মাথা ভরা ঝরঝরে চুল কার না ভালো লাগে? একটু সুন্দর করে সাজলেই ইচ্ছে হয় সুন্দর সুন্দর হেয়ার স্টাইল করার। অথবা ঝরঝরে চুল বাতাসে উড়লেও ভালো লাগে। কিন্তু যদি চুল হয়ে যায় তেল চিটচিটে? সব কিছুতে ব্যাঘাত ঘটে তাই না? আসুন জেনে নেওয়া যাক তৈলাক্ত স্ক্যাল্প কেন হয় এবং এর থেকে পরিত্রাণের উপায় সম্পর্কে।
তৈলাক্ত স্ক্যাল্প হওয়ার কারণ
তৈলাক্ত স্ক্যাল্প থেকে মুক্তি পেতে চাইলে প্রথমেই জানতে হবে এর কারণগুলো।
১. উষ্ণ এবং আর্দ্র আবহাওয়া
২. স্ট্রেস
৩. পুষ্টিকর খাবারের ঘাটতি
৪. হরমোনের সমস্যা
৫. চুলের টেক্সচার
৬. অ্যান্ডরোজেনিক হরমোন জনিত ঔষধ সেবন করা
কীভাবে বুঝবেন আপনার মাথার স্ক্যাল্প তৈলাক্ত?
১. চুলের টেক্সচার এর উপর নির্ভর করে সনাক্ত করতে হবে।
২. প্রথমে খুব ভাল করে শ্যাম্পু করে নিতে হবে, শ্যাম্পু করার সময় আঙুলের সাহায্যে চুলের গোঁড়ায় আলতো করে ম্যাসাজ করে নিতে হবে। শ্যাম্পু করার সময় স্ক্যাল্পে নখ না লাগে সেই বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে এবং খুব বেশি ঘষাও যাবে না। এতে চুলের গোঁড়া দুর্বল হয়ে যায়।
৩. এরপর ৪-৫ দিন চুলে শ্যাম্পু না করে থাকতে হবে এবং চুলে কোন তেল, সেরাম বা এ ধরণের কিছু লাগানো থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪. এরপর ব্লটিং পেপার দিয়ে মাথার তালুতে চুলের গোঁড়ায় চেপে চেপে দেখতে হবে ব্লটিং পেপারে তেল লেগেছে কিনা।
৫. যদি ২-১ দিন পরেই আপনি মাথার তালুতে তেল এর উপস্থিতি অনুভব করেন, তাহলে বুঝতে হবে আপনার স্ক্যাল্প খুব বেশি তৈলাক্ত।
৬. ৩-৪ দিন পর তেল জমা হলে বুঝবেন মোটামুটি তৈলাক্ত।
৭. ৪-৫ দিন পর তেল জমলে সেটা স্বাভাবিক ব্যাপার।
তৈলাক্ত স্ক্যাল্প এর জন্য যেসব সমস্যা হয়
১. চুলের গোঁড়ায় তেল জমার কারণে খুব অস্বস্তি লাগে। তেল জমে ত্বকের ছোট ছোট ছিদ্রগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ত্বকের প্রাকৃতিক বর্জ্যগুলো বের হতে পারে না তাই মাথার ত্বকে ঘা হয়ে যায়।
২. অনেক সময় চুলকায় খুব। নখ দিয়ে চুলকানোর ফলে রক্ত বের হয়েও যেতে পারে। এভাবে চলতে থাকলে চুলের গোঁড়া দুর্বল হয়ে যায় এবং চুল পড়ে যায় প্রচুর।
৩. ত্বকে ইনফেকশন হয়ে যেতে পারে। কিছু দিনের মধ্যে মাথার ত্বক পুরোপুরি ড্যামেজ হয়ে যায়।
তৈলাক্ত স্ক্যাল্প থেকে মুক্তির উপায়
অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার
এটা এক ধরনের অ্যান্টি-ইচিং (Anti-etching) এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। স্ক্যাল্প খুব বেশি তৈলাক্ত হলে কোন রকম পানি না মিশিয়ে সরাসরি ড্রপার দিয়ে স্ক্যাল্প এ ব্যবহার করতে পারেন সপ্তাহে ২-৩ দিন। যদি মোটামুটি তৈলাক্ত হয় তাহলে ১:১ অনুপাতে পানির সাথে মিশিয়ে সপ্তাহে একদিন করে ব্যবহার করলেই হবে। ধীরে ধীরে স্ক্যাল্প এর তৈলাক্ততা কমে আসবে।
লেবুর রস
এটা অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার এর মতোই কাজ করে। বরং লেবু আমাদের জন্য সহজলভ্য। স্ক্যাল্প খুব বেশি তৈলাক্ত হলে কোন রকম পানি না মিশিয়ে সরাসরি ড্রপার দিয়ে স্ক্যাল্প এ ব্যবহার করতে পারেন সপ্তাহে ২-৩ দিন। যদি মোটামুটি তৈলাক্ত হয় তাহলে ১:১ অনুপাতে পানির সাথে মিশিয়ে সপ্তাহে একদিন করে ব্যবহার করলেই হবে।
টি ট্রি অয়েল
টি ট্রি অয়েল এক রকম অ্যান্টিসেপটিক (Antiseptic) এবং অ্যান্টি- ব্যাকটিরিয়াল প্রোটেকশন (Anti-Bacterial Protection) হিসেবে কাজ করে। যার ফলে খুশকি এবং যেকোন ধরণের ফাঙ্গাস আক্রমনকে রোধ করে। সপ্তাহে ৩-৪ দিন রাতে ঘুমানোর আগে চুলের গোঁড়ায় তুলার সাহায্যে লাগিয়ে রেখে সকালে শ্যাম্পু করে ফেললে খুব ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
এগুলো হলো একদম কার্যকরী কিছু সমাধান তৈলাক্ত স্ক্যাল্প এর জন্য। তবে কিছু ব্যাপার অবশ্যই মেনে চলতে হবে। যেমন-
১. চিরুনি বা হেয়ার ব্রাশ নিয়মিত পরিষ্কার করে রাখতে হবে।
২. তৈলাক্ত খাবার অবশ্যই বর্জন করতে হবে।
৩. কেমিক্যাল জাতীয় কোন কিছু ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪. প্রচুর পরিমাণে পরিষ্কার পানি পান করতে হবে কারণ ত্বকের তৈলাক্ততা কমাতে পানি পানের বিকল্প নেই।
৫. বেশি তৈলাক্ত ত্বকে তেল না ব্যবহার করাই ভাল। চুল শুষ্ক হয়ে গেলে শুধু চুলের আগায় তেল লাগানো যেতে পারে। তবে স্ক্যাল্প এ যেন তেল না লাগে খেয়াল রাখতে হবে।
সাধারণত এই ব্যাপারগুলো মেনে চললে খুব তাড়াতাড়ি স্ক্যাল্প এর তৈলাক্ত ভাবটা কমে স্বাভাবিক অবস্থা চলে আসবে। তবে যদি আপনার সমস্যা আরও গুরুতর হয় এবং রেমিডি না কমে তাহলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়াটা খুব জরুরী, কারণ এই সমস্যা বেশি দিন টিকিয়ে রাখলে শরীরে গুরুতর সমস্যায় পরিণত হতে পারে। তাই আজই পরীক্ষা করে দেখুন আপনার মাথার ত্বক তৈলাক্ত কিনা।
ছবি – সংগৃহীত: পিন্টারেস্ট.ডট কম, পিকটি.আইসিইউ, মাদারনেচার.কম