সিল্কি কিংবা কার্লি- চুলের ধরন যেমনই হোক না কেন, চুল ভালো রাখতে প্রয়োজন নিয়মিত যত্নের। ঢেউ খেলানো কোঁকড়া চুল দেখতে ভালো লাগলেও এমন চুলের সৌন্দর্য ধরে রাখতে বাড়তি যত্ন নিতে হয়। কোঁকড়া চুল সুন্দর রাখার জন্য অনেকে বেছে নেয় রিবন্ডিং এর মতো কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট অথবা স্ট্রেইটেনিংয়ের মতো হিট স্টাইলিং প্রসেস। এগুলো টেম্পোরারি স্টাইলিং সল্যুশন দিলেও অনেক সময় চুলের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হতে পারে। তাই স্টাইলিং টুলস যতটা কম ব্যবহার করা যায় তত ভালো। ঘরোয়া কয়েকটি উপাদান দিয়েই কোঁকড়া চুলের যত্ন নেয়া যায় খুব সহজেই। আজকের আর্টিকেলে জানাবো ৫টি DIY হেয়ার প্যাক সম্পর্কে, যেগুলো ব্যবহারে কার্লি হেয়ার হবে সফট, শাইনি ও ম্যানেজেবল।
কার্লি হেয়ার সফট, শাইনি ও ম্যানেজেবল রাখার উপায়
১) চুলের ময়েশ্চার ধরে রাখতে টকদই ও কলা
চুল কার্লি হোক বা সিল্কি, চুল সফট থাকুক এমনটা কিন্তু আমরা সবাই চাই। আর সফট চুলের জন্য ময়েশ্চার ধরে রাখা খুবই জরুরি। টকদইতে আছে ভিটামিন, প্রোটিনসহ পুষ্টিকর অনেক উপাদান। এটি স্ক্যাল্প ক্লিন করে এবং ড্যানড্রাফ দূর করতে সাহায্য করে। আবার টকদই ও মধু চুলের ময়েশ্চার ধরে রাখতে বেশ কার্যকর। আর কলা চুলকে সফট ও ন্যাচারালি শাইনি করে তোলে। সপ্তাহে ১ দিন টক দই ও কলার এই প্যাক ব্যবহারে চুল হবে সফট ও শাইনি। লেবুর রস চুল পড়া কমাতে হেল্প করে।
প্যাকটি বানাতে যা যা লাগবে
- ৩/৪ টেবিল চামচ টকদই
- ২ টেবিল চামচ মধু
- ২ টি কলার পেস্ট
- ৪/৫ ফোঁটা লেবুর রস
(চুলের লেন্থ অনুযায়ী উপাদানগুলোর পরিমাণ কমবেশি হতে পারে)
যেভাবে তৈরি করবেন
একটি পাত্রে সবগুলো উপাদান ভালোভাবে মিক্স করে নিন। স্ক্যাল্পসহ পুরো চুলে প্যাকটি অ্যাপ্লাই করুন। ৩০ মিনিট পর শ্যাম্পু করে নিন। এই প্যাকে থাকা উপাদানগুলো চুলের ময়েশ্চার ধরে রাখবে, সেই সাথে চুল হবে সফট ও শাইনি।
২) চুলের গ্রোথ বাড়াতে মেয়োনেজ ও আমন্ড অয়েল
চুল কোঁকড়া হোক বা সিল্কি, গ্রোথ বেশি হোক এমনটি সবাই চাই। আর এই গ্রোথ বাড়াতে হেল্প করে মেয়োনেজ ও আমন্ড অয়েল। বেনিফিসিয়াল ইনগ্রেডিয়েন্টসযুক্ত মেয়োনেজ হেয়ার গ্রোথ বাড়াতে বেশ হেল্পফুল। আর আমন্ড অয়েল স্ক্যাল্পে নারিশমেন্ট প্রোভাইড করে। হেয়ার গ্রো করার সাথে সাথে কোঁকড়া চুলের রুক্ষতা দূর করতেও এই দুটো উপাদান খুব ভালো কাজ করে।
প্যাকটি বানাতে যা যা লাগবে
- ১/২ টেবিল চামচ মেয়োনেজ
- ২ টেবিল চামচ মধু
- ২/৩ টেবিল চামচ আমন্ড অয়েল
যেভাবে তৈরি করবেন
