ভার্সিটির কমন রুমে জম্পেশ আড্ডা চলছিল, সেই সময় স্বর্ণা রুমে ঢুকলো। স্বর্ণা ওদের কছে আসতেই সুমি বলে উঠলো, “কিরে তোর রুপের রহস্য কী? দিন দিন সুন্দর হয়ে যাচ্ছিস!” স্বর্ণা হেসে বললো, “কোনো রহস্য নাই। শুধু ত্বকটা নিয়ম করে পরিষ্কার করছি।” ত্বক আবার নিয়ম করে পরিষ্কার করা মানে কী? প্রতিদিনতো আমরা ফেইসওয়াশ দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে থাকি, এটা আবার নিয়ম করে পরিষ্কার করার কী আছে?
এখানেই অধিকাংশ মানুষের ভুল হয়, ফেইসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুলে মনে করে ত্বক পরিষ্কার হয়ে গেছে। কিন্তু আসলে তা নয়, সঠিক নিয়মে ত্বক পরিষ্কার করা গেলে, ত্বক সুস্থ এবং সুন্দর থাকবে অনেকদিন।
রেগ্যুলার ত্বক পরিষ্কার করতে সিটিএম (CTM) পদ্ধতিটি মেনে চলুন। ত্বক সুস্থ রাখার জন্য এটি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সিটিএম ত্বকের ভিতর থেকে সব ময়লা, জীবাণু দূর করে ত্বক সুস্থ রাখে। মেকআপ শুধুমাত্র আপনার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে, কিন্তু ন্যাচারাল লুকের আবেদন সবসময় রয়েছে। স্বাস্থ্যকর, সুন্দর স্কিন আপনাকে ন্যাচারালি সুন্দর করে তুলবে। এর জন্য খুব বেশি কিছু করার প্রয়োজন নেই। উজ্জ্বল ও সুস্থ ত্বক পেতে প্রতিদিন নিয়ম করে সিটিএম (CTM) মেনে চলুন, নিজেই চমকে যাবেন ত্বকের পরিবর্তন দেখে!
সুস্থ ও উজ্জ্বল ত্বক পেতে ৩টি ধাপ
১) স্কিন ক্লেনজিং
সিটিএম–এর প্রথম ধাপ হলো ত্বক পরিষ্কার করা। হার্শ কেমিক্যালযুক্ত সাবান দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করা উচিত নয়, কারণ এটি ত্বক রুক্ষ করে তোলে। অনেকে মাইল্ড সোপ ইউজ করেন। তবে প্রতিদিন ফেইসওয়াশ ব্যবহার করতে পারেন। আপনাকে যদি নিয়মিত মেকআপ করতে হয়, তবে আপনি আগে অয়েল ক্লেনজার দিয়ে মুখ এবং ঘাড় পরিষ্কার করে নিবেন তারপর ফেইসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে নিবেন। এটাকে ডাবল ক্লেনজিং বলা হয়।
কুইক টিপস
ক্লেনজার ছাড়াও আপনি বেবি অয়েল অথবা জোজোবা অয়েল দিয়ে মেকআপ রিমুভ করতে পারেন। একটি তুলোর বলে অয়েল নিয়ে সেটি দিয়ে সম্পূর্ণ ত্বক ৩-৫মিনিট ম্যাসাজ করুন। দেখবেন তুলোতে সব মেকআপ উঠে আসছে। এরপর একটি ভালো ফেইসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এই পদ্ধতিতে ত্বক থেকে সবরকম মেকআপ তোলা সম্ভব।
২) টোনিং
ত্বক ক্লিন করার পরের ধাপ হলো টোনিং। অনেকে ত্বক টোনিং করাটাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন না। কিন্তু টোনিং-এর রয়েছে দীর্ঘস্থায়ী উপকারিতা। বাজারের বেশির ভাগ টোনারের কাজ হলো মেকআপ রিমুভ করা। এইজন্য মেকআপ ক্লেনজার ব্যবহার করলে টোনার ব্যবহার করতে চান না। তবে বর্তমান সময়ে টোনারের আরেকটি কাজ হলো, ত্বক হাইড্রেটেড অর্থাৎ আদ্র রাখা। এই জন্য টোনার কেনার সময় লক্ষ্য রাখবেন, সেটি যেন অ্যালোকোহল মুক্ত এবং হাইড্রেটেড বেইজড হয়ে থাকে।
কুইক টিপস
আপনি যদি প্রাকৃতিক টোনার ব্যবহার করতে চান, তাহলে গোলাপজল কিংবা গ্রিন টি ব্যবহার করতে পারেন। টোনার আপনার ত্বককে কোমল, নরম করার পাশাপাশি গ্লো করতে সাহায্য করবে। ত্বক ক্লিন করার পর গোলাপজল অথবা গ্রিন টি দিয়ে মুখটা ধুয়ে ফেলুন। কিছুটা ড্রাই হয়ে এলে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
৩) ময়েশ্চারাইজিং
