চুল নিয়ে কম-বেশি সবারই অভিযোগ রয়েছে। কারো অতিরিক্ত চুল পড়ে, কারো চুল রুক্ষ-শুষ্ক, কা্রো মাথায় টাক পড়ে গেছে, কারোর আবার নতুন চুল উঠে না, কারো চুলে খুশকি, কারো চুলের আগা ফাটার সমস্যা, কারো অল্প বয়সে চুল পেকে যাওয়া, কারো চুল সহজে বাড়ে না তো আবার কারো চুলে প্রাণ নেই- এমন হাজারো সমস্যার সমধান করতে পারে শুধুমাত্র একটি হেয়ার অয়েল! অবাক হচ্ছেন তো? অবাক হবারই কথা। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপাদান আর এক্সট্রা ভার্জিন তেলের সাহায্যে ঘরেই তৈরি করতে পারেন এ যাদুকরী তেলটি। আগের দিনে মা-খালারা যেমন যত্ন নিয়ে তৈরি করতেন ঠিক তেমনি ভেজালের ভীড়ে আপনিও আপনার মূল্যবান চুলের জন্য ঝটপট তৈরি করে ফেলুন এ তেল। আর দেরি না করে চলুন এবার রেসিপিটি জেনে নিই।
[picture]
উপকরণ ও পরিমাণ
- নারিকেল তেল-১০০ মি.লি.
- অলিভ ওয়েল-৭৫ মি.লি.
- তিলের তেল-৫০ মি.লি.
- সরিষার তেল-২৫ মি.লি.
- ক্যাস্টর ওয়েল-৫০ মি.লি.
- আমন্ড ওয়েল-৫০ মি.লি.
- ভিটামিন ই ওয়েল-১০ মি.লি.
- এসেনশিয়াল ওয়েল-ল্যাভেন্ডার/রোজমেরি/পেপারমিন্ট (অপশনাল)-১০ মি.লি.
- মেথি-১ মুষ্ঠি
- কালোজিরা-১ মুষ্ঠি
প্রস্তুত প্রণালী
(১) শুরুতেই সব উপকরণ সংগ্রহ করুন। মনে রাখবেন তেলগুলো অবশ্যই যেন ভেজালমুক্ত, খাঁটি ও এক্সট্রা ভার্জিন হয়।
(২) চাইলে নারিকেল তেল নিজে বানিয়ে নিতে পারেন অথবা এক্সট্রা ভার্জিন ও কোল্ড কম্প্রেসড কোকোনাট অয়েল কিনে নিতে পারেন।
(৩) অবশ্যই এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ ওয়েল ব্যবহার করবেন।
(৪) আর অপরিশোধিত ক্যাস্টর ওয়েল নিন। সে ক্ষেত্রে ‘স্কিন ক্যাফে আনরিফাইন্ড ক্যাস্টর ওয়েল’ ব্যবহার করতে পারেন।
(৫) ভিটামিন ই ওয়েল কিনতে পাওয়া যায়। অনলাইনে অর্ডার করে বা বড় ফার্মেসীতে এই ওয়েল বোতলাকারে পাবেন। অথবা একান্তই না পেলে ই ক্যাপ ও ব্যবহার করা যাবে।
(৬) এবার মেথি ও কালোজিরা অল্প অল্প গুড়ো করে নিন। মিহি গুড়ো করবেন না। আপনার কাছে যদি কালোজিরা তেল থাকে অথবা কালোজিরা তেল ব্যবহার করতে চাইলে করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে ৫০ মিলি কালোজিরা তেল নিবেন। কালোজিরা তেল দামি বলে আমি গোটা কালোজিরা ব্যবহার করতে বলেছি। তেল হিসেবে ব্যবহার করলে গুড়ো কালজিরা দরকার নাই।
(৭) যাদের মাথায় চুলকানি হয় তারা অল্প পরিমাণ (১০ মিলি) নিম তেল ব্যবহার করতে পারেন।
(৮) যাদের ইনসোমনিয়া (রাতে যাদের ঘুম হয় না) আছে তারা রোজমেরি ওয়েল মেশান।
(৯) এবার নারিকেল তেল, সরিষার তেল, অলিভ ওয়েল, তিলের তেল ও গুড়ো করা মেথি আর কালোজিরা একটি প্যানে নিয়ে চুলাতে বসান বা ওভেনেও দিতে পারেন। মোটামুটি ফুটে উঠলে নামিয়ে ঠান্ডা করুন।
(১০) রুম এর তাপমাত্রায় ঠান্ডা হলে আমন্ড, ক্যাস্টর ওয়েল, ভিটামিন ই ও অন্যান্য (প্রয়োজন হলে) ওয়েল মেশান।
(১১) এবার পরিষ্কার, শুকনো, এয়ার টাইট পাত্রে সংরক্ষণ করুন। কাচের পাত্র হলে বেশি ভালো, কারণ মাঝে মধ্যে রোদে দিতে পারবেন।
(১২) এ তেল ৬ মাস পর্যন্ত ভালো থাকবে।
(১৩) পেঁয়াজের রস মেশানো যেত, তবে সেক্ষেত্রে প্রতি ৭-১০ দিন পরপর নতুন করে তেলটি বানাতে হবে। তাই যদি কেউ পেঁয়াজ ব্যবহার করতে চান তারা প্রতিবার ব্যবহারে পূর্বে তৈরি তেলের সাথে কয়েক ফোঁটা পেঁয়াজের রস মিশিয়ে নিন।
(১৪) যাদের খুশকি আছে তারা একইভাবে পেঁয়াজের পরিবর্তে লেবুর রস ব্যবহার করবেন। এভাবে করে এই একটি তেলই চুলের যে কোন সমস্যার সমাধান করতে কার্যকরী। শুধু নিজের সমস্যা খেয়াল করে ব্যবহার করতে হবে।
ব্যবহার বিধি
কিছু কথা মনে রাখবেন- সপ্তাহে ২-৩ দিন তেলটি ব্যবহার করুন। সারা রাত রাখলে ভালো নয়ত অন্তত ২-৩ ঘন্টা অপেক্ষা করুন। শ্যাম্পুর পর ভালো করে পানি দিয়ে চুল পরিষ্কার করুন এবং কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। সব সময় পরিষ্কার তোয়ালে, চিরুনি, ব্রাশ ও বালিশের কভার ব্যবহার করুন। চুল বেধে ঘুমাবেন।
কোথায় পাবেন এক্সট্রা ভার্জিন/ আন রিফাইন্ড তেলগুলো?
তেলগুলো সংগ্রহ করা কষ্ট সাপেক্ষ মনে হলে নিশ্চিন্তে আর নির্দ্বিধায় চলে যেতে পারেন প্রিয় সাজগোজের অনলাইন শপ ও যমুনা ফিউচার পার্ক-এর ‘SAPPHIRE’-এ পাবেন। সেখানে স্কিন ক্যাফে এক্সট্রা ভার্জিন কোকোনাট অয়েল, স্কিন ক্যাফে আনরিফাইন্ড ক্যাস্টর অয়েল এবং স্কিন ক্যাফে এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল কিনতে পাবেন সুলভে; যেগুলো আসলও বটে। আজ এ পর্যন্তই। আশা করি অচিরেই সবার চুলের সমস্যা দূর হবে। ব্যবহার করে রিভিউ জানাতে ভুলবেন না যেন।
লিখেছেন – রোজা স্বর্ণা