হ্যান্ড, ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ (এইচএফএমডি) একটি সাধারণ ভাইরাল রোগ যাতে প্রাথমিকভাবে ছোট বাচ্চাদের আক্রান্ত হতে দেখা যায়, তবে প্রাপ্তবয়স্কদেরও হতে পারে। এই রোগটির প্রকোপ বাংলাদেশে গত কয়েক বছর ধরে বেশ দেখা যাচ্ছে। শিশুর হ্যান্ড, ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ এর লক্ষণ, প্রতিরোধে করণীয় কী; সেগুলোই আমরা আজ জানবো।
শিশুর হ্যান্ড, ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ
এটি ছোঁয়াচে রোগ। বিভিন্ন ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট হয়, সাধারণত কক্সস্যাকিভাইরাস (Coxsackievirus) A6, A16 ও এন্টারোভাইরাস 71 তার মধ্যে অন্যতম। এই রোগে আক্রান্ত শিশুদের হাতে, পায়ে ও মুখের ভেতরে ফুসকুড়ি বা ফোসকা দেখা দেয় বলে এটি হ্যান্ড, ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ/এইচএফএমডি (Hand Foot Mouth Disease/HFMD) নামে পরিচিত।
লক্ষণ কী কী?
HFMD সাধারণত ৬ মাস থেকে ৫ বছরের মধ্যে হলেও এবার ৫ বছরের বেশি বয়সী বাচ্চাদের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে। প্রথমে সাধারণত কিছু স্বতন্ত্র লক্ষণ দেখা গেলেও পরবর্তিতে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। ভাইরাসটি শিশুর শরীরে প্রবেশের চার থেকে ছয় দিনের মধ্যে রোগের লক্ষণ দেখা যায়। সাধারণ লক্ষণ যেমন-
১) জ্বরঃ এ রোগে আক্রান্ত বাচ্চাদের প্রথম ২-৩ দিন জ্বর থাকে। প্রচণ্ড জ্বর দিয়ে শুরু হয়, সাধারণত ১০১°F থেকে ১০৪°F পর্যন্ত জ্বর উঠতে পারে।
২) ফুসকুড়িঃ জ্বরের এক থেকে দুই দিনের মধ্যে শরীরের কিছু কিছু স্থান যেমন হাতের তালু, পায়ের তালু, হাঁটু, কনুই, ইত্যাদি স্থানে লাল ফুসকুড়ি বা ফোসকার মত দেখা যায়। এটি ব্যাক সাইড, শরীরের অন্যান্য অংশেও হতে পারে।
৩) হাত-পায়ের তালুতে ঘা বা ফোসকাঃ নামটি থেকে বোঝা যায়, HFMD হাত ও পায়ে ঘা বা ফোসকার সৃষ্টি করে, যা শিশুদের হাঁটা বা তাদের হাত ব্যবহার করা কষ্টদায়ক করে তোলে। শরীরে অতিরিক্ত ব্যথার জন্য শিশু খুব কান্নাকাটি করতে পারে।
৪) গলা ব্যথাঃ এই রোগের একটি প্রাথমিক উপসর্গ হলো গলা ব্যথা। যার ফলে খাওয়া-দাওয়া করা কষ্টকর হয়ে যায়।
৫) মুখের ঘাঃ এটি জিহ্বা, মাড়ি, গালের ভেতরে দেখা দেয়। মুখের ভেতর বেশি আক্রান্ত হলে অনেক সময় বাচ্চা সম্পূর্ণ খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দিতে পারে। অরুচির কারণেও এই সময় খেতে চায় না বাচ্চারা। শিশুর ডিহাইড্রেশন দেখা দিতে পারে।
৬) খিটখিটে মেজাজঃ এ রোগে আক্রান্ত শিশুরা শারীরিক অস্বস্তি ও ব্যথার কারণে খিটখিটে হয়ে যায়। অস্থির আচরণও করতে পারে।
৭) ক্লান্তিঃ অসুস্থতার কারণে শিশু ক্লান্ত থাকতে পারে। রেগুলার অ্যাকটিভিটি কমে যেতে পারে।
কারণ
এর জন্য দায়ী ভাইরাসগুলো অত্যন্ত সংক্রামক। একটি শিশু আক্রান্ত হলে তার কাছ থেকে এ ভাইরাস অন্য অনেকের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে ডে কেয়ার সেন্টার বা স্কুলে এই রোগ ছড়ানোর ঝুঁকি থাকে। মুখের লালা ও সর্দির মাধ্যমে ভাইরাসটি দ্রুত ছড়ায়। সংক্রামিত ব্যক্তির কাশি, হাঁচি বাতাসে ভাইরাস কণা ছড়িয়ে দিতে পারে, যা শ্বাস নেওয়ার মাধ্যমে অন্যদের শরীরে যেতে পারে। ইনডোর বেইজড প্লে জোন থেকেও শিশুরা এতে আক্রান্ত হতে পারে। সঠিকভাবে হাত ধোয়ার নিয়ম না মানার ফলে এবং হাইজিন মেনটেইন না করলে ভাইরাসের বিস্তার সহজেই হতে পারে।
চিকিৎসা
HFMD- হলে ভয়ের কিছু নেই। যেহেতু এটি একটি ভাইরাস জনিত রোগ, এতে কোনো অ্যান্টিবায়োটিক লাগে না। এর জন্য কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল চিকিত্সাও নেই, রোগটি সাধারণত এক বা দুই সপ্তাহের মধ্যে এমনিতেই ঠিক হয়ে যায়। জ্বর ও ব্যথার জন্য রোগীর বয়স আর ওজন বুঝে সঠিক মাত্রায় প্যারাসিটামল দেওয়া যেতে পারে। ডিহাইড্রেশন রোধ করতে রোগীকে বিশেষ করে বাচ্চাদের প্রচুর তরল পান করতে উত্সাহিত করুন। শরীরে ফোসকা থাকলে লোশন, হার্শ সোপ, তেল দেওয়া যাবে না। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ নিন, চুলকানি বা ফুসকুড়ি কমাতে কিছু ওষুধ সাজেস্ট করতে পারেন। এছাড়া দ্রুত সুস্থতার জন্য বিশ্রাম অপরিহার্য।
প্রতিরোধে যা যা করা প্রয়োজন
সাবান ও পানি দিয়ে নিয়মিত হাত ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে। শিশুর যত্নে ব্যবহার্য জিনিসপত্র পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করতে হবে। ঘরের মেঝে, খেলনা ক্লিন রাখুন। ডায়পার পরিবর্তন করার পরে এবং খাওয়ার আগে ভালো করে হাত ধুয়ে নিন। ভাইরাসের বিস্তার রোধ করার জন্য রোগীকে কিছুদিন আলাদা রাখা উচিত, বিশেষ করে আক্রান্ত শিশুদের সুস্থ শিশুদের সংস্পর্শে যেতে দেওয়া থেকে বিরত রাখতে হবে।
ইদানিং হ্যান্ড, ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। শিশুদের জন্য রোগটি অস্বস্তিদায়ক হলেও টেনশনের কিছু নেই। সঠিক যত্নের মাধ্যমে শিশুর হ্যান্ড ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয়ে যায়। আজ এই পর্যন্তই। ভালো থাকবেন।
ছবি- সাটারস্টক