আমার মা সারাদিন বাসার হাতের কাজ নিয়ে এত ব্যস্ত থাকেন যে নিজের যত্ন নেয়ার একদমই সময় পান না। মা বাকি সবার যত্ন নেয়ায় এত বেশি ব্যস্ত থাকেন যে নিজের খেয়াল রাখার মতো সময় উনার কাছে হয়ে উঠে না। তাই উনার সবকিছুর খেয়াল যতটা পারি আমিই রাখি।
শীতে সবার স্কিনের যত্ন নেয়াটা অনেক বেশি জরুরি। সবচেয়ে বেশি জরুরি যাদের ড্রাই স্কিন।
গত বছরের শীতে আমার মায়ের হাতের স্কিনের অবস্থা এত বেশি খারাপ হয়েছিল যে বুঝতে পারছিলাম না কি করব। উনার স্কিন একে তো ড্রাই তার উপর জায়গায় জায়গায় ফেটেও গিয়েছিল। নানা ধরনের লোশন ব্যবহার করে দেখেছে। আসলে সেগুলোর কোনটাই সেভাবে কাজ করছিল না। অনেকদিন কষ্ট করতে হয়েছে। তার উপর আমার মা ওসব ব্যবহার করতে চাইছিলেন না। কারণ বাজারে যে পন্যগুলো পাওয়া যায় সেগুলো কতটা ভালো তা নিয়ে তিনি খুবই সন্দিহান। আর শুষ্ক ভাবটা অনেক ক্রিম লাগালেই চলে যায় কিন্তু ফেটে যাওয়ার জন্য এমন কিছু চাইছিলাম যেটা স্কিনটাকে রক্ষাও করবে।
এরপর আমি ভ্যাসলিন ব্যবহারের সিদ্ধন্ত নেই। তবে ভ্যাসেলিন ব্যবহারের বেলায় আমার যে চিন্তাটা আসে তা হল এটি তৈরি হয় পেট্রোলিয়াম জেলি থেকে। পেট্রোলিয়াম থেকে তৈরি কোন পন্য আমি ব্যবহারের জন্য নিতে চাইছিলাম না। কারণ এটি ত্বকের জন্য অনেক ক্ষতিকর।
এমনকি বিভিন্ন গবেষনায়ও দেখা গিয়েছে, পেট্রোলিইয়াম থেকে তৈরি যেকোন ধরণের প্রসাধনী সামগ্রী যদি দীর্ঘদিন ব্যবহার করা হয় তাতে ক্যানসারও হতে পারে। কারণ পেট্রোলিয়াম জেলি ত্বকের উপরে এমন একটি প্রলেপ ফেলে যার কারণে ত্বকের ভেতরের দূষিত পদার্থগুলো আর বের হতে পারে না।
[picture]
তাই আমি চিন্তা করলাম যদি আমি মায়ের জন্য পেট্রোলিয়াম জেলি ছাড়া ঘরেই ভ্যাসলিন তৈরি করি তবে কেমন হয়? যেমন চিন্তা তেমনই কাজ। পেট্রোলিয়াম জেলি ছাড়া বাকি সব উপাদান দিয়ে তৈরি করে নিলাম ভ্যাসলিন।
আর এতে করে আমার মা অনেক উপকৃত হয়েছিলেন। কয়েকদিন নিয়মিত ব্যবহারের পরই উনার হাত ঠিক হয়ে গিয়েছিল।
এর আগের শীতে মায়ের হাত ঠিক হতে অনেকটা সময় লেগে গিয়েছিল। তাই এবার যাতে এমনটা না হয় আগেভাগেই আমি নন-পেট্রোলিয়াম ভ্যাসেলিন বানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পরে ভাবলাম আমি যেহেতু বানাচ্ছি তবে আপনারা নয় কেন? আমি চাই আপনারাও আমার মতো দ্বিধায় না থেকে ঘরে বসেই বানিয়ে ফেলুন ভেজালমুক্ত ভ্যাসেলিন। আর হয়ে উঠুন সুন্দর ত্বকের অধিকারি। তাহলে আসুন জেনে নিই, আপনিও কীভাবে পারবেন ঘরেই নন-পেট্রোলিয়াম ভ্যাসেলিন বানাতে।
নন-পেট্রোলিয়াম ভ্যাসেলিন তৈরির জন্য যা যা লাগবে
- নারিকেল তেল – ১/৪ কাপ
- বিস ওয়াক্স – ২ টেবিল চামচ
- অলিভ অয়েল – ১/৮ কাপ
- টি ট্রি এসেনসিয়াল অয়েল – কয়েক ফোটা
কীভাবে তৈরি করবেন?
– প্রথমেই ছোট একটি সসপ্যানে পানি নিয়ে তাতে এক্নটি পাত্র বসিয়ে নিন। এতে নারকেল তেল এবং বিস ওয়াক্স দিয়ে মৃদু আঁচে গরম করে নিন।
– নারিকেল তেল এবং বিস ওয়াক্স ভালোভাবে মিক্স হয়ে গেলে তা নামিয়ে রাখুন। এরপর সেটার সাথে অলিভ অয়েল এবং এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে নেই।
সমস্ত উপাদানগুলো ভালোভাবে মিক্স হয়েছে কিনা তা একবার দেখে নিন। এরপর কিছুক্ষণ ঠান্ডা হওয়ার জন্য অপেক্ষা করি।যখন দেখবো ঠান্ডা হয়ে একটা ক্রিমিভাব এসেছে তখনই বুঝে যাবেন আমাদের ঘরে তৈরি ভ্যাসেলিন প্রস্তুত।
এবার সংরক্ষনের পালা। আমরা যেকোন পরিষ্কার কাঁচের কৌটাতে এটি সংরক্ষণ করতে পারবেন। এটি নিশ্চিন্তে ৩ থেকে ৪ মাস পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারবেন।
আপনি চাইলে আরো বেশিও তৈরি করতে পারবেন যদি আপনার দরকার হয়। এতে করে আপনি উপাদানগুলো পরিমানে বেশি করে নিয়ে নিবেন।
আমিতো আমার মায়ের জন্যে ঘরেই তৈরি করে নিলাম ভ্যাসলিন। চাইলে আপনিও আপনার প্রিয়জনের জন্য অতি সহজেই বানিয়ে নিতে পারেন এটি। এবং ত্বককে রক্ষা করুন ক্ষতির হাত থেকে।
লিখেছেন – আনিন্তা আফসানা