একটি পাত্রে তিনটি উপাদান ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। চুলের লেন্থ অনুযায়ী উপাদানগুলো কমবেশি হতে পারে। এবার স্ক্যাল্পে ও চুলে প্যাকটি অ্যাপ্লাই করে অপেক্ষা করুন ৪৫ মিনিট। এই সময়ের মধ্যে প্যাকে থাকা নিউট্রিয়েন্টস ভালোভাবে অ্যাবজর্ব হয়ে যাবে। এবার চুলে শ্যাম্পু করে নিন। প্যাকটির রেগুলার ব্যবহারে হেয়ার গ্রোথ বাড়বে। তাই বেটার রেজাল্ট পেতে সপ্তাহে ১/২ বার প্যাকটি ব্যবহার করুন।
৩) চুল ম্যানেজেবল রাখতে টকদই, অলিভ অয়েল ও মধু
কোঁকড়া চুল ম্যানেজ করতে হিমশিম খাচ্ছেন? টক দই, অলিভ অয়েল ও মধুর প্যাক ব্যবহারে এ প্রবলেমের সল্যুশন পাবেন খুব সহজে। এ উপাদানগুলো চুল সফট রাখতে সাহায্য করে বলে চুল ম্যানেজ করা যায় ইজিলি।
প্যাকটি বানাতে যা যা লাগবে
- ১ কাপ টকদই (চুলের লেন্থ অনুযায়ী কমবেশি হতে পারে)
- ২ টেবিল চামচ মধু
- ৪ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল
যেভাবে তৈরি করবেন
সবগুলো উপাদান ভালোভাবে মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে নিন। চুলে অ্যাপ্লাই করে অপেক্ষা করুন ৩০-৩৫ মিনিট। এবার শ্যাম্পু করে ফেলুন। এই প্যাকে থাকা উপাদানগুলো চুলের রুক্ষতা দূর করে কোমলতা ফিরিয়ে আনে। সেই সাথে চুল হয়ে ওঠে ম্যানেজেবল।
৪) রুক্ষতা দূর করতে ডিমের কুসুম ও অলিভ অয়েল
চুল রুক্ষ হলে জট বাঁধা, ছিঁড়ে যাওয়ার মতো সমস্যাগুলো বেশি হয়। আর যদি হয় কোঁকড়া চুল, তাহলে তো কথাই নেই! তাই এ ধরনের চুল ভালো রাখতে রুক্ষতা দূর করা জরুরি। এই রুক্ষতা দূর করতে খুব ভালো কাজ করে ডিমের কুসুম ও অলিভ অয়েল। ডিমের কুসুমে থাকা ভিটামিন ই, এ, মিনারেলস, ফোলেট ও বায়োটিন চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। অলিভ অয়েল ও অ্যালোভেরা চুলের সফটনেস ফিরিয়ে আনে। আর নারিকেলের দুধ চুলের গোড়া শক্ত করে, যার কারণে চুল হয়ে ওঠে মজবুত।
প্যাকটি বানাতে যা যা লাগবে
- ১/২ টা ডিমের কুসুম
- ১ টেবিল চামচ মধু
- ১ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল
- ২ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল
- ১ টেবিল চামচ নারিকেলের দুধ
যেভাবে তৈরি করবেন
একটি কাঁচের পাত্রে সবগুলো ইনগ্রেডিয়েন্ট ভালোভাবে মিক্স করে নিন। অনেকের কাছে ডিমের গন্ধ ভালো লাগে না। তারা চাইলে এই প্যাকে ১/২ ফোঁটা অ্যাসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে নিতে পারেন। পুরো চুলে প্যাকটি অ্যাপ্লাই করে অপেক্ষা করুন ৩০ মিনিট। এবার শ্যাম্পু করে ফেলুন। ভালো ফল পেতে প্যাকটি সপ্তাহে ১/২ বার ব্যবহার করুন।
