঘন দেখাবে।
৪) অ্যালোভেরা
অ্যালোভেরা জেল বের করে নিন, এখন অবশ্য রেডি টু ইউজ জেল কিনতে পাওয়া যায়। ৪ চামচ মধুর সাথে মিক্স করে সরাসরি চুলে এবং মাথার তালুতে লাগিয়ে ফেলুন। চাইলে এর সাথে কোনও ট্রিটমেন্ট ক্রিমও যোগ করতে পারেন। চুল ঘন করার সাথে সাথে এটি আপনার চুলের আগা ফেটে যাওয়া রোধ করবে।
৫) মধু
মধু আপনার চুলের পুষ্টির একটি মূল্যবান উৎস। চাইলে শুধু মধুও ব্যবহার করতে পারেন। মাথার ত্বকের জন্য খুব ভালো ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে মধু। তবে চুলে ব্যবহারের ক্ষেত্রে মধু খুবই আঠালো, সে জন্য খুব অল্প পরিমাণে (৪-৫ চামচ এর বেশি না) মধু নিয়ে, তা ব্যবহার করুন। তারপর চুল আটকে ১৫ মিনিট রেখে দিন। খেয়াল রাখুন যেন প্রতিটি চুলের গোড়ায় একটু হলেও মধু পৌঁছায়। সবশেষে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। মধু চুলকে ঘন এবং বাউন্সি করে।
আপনি চাইলে আপনার পছন্দমতো প্রোডাক্ট কিনতে পারেন অনলাইনে শপ.সাজগোজ.কম থেকে। আবার যমুনা ফিউচার পার্ক ও সীমান্ত স্কয়ার এ অবস্থিত সাজগোজের দুটি ফিজিক্যাল শপ থেকেও কিনতে পারেন আপনার পছন্দের প্রোডাক্টটি!
তাহলে উপরের যেকোনো উপায়ে বা পালা করে যেটি আপনার ভালো লাগে চুলের জন্য এখান থেকে একটি প্রাকৃতিক উপায় বেছে নিন। আর চুলের নিয়মিত যত্নে বাড়িয়ে নিন চুলের ঘনত্ব!
ছবি- সংগৃহীত: Shutterstock