সুস্থ ও উজ্জ্বল ত্বক পেতে সিটিএম-এর শেষ ধাপটি হলো ত্বকে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা। ময়েশ্চারাইজার ছাড়া কোন স্কিন কেয়ার সম্পূর্ণ নয়। আপনি যত দামী ফেইসওয়াশ ব্যবহার করেন না কেন, ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। ড্রাই ত্বকে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা মানে ত্বককে পানি দেওয়া, যাতে ত্বকের রুক্ষতা দূর করে। ত্বকের ধরন অনুযায়ী ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত। শুষ্ক, ড্রাই স্কিনের জন্য কিছুটা ভারী তেলযুক্ত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন এবং তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারীরা কিছুটা লাইট ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারেন।
কুইক টিপস
তৈলাক্ত, শুষ্ক, নরমাল কিংবা সেনসিটিভ যে স্কিনের অধিকারিণীই হয়ে থাকেন না কেন, অব্যশই ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। বেশির ভাগ তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারিণীরা ত্বকে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করার ক্ষেত্রে আলসেমি করেন। তারা মনে করেন ময়েশ্চারাইজার তাদের ত্বককে আরো বেশি তেলতেলে করে তুলবে। এই সমস্যা থেকে বাঁচতে লাইট ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারেন। এখন, বাজারে নানা ব্র্যান্ডের নানারকম ময়েশ্চারাইজার কিনতে পাওয়া যায়। আপনার পছন্দের ময়েশ্চারাইজারটা বেছে নিন।
কেমিক্যাল থেকে যদি দূরে থাকতে চান, তবে প্রাকৃতিক উপায়ে সিটিএম করতে পারেন। এবার তবে প্রাকৃতিকভাবে ক্লিনিং করার উপায় জেনে নিন!
প্রাকৃতিক উপায়ে ক্লেনজিং পদ্ধতি
তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারিণীদের জন্য
১) এক টেবিল চামচ মুলতানি মাটি এবং পরিমাণমত পানি বা গোলাপজল দিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এই প্যাকটি ফেইসওয়াশের কাজ করবে।
২) বেসনের সাথে এক চিমটি হলুদ গুড়ো মিশিয়ে নিয়ে সেটি ব্যবহার করতে পারেন, এটিও প্রাকৃতিক ফেইসওয়াশের কাজ করবে।
৩) অ্যালোভেরা জেল ত্বকে ম্যাসাজ করে ব্যবহার করতে পারেন, এটি কিছুক্ষণ রাখুন তারপর পানি দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করে নিন।
ড্রাই এবং সেনসিটিভ ত্বকের অধিকারিণীদের জন্য
১) কাঁচা দুধ এবং মধু একসাথে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি ত্বকে ম্যাসাজ করুন। ৫ মিনিট পর পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
২) বেসন এবং দুধ একসাথে মিশিয়ে প্যাক করে নিন। ৫-১০ মিনিট পর পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
৩) টকদইও বেশ ভালো ক্লেনজার হিসাবে কাজ করে। এটি আপনি ত্বক পরিষ্কারের কাজে ব্যবহার করতে পারেন।
ক্লিনিং, টোনিং এবং ময়েশ্চারাইজিং এই হলো সিটিএম। প্রতিদিনের ত্বকের যত্নে এই পদ্ধতিটি ব্যবহার করুন। তাহলে সুস্থ ও উজ্জ্বল ত্বক পেতে সকালে একবার করুন সিটিএম আর আরেকবার রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে। কিছুদিন পর নিজেই নিজের ত্বকের পার্থক্য দেখতে পাবেন!
ত্বকের যত্নে অথেনটিক প্রোডাক্ট কিনতে চাইলে আপনারা সাজগোজের দুটি ফিজিক্যাল শপ যা যমুনা ফিউচার পার্ক ও সীমান্ত সম্ভারে অবস্থিত, সেখান থেকে কিনতে পারেন। আর যদি অনলাইন থেকে কিনতে চান, তবে শপ.সাজগোজ.কম থেকে প্রোডাক্ট কিনতে পারেন।
ছবি- সংগৃহীত: সাজগোজ