৫) ন্যাচারালি চুল কন্ডিশনড রাখতে দুধ ও ডিম
দুধ ও ডিমের উপকারিতা নিয়ে আলাদা করে কিছু বলার নেই। আয়রন, প্রোটিন, পটাশিয়াম, ফ্যাট সমৃদ্ধ দুধ হেয়ার গ্রোথ বাড়াতে সাহায্য করে। আর ন্যাচারাল কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে ডিম। এই দুটো উপাদান দিয়ে তৈরি প্যাক চুলের কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে। তাই অল্প সময়েই চুল হয়ে ওঠে সফট।
প্যাকটি বানাতে যা যা লাগবে
- ১ অথবা ১/২ কাপ দুধ (চুলের লেন্থ অনুযায়ী)
- ১টি ডিম
- ২/৩ ফোঁটা অ্যাসেনশিয়াল অয়েল
যেভাবে তৈরি করবেন
সবগুলো উপাদান ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। অনেকেই ডিমের গন্ধ পছন্দ করেন না। তারা চাইলে অ্যাসেনশিয়াল অয়েল ইউজ করতে পারেন। এই প্যাকে চাইলে ডিমের কুসুমও ইউজ করা যায়। প্যাকটি ভালোভাবে চুলে অ্যাপ্লাই করে নিন। ৩০ মিনিট পর শ্যাম্পু করে নিন। চুল শুকানোর পর দেখবেন কোঁকড়া চুল ম্যানেজ করাও খুব ইজি মনে হচ্ছে। কোঁকড়া চুল যদি কন্ডিশনড থাকে তাহলে আঁচড়াতেও সমস্যা হয় না। ভালো ফল পেতে প্যাকটি সপ্তাহে ১/২ বার ব্যবহার করুন।
কার্লি হেয়ার কেয়ারে আরও কিছু টিপস
১। কোঁকড়া চুলে জট বেশি তৈরি হয়। তাই চুল জটমুক্ত রাখতে নিয়মিত চুল আঁচড়ানোর অভ্যাস করুন। আঁচড়ানোর জন্য বড় দাঁতের চিরুনি ব্যবহার করা ভালো।
২। অতিরিক্ত কেমিক্যালযুক্ত প্রোডাক্ট এড়িয়ে চলুন।
৩। স্ক্যাল্পে নিয়মিত অয়েল ম্যাসাজ করুন।
৪। শ্যাম্পু করার পর অবশ্যই চুলে কন্ডিশনার ব্যবহার করুন।
৫। কনসার্ন অনুযায়ী সপ্তাহে একবার হেয়ার প্যাক অ্যাপ্লাই করুন।
৬। রাতে ঘুমানোর আগে চুল বেঁধে নিন।
কার্লি হেয়ার কেয়ার করা নিয়ে অনেকেই বেশ কনফিউশনে থাকেন। আশা করি, এই আর্টিকেলের মাধ্যমে সেই কনফিউশন কিছুটা হলেও ক্লিয়ার হবে। নিয়মিত যত্ন নিলে কোঁকড়া চুলও হবে সফট, শাইনি ও ম্যানেজেবল। স্কিন কেয়ার, হেয়ার কেয়ার ও মেকআপের জন্য বিভিন্ন অথেনটিক প্রোডাক্ট পেয়ে যাবেন সাজগোজে। অনলাইনে শপ.সাজগোজ.কম অথবা সাজগোজের কয়েকটি ফিজিক্যাল শপ- যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত সম্ভার, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, ইস্টার্ণ মল্লিকা, ওয়ারীর র্যাংকিন স্ট্রিট, বসুন্ধরা সিটি, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে), মিরপুরের কিংশুক টাওয়ারে এবং চট্টগ্রামের খুলশি টাউন সেন্টার থেকে কিনতে পারেন আপনার দরকারি যে কোনো প্রোডাক্ট।
ছবিঃ সাজগোজ, সাটারস্টক